আমার ক্লাশমেট, মুসা শহুরে ছেলে ছিলো, ১০ম শ্রেনীতে আমাদের স্কুলে ভর্তি হয়েছিলো; মুসার বাবার পোষ্টিং হয়েছিলো আমাদের থানায়; শহরে পড়ার সময় তাদের স্কুলে কো-এডুকেশনে ছিলো না, সে মেয়েদের বুঝতো না।
মাস'খানেক পর এসএসসি পরীক্ষা; ভয়ানক গরম; ভরদুপুরের রোদে বুড়োমিয়াকে রোদে বের হতে মানা করে, আমি নিজেই গরু-ছাগলগুলোকে পানি খাওয়ায়ে, ঘরে বেঁধে, গোসল করেছি। গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে পুর্বের মাঠের দিকে তাকালাম; দুপুরের রোদে মাঠেের দুরপ্রান্তে মরীচিকার সৃষ্টি হয়েছে; বেশ দুরে, বিনা-ছাতায় একজন মানুষ আমাদের পাড়ার দিকে আসছে; খেয়াল করে দেখলাম, ইহা আমার ক্লাশমেট মুসা; হায়রে বেকুব, আর সময় পেলো না!
টিউবওয়েল থেকে পানি নিয়ে, লেবুর শরবত বানিয়ে কাছারিতে আসার ৫ মিনিট পর মুসা এসে পৌঁছলো; ঘামে ভিজে একাকার; শরবত খেয়ে বলে,
-আরেকটু নিয়ে আয়।
-তুই হাতমুখ ধুয়ে নেয়, আমি ভাত নিয়ে আসি।
-পরে খাবো, তোর সাথে কথা আছে, আমি শেষ; আমি বাঁচবো না!
-মরার আগে শেষবার খেয়ে নেয়, আমার ক্ষুধা লেগেছে।
ঘটনা হলো, সে আমার ১ ভাইপোর মারফত নবম শ্রেণীর ছাত্রী, হাবিবুর নাহারকে এটা চিঠি পাঠায়েছে; চিঠি পাঠানোর কথা আমাকে কিছুদিন আগে বলেছিলো; আমি বলেছিলাম,
-ভালো লাগলে ওকে মুখে বলিস; চিঠি, মিঠি লিখিস না; গ্রামে এসব চলে না।
নাহার চিঠি পেয়ে ভাইপোকে বলেছে, চিঠি বিএসসি স্যারের কাছে যাবে। এই স্যারটি মেয়েদের গার্ডিয়ান, এসব চিঠি ইত্যাদির ঘোর বিপক্ষে; উনার কাছে গেলে মুসার মানসন্মান যাবে; মুসা ভাবছে, স্যার ইহা মুসার পরিবারকেও জানাতে পারে। আমি মুসাকে অভয় দিলাম, আমি ব্যবস্হা নেবো।
বিকেলে স্কুলে গেলাম, ফুটবল খেলা চলছে; নাহার সায়েন্স ল্যাবের সামনের ব্যান্চে বসে খেলা দেখছে একা; আমি গেলাম; সে সালাম দিলো, আমি কথা পাড়লাম,
-নাহার, মুসা তোমাকে কিছু লিখেছে মনে হয়, সে খুব চিন্তিত।
-আমি চিঠি পেয়েছি, চিঠিটা আমি স্যারকে দেবো আগামীকাল; আপনার বন্ধু কি পেয়েছে? আপনি মানা করেননি কেন?
-আমি মানা করেছিলাম; কিন্তু সে তোমাকে কিছু বলতে চেয়েছে; সে মেয়েদের লজ্জা করে। তোমার ভালো লাগলে ওকে জানাইও; ভালো না'লাগলে চিঠিটা ফেরত দিও; স্যারকে দেয়ার দরকার নেই; স্যার ওকে অপমানিত করবে, সামনে ওর পরীক্ষা।
-চিঠিটা আমি স্যারকে দেবো।
-চিঠি লিখেছে তোমাকে, স্যারকে কেন ইহার মাঝে আনছ?
-আপনি যান; আপনার বন্ধুর জন্য আপনাকেও জবাবদিহি করতে হবে।
পরেরদিন টিফিনের সময়, নাহারের ঘনিষ্ঠ বান্দ্ধবী হাসিনা আক্তারকে বললাম, চিঠিটা নাহার থেকে নিয়ে নিতে। সে হাসছিলো,
-আপনি কিভাবে চিঠি ইত্যাদিতে জড়ালেন?
-ধুর, এসব আমার এলাকা নয়।
-ঠিক আছে, মুসা ভাইয়ের চিন্তার কোন কারণে নেই; আমি ব্যবস্হা করবো।
বিকেলে হাসিনা গম্ভীর হয়ে জানালো যে, নাহার ক্ষেপেছে, সে চিঠি স্যারকে দেবে; তাকে বুঝানো সম্ভব হয়নি। ছেলেরা খেলার শুরু করার পর, নাহার কমনরুম থেকে বের হয়ে বেন্চে বসলো; আমি গিয়ে বললাম,
-নাহার, চিঠিটা স্যারকে দিও না, তোমার পছন্দ না'হলে, চিঠিটা ফেলে দিও।
-আমি আগামীকালই দেবো।
-ঠিক আছে দিও, পরে কিন্তু তোমারই মন খারাপ হবে।
মুসা স্কুল এলাকায়ও যাচ্ছে না আজকাল, পোষ্ট অফিসের সামনে বসার যায়গা আছে, সেখানে আমার জন্য অপেক্ষা করছিলো। আমি বললাম,
মুসা, নাহার চিঠি ফেরত দেয়নি, চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই, সে চিঠি স্যারকে দেবে না।
-তোর কি মাথা খারাপ হয়েছে! সে অবশ্যই দিবে স্যারকে, আমার মাথা কাটা যাবে।
-সে চিঠি যদি স্যারকে দিতে চাইতো, ইতিমধ্যে দিয়ে দিতো। সে কখনো স্যারকে দেবে না। বাসায় গিয়ে পরীক্ষার জন্য পড়গে।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:০১