প্রশ্নঃ আপনি এই ভদ্রলোককে চিনেন? যদি চিনে থাকেন তো তার সন্মন্ধে কতটুকু জানেন? আমার ধারনা আপনি এঁর ব্যক্তিগত বিষয় সন্মন্ধে খুবই জানেন। এই ভদ্রলোক নিজেকে যেভাবে অদৃশ্য পর্দা দিয়ে মুড়ে রেখেছেন তা ভেদ করে যা কারো প্রবেশই হয়তো অসাধ্য। কিন্তু এই অতি উন্নত টেকনোলজির যুগে সেটা কি করে সম্ভব তা আমি ভেবেই পাই না।
বাঙ্গালীরা কি এতটা অন্তর্মুখী হয়? এই যে শুনি সারা পৃথিবী জুড়ে বাঙ্গালীরা বাগাম্বড় করে। ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে নিজেকে উপস্থাপন করে। আসলে খালি কলসি নাকি বেজে বেশী। আর উদ্ভাবন ও ব্যাবসা এদুটোতে বাঙ্গালীর লেজে গোবরে অবস্থা।
অথচ ত্রিশ কোটির বাঙ্গালী অধিকাংশ তার জীবনকালের প্রায় অধিকাংশ সময় বুঁদ হয়ে থাকে ব্যাবসার ভাবনায়। প্রতিটা বাঙ্গালী ব্যাবসায়ি হতে চায় কিন্তু সফলতার হার নাকি শুন্যের কাছাকাছি। দু-চারজন যা ও সফল হয় তার পেছনেও অনেক কেচ্ছা কাহিনী থাকে। দৈবক্রমে, ধান্দাবাজি, বাটপারি,অসাধুতা, রাজনৈতিক আশির্বাদপুষ্ট, ট্যাক্স ফাকি, ব্যাঙ্কের টাকা চুরি সহ অনেকগুলি কারন এর পেছনে নাকি লুকিয়ে থাকে।
ব্যাতিক্রম নাকি উদাহরণ নয়। দু-একজন ক্লিন ইমেজ নিয়ে এর ফাঁক ফোকর দিয়ে বের হয়ে গেলে তার বা তাদের সফলতাকে উদাহরণ হিসেবে টেনে আনা ঠিক হবে না। তবুও এত শিয়াল রাজাদের মাঝখানে দু-চারটে সিংহ সদর্পে ঘুরে বেড়ালে তাদের সেটা সবার নজর কাড়ে- পুরো জঙ্গলের ও ইজ্জত বাড়ে।
***
প্রথমে প্রশ্ন করে ছিলাম বাঙ্গালীরা কি এত অন্তর্মুখী হয়? এমন একজন প্রবাসী বাঙ্গালীকে তুলে ধরতে চেয়েছি যিনি আধুনিক ইনফরমেশন ও টেকনোলজির একজন শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিত্ত্ব হয়েও তার ব্যক্তিজীবনকে রেখেছেন লোকচক্ষুর অন্তরালে।
১৫ বছর বয়সে, তিনি ওরাকলে নিয়োগপ্রাপ্ত সর্বকনিষ্ঠ প্রকৌশলী ছিলেন। যিনি মারেকি’র মত ক্লাউড নেটওয়ার্কিং এর সহ উদ্ভাবক ও ফাউন্ডার সি ই ও। পরে ১.২ বিলিয়ন ডলারে ২০১২ সালে মারেকি’কে কিনে নেয় আরেক নেটওয়ার্কিং জায়ান্ট ‘সিসকো’। সেখানেও তিনি সিও হিসেবে যোগদান করে মারেকি-সিসকো’কে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যান।
এমআইটিতে পড়ার সময় সঞ্জিত ও জনে’র পরিচয় হয়। তারা দুজনেই পিএইচ.ডি. ক্যামব্রিজ, ম্যাসাচুসেটসে বিনামূল্যে ওয়াইফাই আনার স্বপ্ন ছিল এমন শিক্ষার্থীরা। ফলাফলটি ছিল ‘মেরাকি’ নামে একটি ব্যবসায় এই জুটির প্রথম পাঞ্চ।
মেরাকি তৈরির পর থেকে, সঞ্জিত সফ্টওয়্যার, হার্ডওয়্যার এবং ক্লাউডকে সমন্বিত সিস্টেমে একত্রিত করার সহজ পদ্ধতি শিখেছেন। তিনি শিল্প বিশ্বের জন্য উত্সর্গীকৃত অনুরূপ সিস্টেমের একটি স্বতন্ত্র অভাব উল্লেখ করেছেন। এটি পরিবর্তন করার জন্য সঞ্জিতের প্রচেষ্টা ছিল ‘সামসার’। সেখান থেকে বের হয়ে তিনি তার পুরনো বন্ধু ও সহকর্মী জন বিকেট এর সাথে যৌথভাবে একটি IoT প্ল্যাটফর্ম Samsara, ‘সংসার’ একটি সংস্কৃত শব্দ যা ইংরেজিতে ‘জন্ম ও মৃত্যুর চিরন্তন চক্র’ প্রতিষ্ঠা করেন।
সামসারে’র বিকাশে সঞ্জিতের মনোযোগ ছিল পরিবহন, উত্পাদন এবং নির্মাণের মতো শিল্পগুলিতে সহায়তা করা। কোম্পানির ব্যবসায়িক মডেলটি তার হার্ডওয়্যার এবং একটি সাবস্ক্রিপশন-ভিত্তিক পরিষেবা উভয় বিক্রির উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয় যা কোম্পানিগুলি তাদের সম্পদের ট্র্যাক রাখার জন্য ব্যবহার করতে পারে।
আজ, Samsara একটি চিত্তাকর্ষক স্টার্টআপ যা সাম্প্রতিক মাসগুলিতে ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। মাত্র সাইত্রিশ বছর বয়সে সঞ্জিত বিশ্বাসের উদ্ভাবিত ও প্রতষ্ঠিত সামসার এর F ফান্ডিং রাউন্ডের মূল্য ৬.৩ বিলিয়ন ডলার দাঁড়ায়।
সঞ্জিত স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্স এবং ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ বিএস নিয়ে টেক স্টার্টআপের একজন সফল প্রতিষ্ঠাতা হওয়ার পথে যাত্রা শুরু করেন। এরপর তিনি কম্পিউটার বিজ্ঞানে এমএসসি করতে যান এবং অবশেষে তার পিএইচ.ডি. এমআইটিতে, যদিও তিনি এই চূড়ান্ত ডিগ্রিটি কখনই শেষ করেননি এবং বর্তমানে ছুটিতে রয়েছেন।
এখন আসি অন্য একটা বিষয়ে; ২০২২ সালে সঞ্জিত বিশ্বাসের বয়স কত জানেন?
উইকি বলছে তার বয়স নাকি ৩৯-৪১ এবং তার জন্ম সাল ৮০ অথবা ৮১ সালে। ব্যাস এইটুকুন! কেউ জানেনা তার সত্যিকারে বয়স কত কেউ জানেনা তার জন্মের সাল?
কোথায় সে জন্মেছে- তার বাবা মায়ের নাম কি? এ বিষয়গুলো নেট দুনিয়া তন্ন তন্ন করে খুঁজেও পেলামনা?
***
একখানে পেলাম শুধু তিন সন্তানের বাবা সে। বাসস্থান: ডোলোরস পার্কের কাছে একটি বড় দুই বেডরুমের ভিক্টোরিয়ান ফ্ল্যাট। মাঝে মাঝে বউকে নিয়ে রাস্তায় একটু হাটাহাটি করেন আর তাদের প্রিয় Bi-Rite Creamery-এ আইসক্রিম খান।
তার কোন গৃহকর্মী নেই। নিজের পোষাক নিজেই লন্ড্রি করেন। দামী গাড়িতে চড়েন না এমনকি কোন অভিজাত ক্লাবের মেম্বারও নন তিনি। তিনি তার ব্যক্তি জীবন ও পরিবারকে মিডিয়া থেকে একেবারেই দূরে সরিয়ে রেখেছেন।
তার সোশ্যাল লাইফ ও পার্শোনাল লাইফ জানার জন্য বহু আগে এক সাংবাদিক মাত্র ছাব্বিস বছর বয়েসী এই প্রতিভাধর যুবকের সানফ্রানসিসকোর অফিসে গিয়েছিল সাক্ষাৎকার নিতে।
তার লাইফস্টাইল নিয়ে প্রথম প্রশ্নটা করার পরে তিনি দীর্ঘ বিরতি দিয়ে বলেছিলেন; আমি নিজেকে দোষী সাব্যস্ত করছি বেশী দাম দিয়ে একটা প্রিয়ুস গাড়ি কেনার জন্য ।
সেজন্য আমি এখন কম ‘রামেন’(মুলত রেস্টুরেন্টে) খাই। বেশী করে মুদি ক্রয় করি( এর অর্থ তিনি খরচ কমানোর জন্য এসব বাসায় রান্না করে খান)।
***
মার্কিন অর্থনীতির উত্থান এবং পতন দেখে বড় হয়ে, অনেক তরুণ উদ্যোক্তা অভিনব, ফসিল ফুয়েলের স্পোর্টস কারের পরিবর্তে উচ্চ-সম্পন্ন বৈদ্যুতিক গাড়ি কিনছেন৷ এবং তারা অভিনব নাইটক্লাবগুলিতে ভিআইপি রুমগুলি পূরণ করছে না বা নিউইয়র্কে উইকএন্ড শপিং ট্রিপের জন্য প্রথম-শ্রেণীতে বিমান ভ্রম করছেন না। যখন তারা ৭০-ঘন্টা কাজের সপ্তাহে প্রবেশ করে না, তখন তারা জিমে ব্যায়াম করেন, শহরের পার্কগুলিতে পিকনিক করেন এবং ভবিষ্যতের জন্য তাদের কষ্টার্জিত নগদ জমা করেন।
সাপ্তাহিক কাজের সময়সূচী: ৬৫ থেকে ৭০ ঘন্টা, সর্বদা।
কাজ এবং সামাজিক জীবনের মধ্যে ভারসাম্য সম্পর্কে: "এটি অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে কাজ করতে আপনার অন্যরকম এক অনুভুতি কাজ করবে। মেরাকি'র অনেক লোককে আমি দীর্ঘদিন ধরে চিনি। এটা একরকম মনে হয় যে কাজ কিছু অর্থে একটি সামাজিক জীবন। আমি মনে করি না আমি একজন ওয়ার্কহোলিক, আমি কাজ করতে অনেক মজা পাইএবং আমি ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করি। আমি কখনই ৯-থেকে-৫ টা পর্যন্ত কাজ করিনি, তাই আমি সত্যিই জানি না এটি কেমন। তবে একটি ভয় ছিল, এটি বিরক্তিকর কিছু করতে গিয়ে আটকে যাওয়ার ভয় বা কাজ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলার ভয়।
Personal Stats
Personal Life
Sanjit Biswas is a married man. Sanjit Biswas’s wife is not available.
He has three children.
He did not share any information regarding his personal life and any previous relationship.
Age, Height, and Weight
In 2022, Sanjit Biswas was 40 years old. Sanjit Biswas’s height is Unknown. His weight is Not Available.
Professional Life
Sanjit Biswas started his business through different hardware and software companies. He served as the CEO of Samsara, located in San Francisco.
The company also operates in San Jose, Atlanta, and London, with over 20,000 customers worldwide.
Source of Wealthsensor systems, Self MadeResidenceSan Francisco, California
EducationMaster of Science, Massachusetts Institute of Technology; Bachelor of Science, Stanford University
#1676 Billionaires (2022)
* আমি ইনফরমেশন টেকনোলজি সন্মন্ধে খুব কম জানি সেজন্য লেখায় তথ্যগত ভুল-ভ্রান্তি থাকা অস্বাভাবিক নয়।
***
তথ্যসুত্রঃ
ক্লাউড ওয়েজ
উইকি
আই এন সি
ফোবার্স
বাঙ্গালীর কৃর্তীগাঁথা নিয়ে বাকি পর্বগুলো;
*BOSE দের তিন পুরুষ
*দুই বিমলের কীর্তি!!!
*একজন মজুমদার ও তার দ্যা গেরিলা
*মাস্টারদা’র শিষ্য সুরেশ দে ও তার ‘শ্রীলেদার্স’
*শরৎ চন্দ্র দাশঃ 'পণ্ডিত,পরিব্রাজক ও গুপ্তচর' #১
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৩:১২