মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নের ফিরিস্তি দিয়ে আবার সুযোগ চাইলেন। খুবই ভালো কথা। দেশের উন্নয়নের স্বার্থে অবশ্যই সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষার প্রয়োজন। এ বিষয়ে দেশের জনগনের খুব ভালো উপলব্ধিবোধ আছে। তারা সবসময়ই দেশের উন্নয়ন চাই। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উপলব্ধিবোধ নেই কেবল আপনাদের। আপনারা নিজেরাই নিজেদের ধারাবাহিকতা চাননা। আর আপনারা কীভাবে নিজেদের এই ধারাবাহিকতার পায়ে নিজেরাই কুড়াল মারেন তার ভূরিভূরি নমুনা আপনাদের কর্মকান্ডেই নিহিত আছে। যেমন:
১) দেশের শান্তিপ্রিয় জনগন চাই সকল অপরাধের বিচার হোক। অপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। বিপরীতে আপনারা দাগী সন্ত্রাসীদের জামিনের ছুতা দেখিয়ে কারাগার থেকে বের করে আনছেন। তথাকথিত দয়ালু রাষ্ট্রপতি দিয়ে মাফ করে দিচ্ছেন দুধ্বর্ষ সব ফাঁসীর আসামীদেরকে। নিজেদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে প্ররোচনা দিচ্ছেন আইন নিজের হাতে তুলে নিতে।
ফলশ্রুতিতে আমরা হারিয়েছি বিশ্বজিৎকে! আমরা দেখেছি পুলিশের পাশে ছাত্রলীগের অবৈধ অস্ত্র নিয়ে নায়োকচিত অ্যাকশন! আমরা দেখেছি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোতে আপনাদের পোষা ছাত্রলীগ নামক গুন্ডাদের দ্বারা আমাদের সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দরা কীভাবে লাঞ্চিত ও নির্যাতিত হয়েছে। তাদের গুন্ডামী ও দলীয় অন্তর্কোন্দল মাসের পর মাস ক্যাম্পাস বন্ধ রেখে সাধারন শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিতে কতটা ভূমিকা রেখেছে। দেখেছি তাদের টেন্ডারবাজিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন কীভাবে স্থবির হয়ে পড়েছে। টেন্ডারবাজির এই লজ্জাজনক প্রতিযোগীতাই একগ্রুপ আরেক গ্রুপের উপর চাপাতি নিয়ে হামলে পড়তেও দেখেছি।
এখন দেশের জনগন কি চাইবেন এই অবস্থার ধারাবাহিকতা বজাই থাকুক?
২) শেয়ার বাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা আপনাদের দরবেশ জাতীয় লোক গুলো লুট করে নিয়ে গেলো! সর্বস্বান্ত হয়ে পথে বসলো লাখ লাখ মধ্যবিত্ত! পরিবারে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কালো ছায়া তাদেরকে গ্রাস করলো। এহেন পরিস্থিতিতে অনেকে আত্মহত্যার পথও বেছে নিল। আর আপনারা এই ঘটনার বিচারের নামে দলীয় তল্পিবাহক দিয়ে একটা লোক দেখানোর তদন্ত নামের প্রহসহন করলেন।কিন্তু অবিশাস্যভাবে এই নাটকেও ধরে পড়ে গেলো আপনাদের দলের প্রভাবশালী মহলের সংশ্লিষ্টতা। দলের এসব রুই কাতলাদের ধরতে অক্ষমতা জানিয়ে শেয়ার বাজারকেই দুষ্ট আখ্যায়িত করে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করলেন!
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনিই বলুন দেশের জনগন কী চাইবে এই অবস্থার পূনরাবৃত্তি ঘটুক?
৩) ডেসটিনি অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এদেশে এমএলএম ব্যবসা শুরু করে আপনাদের প্রথম টার্ম থেকেই। আর আপনাদের এই টার্মে এসে তাদের ব্যবসা ফুলে ফেঁপে উঠে। দেশের দরিদ্র খেটে খাওয়া জনগনের টাকা চুষে (suck) আপনাদের চোখের সামনেই মস্তবড়ো জোঁকে পরিণত হলো তারা। গ্রামের যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরাই তাদেরকে এই টাকা খেকো দানবগুলো স্বপ্ন দেখালো ঢাকা শহরের দশতলা বাড়ী আর দামী গাড়ীর। যে পরিবারের কর্তাব্যক্তির উচ্চরক্তচাপে প্রেসার মাপানোর জন্য ডাক্তার দেখানোর সামান্য অর্থ জোটেনা সেই পরিবারে এসব দানবগুলো হাজার হাজার টাকার কালোজিরার তেল আর আকুপ্রেশার জাতীয় অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি গোচিয়ে দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিল তাদের ঘাম ঝরানো উপার্জন গুলো। এসব প্রতারণার কাহীনি ৭১ সালের কোন রাজাকার বাহীনির নয়। এটা এই সময়ের। আপনাদের সামনেই ঘটা। ঘটনাগুলোর সাথে হারুনুর রশীদ জাতীয় আপনাদের বিশেষ লোগোও ব্যাবহৃত হয়েছে। কিন্তু আপনাদের উপলব্ধি বোধ হয়েছে অনেক পরে এবং সেটি এদের খপ্পরে পড়া দেশের তাবৎ জনগনের পকেট শূন্য হওয়ার পরে আগে নয়।
এখন একটু অনুধাবন করুন! দেশের জনগন কি চাইবে এই অবস্থার ধারাবাহিকতা বা পূনরাবৃত্তি?
৪) পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলো। আপনারা অভিযোগ অস্বীকার করলেন তো বটেই সেই সাথে উলটো বিশ্বব্যাংককেই দুর্নীতিবাজ হিসাবে আখ্যায়িত করলেন। জনগন সাধুবাদ জানাতো যদি আপনি বা আপনারা এই সততার উপর দৃঢ় থাকতে পারতেন। কিন্তু একদিকে পরোক্ষ দায় স্বীকার করে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী সহ সংশ্লিষ্ট আমলাদের গনহারে ছুটিতে পাঠাতে লাগলেন অন্যদিকে অমুক দেশপ্রেমিক, তমুক এর সাথে নেই ইত্যাদি ইত্যাদি বলে প্রধানমন্ত্রীর মতো দায়ীত্বশীল পদে থেকে পাগলের প্রলাপ ঝাড়তে লাগলেন। আর তল্পিবাহক দুদক অনেক নাটকের পর এখন যে পদক্ষেপগুলো নিচ্ছে সেগুলো দেখেই শুধু জনগন নয় পুরো বিশ্বই বুঝে গেছে আমরা দুর্নীতি করিনি বিশ্বব্যংকই দুর্নীতিবাজ জাতীয় উক্তি গুলো আসলে চোরের মায়ের বড়ো গলা থেকেই উচ্চারিত।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেকে প্রশ্ন করুন দেশের জনগন আবার এই বিব্রতকর অবস্থার ধারাবাহিকতা চাইবে কিনা?
৫) হাতে নাতে রেলের চুরির টাকা ধরা পড়ার পরও আপনাদের এক মন্ত্রীর মন্ত্রীত্ব যায়নি। বরং তার দপ্তর কেড়ে নিয়ে দায় স্বীকার করেছেন কিন্তু বিচার করেননি। অখ্যাত তানভীরকে আপনার ঘনিষ্ট উপদেষ্টার মাধ্যমে জনগনের টাকা চুরির পথ অবারিত করে তাকে শিল্পপতি বানিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু জনগনের চাপে পড়ে সেই তানভীর জেসমিনকে গ্রেফতার করলেও তাদের গলায় পদক পরানো সেই উপদেষ্টার টিকিটিও ছিড়তে পারেননি। অথচ সোনালী ব্যাংকের রুপসী বাংলা শাখায় তার ঘন ঘন রহস্যজনক উপস্থিতি তানভীরের টাকা লোপাটে কত সহায়ক ভূমিকা রেখেছে তা জনগন পত্রপত্রিকার মাধ্যমে পরিষ্কারভাবে জেনে গেছে।
দেশের জনগন আপনাদের ধারাবাহিকতা রক্ষার মাধ্যমে আবার এধরনের তানভীরের উত্থান কামনা করবে কি?
৬) বিতর্কিত ভাড়ায় চালিত বিদ্যুৎ কারখানার মাধ্যমে বিদ্যুতের ঘাটতি লাঘবের চেষ্টা করেছেন। এতে আংশিক সফল হলেও তাতে লাগামহীন দুর্নীতি ও পাঁচ ছয় বার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে জনগনের পকেট শূন্য করে সেই সফলতার ফসল ঘরে তুলতে পারেননি। যেটা পেরেছেন “আমি বিদ্যুৎ বিভাগকে বলে দিয়েছি দিনে দুইবার লোডশেডিং দিতে যাতে তারা লোডশেডিং এর ব্যাপারটা ভুলে না যায়” ইত্যাদি রসিকতা করে জনগনের সামনে ভাঁড় রূপে আবির্ভূত হতে।
এখন জনগন কি চাইবে তাদের বিদ্যুতের সমস্যার প্রকৃত সমাধানের পরিবর্তে এধরনের রসিকতা পূনঃ পূনঃ শুনতে।
৭) ক্ষমতায় আসার পর পরই জনগনকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন অনেক বড়ো বিমানবন্দর করবেন। দেশকে পর্যটন খাতের স্বর্গভূমি বানিয়ে দিবেন। কিন্তু নামকরণ নিয়ে আপনার অসৎ মোহ ভালো এই উদ্যেগকেও আলোর মুখ দেখাতে পারেনি। প্রথমটার্মে ক্ষমতায় এসে দেশের সকল প্রতিষ্ঠানে পিতার নামকরণের যে মোহ আপনাকে গ্রাস করেছিলো তার প্রথম ঝাপটাটা হয়তো খেয়েছিলেন বিমানবন্দর করতে গিয়ে হাজার হাজার সংক্ষুব্ধ জনগনের পক্ষ থেকে। তারপরও মানসিকতার কোন পরিবর্তন করেননি। নিয়ন্ত্রন করেননি মজ্জাগত প্রতিহিংসার স্ফূরিত অঙ্গারগুলোকেও। এই অংগারে প্রজ্জ্বলিত হতে দেখেছি ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম, এবিএম মূসা, ডক্টর কামাল হোসেন সহ দেশের সম্মানিত অনেক নাগরিকদেরকে।
সাধারন মানুষ কি চাইবে আপনার হাতে এভাবে আবার দেশের সম্মানিত নাগরিকগন অপদস্থ হোক?
৮) বিচার বিভাগে ধারাবাহিক দলীয়করণের প্রতিযোগীতায় সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করে এই বিচার বিভাগের প্রতি নিজেদের আস্থাশীলতা দেখিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যুগুলো তাদের দিয়ে নিস্পত্তি করিয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু এর মাধ্যমে ক্রমেই যে এই বিচার বিভাগের প্রতি জনগন আস্থা হারিয়ে ফেলছে সে দিকে আপনাদের বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই। একদিকে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিজেদের হাজার হাজার মামলা উঠিয়ে নিচ্ছেন অন্য দিকে বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের জেলে ঢুকাচ্ছেন বিভিন্ন হাস্যকর সব মামলায়।
দেশের জনগন কি চাইবে দেশের গনতন্ত্র এভাবে বিপন্ন হতে থাকুক?