কেউ আসে না কারো কাছে সবাই যেন পর'
ছেলেবেলায় এমনি একটা কবিতা পড়েছিলাম। সেদিন এই দুটো লাইনের মর্মার্থ না বুঝলেও আজ হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছি। ইদানীং দম বন্ধ হয়ে আসছে এই ইট পাথরের শহরে। এত ব্যস্ত শহরের সাথে তাল মেলানো সত্যি কঠিন। যদিও গাড়িগুলো চাইলেও আগের সেই গতিতে ছুটতে পারে না, কিন্তু মানুষের ব্যস্ততা দিন যত যাচ্ছে ততই বাড়ছে। সবই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত অন্যকে নিয়ে ভাবার সময় কোথায়? কেউ রাস্তায় মরে পড়ে থাকলেও তাকে হসপিটালে নেওয়ার মত একটা লোক খুঁজে পাবেন না।এই শহরে প্রতিদিনই আসছে নতুন নতুন মানুষ সবারই একটাই লক্ষ্য টিকে থাকতে হবে, অন্যদের নিয়ে ভাবার সময় কই?
এই শহরের মানুষের ঘুম ভাঙ্গে কাকের কর্কশ কা কা ডাকে।কোথায় জাতীয় পাখি দোয়েল, ফিঙ্গে,বুলবুলি,বউ কথা কও? ওরা সবাই বিষাক্ত শহর ছেড়ে গ্রামে পালিয়ে বেচেছে। শুধু শহুরে নোংরা ঘেটে চলেছে প্রকৃতির ঝাড়ুদার কাক। একটুখানি ভাল থাকার আশায় কত বেকার যুবক ক্ষয় করে চলেছে জুতার তলা। ফেরিওয়ালা কারওয়ান বাজার থেকে সবজী কিনে বিক্রি করছে শহরের অলিতে গলিতে। গ্রামের অশিক্ষিত হালিমা গারর্মেন্সের ভারি সেলাই মেশিন চালচ্ছে আনায়াসে। নদী ভাঙনে সর্বস্ব হারানো আবুল মিয়া শক্ত হাতে ধরেছে রিকশার হ্যান্ডেল। অল্প শিক্ষিত বেকার যুবকটি গলির মোড়ে ফেক্সিলোডের দোকান দিয়ে বসে আছে, সবইতো একটু ভাল থাকার আশায়।
এই শহরে ফুল ফোটে না, পাখি গান গায় না,মানুষের মুখের নির্মল হাসি আজ উধাও যা আছে সেটা কর্পোরেট অফিসের রিসিপশনিষ্টের লিপিস্টিক মাখা ঠোঁটের মেকি হাসি। শহুরে দেওয়ালের ইটের ফাকে এখন আর বটের চারা জন্মায় না। বিকট ভেঁপু বাজিয়ে শব্দ দুষণ করে চলছে ফিটনেস বিহীন গাড়িগুলো। বিশটাকা কেজির আলুকে পোড়া তেলে ভাজলেই তৈরি হচ্ছে দামী ফেন্সফ্রাই। মোবাইল জেনারেশনের কারো সাথে কথা বলার সময় নেই, দুরের মানুষগুলো এখন কাছের মানুষ আর কাছের মানুষরা দূরে যাচ্ছে। পাড়ার টি স্টলে এখন কেউ চায়ের কাপে ঝড় তোলেন না,সেখানে লেখা আছে রাজনৈতিক আলোচনা নিষেধ।
তবুও বিষণ্ণতার এই শহরে মানুষ আসতেই থাকবে বাড়তে থাকবে যানজট। শহুরে বাতাসে উড়ছে টাকা সেই টাকা ধরতেই প্রতিদিন পঙ্গপালের মত ছুটে আসছে হাজার হাজার মানুষ।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৩৪