somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বুকের ভেতর মৃত নদী (পর্ব সাত)

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আগের পর্ব


আট
মানুষের জীবন বহমান নদীর চেয়ে কম তো কিছু নয়!সময়ে সাথে সাথে জীবনও বয়ে চলে।শ্রাবণীর জীবনও বয়ে চলেছে তার নিজস্ব গতিতে।অনার্স ফাইনাল শেষ হওয়ার পর বেশ কিছুদিনের একটা অবসর।এধরনের ছুটি শ্রাবণী বাড়িতে মা আর বোনের সাথেই কাটায়।তবে এভাবে বাড়ি যাওয়া দেখে শ্রাবণীর ছোট মামা খুব বিরক্ত হন।তিনি ঢাকায় থাকেন।স্বামী স্ত্রী দুজনেই ভাল চাকুরী করেন।নিঃসন্তান দম্পতির ছিমছাম জীবন।তার ইচ্ছা শ্রাবণী এ সময় তার বাসায় থেকে বিভিন্ন কোর্স করুক।শ্রাবণীর অনেক দায় দায়িত্ব তার মামা নিজ থেকেই পালন করেন বলে শ্রাবণী তার কাছে প্রচুর ঋণী তাই সে তর্ক করেনা।শুধু মনে মনে ভাবে মায়ের সাথে কাটানোর এমন সময় কি আমি আর পাব?সে জানে যে সে মেয়ে সন্তান,তাই একদিন পরের ঘর সাজাতে নিজের পরিবার ছাড়তে হবে।পড়ালেখা শেষ হলে শ্রাবণী তো চাকরিতে ঢুকবে।তখন কি শিক্ষা জীবনের ছুটির মত করে এতটা ছুটি পাবে?তাই সে ছুটির পুরো সময়টা বাসায় মায়ের জন্য রাখে।

শ্রাবণীদের ফ্যামিলি বন্ডিং খুব ভাল।মায়ের সাথে সে খুব ফ্রী, ছোটবোনের সাথেও তেমনি।তাই চমৎকার সময় কাটে বাসায়।তুষারের কথাও সে বাসায় বলেছে।মা ব্যাপারটা তেমন পছন্দ করেনটা সেটা বোঝাই যায়।তবে কড়া শাষণে স্তব্ধ করে দেননি তিনি শ্রাবনীকে।হয়ত দেখতে চেয়েছেন ভবিষ্যতে কি হয়!


ছুটি কাটিয়ে ক্যাম্পাসে ফেরার কিছুদিনের মধ্যে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হলো।পেট্রোলবোমা,অবরোধ আর জ্বালাও পোড়াও এর মধ্যে ক্লাস হওয়া সম্ভব নয় তাই অফুরন্ত অবসর।অবসর থাকলেও যেন কেমন একটা অস্থিরতা বোধ করে শ্রাবণী মাঝে মাঝে।আর হয়ত এক কি দেড় বছর।তারপর হলের এই নিশ্চিত আবাস ছাড়তে হবে তাকে।তারপর? জীবনযুদ্ধে নামতে হবে,নিজের জন্য উপযুক্ত পেশা খুঁজে নিতে হবে একটা যাতে মায়ের উপর বোঝাটা কমানো যায়।শ্রাবণী কিছু বই কিনে পড়াশোনা শুরু করে।সাধারন জ্ঞান জাতীয় পড়াশোনা তার কাছে জঘন্য লাগে কিন্ত সব পরীক্ষাতেই এসব আসে।আচ্ছা রাতদিন ধরে মুখস্ত করা এইসব হাবিজাবি দিয়ে কি কারো মেধা বা দক্ষতা যাচাই করা যায়? কোন সেতুর স্প্যান কয়টা বা কোন উগান্ডার প্রেসিডেন্ট এর নাম কি এসব জেনে দেশের মানুষের কোন উপকারটা করা যাবে?খারাপ লাগলেও শ্রাবণী একটু একটু করে চেষ্টা করতে থাকে।তুষারকেও উৎসাহ দেয় কারন তার উপর শ্রাবণীর অনেক কিছু নির্ভর করছে।


ফ্রেব্রুয়ারী মাসের এক বিকেলে শ্রাবণী সুন্দর করে সেজে লাল রঙের একটা সুতি শাড়ি পড়ল।এই শাড়িটা তাকে তুষার গিফট করেছিল।এমনিতে তুষার কোনো দিবস পালন করার ব্যাপারে আগ্রহী না।এটা ওটা গিফট করার প্রবণতাও তার মধ্যে তেমন নেই, এমনকি সেটা জন্মদিন হলেও নয়।সম্পর্ক হওয়ার পর প্রথম জন্মদিনে সে শ্রাবণীকে উপহার দিয়েছিল লেঃ কর্নেল এম এ হামিদ পিএসসি’র লেখা 'তিনটি সেনা অভ্যুত্থান ও কিছু না বলা কথা' বইটি।সেইদিনই তুষারের গিফট সেন্স সম্পর্কে শ্রাবণী ধারণা পেয়ে গিয়েছিল।শ্রাবণী এমনিতে বইয়ের পোকা কিন্ত ভারিক্কি ধরনের প্রবন্ধ টাইপের বই তার পছন্দ নয়।তার উপরে ইতিহাস তার দুচোখের বিষ।প্রেমিকাকে লোকে কবিতা বা গল্পের বই উপহার দেয় কিংবা এমন কিছু যা মেয়েটি অনেকদিন ধরে খুঁজে বেড়াচ্ছে।কেউ কি দেশের জঘন্যতম হত্যার ইতিহাসের বই দেয়?যাই হোক সে হিসাবে এই শাড়িটি খুব সুন্দর।শ্রাবণীর খুবই পছন্দ শাড়িটি। কপালে একটা লালটিপ দিয়ে সে কয়েকটি ক্লিপ ছোট হাতব্যাগে ঢুকিয়ে নেয়। তুষারের আনা ফুল সে খোপায় দেবে,ফুল আগে এনে রাখলে চুপসে যায়।তাই এই ব্যাবস্থা। এখন তুষার আজগুবি কোন ফুল তুলে না আনলেই হয়।


বাইরে বের হয়ে শ্রাবণী দেখল সে যা ভেবেছিল ঠিক তাই।তুষার একটি ডালিয়া ফুলের ডাঁটা ধরে দাড়িয়ে আছে।পরনে ছাইরঙের একটা শার্ট।উফ! একটা পাঞ্জাবি তো সে পড়তে পারত!শ্রাবণী জানে তুষারের ড্রেস সেন্স খুব খারাপ তাই রাগ করে লাভ নেই।তবে এই ডালিয়া ফুল নিয়ে সে কি করবে?ডালিয়া কি কোনো মাথায় দেয়ার মত ফুল?তুষারের হোস্টেলের সামনে কিছু ডালিয়া ফুটতে দেখেছে শ্রাবনী।নির্ঘাত সেই ফুলেরই একটা তুলে এনেছেন অলস ছেলেটা। আজ সে ঠিক করেছে রাগ করবে না তাই সেই ফুলকেই চেপেচুপে সাইজ করে খোপায় বেঁধে নিল শান্তভঙ্গিতে।।

বিশেষ দিনগুলোতে ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে যেন মেলা বসে।উজ্জ্বল রঙের পোশাকে উচ্ছল তরুণদের দেখা যায় সর্বত্র। আসেপাশের মানুষজনও আসে বেড়াতে।সবমিলিয়ে ব্যাপারটা খারাপ লাগেনা তার।

ধীরপায়ে হেটে ঘুরেফিরে, মানুষের ভীড়ে ক্লান্ত হয়ে দুজনে রহিম ভাইয়ের চায়ের দোকানে এসে বসল।দুকাপ চা অর্ডার দিয়ে পেছনে ফিরতেই দেখে স্বর্ণা দাঁড়িয়ে আছে।তাদের দেখে বত্রিশ দাঁত বের করে হেসে উঠলো সে।পুরনো বয়ফ্রেন্ডটিকে বগলদাবা করে তাদের সামনের বেঞ্চে এসে বসল।শ্রাবণীর হাসপাতালে থাকার সময়টিতেই আবার এই ছেলেটির সাথে মিটমাট হয়ে গেছে।বয়ফ্রেন্ডকে ফিরে পেয়ে মেয়েটি প্রাণের বন্ধুকে আবার ল্যাং মেরেছে।বন্ধুটি অবশ্য তখন লাইটার দিয়ে সিগারেট ধরাতে ব্যস্ত, কোনোকিছুই খেয়াল করেনি।সিগারেটে একটা টান দিয়েই স্বর্ণাকে দেখে তুষার হাসিমুখে কুশল জিজ্ঞাসা করে।স্বর্ণা তার প্রেমিকের গা ঘেসে বসে আদুরে বিড়ালের মত করে উত্তর দেয়।প্রেমিক ছেলেটির শক্ত গড়নপযে এসব আলাপচারিতা তেমন পছন্দ হচ্ছেনা তা স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছিল।এক পর্যায়ে স্বর্ণা হঠাৎ জিগাসা করে বসে,এই তোরা বিয়ে কবে করবি?শ্রাবণী মহাবিরক্ত হয়ে যায়।মনে মনে ভাবে পড়াশোনা চলছে,কারও কোনো ইনকাম নেই, এখন কি বিয়ে করার সময়?তুই করবি বিয়ে এই সময় ফাজিল মেয়ে?পাব্লিক প্লেসে যেভাবে গা ঘেসছিস, আর একটু হলেই তো কোলে উঠে পড়বি।যে বয়ফ্রেন্ড গায়ে হাত তুলে আহত করে দেয়,একবার লোকজানিয়ে ব্রেক আপের পর তাকে নিয়ে আহলাদ করতে লজ্জা করেনা!

এটা সেটা নিয়ে বকবক করে শ্রাবণীর ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে দিয়ে স্বর্ণা একসময় উঠল।ততক্ষণে শ্রাবণীর মেজাজ সপ্তমে উঠেছে।তুষার ছেলেটা কেমন বেহায়া!বয়ফ্রেন্ড এর খাতিরে যে বান্ধবী প্রিয় বন্ধুকে দুই দুই বার ত্যাগ করে তার সাথে এত দাঁত কেলিয়ে কথা বলার কি আছে?রাগে রাগে শ্রাবণী রহিম ভাইয়ের কাছে এক প্যাকেট ভালো সিগারেট কেনে।কিনে সেটা তুষারের হাতে ধরিয়ে দিয়ে হোস্টেলে চলে যায়।তুষারের এজমার ভাব আছে।শীত বা ধুলাবালিতে খুব কাশি হয়।অনেকক্ষন থেকেই সে কাশছে।তার উপর এই সিগারেট খাওয়া।শ্রাবণী অনেক মানা করেছে কিন্ত তুষার কথা শোনে না বরং শ্রাবণী আসেপাশে থাকলেই যেন বেশি খায়।এতটুকু সময়েই গল্পে গল্পে দুই তিনটা সাবার করেছে সে। অন্যসময়ে মানা করলে বলে,তোমার পেটে যখন আমার একটা বাবু থাকবে তখন থেকেই খাওয়া একেবারে বাদ দেব বুঝেছি।শ্রাবণী তবুও আপত্তি করে।যে সিগারেট তার এত অপছন্দ রাগে রাগে শ্রাবনী সে সিগারেটই কিনে দেয় তুষারকে।তাও পুরো এক প্যাকেট!মাসের শেষ।হাতে টাকাও নেই তেমন,তবুও সে জিদ করে সিগারেট কিনে দেয়।মনে মনে ভাব খাক,খেয়ে মরে যাক স্বর্নার বন্ধু।আমারতো আর কেউ না সে।

রাতে ফোন দিয়ে তুষার শ্রাবণীকে সিগারেট গিফট দেয়ার জন্য ধন্যবাদ জানায়।শ্রাবণী ভাবে, হায় কপাল! এতটা অভিমানের কিছুই বোঝেনি সে।


নয়
শ্রাবণীর বিয়ের প্রস্তাব এসেছে।ছেলে ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে পাশ।পেশায় ম্যাজিস্ট্রেট। লম্বা চওড়া আছে।শ্রাবণীর সাথে মানাবে ভাল।

গ্রীষ্মের ছুটিতে বাড়ি গেলে শ্রাবণীর মা কথাটা তুলেন।ছেলেপক্ষ বেশ চাপ দিচ্ছেন তাকে।শ্রাবণী কথাটাতে পাত্তা দেয় না।হ্যাঁ প্রস্তাব ভাল।কিন্ত তার পড়ালেখা শেষ না হলে সে বিয়ে করবে না।তাছাড়া তুষারের ব্যাপারটাও তো আছে।

বিয়ে ব্যাপারটাতেই শ্রাবণীর আজীবনের ভয়।মেয়েদের বিয়ে হওয়া মানে নানান দায়িত্ব আর বিধিনিষেধ এর বেঁড়াজালে আটকে যাওয়া।যার সাথে বিয়ে হবে সে লোকটি যদি ভাল হয়,তবে তাও যা একটু বাঁচা।কিন্ত খারাপ হলে? সে কথা ভাবতে পারেনা শ্রাবনী। বড় সরকারি অফিসাররা বেশির ভাগই বউকে শোকেসে রাখার জন্য বিয়ে করে।চোখ ধাঁধানো সুন্দরী তো তাকে হতেই হবে,সাথে ভাল প্রতিষ্ঠানের সার্টিফিকেট থাকলে সোনায় সোহাগা।সাথে নিয়ে ঘোরা যাবে,পার্টিতে আলো ছড়ানো যাবে,বাচ্চাগুলোর চেহারা সুরত ভাল হবে তাহলে আর কি চাই?আর মেয়েটির ক্যারিয়ার? ক্যারিয়ারের কি দরকার?কিসের অভাব তার যে তাকে চাকরি করতে হবে?বাড়ি-গাড়ি, কাজের লোক, টাকা, ক্ষমতা সন্মান সবই তো আছে।তাই স্বামী ভাল না বাসলেও ক্ষতি নেই, সে পরকিয়া করলেও দোষ নেই,আর নিজের স্বপ্নের কথা ভুলেও মুখে আনতে নেই।মুর্খ মেয়েমানুষ!তার নিজের কি ক্ষমতা আছে এতকিছু অর্জন করার? স্বামীর অর্জনই তো তার অর্জন।


কিন্ত শ্রাবণী অন্য ধাঁচের।সে কারো শোকেস বউ হতে চায় না।তার দায়িত্ব ও কি কম?এখন বিয়ে করলে হয়ত সে পড়ালেখা শেষ করতে পারবে না,চাকরি করা হবেনা।এই শিক্ষাজীবনের নির্ভাবনার সময়টুকু সে খুব উপভোগ করে।এই সময়টা একবার গেলে আর ফিরে আসবে না। সংসারের পরে যখন মাতৃত্ব তাকে জড়িয়ে ধরবে তখন সে আর কিছুই করে উঠতে পারবে না।মায়ের বাড়ি যাওয়ার জন্য রিকশাভাড়াটার জন্যেও স্বামীর কাছে হাত পাততে হবে।নাহ!সে কোনোমতেই এখন বিয়ে করবে না।তুষার হলেও না।

সে মাকে সব কথা বুঝিয়ে বলে।তাকে বোঝায় যে সেও একদিন বড় অফিসার হবে।হয়ত সে নিজেই ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে যাবে।ভাল পাত্র হলেই যে ভাল বোঝাপড়া হবে তা তো না।শায়লা বেগম মেয়েকে বেশি জোর করেন না।তিনি তো তুষার ছেলেটির বিষয় শুনেছেন।তবুও প্রস্তাবটা ভাল বলেই মেয়ের কাছে তুলেছিলেন। সবার আগে তিনি চান তার মেয়েটি আনন্দে জীবনটা কাটিয়ে দিক।তিনি নিজে কলেজের শিক্ষিকা।উচ্চ শিক্ষিত এবং ভাল পরিবারের মেয়ে।তিনি এটুকু জানেন যে আনন্দ বা সুখ শুধু উচ্চ জায়গাগুলোতেই থাকে না।জোর করার ফল সব সময় ভাল হয়না।শ্রাবনীর কাছে শুনেছেন তুষারের বাবা সরকারি অফিসার।ফ্যামিলি ভাল হলে সাধারণত বাচ্চারাও ভাল হয়।ছেলেটি হয়ত ভাল কিছুই করবে।সব ঠিক থাকলে উনিও আপত্তি করবেন না।


শ্রাবণী সব ভুলে নিজের কাজে মন দেয়।সায়েন্স সাবজেক্টগুলোতে মাস্টার্স বেশ কঠিন। সেই সাথে থিসিস নেয়ার কারনে অত্যাধিক চাপ পড়াশোনার।চাকরির পড়াও পড়তে হচ্ছে।ছোটখাট পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সে দেখছে কেমন হয় পরীক্ষাগুলো।দেখতে দেখতে সময় কত দ্রুত চলে গেল! হোস্টেলের প্রিয় বড় আপুরা যখন চলে যায় তখনই শ্রাবণীর কান্না পায়।আর এখন একটা দুইটা করে বান্ধবী হোস্টেল ছেড়ে দিচ্ছে।তাকেও ছাড়তে হবে পরীক্ষা শেষ হলে।তার বুকের মধ্যে অসহ্য কষ্টের কান্না দলা পাকিয়ে উঠতে থাকে।খুব একা একা আর অসহায় লাগতে থাকে।

ইশ!তার জীবনের কি সুন্দর দিনগুলিই না সে কাটিয়েছে এখানে। নিজের কষ্টের পড়াশোনা আর মেধায় পাওয়া এই সিট! এই রুম,এই বেড, সামনের বিশাল কাঠ গোলাপের গাছ সবকিছুই ছেড়ে যেতে হবে।মেয়েদের নাকি নিজের বলে কোনো ঘর থাকে না,আজীবন তারা থাকে আশ্রিতা।কিন্ত এই রুমের এই সিটটি শ্রাবনীর নিজের। তা অল্প সময়ের জন্য হলেও এখানে সে আশ্রিতা নয়,এ তার নিজের অর্জন।

তুষারের পরীক্ষা আগেই হয়ে গেছে।সেশনজটের জন্যেই শ্রাবণীর ডিপার্টমেন্ট পিছিয়ে পরেছে।একদিক থেকে ভালই হয়েছে।শ্রাবণী বের হতে হতে হয়ত চাকরির ক্ষেত্রে তুষার এগিয়ে যাবে।তাহলে দ্রুত বিয়েটা করে ফেলা যাবে।পড়ালেখা শেষ হলে যদি সম্ভব হয় এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে তার বিয়ে করার ইচ্ছা।তারপর একদম শূন্য থেকে একটা একটা খড় এনে চড়ুইপাখির মতই ছোট্ট একটা নীড় বাঁধবে সে প্রিয় মানুষটির সাথে।সেই নীড় দিয়ে ঠিকরে পড়বে ভালবাসার আলো।

শ্রাবণীকে সবাই চিরকাল বইয়ের সাথে লেগে থাকতেই দেখেছে কিন্ত অন্যরা জানেনা যে সে খুব যত্ন করে ঘরকন্নার কাজ শিখেছে এবং সেখানেও সে সমান পারদর্শী।তার অনেক জিনিসে আগ্রহ।সেই আগ্রহের সাথে ভবিষ্যৎ সংসারের স্বপ্নময় মমতা মিশিয়ে সব কাজ শেখে সে ।রান্নাটা তার মজ্জাগত।সেলাই,বেকিং,আর্ট,বাগানচর্চা এককথায় যা কিছু শৈল্পিক সেখানেই শ্রাবণীর আগ্রহ।এসব শিখছে সে অনেক ছোট থেকেই ,কাওকে জানতে না দিয়ে।তাই বিদুষী নারী সংসার করতে পারে না এই অপবাদ কেউ তাকে দিতে পারবে না।

আজকাল নিজের একটা ছোট্ট সংসারের স্বপ্ন বারবার উঁকি দিয়ে যায় তার মনে।যে বিয়ের ব্যাপারে তার আজীবনের ভয় সে ব্যাপারটাও একটু একটু করে ভাল লাগতে থাকে।তবে তুষারকে নিয়ে তার মনে খুব অস্বস্তি। যে মানুষটিকে ঘিরে এতকিছু সে যেন বেশ উদাসীন ভবিষ্যতের ব্যাপারে।ছয় মাসের বেশি হয়ে গেছে তার পরীক্ষা শেষ হওয়ার।দেখে মনেহয় চাকরি নিয়ে সে তেমন চিন্তিত নয় অথচ চাকরির চিন্তায় শ্রাবণীর ঘুম হারাম।পরীক্ষা শেষ হয়েছে আগেই।এখন থিসিস জমা দেয়ার পালা।দিনরাত কাজ চলছে।সত্যি বলতে তুষার খুব সাহায্য করে তাকে কম্পিউটারে সবকিছু কম্পোজ করার কাজে।থিসিসের কাজে দূরের কোনো ল্যাবে যেতে হলেও তাকে সঙ্গ দেয়।এই শহরের জনসমুদ্রে তুষারই তার একটা আপনজন।তার উপরের শ্রাবনীর ভরসা অসীম।নির্ভরতা আকাশ সমান।

ভাল বন্ধুদের বেশিরভাগই এখন হোস্টেল ছেড়ে চলে গেছে।এক্সিডেন্টের পর থেকে তার হোস্টেলে থাকা ডিপার্টমেন্টের মেয়েগুলোকে এড়িয়ে চলে শ্রাবণী। তাই মাঝেমধ্যে খুবই একা লাগে তার।বিশেষ করে যখন কিছু নিয়ে তুষারের সাথে ঝগড়া হয় তখন।তার মনে হয় এত বড় জগৎ সংসারে আর কেউ নেই।তখন সে ভাল কোনো বই পড়ার চেষ্টা করে কিংবা একটা ভাল সিনেমা দেখার।তাতে যে সবসময় দুশ্চিন্তা থেকে দূরে থাকা যায় তা নয়।


দুশ্চিন্তা তো হবেই।থিসিস জমা দিয়ে ভাইভা দিলেই তার হোস্টেলের মেয়াদ শেষ।তারপর শুধু রেজাল্ট বের হওয়া পর্যন্ত সে এখানে থাকবে।এরপর অন্য কোথাও উঠতে হবে।যে টাকা দিয়ে সে এখন চলছে তা দিয়ে তো তখন চলা যাবেনা।বাড়িতে ছোটবোনের পড়ালেখার খরচ অত্যাধিক বেড়ে গেছে। শ্রাবণীর খরচ বেড়ে গেলে সংসারে খুব টানাটানি পড়ে যাবে। দ্রুতই কিছু একটা তাকে করতে হবে। ক্যাম্পাসের আসেপাশে থাকার একটা জায়গাও খুঁজতে হবে কম খরচের মধ্যে।এসব তো সে একা পারবে না।তুষারের সাহায্য লাগবে।


শ্রাবণীর রুমমেট আপুর পড়ালেখা শেষ উনি চলে গিয়েছেন।নতুন একটি জুনিয়র মেয়ে উঠেছে।মেয়েটিও বেশ ভালো। কিন্ত আপুকে মনের কথা যেভাবে বলত অতটা খুলে বলা যায় না এই মেয়েটিকে।জুনিয়র তো এইজন্য।মেয়েটি কিন্ত তাকে সারাদিনের সমস্তকিছুর গল্প করে ঠিক যেমন করে সে করত আগের রুমমেটের কাছে।শ্রাবণীর জন্য বলা যায় তুষারই একমাত্র বন্ধু যাকে সে সবকিছু খুলে বলতে পারে।শিক্ষাজীবন শেষ হওয়ার এই শূন্য শূন্য মনের অস্থিরতাটা, তাও যেন ঠিক করে ব্যাখ্যা করা যায় না কারো কাছে।গলার মধ্যে কি যেন আটকে থাকে।


এই রকম অস্থির সময়ে শ্রাবনী হঠাৎ করেই জানতে পারলো তুষার নিজের পরিবারের ব্যাপারে তার কাছে মিথ্যা বলেছে।তার বাবা সরকারি অফিসার নয়!এই খবরটি শোনামাত্র শ্রাবণীর জগতটা অন্ধকার হয়ে গেল।





চলবে-
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৫৬
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×