আলবেয়ার কাম্যু, সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী ফরাসী-আলজেরিয়ান দার্শনিক, সাংবাদিক, লেখক । দ্বিতীয় কনিষ্ঠতম নোবেল বিজয়ী এই লেখক ১৯৫৭ সালে মাত্র ৪৪ বছর বয়সে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। ' দি স্ট্রেঞ্জার্স' , ' দি মিথ অফ সিসিফাস', দি রেবেল', দি প্লেগ' ইত্যাদি তাঁর বিখ্যাত রচনা । তিনি যে কোনরকম নিপীড়ন, নির্যাতন, বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। বামধারায় বিশ্বাসী থাকলেও সোভিয়েত আধিপত্যবাদের বিরোধী ছিলেন। তাঁর জীবনে কাকতালীয়ভাবে নেমে এসেছিল এক বাস্তবতা যাকে তিনি ভয় পেয়ে এড়াতে চেয়েছেন সমস্তজীবন।
১৯৬০ সালের ৪ জানুয়ারী আলবেয়ার কাম্যু ট্রেনের টিকিট কেটেছিলেন ছুটি কাটিয়ে প্যারিসে ফিরবেন বলে। তাঁর বন্ধু এবং তাঁর প্রকাশকের ভাগ্নে মাইকেল গালমার্ড তার পরিবারের সাথে তার Facel Vega গাড়িতে চেপে ফেরার জন্য অনুরোধ করলেন। বিলাসবহুল বন্ধুর গাড়িতে গল্প-মজায় প্যারিস ফিরতে বন্ধুপত্নী ও কন্যার সাথেই সামনের যাত্রীসিটে চেপে বসেছিলেন কাম্যু। তার পকেটে ছিল ট্রেনের ফিরতি টিকিট । আর ছিল ১৪৪ পৃষ্ঠার তাার হাতেলেখা বহুল আকাঙ্খিত আত্মজৈবনিক উপন্যাসের পান্ডুলিপি। সেখানে তিনি ওৈপনিবেশিক আলজেরিয়ায় কাটানো তাঁর জীবনের প্রথম অংশকে তুলে নিয়ে এসেছিলেন। এই উপন্যাসকে লেখক তার জীবনের সবচে' সুন্দর সৃষ্টি হিসেবে রচনা করতে চেয়েছিলেন।
আলবেয়ার কাম্যুর ছিল ভয়াবহ মোটরগাড়ী ভীতি । মোটরফোবিয়া। তিনি যেখানেই যেতেন ট্রেনে চড়ে যেতেন। পারতপক্ষে গাড়ী চড়তেন না। চালাতেন না।
কাম্যু বলতেন,
' গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যাবার চেয়ে নির্বুদ্ধিতার আর কোন কিছু আমার জানা নেই।"
কাম্যু , আলবেয়ার কাম্যু , ১৯৬০ সালের ৪ জানুয়ারী ট্রেনের ফিরতি টিকিট পকেটে নিয়েও বন্ধুর অনুরোধে গাড়িতে প্যারিস ফিরছিলেন। প্যারিসের মাত্র ১০৫ কিলোমিটার অদূরে তার বন্ধু গাড়ীর নিয়ন্ত্রণ হারান। একটি গাছের সংগে ধাক্কা লাগলে আলবেয়ার কাম্যু ঘটনাস্থলেই নিহত হন। তার বন্ধু ৫ দিন পর হাসপাতালে মারা যান। সকলেই মারাত্মক আহত হন। পুলিসের ভাষ্যমতে, গাড়ীর গতি সীমার মধ্যেই ছিল, রাস্তা সরল ও বরফমুক্ত ছিল । তবু দুর্ঘটনাটি ঘটে। গাড়ীটি ধ্বংস হয়ে যায় ।
এই দুর্ঘটনা নিয়ে, মৃত্যু নিয়ে রহস্য জট পাকিয়েছে । অনেকেই একে ষড়যন্ত্র বলে মনে করেন । সে অন্য আলোচনা।
সত্যি এই, আলবেয়ার কাম্যু , মোটরফোবিয়ায় গাড়ী এড়িয়ে চলা সতর্ক কাম্যু, এই গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান।
----------
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০২০ দুপুর ২:২৮