somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্যা রিভেঞ্জ (পার্ট ০৪) শেষ পর্ব

২৪ শে জুন, ২০১৫ রাত ৮:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রথম পর্বের লিঙ্কঃ Click This Link

দ্বিতীয় পর্বের লিঙ্কঃ Click This Link

তৃতীয় পর্বের লিঙ্কঃ Click This Link

মোবাইল ফোনটা বেজে চলেছে…

অবশেষে অপেক্ষার পালা শেষ হলো… সেই বিকেল থেকে অপেক্ষা করছে কখন ফোনটা আসবে।

সিগারেটটা ঠোঁটে আটকে রেখে ডান হাতটা বাড়িয়ে ফোনটা হাতে নিলো শাকিল মাহমুদ। এস আই মিজানের ফোন।

- স্যার, দারুন খবর আছে?

- কি খবর মিজান?

কন্ঠে উত্তেজনাটা আটকে রাখতে পারলো না শাকিল।

- আশরাফুল আমীনকে খুঁজে পাওয়া গেছে।

ওপাশের কন্ঠ থেকে আনন্দের স্পষ্ট ছাপ পাওয়া যাচ্ছে।

- মাই গড, আনবিলিভেবল !! এতো তাড়াতাড়ি তাকে কীভাবে খুঁজে পেলে তুমি?

- ম্যাজিকের মানুষ ম্যাজিক ছাড়া বাঁচতে পারবেনা এই ধারণা পুঁজি করে একটু খোঁজাখুঁজি করতেই তার ঠিকানা বের হয়ে এল। এটা আর এমন কি, স্যার?

মিজানের লাজুক ভাবটা শাকিলের চোখের সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠলো।

- এখন স্যার তাকে ধরে খানিকক্ষণ ইন্টারোগেট করলেই সব ঘটনা বের হয়ে আসবে আমার বিশ্বাস। মিরপুর ১৩ নাম্বারের একটা ঘুপচি এলাকায় থাকেন।

- গুড জব, মিজান। তাহলে ফোর্স নিয়ে আমি আসছি। তুমি মিরপুর ১০ নাম্বার এসে ওয়েট কর, আমি ওখান থেকে তোমাকে পিক করে তাকে অ্যারেস্ট করব।

- তিনি অত্যন্ত ধূর্ত লোক স্যার। ফোর্স নিয়ে আসলে তিনি কোন না কোন ভাবে টের পেয়ে পালিয়ে যেতে পারেন, তখন তাকে ধরা মুশকিল হয়ে যাবে। একা একটা মানুষ, তাকে ধরা খুব একটা কঠিন কাজ হবেনা আপনার-আমার জন্য।

- তারমানে তুমি বলতে চাইছো ফোর্স নিয়ে আসার কোন দরকার নেই?

- না, স্যার।

- আচ্ছা, ঠিক আছে। তুমি তাহলে তাড়াতাড়ি চলে আসো। আমি ৩০ মিনিটের মাঝে মিরপুর ১০ নাম্বার আসছি।

- ওকে স্যার।



ফোনটা রেখে হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল, ৬:৫৩ বাজে। তারপর রেডি হলেন শাকিল মাহমুদ। জালে ধরা দিয়েছে মাছ, এখন শুধু জাল টেনে আনাটা বাকি। তার খুশি হওয়া উচিৎ, কিন্তু তার মনটা কেন যেন বিষন্ন হয়ে আছে।

“আমি না আসা পর্যন্ত আপনি এখানেই থাকুন, কোন সমস্যা হবেনা আশা করছি”

প্রায় অপরিচিত মানুষটা যে কিনা বিকাল থেকে তার এখানে আছে তার দিকে তাকিয়ে একটা শুকনো হাসি দিয়ে কথাটা বলল শাকিল। উত্তরে লোকটাও একটা প্রানহীন হাসি দিল। আর কথা না বাড়িয়ে বের হয়ে গেল শাকিল।



..............................................................................................................................



“দুঃখিত, আপনার কাঙ্ক্ষিত নাম্বারে এই মুহূর্তে সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। একটু পর আবার চেষ্টা করুন, ধন্যবাদ”



বারবার এ কথা বলেই যাচ্ছে ফোনের ওপাশ থেকে। ফোনের পর ফোন দিয়ে যাচ্ছে শাকিল, কিন্তু বন্ধ পাচ্ছে মিজানের ফোনটা। কিছুক্ষণ আগেও ফোনটা অন ছিল, ২-৩ বার রিং হলো, ধরলো না। তারপর থেকে প্রতিবার একই কথা বলে যাচ্ছে।



“ধুর” মেজাজটা খারাপ করে মোবাইলটা ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটটাতে ছুঁড়ে ফেলে শাকিল। একটা সিগারেট ধরিয়ে ড্রাইভিং সিটের জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই অবাক হয়ে গেল সে।

মোটরসাইকেলের ওপর বসে বিদ্রুপের হাসি মুখে নিয়ে ঠিক তার দিকেই তাকিয়ে আছে লোকটা। রেস্টুরেন্টটাতে যে লোকটা আড়ি পেতে তার আর ডাঃ তানিয়ার কথা শুনছিল সেই লোকটা।

লোকটা কে সেটা জানা জরুরী, আবার আশরাফুল আমীনের বাসায় যাওয়াটাও জরুরী। কিছুক্ষণ দ্বিধা-দ্বন্দে ভুগে শেষ পর্যন্ত গাড়িটা ইউ টার্ন নিয়ে লোকটাকে ধরার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল শাকিল। ঐদিন লোকটা ওইভাবে পালিয়ে যাওয়ায় একটা জেদ কাজ করছে তার মাঝে।

ইউ টার্ন নিতেই লোকটা তার মোটরসাইকেল স্টার্ট করে ফেলল।



ড্রাইভিং করতে করতে শাকিল আবার মিজানের নাম্বারে ফোন দিলো। যথারীতি এবারও বন্ধ।

“ইমারজেন্সীতে প্ল্যানটা চেঞ্জ করা হল। সময়মত আমি ফোন দেব, অপেক্ষা কর।”

ভয়েস ম্যাসেজটা মিজানের নাম্বারে পাঠিয়ে ফোনটা রেখে লোকটার পিছু লাগায় মনোযোগ দিল শাকিল। লোকটাকে আজ কেমন যেন চেনা চেনা লাগছে, কোথায় যেন দেখেছে বলে মনে হচ্ছে শাকিলের কিন্তু সে মনে করতে পারছে না। কিছুক্ষণ লোকটার পিছু নিতে গিয়ে অবাক হয়ে শাকিল খেয়াল করল যে একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে ছুটছে লোকটা। সে চাইলে খুব সহজেই স্পীড বাড়াতে পারে। কিন্তু সে তখনই সে স্পীড বাড়াচ্ছিল যখন শাকিল স্পীড বাড়াচ্ছিল। ব্যাপারটা শিওর হল যখন শাকিল গাড়ির স্পীড কমিয়ে ৭০ থেকে ৩০ এর ঘরে নিয়ে আসে, প্রায় সাথে সাথে মোটরসাইকেলের স্পীডও কমে আসে।



এভাবে স্পীড বাড়াতে কমাতে তারা কলাবাগান চলে আসে। লোকটা কলাবাগান সেকেন্ড লেন দিয়ে ঢুকতেই শাকিলের কেমন যেন একটু সন্দেহ হয়। শাকিলের বাসাটা সামনেই বশিরউদ্দিন রোডেই। শাকিল ঝটপট মোবাইলটা হাতে নিয়ে একটা ম্যাসেজ টাইপ করে সেন্ড করে দেয়। সামনে বাক পরতেই মোটরসাইকেলটা হারিয়ে যায়। শাকিল বাঁকটা পেরিয়ে আসতেই দেখতে পায় লোকটা মোটরসাইকেল থেকে নেমে তড়িঘড়ি করে পাশের গলিতে দৌড়ে পালায়। শাকিলও গাড়ি থেকে নেমে পড়ে। কিন্তু নেমে লোকটাকে আর খুঁজে পায়না।

এখান থেকে তিনটা বাড়ি পরেই শাকিলের বাসা। শাকিল কোমরে গোঁজা রিভলভার হাতে নিয়ে সন্তর্পণে সামনে এগুতে থাকে। তার বাড়ির সামনে এসে দেখে গেটে সেই চিরচেনা মুখোশটা পরে আছে। বিদ্রুপের হাসি এখনো মুছে যায়নি সেটা থেকে। মুখোশটা হাতে নিয়ে শাকিলের বুঝতে বাকি থাকেনা যে লোকটা তার বাসায়ই ঢুকে পড়েছে। সাবধানে এক পা দু পা আগাতে আগাতে তিনতলায় এসে আস্তে করে নিজের রুমের দরজাটা ধাক্কা দেয় শাকিল। মৃদু ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দ তুলে দরজাটা খুলে যায়। রুম অন্ধকার, আশ্চর্য নীরবতা। লাইটটা না জ্বেলেই পা টিপে টিপে শাকিল সামনের দিকে এগিয়ে যায়।



ফ্ল্যাটের একদম শেষ প্রান্তে শাকিলের বেডরুম থেকে একটা হালকা কন্ঠস্বর ভেসে আসে। শাকিল সাবধানে সেদিকে এগোতে থাকে। কিছুদূর এগোতেই কন্ঠস্বরটা ধরতে পারে।

“……সময়মত আমি ফোন দেব, অপেক্ষা কর”

তার পাঠানো ভয়েস ম্যাসেজটা রুমের মাঝামাঝি রাখা একটা চেয়ারে মিজানের ফোনে লাউডস্পীকারে বেজে চলেছে।



রুমের বাদিকটাতে তাকাতেই দেখতে পেল সেখানে ক্রুর হাসি হেসে একটা চেয়ারে হেলান দিয়ে রিলাক্স মুডে বসে আছে মিজান, পরনে সেই হ্যাট। কিন্তু তাও কোথায় যেন একটা অমিল রয়ে গেছে, মিজানের মত লাগছে না তাকে, হয়ত ক্রুর হাসিটার কারণে এমন লাগছে। তার ঠিক সামনেই বসে আছে আশরাফুল আমীন। হাত চেয়ারের সাথে পিছমোড়া করে বাঁধা, মুখে কাপড় গোঁজা চোখে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শাকিলের দিকে। নিরস্ত্র মিজানের দিকে যখন আস্তে আস্তে রিভলভারটা তুলল শাকিল তখনও মিজানের হাসি বন্ধ হলো না, আগের মতই মাথার পিছে হাত নিয়ে রিলাক্স মুডে বসে আসে সে। ব্যাপারটা দেখে অবাক হয়ে গেল শাকিল।



আরো অবাক হলো যখন ঘাড়ের কাছে ধাতব শীতল স্পর্শটা অনুভব করলো সে।

“ফায়ার করার চিন্তা ভুলেও মাথায় আনবেন না, স্যার”

কন্ঠস্বরটা শুনে অবাক হওয়ার অনুভূতিটা হারিয়ে ফেলল শাকিল। পেছনে ঘোরার চেষ্টা করতেই অনুভব করলো ধাতব জিনিসটা আরো চেপে বসেছে।

“উহু, পেছনে ঘোরার অনুমতি পাবেন, কিন্তু তার আগে আপনাকে হাতের বিদঘুটে জিনিসটা দূরে ছুঁড়ে ফেলতে হবে, ডিটেকটিভ শাকিল মাহমুদ” পেছন থেকে নির্দেশ এলো।

এই মুহূর্তে আসলে শাকিলের করার কিছু নেই। সে চুপচাপ রিভলভারটা সামনে ছুঁড়ে ফেলল। ধাতব চাপটা একটু শিথিল হতেই পেছনের দিকে ঘুরল শাকিল। পেছনে ঘুরতেই সে একটা ধাক্কা খেল।

ক্রুর হাসি নিয়ে তার দিকে রিভলভার তাক করে দাঁড়িয়ে আছে মিজান।

তাহলে পেছনে চেয়ারে বসে আছে কে?

ভাববার বা তাকাবার সময় পেল না শাকিল, পেছন থেকে শক্ত কিছুর ভারী আঘাতে জ্ঞান হারালো শাকিল।



………………………………………………………………………………………………………………………………………….



জ্ঞান ফিরতেই চোখ খোলার আগেই প্রচন্ড মাথা ব্যাথাটা অনুভব করল শাকিল।

মাথাটা সম্ভবত ফুলে গেছে, পেছনে হাত দেবার চেষ্টা করতেই বুঝতে পারলো হাত বেধে ফেলা হয়েছে। এক চুল নড়ার মত অবস্থা নেই তার।

চোখ খুলে ডান পাশে তাকাতেই দেখতে পেল আশরাফুল আমীনকে। আসন্ন বিপদ ভেবে শাকিল লোকটাকে খুঁজে বের করে দুপুরেই এখানে এনে রেখেছিল, কিন্তু আসলে দেখা যাচ্ছে সেটা বিশাল একটা ভুল ছিল। লোকটাকে দেখে মনে হচ্ছে বয়স ১০ বছর বেড়ে গেছে তার।



“এখন কেমন বোধ করছেন?”

মুখ থেকে গোঁজা কাপড় সরিয়ে ফেলা হয়েছে, তাই প্রশ্নটা করতে পেরেছেন।

প্রশ্নের উত্তরে একটা শুকনো হাসি দিল।



“বাহ ! চমৎকার ! এই পরিস্থিতেও হাসছেন আপনি। নার্ভ ইস্পাতের মতই শক্ত আপনার। আসলেই আপনি তুখোড় গোয়েন্দা, শাকিল মাহমুদ”

মিজানের কন্ঠ থেকে বের হওয়া কথাগুলোয় তাকে যে তুচ্ছ করা হয়েছে সেটা স্পষ্ট। একটু দূরে সামনেই একটা চেয়ারে বসে আছে মিজান। তার ঠিক ৫ ফুট দূরে একটা ধারালো চাকু দিয়ে একটা বাঁশের কঞ্চি আপনমনে কেটে চলছে মিজানেরই আরেক কপি।

শাকিলের দৃষ্টি ওর দিকে দেখে মিজান তাড়াতাড়ি বলে উঠলো...

“ওহ, দুঃখিত। ওর সাথে তো আপনার পরিচয়ই করিয়ে দেয়া হয়নি। ও হচ্ছে মিলন, আমার যমজ ভাই। যাকে তাড়া করেছেন ঐদিন এবং আজকে যাকে তাড়া করতে করতে এখানে এসেছেন”

একারণেই তখন এতটা পরিচিত লাগছিল, কিন্তু হ্যাটে মুখটা ঢাকা পরায় চিনতে পারেনি শাকিল। মিলন একটু ঝুকে সালাম দেয়ার ভঙ্গি করলো। সেদিকে পাত্তা না দিয়ে মিজানের দিকে ফিরলো শাকিল...

- মিজান শেষ পর্যন্ত তুমি?

- জ্বী, স্যার।

- কিন্তু কেন?

- সে স্যার, অনেক কথা। এতো কথা শোনার সময় পাবেন কই আপনি?

বলেই একটা বিশ্রী ভঙ্গীতে হাসতে লাগলো মিজান। সে হাসিতে মিলনও যোগ দিল।

- তোমার প্ল্যানটা কি?

- আপনি তো অনেক কিছুই জানেন, এটা এখনো জানেন না?

মুখে কৃত্তিম একটা অবাক ভাব এনে জিজ্ঞেস করলো মিজান।

- না জানি না।

- জানতে চান?

- হ্যাঁ চাই।

- আচ্ছা, তাহলে শুনুন। ফাঁসীর আসামীরও শেষ ইচ্ছা পূরন করা হয়, আর আপনি তো...



কথা শেষ না করে আবার হাসতে লাগলো মিজান। এবার আর তার হাসিতে যোগ দিল না মিলন, বোধ হয় ভাইয়ের স্বীকারোক্তি করার বিষয়টা ঠিক পছন্দ করছে না। ‘আরে কিছু হবেনা’ এরকম একটা আশ্বাসের দৃষ্টিতে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আবার শাকিলের দিকে তাকিয়ে কথা শুরু করল মিজান...



“আমি মফস্বলের ছেলে। আমার বাবা ছিলেন সাধারণ স্কুল মাস্টার। অভাব-অনটন লেগেই থাকতো আমাদের সংসারে। কিন্তু তাতে কি? একবেলা-দুবেলা ভাগাভাগি করে খেয়ে খুব সুখেই ছিলাম আমরা। বাবা খুব স্বপ্ন দেখতো আমাদের নিয়ে। ছেলেরা বড় হয়ে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার কিছু একটা হবে, সংসারের হাল ধরবে। দুঃখ আর থাকবে না। এদিকে আমার ভাই মিলন ছোটবেলায় টাইফয়েড জ্বরে পড়ে বাক শক্তি হারিয়ে ফেলে, বাবার স্বপ্নও ভেঙ্গে যায় ওকে নিয়ে। তখন বাবার একমাত্র স্বপ্ন ছিলাম আমি। আমিও খুব চাইতাম যেন বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পারি। কিন্তু ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হওয়া আমাকে দিয়ে হবেনা। ছোটবেলা থেকেই খুব অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় ছিলাম আমি। পাইলট হতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পরে সেটা আর হয়ে ওঠেনি। তারপর একদিন পত্রিকায় পুলিশ নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেখে বাসায় কাউকে না জানিয়েই অ্যাপ্লাই করি, এবং কীভাবে কীভাবে যেন টিকে যাই আমি। বাবাকে গিয়ে বললাম আমার চাকরীর কথা। ছেলে উপার্জন করবে এ খুশিতে বাবা খুশি হয়েছিলেন কিন্তু পুলিশের চাকরী তিনি পছন্দ করতেন না। যাই হোক, আমাদের সংসারে আস্তে আস্তে সচ্ছলতা ফিরে আসে। যোগ্যতার কারণে দিন দিন আমারও পদোন্নতি হতে লাগলো। সবকিছু ঠিকমতই চলছিল।

কিন্তু সুখ বোধ হয় ছিলোনা কপালে বেশিদিন। একটা চুরির ঘটনায় পুরো জীবনটা আমার বদলে গেল। সাংবাদিকের মিথ্যাচারে আমার সম্পর্কে বলা হল, আমি নাকি সে চুরির টাকার আত্মসাৎ করে চুরির ঘটনাটা বেমালুম চেপে গিয়েছি। চারিদিকে ছিঃ ছিঃ রব পড়ে গেল। পথে ঘাটে বাবাকে সবাই ঘুষখোর পুলিশের পিতা বলে অসন্মান করতে লাগলো। এমনিতেই বাবা পুলিশের চাকরী পছন্দ করতেন না, তার ওপর এইসব অপমান। তার মত একজন স্কুল শিক্ষকের পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব হল না। এক রাতে আমরা বাবাকে তার রুমে আবিষ্কার করি মৃত হিসাবে। তিনি আত্মহত্যা করেন।”

এইটুকু বলে মিজান হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখটা মুছতে লাগলো। শাকিল খেয়াল করে দেখলো, মিলনের মুখটা থমথম করছে।

“বাবার মৃত্যুতে মা খুব মুষড়ে পড়েন। কারও সাথে কথা বলতেন না, দিন রাত শুধু কাঁদতেন। এর কিছুদিন পর মা পাগল হয়ে যান। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতাম মা কে। মার পাগল হয়ে যাওয়া আমি মেনে নিতে পারিনি। তখন ক্রোধ চেপে গেল তাদের ওপর যারা আমার বাবার মৃত্যু, মায়ের এই অবস্থার জন্য দায়ী। মিথ্যাচার করা সেই সাংবাদিক আর কেউ নয়, জয়িতা চৌধুরী। খবরের কাগজের একটা মিথ্যা খবর যে একটা সংসার কীভাবে ভেঙ্গে দিতে পারে সেটা তার জানা ছিলোনা, জানা ছিলো না কবির চৌধুরীরও। জানানোর কোন ইচ্ছাও আমার ছিলোনা। শুধু একটা জিনিসই মাথায় ঘুরছিল তখন, আমার সর্বনাশ করা মানুষগুলোকে আমি বাঁচতে দেবনা, কিছুতেই। ৪ বছর ধরে প্ল্যান করে তারপর তাদের মেরেছি। খুনগুলো করেছি আমরা দুজন মিলে।”

- কিন্তু আমাকে কেন মারতে চাচ্ছো?

- আপনি আমাকে যেদিন সন্দেহ করেছেন আমি ঐদিনই আপনাকে সরিয়ে ফেলার প্ল্যান করে ফেলি। আপনাকে মারতে আমার খুব খারাপ লাগবে স্যার। আমি আপনাকে খুব শ্রদ্ধা করি। একটা কথা জানতে চাই স্যার। আপনি আমাকে সন্দেহ করলেন কি দেখে?

- আসলে তোমার কথাতে তোমাকে সন্দেহ করি। আমি তোমার কলিগদের সাথে কথা বলে জেনেছি তোমার সম্পর্কে। তুমি তাদেরকে তোমার স্ত্রীর কথা বলতে। তারা তোমার বাসায় গিয়ে তোমার স্ত্রীর সাথে দেখা করতে চাইলেও তুমি কখনোই তাদেরকে তোমার বাসায় নিয়ে যাওনি। আমি একটু সন্দেহ করলাম কিন্তু শিওর হলাম ঐদিন যেদিন আমি বারবার তোমার বাসায় তোমার স্ত্রীর সাথে দেখা করতে চাইলাম কিন্তু নিলেনা। কেন নিলেনা? কারণ তোমার আসলে স্ত্রীই নেই। বাকি খবর গুলো খুঁজে বের করতে আমার তেমন সমস্যা হয়নি। আচ্ছা একটা প্রশ্ন। আচ্ছা, আশরাফুল আমীনকে কেন মারতে চাও তুমি?

- তার সাথে আসলে আমার ব্যাক্তিগত কোন সমস্যা নেই, কিন্তু গল্প সাজানোর খাতিরে তাকে মরতে হবে। আশরাফুল আমীনকে অ্যারেস্ট করতে গিয়ে তার গুলির আঘাতে প্রান হারান দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা শাকিল মাহমুদ, আর নিজেকে আত্মরক্ষার খাতিরে আশরাফুল আমীনকে আমি গুলি করতে বাধ্য হই এবং সেই গুলিতে তিনি মারা যান। কেমন হবে স্যার গল্পটা?

- সাউন্ডস গুড।

- শেষ প্রশ্ন স্যার। আমার বাসায় আপনি যখন সার্চ করার জন্য ঢুকলেন তখন কি মনে করে এটা রেখে এসেছিলেন? এটা না পেলে আমি জানতামই না যা আপনি আমাকে সন্দেহ করেছেন।

পকেট থেকে একটা লাইটার বের করে সেটা সামনে ধরে প্রশ্নটা করলো মিজান। লাইটারটা শাকিলের, সেটার দিকে তাকিয়ে মৃদু একটা হাসি দিল শাকিল।

- তুমি কি শিওর, লাইটারটা আমি ভুল করে ফেলে এসেছি?

- মানে কি বলতে চাইছেন আপনি?



চোখটা যেন বেরিয়ে আসবে মিজানের। মিলনকেও এতক্ষণ বাদে একটু এদিকে মনোযোগী হতে দেখা গেল।

কিন্তু শাকিল উত্তর দেয়ার আগেই গুলির শব্দ পাওয়া গেল। মিজানকে হাত চেপে বসে পড়তে দেখা গেল, হাতের কব্জিতে গুলি লেগেছে খুব সম্ভবত। মিলন ঠিক বুঝে উঠতে পারছিল না কি করবে। তার আগেই ৫ জন সশস্ত্র মানুষকে দেখা গেল, দরজায় এবং জানালায়। শাকিলের ম্যাসেজ পেয়ে অনেক আগে এসে লুকিয়ে ছিল তারা। একজন এসে শাকিল ও আশরাফুল আমীনকে মুক্ত করলো।

রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে হাত প্রায় অবশ হয়ে গেছে শাকিলের। হাত ডলতে ডলতে মিজানের সামনে এসে ফিসফিসিয়ে বলল...



“ওটা একটা ফাঁদ ছিল”

(সমাপ্ত)
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০১৫ রাত ৮:৫৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×