গত গ্রীস্মে কুইন্সের শিখদের পাড়ায় একটি কলেজে পড়ুয়া মেয়ের সাথে কয়েক মিনিটের জন্য পরিচয় হয়েছিলো, কথা হয়েছিলো; সে কেমন রহস্যময় হাসি হাসছিলো সারাক্ষণ। আমি কারণ জানতে চাইলে, সে আমাকে বলে, "তুমি তাড়াহুড়ো করে বেশী আগে চলে এসেছ"।
এলাকাবাসী গত জুলাইমাসে কুইন্সের এক যায়গায় আড্ডা ও খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্হা করেছিলো; কোভিডের কারণে, আমার স্ত্রী যাবে না। আমি হাইওয়ে ধরে যাওয়াতে বেশ আগে গিয়ে পৌঁছে গেছি। ভাবলাম আশপাশটা ঘুরে দেখি; ৩/৪ মাইল যেতে দেখি শিখদের এলাকা, তাদের মন্দির, দোকান দাকান; রবিবার, সবই মোটামুটি বন্ধ, রাস্তায় লোকজন নেই বললেই চলে। ভাবলাম, শিখদের চা খেয়ে দেখি, কিন্তু কোথায়ও চা'দোকান, বেকারী টাইপের কিছু চোখে পড়লো না।
এক মোড়ে ট্রাফিক লাইটে দাঁড়ায়ে আছি, একটি শিখ মেয়ে আমার সামনে দিয়ে রাস্তা ক্রস করে, ১টি বাড়ীতে ঢুকে পড়ছে; আমি ডাকলাম, সে আমার পাশে এসে প্রশ্ন করলো,
-হারায়ে গেছো?
-না, চা খেতে চাচ্ছি।
-সোজা চালাও, ৪ ব্লক পরে ডানকিন ডোনাট পড়বে।
-আমি শিখদের বানানো চা খেতে চাই।
-শিখ পুরুষেরা পাকঘরে যায় না, মেয়েরা চা বানায়; তুমি দেরী করে ফেলেছ।
আমি হাসলাম; সে ডিরেকশান দিলো, পাশের রাস্তা দিয়ে কিলোমিটার'খানেক পেছনে গেলে, একটি মিষ্টির দোকান পড়বে। আমি পেছনে গিয়ে খুঁজে পেলাম; সাধারণ, পাকিস্তানীদের মতো মিষ্টি ও চা। খেয়ে ফেরার সময় মেয়েটার কথা মনে পড়লো, ওকে যেই রাস্তায় দেখেছিলাম, সেই রাস্তা ধরে যাচ্ছিলম; তাকে যেই বাড়ীর সামনে দেখেছিলাম, সেই বাড়ী পার হওয়ার ২/৩ ব্লক পর দেখি, সে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে, লাইট পার হবে; লোকজন নেই। আমি তার পাশে গিয়ে থামলাম, সে আমাকে দেখে হেসে ফেললো,
-চা খেয়েছ?
-খেয়েছি, ভালো লেগেছে!
-আমার জন্য আনোনি?
-তখন সাহস করে তোমাকে নিমন্ত্রণ করিনি।
-সাহাস রাখতে হয়!
-তুমি এখানে কি করছ?
-আমি বাড়ী ফিরছি, খালাকে কিছু টাকা দিতে খালার বাড়ী গিয়েছিলাম।
-তোমাকে এগিয়ে দিই?
-তোমার সময় থাকলে, আমাকে একটু সাহায্য কর, আমার ১টা কাজ করে দাও; খালা আমাকে একটা ছোট এয়ার কন্ডিশনার দিতে চেয়েছেন, আমি গাড়ীর জন্য নিতে পারছি না; বাবা গাড়ী নিয়ে বাইরে গেছে। বাবাকে বললে, তিনি নিতে চাইবেন না।
-চল।
খুবই ছোট এয়ার কন্ডিশনার, ট্রাংকে রেখেছি। সে খুবই খুশী, আমার খোঁজখবর নিলো; সে কলেজে পড়ে; সামারেও ক্লাশ নিচ্ছে। তার রুমে গরম, বাবা এয়ার কন্ডিশনার কিনে দিচ্ছে না; তাই খালা দিয়েছে, সে খুবই খুশী। সে বললো,
-তুমি তো এই রাস্তায় ফেরার কথা না!
-এই রাস্তাটা কেন যেন পরিচিত পরিচিত মনে হচ্ছিলো।
সে সারাক্ষণ হাসছিলো, এবার আরো বেশী করে হাসলো। কয়েক ব্লকের মাঝে তাদের বাড়ী। আমি গাড়ী থামা্য়ে এয়ার কন্ডিশনারটা দরজা অবধি এগিয়ে দিলাম; সে কেমন যেন বেশী হাসছিলো। আমি বললাম,
-তুমি এত বেশী হাসছ কেন?
-তুমি তাড়াহুড়ো করে অনেক আগে পৃথিবীতে চলে এসেছ।
-মনে হয়, আবার আসতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৪:৪৮