somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশ ব্র্যান্ডিং: ব্যর্থতাটা আরো গভীরে

১৭ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ৭:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


"বাংলাদেশ"কে ব্র্যান্ডিং করতে না পারার বিষয়টি কেবল বিনিয়োগ বা ব্যাবস্থাপনাগত বিপর্যয় নয়; পেছনের লুকানো রাজনৈতিক অর্থনীতিটি দুটি ইন্ড্রাস্ট্রী এবং একটি রাষ্ট্র প্রকল্পের সম্মিলিত ব্যর্থতার ফলাফল। বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন ইন্ডাষ্ট্রীর প্রায় পুরোটাই ভারত নির্ভর করে গড়ে উঠেছে, কি ট্রেনিং, কি টেকনোলজি, কি এডমিন্সষ্ট্রেশন, কি পারফর্মার; সর্বপোরি শিক্ষায়। ফলে একদিকে কেবল নিজেদের ইন্সিটিউশন বা ফার্ম থাকলেই হয় না; দরকার নিজস্ব ক্ষমতায়ন, সাংস্কৃতিক উপকরণকে শক্তিশালী বানানোর কৌশল। এত নির্ভরতা থাকলে কৌশল; কর্মে রূপান্তরিত হওয়াটা মুশকিল। গণমাধ্যমের বিন্যাসেও একই নির্ভরতা পরিষ্ফূটিত।

ক্রিকেট ইন্ডাস্ট্রীর কথা যদি মনে করি তাহলে দেখতে পাবো যে গত কয়েক মাসের টেস্ট স্ট্যাটাস জনিত বাহাস আসলে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের বিশেষ অর্থনৈতিক সুবিধাকে বৈধ করার উপায় হিসেবেই ব্যবহৃত হয়েছে। রাষ্ট্র প্রকল্প স্বয়ং উপমহাদেশের রাজনীতিতে ভীষণ রকম ভারত নির্ভর। মানে ঘরোয়া রাজনীতিতে সেটার ফলাফল তো দিনের আলোর মত পরিষ্কার। বর্তমান সরকারের ইয়েস কার্ড পাওয়াটাও সেটারই অংশ। ভাষা বাস্তবতা গঠন করে, এবং স্যাটেলাইট রাজনীতিতে, যে হিন্দী বাস্তবতা বিগত ১৫ বছরে নির্মিত হয়েছে তাতে আমাদের সবারই অবদান কম নয়। যদিও দোষের বেলায় কেবল গৃহিনীদেরই দোষ। কেন কারিশমার বুক, উর্মিলার পাছা, মাধুরীর হাসি, শাহরুখের কান্না, সালমানের বডি বাংলাদেশের পুরুষকুল কখনোই গিলেন নাই? আমি তো চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, কালকে সানি লিওন আর সালমানের শো হলে, এই দেশের মানুষ লক্ষ টাকা দিয়ে হলেও টিকিট কাটবে, এই ভিড় ঠেকানো যাবে না। আমাদের তথাকথিত সুশীল সমাজেরও একটি বড় অংশের বুদ্ধিবৃত্তিকে পাটাতন তৈরি হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ কেন্দ্রীকতায়। সেটা ঘটনার নানান ব্যখ্যায়, পুরুষ্কার প্রাপ্তীতে, সিদ্ধান্তে, পলিসি তৈরিতে প্রতিফলিত হয়। নয়া উদারবাদী অর্থনীতিতে এই ক্ষমতা যেমন সরাসরি তেমন হেজেমনিক। ভারত, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লেখে গুন্ডে সিনেমায়। বাববাহ!।

বাংলাদেশের দূর্ভাগ্য হল "প্রগতিশীল" হতে হলে তারে "ভারতপন্থী" আর "ইসলামীক" হতে হলে তারে "পাকি তথা মধ্যপ্রাচ্যপন্থী" হতে হয়। এই বাই-পোলারিটির ছাড়ান নাই। নতুন মোড়কে এই পানীয় "জাতীয়তাবাদ", "সাংস্কৃতিক সুরক্ষাবাদ", "ধর্ম রক্ষাবাদ" , "আধুনিকতাবাদের" নামে গিলতে হয়। পৃথিবীতে কারক-চালক-প্রচারক ধর্ম এখন একটাই সেটা নব্য উদারনৈতিক পুঁজিবাদ। রাষ্ট্রের তরুণ প্রজন্ম যাতে লাইনে থাকে সেজন্য নতুন নতুন চাকচিক্য দিয়ে তাদের ব্যস্ত রাখা হয়। সামাজিক মাধ্যম হল সেই প্রক্রিয়ার নতুন অস্ত্র। কি বিশ্বাস হয় না?

তাহলে একটা পরস্পর বিরোধীতা আপনাদের সামনে দেই, আর্ন্তজাতিকভাবে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং যেখানে ভারতের আঁচলের নীচে দেবে গেল সেখানে ফ্লাশ মবের মূল কার্যকারিতা কি? তারুণ্যের উচ্ছাস? দেশকে ভালোবাসার বহি:প্রকাশ? নাকি স্বতস্ফূর্ত আনন্দ অংশগ্রহণ মাত্র? নাকি কেবলই শেয়ার? আপনাদের সকল পরিশ্রম আর প্রচেষ্টা কিভাবে সংজ্ঞায়িত হচ্ছে সেটা নিয়ে ২য় বার ভেবেছেন কি? যেদিন দেশে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি ঘটেছে ঠিক সেদিনই কনসার্ট, কেন? বিনোদন দিয়ে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ হ্যান্ডেল করা/ ডাইভার্ট করার পদ্ধতিটি আমেরিকান, আমি এটাতে কোন দেশপ্রেম দেখি না।

আমার কাছে বড় প্রশ্ন আরেকটি। মনে করা যাক সত্যিকার দেশপ্রেম দিয়ে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং করা হল, কিন্তু সেটা কি সেভাবেই প্রতিষ্ঠিত হবে যেভাবে আমরা চাই? ধর্ম জুজু, দেশ জুজু, ভারত জুজু, দিয়ে বিষয়টা বোঝাবুঝির সময় আসলে অনেক আগেই শেষ। প্রতিবেশী রাষ্ট্র সে যেই হোক না কেন তার সবসময়ই রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক স্বার্থ আছে, ফলে সেই প্রেক্ষীতে ভারত পাকিস্তান আমার কাছে সমান সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ। যে কোন রকম আগ্রাসন, প্রলোভন থেকে রক্ষা পাবার উপায় আত্ম-সংবরণ, আত্ম-নিয়ন্ত্রণ এবং না বলার কৌশল। তা না হলে আমরা সব সময়ই রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক দাস ই হয়ে থাকবো।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৫
৩২টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×