মেয়াদকালের শেষ সময়ে এসে মিডিয়ার প্রতি সরকারের এই ধরণের ফোবিয়া কোন ভালো লক্ষণ বলে মনে হচ্ছে না। সরকার যদি প্রকৃতই জনগনের কল্যানে ব্যাপক কাজ করে থাকে তাহলে মিডিয়ার প্রতি তো আরো সহিষ্ণু হওয়ার কথা। প্রশংসার ঢাক ঢোলের তীব্রতা বাড়ানোর জন্য সরকারী অফিসে নিজেদের অর্থে ক্রয়কৃত পত্রিকার প্রকারভেদ সীমিত না করে আরও বাড়িয়ে দেওয়ার কথা। কিন্তু রুঢ় হলেও সত্য যে এখন থেকে সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে অফিসে বসে দেশের উন্নয়নের (?) ডিজিটাল জোয়ারের সচিত্র প্রতিবেদন মাত্র গুটি কয়েক চিহ্নিত পত্রিকার মাধ্যমে দেখতে হবে। কিন্তু কেন? মিডিয়া ফোবিয়ার এই ডিজিটাল উপসর্গ আসলে সরকারের কোন্ রোগের সক্রমনের ইঙ্গিত বহন করছে?
বেশ কিছুদিন আগে থেকেই সরকারের মধ্যে গনমাধ্যমের প্রতি অল্প অল্প করে বিরক্তিকর ভাবের লক্ষণ ক্রমশ প্রতীয়মান হচ্ছে। তবে গণমাধ্যমের প্রতি তাদের এই লক্ষণের মাত্রা জলাতঙ্ক রোগীর জলভীতির মতো প্রবল না হলেও তা ক্রমান্বয়ে জনগনের সহিষ্ণুতার মাত্রাকে স্পর্শ করে সেটাকে ছাড়িয়ে যাবার উপক্রম হয়েছে। রাতে টেলিভিশনের টকশো গুলো টক লাগছে তাই সেগুলো বন্ধ করো, আমাদের খবর গুলো প্রথম পৃষ্ঠায় আসছেনা তাই আমাদের অনুষ্ঠানে তাদের নিষিদ্ধ করো এসব কথা প্রায়ই শোনা যায় সরকারের অনেক উপরের মহলের করিৎকর্মাদের মুখে। আর এখন এসব করো করো শব্দের সংগে নতুন করে যুক্ত হয়েছে আমাদের অফিস গুলোতে শুধুমাত্র অমুক অমুক পত্রিকা ক্রয় করো জাতীয় লক্ষণ।
এসব লক্ষণকে অনেকটা ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যাক্তির শুরুর দিকে দিনের পর দিন চলতে থাকা হালকা জ্বর জ্বর ভাব বা এইডস আক্রান্ত ব্যক্তির রাতে মাত্রাতিরিক্ত ঘর্ম জনিত লক্ষণের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। লক্ষণের এই পর্যায়ে এসে রোগী যদি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয় তাহলে বড়ো ধরণের সমূহ বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার যথেষ্ঠ সম্ভবনা থাকে। তাই সরকারের অন্দর মহলে যদি সামনের নির্বাচনে নিজেদের পতনের আশঙ্কা এসব ঘাতক ব্যাধির মতো বাসা বেঁধে থাকে এবং এসব ‘করো করো’ লক্ষণ গুলো যদি তা থেকে উৎসৃত হয়ে থাকে তবে এখনো সময় আছে সজাগ হওয়ার। জনগণের বাক স্বাধীনতাকে হরণ করার হীন উদ্দেশ্যে গণমাধ্যমের টুটি চেপে ধরার প্রয়াসে সৃষ্ট বিরূপ জনমত গুলোকে বিবেচনা করে দ্রুত নিজেদের সমস্যা সমাধানে মনোযোগী হওয়াটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। নতুবা এধরণের অগণতান্ত্রিক ও অসহিষ্ণু মনোভাব (বাকশালী) ক্রমান্বয়ে বেড়ে এমন মাত্রাই গিয়ে পৌছবে যেটা নিজেদের পতনকেই ত্বরান্নিত করবে বৈকি। তখন আর কিছুই করার থাকবেনা।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:১৭