এডামসন দম্পত্তি কেনিয়ার নাইরোবি’তে থাকে। জয় এডামসন আফ্রিকার সমৃদ্ধ সাভানার নির্জনতায় বসে ছবি আকেন আর তার স্বামী জর্জ এডামসন নাইরোবিতে গেম ওয়ার্ডেন। একদিন একটা গ্রামে একটা নরখাদক সিংহ ঢুকে পড়লো। বেশ ক’জন মানুষ গেল সিংহের পেটে। ডাক পড়লো দুদেঁ শিকারী জর্জের, সিংহটাকে মেরে দিতে।
বন্দুক বাগিয়ে জর্জ গেলেন সিংহ শিকারে। তার গুলিতে সিংহটা মারাও পড়লো। কিন্তু আচমকা সবাইকে অবাক করে দিয়ে সিংহটার জোড়া প্রকান্ড এক সিংহীও আক্রমন করলো শিকারীদের। বাধ্য হয়েই জর্জ এটাকেও গুলি করে ভুপাতিত করে দিলেন। কিন্তু তখন দেখা গেল এই সিংহ পরিবারে হাজব্যান্ড ওয়াইফ ছাড়াও ৩টে ছোট ছোট বাচ্চা আছে। এদেরকে বনে ফেলে আসা যায়না। জর্জ নিয়ে এল তিনটাকেই তার বাড়িতে। জর্জের স্ত্রী জয় পরম মমতায় লেগে গেল সিংহের বাচ্চা পালনে। কিন্তু ৩টেই ভয়ঙ্কর দুষ্টু। এদের অত্যাচারে বাসার সবার জীবন ঝালাপালা। বাসায় অতিথী আসতেও ভয় পায়। এদের মধ্যে সবচেয়ে ছোটটা আবার দুর্দান্ত। সাইজে অন্য বোনদের চেয়ে অনেক ছোট হলেও সাহসে আর স্বভাবে ডানপিটে। জয় এর নাম দিল এলসা।
জর্জ, জয় আর এলসা।
কিন্তু তিন তিনটে সিংহী শাবককে মানুষ করা থুরী সিংহ করা সহজ কথা নয়। যতই পোষা হোক না কেন, এদের দুষ্টুমি’তে সবাই আতঙ্কে অস্থির। জর্জের অফিস থেকে বুদ্ধি দিল এদেরকে চিড়িয়াখানায় দিয়ে দিত। কিন্তু এডামসন দম্পত্তির এদের প্রতি প্রচন্ড মায়া বসে গেছে। তাই এলসা’কে রেখে বাকী দুই বোনকে চিড়িয়াখানায় দিয়ে দেয়া হলো। এলসা দিনে দিনে বড় হয়ে পূর্ণবয়স্ক সিংহীতে পরিণত হয়ে গেছে। কিন্তু বয়স বাড়লেও স্বভাব পাল্টায়নি। সারাদিন কাটে দুষ্টুমিতে। সৌখিন শিকারীরা আসে সাভানায় সিংহ শিকার করে নাম কামাতে, এরকম শিকারীর দল প্রায়ই ভুল করে বসে এলসা’কে দেখে। একদিন এলসা খেলাচ্ছলে হাতির পালকে গরম করে দেয়, হাতির দল গ্রাম ফসল ধ্বংস করে দেয়। জর্জের অফিস থেকে কড়া নোটিশ পাঠালো, এলসাকে আর সাথে রাখতে পারবেনা। ওকে এবারে চিড়িয়াখানায় দিয়ে দিত হবে। কিন্তু এডামসন দম্পত্তি চায়না তাদের প্রিয় এলসা চিড়িয়াখানায় বন্দি জীবন কাটাবে। তারা ঠিক করলো এলসা’কে রিওয়াইল্ড করবে। কিন্তু সেটা মহা বিড়াম্বনা। সারাদিন না খাইয়ে এলসাকে হরীনের পালে ছেড়ে দিলে হরীনের সাথে এলসা খেলায় মত্ত হয়ে যায়। বুনোশুকরএর উলটো ধাওয়া খেয়ে ল্যাজ গুটিয়ে উর্ধশ্বাসে পালাচ্ছে প্রকান্ড এক সিংহী-এলসা।
বর্ণ ফ্রি'র শ্যুটিং। সত্যিকারের এডামসন দম্পত্তির সামনে সিনেমার এডামসন দম্পত্তি
একসময় জয় আর জর্জের অধ্যাবসায়ে এলসা আবার বুনো হয়ে যায়, এবং ফিরে যায় অরণ্যে। কিন্তু এডামসন দম্পত্তি কিংবা এলসা কেউই ভুলতে পারেনা একে অপরকে। এলসাকে কি ওরা আবার দেখতে পারবে?
এই হলো বর্ণ ফ্রি মুভীর প্লট। কলাম্বিয়া পিকচারের ব্যানারে বর্ণ ফ্রি মুক্তি পায় সেই ১৯৬৬ সালে। রঙ্গিন ছবি কিন্তু সেই যুগের টেকনোলজি’তে। তবুও বলতে হয় এই মুভীটা দেখলে ফেভারিটের লিস্টে না রেখে পারা যাবেনা। মুভীটা বেস্ট মিউজিক আর সাউন্ডের ক্যাটাগরীতে সে সময় ২টা অস্কার পাইছিলো। আর গোল্ডেন গ্লোবে বেস্ট মুভী, বেস্ট একট্রেস আর বেস্ট মিউজিক এওয়ার্ড পাইছিলো। ওহ বলতে ভুলে গেছি, মুভীটা সত্যি ঘটনা নিয়ে বানানো।
মুভীটার টেকনিক্যাল এডভাইসর হিসাবে স্বয়ং জর্জ এডামসন কাজ করছিলেন। সিনেমায় জর্জ আর জয়ের ভুমীকায় অভিনয় করেন বিল ট্রেভার্স আর ভার্জিনিয়া ম্যাককেন্না। যারা সত্যিকার জীবনেও স্বামী স্ত্রী ছিল। এই সিনেমাটা করে তারা ওয়াইল্ড লাইফ একটিভিস্ট হিসাবে জীবন যাপন করে। ভার্জিনিয়া মারা যান ২০১০ সালে।
মুভীটার ডাউনলোড লিঙ্কঃ ডাইরেক্ট ডাউনলোড লিঙ্ক (স্টেজভু থেকে), সিঙ্গেল ফাইল .
আইএমবিডি’তে বরাবর ভালো মুভীগুলো পুউর রেটিং পায়। কেন কে জানে। তবে বর্ণফ্রি’র আইএমবিডি রেটিং ৭.১। খারাপ না।
আমার রিভিউ দেখে ভালোলাগবে আর ডাউনলোড শুরু করবেন এমন আশা করি না। তাই সত্যিকারের এলসার কিছু ছবি দিলাম। ছবি গুলো জর্জ কিংবা জয় এডামসনের তোলা।
এলসা আর তার দুই বোনকে কোলে সত্যিকারের জয় এডামসন।
জর্জের সাথে দুষ্টুমিতে মেতেছে এলসা (ছবি জয় এডামসন)
দুষ্টুমিতে রত এলসা।
গাধার পালের সামনে আতঙ্কে অস্থির।
এলসা আবার জীপ গাড়িতে না চেপে জঙ্গলে যেতেই পারেনা।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ৮:৩৭