somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অসুখী-বিষণ্ণতা ও আত্ম-ধ্বংস! (Humans are Not from Earth)~১০

২৩ শে নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১৫. অসুখী এবং বিষণ্ণতা

কিছুক্ষণের জন্য আপনার জানালার বাইরে রাস্তার দিকে চোখ রাখুন এবং রাস্তা দিয়ে হেটে যাওয়া লোকের মুখের দিকে তাকান– আপনি তাদের মধ্য থেকে এমন দশজন লোককে বেছে নিন যাদের আপনি চেনেন না বা জানেন না। লক্ষ্য করুন তাদের মুখের অভিব্যক্তি- আপনি কি দেখতে পাচ্ছেন? (এই এক্সপেরিমেন্টটা ভিন্ন দেশে খানিকটা ভিন্ন রকম হতে পারে*)
আমি নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলছি; এর মধ্যে চারজনকে সম্পূর্ণ অভিব্যক্তি-হীন লাগছিল; চারটি বিষণ্ণ ছিল-তারা মাথা একটু নুইয়ে হাঁটছিল এবং মনে হচ্ছিল তারা সত্যিই খারাপ জীবনযাপন করছে; একজনকে লক্ষ্য করলাম-তার চোখে জলের আভাস, অভিব্যক্তি বলে যে তিনি কান্নায় ফেটে পড়তে চলেছেন; এবং একজনের অভিব্যক্তি ছিল অদ্ভুভুতুড়ে। এখানে তেমন ঝলমলে প্রাণবন্ত সুখী ও আনন্দিত মানুষকে খুঁজে পাইনি। হয়তো তেমন আছে বা থাকবে কিন্তু আমার চোখে ধরা পড়েনি।. দশজনের মধ্যে দশজন (এবং সম্ভবত ছিল) অসন্তুষ্ট বা বিষণ্ণ ! প্রায় একই পরিস্থিতি যা আপনি সারা বিশ্বে দেখতে পাবেন।
সেখানে কিছু ব্যতিক্রম-তো অবশ্যই আছে। কিন্তু তাদের চেহারা থেকে আমি বলতে চাই ৯০ শতাংশ এর বেশি মানুষ ‘সাধারণত অসন্তুষ্ট’, তাদের একটি বড় আপসেট আছে ‘গুরুতরভাবে অসুখী’ বা ‘ক্লিনিক্যালি বিষণ্ণ’।
অনেকে বলে যে এটি আধুনিক জীবনযাপনের ফল। আমরা ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত-ভাবে নিজেদের উপরে চাপিয়ে দিয়েছি এমন কিছু বিষয় যা মূলত আমরা ঘৃণা করি কিংবা আদপে উপভোগ করি না। অনিচ্ছাসত্ত্বেও আমাদের চাকরিতে যাতায়াত করতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যয় করি, আমরা পাই না পর্যাপ্ত ঘুম, আমরা জাঙ্ক ফুড খাই। আমরা বেশীরভাগ সময় আমাদের কাজগুলি ঘৃণা করি বা আমরা বিরক্ত হই। ফের যদি আমরা সেই অপছন্দের কাজটা হারিয়ে ফেলি তবে ভয়ানক হতাশায় নিমজ্জিত হই। এবং আমরা যেখানেই তাকাই চারপাশে বিষণ্ণ অভিব্যক্তির ফাঁকা সমুদ্র দেখতে পাই - যা আমাদেরকে উত্সাহিত করতে খুব কমই সাহায্য করবে।
কিন্তু যখন থেকে আমরা প্রথম এই গ্রহে এসেছি তখন থেকে কি সবসময় এইভাবেই হয় নি? এমন একটি সময় কি ছিল যখন আমাদের অধিকাংশই সত্যিই সুখী ছিলাম? ইতিহাসে এমন কোন নথি বা প্রমাণ নেই, যা থেকে আমরা এমনটা বলতে পারি। ধনী উচ্চ শ্রেণীর সবসময়ই নিজেরা উপভোগ করার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষের কি হবে? না তারা কখনোই জীবনটাকে সেভাবে উপভোগ করেনি।
আপনি পৃথিবীর অন্যান্য প্রজাতির (যা এই গ্রহের স্থানীয়) দিকে লক্ষ্য করুন; তারা আমাদের মত কোন সমস্যায় ভোগে না- কুকুরগুলি অধিকাংশ সময় খুশি থাকে (যদি না তারা অসুস্থ বা একা থাকে বা চরম খাদ্যাভাব না থাকে)।
পৃথিবীর সম্ভবত সবচেয়ে বুদ্ধিমান জল-জীব ডলফিনরা সবসময় মহা আনন্দ-চিত্তে ঘুরে বেড়ায়। ‘শূকরেরা গোবরে খুশি’ একটি জনপ্রিয় ব্রিটিশ প্রবাদ। তাকিয়ে দেখুন বরফের ঢালে পিছলে চলা সিল’দের - তারা অবশ্যই খুশি। হাতিরাও তি পিচ্ছিল কাদার ঢাল বেয়ে যখন নিচে নেমে যায় – তারাও সুখী। আকাশে পাখিরা ঝাঁকে ঝাঁকে ঝাঁক বেঁধে হাওয়ায় নিজেদের ভাসিয়ে দিয়ে আনন্দ-চিত্তে একজন আরেকজনে ডাকে!. এমনকি আমাদের বাচ্চারা বেশিরভাগই খুশি-যতক্ষণ না তারা প্রাপ্ত-বয়স্কতায় পৌঁছায়(বা জীবন তাদের আঘাত করে) বা কঠিনতম বাস্তবতার সম্মুখীন হয় । অবশ্যই কেউ কখনও তাদের বলে না, কিন্তু একরকম প্রত্যেকটা মানুষ একসময় অনেকটা একইরকম আচরণ করে- ধীরে ধীরে পাল্টে যায়। একসময় অভিব্যক্তিগুলো এমন ফ্যাকাসে আর অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায়, তাদের কাঁধ ঝুঁকে পরে এবং দুঃখজনক-ভাবে তারা তাদের বাকি জীবন এভাবেই ক্লান্ত শ্রান্ত বিদ্ধস্ত মন নিয়ে হেটে চলে।
কেন আমরা সবাই এত অসুখী?
সম্ভবত কারণ আমরা এই পরিবেশে থাকার উপযুক্ত নই-যে এলিয়েনরা আমাদের এখানে এনেছিল তারা ভেবেছিল আমরা এখানে মানিয়ে নিতে পারব। এটা আমাদের সঠিক পরিবেশ নয় আমরা এ গ্রহকে নিজেদের বলে ভাবতে পারিনা- নিজেদেরকে স্ট্রেঞ্জার বলে মনে হয়। যে মুহূর্তে আমরা এখানে এসে পৌঁছেছি এর পর থেকেই আমরা এমনটা অনুভব করছি। আমরা কখনই এখানে বাসের উপযোগী হব না এবং কোনদিনই পৃথিবী নামক এই গ্রহকে নিজেদের বাড়ি বলে ভাবতে পারব না। বলতে পারি, এখানে আমরা শুধু নেশায় বুঁদ হয়ে খানিকটা সুখী হতে পারি।
********
১৬. আত্ম-ধ্বংস

মানুষই পৃথিবীতে একমাত্র প্রজাতি (এবং সম্ভবত সমগ্র মহাবিশ্বে) যারা নিজেকে ধ্বংস করতে উদ্যত।এই প্রজাতি অবিরাম যুদ্ধে লিপ্ত - সম্ভবত অন্যান্য গ্রহেও যুদ্ধ আছে । প্যাকেটের গায়ে স্পষ্ট লেখা আছে যে ধূমপান মৃত্যুর কারন কিন্তু তা সত্ত্বেও আমরা সিগারেট খাই। আমরা অনেক বেশি অ্যালকোহল পান করি, যদিও আমরা সব জানি এর সীমা এবং নিয়মিত মদ্যপান আমাদের কি ক্ষতি হবে। আমরা জাঙ্ক ফুড খাই যাতে মোটা হয়ে অসুস্থ হয়ে যাই –তারপরও আমরা খেতে থাকি।
আমি বলেছি, পৃথিবীতে অন্য কোন প্রজাতি এটি করে না। আমি উপরে যে অসুখী ও হতাশার কথা বললাম এর সাথে অবশ্যই এর সম্পৃক্ততা আছে। শরীরের প্রতি আমরা যথেষ্ট যত্নবান নই এই কারনেই যে আমরা জীবন সম্পর্কে উদাসীন –শুধু আমাদের নিজেদের নয় অন্য কারো ব্যাপারেও।এই গ্রহে আমাদের অস্তিত্ব আমাদের কাছে সামান্য অর্থ বহন করে।
এখানে মানুষের আত্ম-ধ্বংসের দশটি পয়েন্ট রয়েছে (লাইভ সায়েন্স ডটকমের সৌজন্যে)
গসিপিং
জুয়া
মানসিক চাপ
শরীরের পরিবর্তন
বুলিং
খারাপ অভ্যাসকে আঁকড়ে থাকা (ধূমপান, মদ্যপান এবং অতিরিক্ত খাওয়া সহ, উপরে আলোচনা করা হয়েছে)
প্রতারণা
চুরি
সহিংসতার লোভ
মিথ্যা কথা

নেতৃস্থানীয় গবেষকরা মনে করেন সম্ভবত এসব কারনে আমারা বিলুপ্ত হয়ে যাব না, কিন্তু তারা সর্বসম্মতিক্রমে একমত যে আমরা কখনই আমাদের প্রকৃত সম্ভাবনায় পৌঁছাতে পারব না। এটা নিশ্চিত যে আমাদের এক্সপেরিমেট বা শাস্তি দিতে এখানে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টা পরিষ্কার, এখানে আমাদের থাকার কোন উদ্দেশ্যই নেই।
আত্ম-ধ্বংসের অন্য রূপ হল অনিশ্চিত সম্ভাবনার কারনে আত্ম ধ্বংস, এটা গ্লোবাল থার্মো-নিউক্লিয়ার যুদ্ধ নামে পরিচিত। উল্লেখযোগ্য-ভাবে কম সম্ভাবনা ফের শীতল যুদ্ধের অন্ধকার দিনগুলিতে ফিরে যাওয়া, কিন্তু আপনি কখনই ১০০ শতাংশ নিশ্চিত হতে পারবেন না যে এটি কখনই ঘটবে না। এমন একটা কারনই যথেষ্ট আপনাকে বিষণ্ণ করার জন্য।

****
আমরা কোথা থেকে এসেছি
আমরা কিভাবে পৃথিবীতে বেঁচে/টিকে আছি
আমরা আমাদের প্রয়োজনে বিকশিত হইনি
মানব-বিজাতীয় সংকরায়ন ও মিসিং লিঙ্ক
আমাদের শরীরের চুলের অভাব
খড় জ্বর,হাঁপানি ও ডায়েট
অত্যধিক প্রজনন ও প্রতিরক্ষামূলক ক্ষমতার অভাব
আমরা পৃথিবীর প্রকৃতি পাল্টে দিচ্ছি!
প্রযুক্তিগত উল্লম্ফন ও দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা!
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:৩৯
২১টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×