শীত কাল,অনবরত বরফ পড়ছে । কখনো পেঁজা তুলোর মত ,কখনো কুচি কুচি,কখনো তারার মত খাঁচকাটা। এর মধ্যে বাইরে বেরিয়ে শিকার ধরা মহা ঝামেলা! তাছাড়া শিকার পাওয়াও মুশকিল ।
বন টা ছোট;এখানে হিংস্র প্রানী বলতে ওরা তিনজন,প্রথম জন বিশাল দেহী এক বুড়ো ভল্লূক,অন্য দু’জন নিজ নিজ দল থেকে বিতাড়িত একটা নেকড়ে ও শেয়াল । এরা সবাই বয়স ভারে ক্লান্ত । শিকার ধরার মত গায়ের জোড় বা আগের সেই ক্ষিপ্রতা এখন আর নেই । এভাবে আর কিছুদিন চললে নির্ঘাৎ মারা পড়বে সবাই । ক্ষুধার জ্বালা সইতে না পেরে অবশেষে একদিন বুড়ো ভল্লূক সবাইকে তার গুহায় ডেকে বলল,
-আর যে পারি না ভাই,ক্ষুধার জ্বালায় নাড়ি ভুড়ি হজম হওয়ার জোগার হল! এভাবেতো চলতে পারেনা,একটা কিছুতো করতে হবে নাকি?
তার কথায় নেকড়ে আর শিয়ালও সায় দিল।’ উপায় নেই তাদের যে একই দশা। তারা সবকিছূর ভার ভল্লূকের উপর ছেড়ে দিয়ে বলল,-কি করা যায়? আপনি মুরুব্বি আপনিই বলুন?
তাকে এতটা গুরুত্ব দেয়ায় ভল্লূক বেশ খুশি হয়েই বলল,
-আমাদের মধ্যে আজ থেকে আর কোন রেষারেষি থাকবে না। এখন থেকে আমরা সবাই আপন ভায়ের মত। আমরা একসাথে শিকার খুজব আর শিকার খুজে পেলে সবাই মিলে ভাগ করে খাব। কি রাজি তোমরা?
শিয়াল আর নেকড়ে সম্মিলিত কন্ঠে বলল‘ জ্বী মহারাজ রাজী।
-‘তাহলে আস আমরা প্রতিজ্ঞা করি।’
প্রতিজ্ঞা শেষে তিনজনে মিলে বের হল শিকার করতে। ভাগ্য সুপ্রসন্নই বলতে হবে। কিছুদুর যেতেই তাদের সামনে এসে আছড়ে পড়ল তীরবিদ্ধ এক আহত হরিন।
ওরা তিন ভাইতো (!)মহাখুশি,এত সহজেই যে শিকার মিলবে তা তারা সপ্নেও ভাবেনি!
হরিনটাকে খুন করে তিনজনে মিলে টেনে নিয়ে এল বুড়ো ভল্লুকের গুহায়। এবার ওরা সবাই মিটিং এ বসল,লুটের মাল ভাগ করার জন্য।
বুড়ো ভল্লূক,দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
-আমার মনে হয় নেকড়েকেই ভাগ করতে দেয়া উচিত। ওই সঠিক ভাগ করবে।’
শিয়াল সম্মতি দিলে সে নেকড়েকে ডেকে বলল ,
-আসো দেখি তুমি হরিনটা ভাগ কর আমাদের তিনজনের মধ্যে।
নেকড়ে এমন একটা গুরু দায়িত্ব পেয়ে বেশ উৎফুল্ল হয়ে বলল,
-বেশ করছি তাহলে - তোমরা যখন বলছ,‘মাথাটা পাবে তুমি মহারাজ,কেননা তুমি আমাদের সবার মুরুব্বি আর জ্ঞানী । দেহটা আমার আর ঠ্যাংগুলো পাবে পিচ্চি শেয়াল।’
তার কথা শেষ হওয়ার আগেই বুড়ো ভল্লুক এমন ভীষণ জোড়ে এক লাথি কষাল যে বিকট চিৎকার দিয়ে নেকড়ে গিয়ে আছড়ে গুহার শক্ত পাথুরে দেয়ালে।
ভয়ঙ্কর ক্রুর দৃষ্টি নিয়ে এবার সে তাকাল শিয়ালের দিকে , এবার তুমি ভাগ কর দেখি ।
চতুর শেয়াল ধীরে ধীরে দাড়িয়ে বেশ ভয়ে ভয়ে তোষামদের স্বরে বলল,
‘নেকড়ে ঠিকই বলেছিল,এই হরিনটার মাথা তুমিই পাবে,কেননা তুমি আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বয়স্ক আর বুদ্ধিমান। হরিনের পুরো দেহটাও তোমাকে দেয়া উচিত কেননা তুমি আমাদের দেখভাল করছ ঠিক বাবার মত করে। ঠ্যাং গুলোও তোমারই যাবে ; কেননা সব সময় তুমিই শুধু চেষ্টা করেছ আমাদের জন্য কিছু একটা করতে তাই এটা আমাদের তরফ থেকে উপহার বা প্রতিদান।
‘তুম দেখি সাংঘাতিক বুদ্ধিমান হে শেয়াল।’ বুড়ো ভল্লূক হেসে বলল।
‘এমন করে বুদ্ধিমত্তার সাথে হরিন ভাগ করা তুমি শিখলে কোত্থেকে?’
শিয়াল বেশ বিনয়ের সাথে বলল,
‘মহরাজ,তোমার কাছ থেকে। আমাকে দু’বার চোখে আঙ্গুল দিয়ে শিখিয়ে দিতে হয়না। নেকড়ের ভুলের শাস্তিতো আমি চোখের সামনেই দেখলাম।’
অনুবাদ ও রুপান্তরঃ শেরজা তপন
আগের রুপকথা গুলোঃ
নেকড়ে,কুকুর আর বেড়াল-(একটি ইউক্রাইনান মজার রূপকথা) Click This Link
কে সবচেয়ে বড় ছিল ? (একটি কিরিগিজ রুপকথা) Click This Link
লোভী কাজী – একটি তাজিক রুপকথা Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪৬