সন্ধ্যায় বসে বসে ডিউটি করতে করতে প্রায় ঝিমুতে লাগছিলাম। হঠাৎ মাথায় আসলো, চা গিললে বোধহয় একটু ভালো লাগবে। আমাদের এখানে আবার ডিউটি চলাকালীন সময়ে বাইরে গিয়ে চা খাওয়ার নিয়ম নেই। তাই সব কিছু অফিসেই রেডি করতে হয়।
চা বানাতে গিয়ে দেখি টি-ব্যাগ শেষ। চা পাতা গুলো বেশ ভালই " Lipton" এর। বড় একটা বক্স প্যাকেটের ভিতর প্রায় ১৬টা মাঝারী সাইজের প্যাকেট থাকে, ওই মাঝারী সাইজের প্যাকেটের ভিতর ছোট ছোট লিফটনের টি-ব্যাগ গুলো সাজানো থাকে। কোয়ালিটি বেশ উন্নত, স্বাধেও সেরা। আরেকটা মাঝারী প্যাকেট ভাঙতে গিয়ে দেখি বড় বাক্সের ভিতরে একটা "স্ক্রাচ কার্ড"!!
স্ক্রাচ কার্ডের উপরে দেখি কয়েকটি "মার্সিডিজ বেঞ্জ" এর ছবি!! মানে এই স্ক্রাচ কার্ড ঘষলে একটি মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ি পেতে পারি কিংবা আরও অনেক কিছু। মুহুর্তেই নিজেকে পৃথিবীর সবচে ভাগ্যবান ব্যক্তি ভাবতে শুরু করলাম। কারন, এই কার্ড এখনো পর্যন্ত কেউ দেখল না ক্যামনে? এতো গুলো স্টাফ, তবুও আমার চোখে কেন তা পরবে? নিশ্চয় আমি ভাগ্যবান। এবং নিজের সমস্ত ভাবনা জুড়ে খেলা করতে লাগলো এই গাড়ি পেলে আমি কি করবো? কোন কোন জায়গায় লং ড্রাইভে যাবো, চোখের উপরে কেমন জানি মার্সিডিজ বেঞ্জ-ই বসে আছে।
নাহ, এতো কিছু ভাবা যাবে না। স্ক্রাচ কার্ড তো আগে ঘষে দেখতে হবে। ভাবলাম এইখানে ঘষে দেখা ঠিক হবে না। টয়লেটেই অতি নিরাপদ জায়গা। চায়ের খালি কাপটা টেবিলের উপর রেখে টয়লেটের দিকে হাঁটা ধরলাম। নিশ্চিন্তে দরজার লক লাগিয়ে আল্লাহ্র নামে কার্ডের দিকে তাকিয়ে রইলাম। চিন্তা করে দেখলাম পয়সা দিয়ে ঘষা যাবে না। অন্য কিছু হয়ে গেলে! নাহ হাতের নখের উপর ডিপেন্ড করতে হচ্ছে। নখ যাই আছে তাতে চলবে মনে হোল। চোখ বন্ধ করে বিসমিল্লাহ্ বলে ঘষা দিলাম! আর মনের ভিতরে এক অচেনা সারপ্রাইজের সুখ ভর করতে লাগলো।
স্ক্রাচ কার্ড ঘষা শেষ! আস্তে আস্তে চোখ খুলতে লাগলাম। স্ক্রাচ কার্ডে কালো আবরণ দিয়ে ঘেরা অংশটুকু উঠে গেছে। হালকা ঝাপসার উপরে ইংলিশে কিছু লেখা দেখতে পাচ্ছি। হুম... ঠিক তো মনে হচ্ছে!! লেখাটা চোখে স্পষ্ট হতে লাগলো। যেন পুরো লেখাটি চোখের মনিতে ভেসে বেড়াচ্ছে "THANK YOU TRY AGAIN"
আমি কেন জানি কোন অজ্ঞত্য কারন ছাড়াই "স্পিসলেস" হয়ে গেলাম।
আমার সমস্ত চিন্তা ভাবনা মুহূর্তেই ধূলিসাৎ হয়ে কমোডের ফ্লাশের সাথে তলিয়ে গেলো। নিজের চেহারা জুড়ে এক সন্ধ্যা মন খারাপ নিয়ে অফিসে এসে ঢুকলাম। পাশে থাকা কলিগ আমায় লক্ষ্য করে জিজ্ঞেস করে " কি ভাই পেট খারাপ নাকি"? আমার সমস্যা উনি বুঝে উঠার আগেই বললাম, হুম... বিকেল থেকে পেটে কেমন জানি মোচড় দিচ্ছে।
আর কথা না বাড়িয়ে সোজা নিজের চেয়ারে গিয়ে বসে রইলাম...
এসব ছাইপাঁশ নিয়ে না ভেবে কাজে মন দেয়াই শ্রেয়!!