বর্তমানে যে অবস্থায় আছি তাতে আমার আর এই ঢাকা শহর একদম ভাল লাগছে না! বলা চলে প্রবাস থেকে ফিরে প্রায় টানা ২২ বছর এই শহরেই কাটিয়ে দিলাম! আর বাঁচবো কয় বছর? ফলে মন আর এক জায়গাতে স্থির হতে চাইছে না, এই দেশের কত কিছুই তো দেখা হল না এখনো! এতকিছু না দেখেই দুনিয়া ছেড়ে চলে যাব এটাও ভাবতে ইচ্ছা হচ্ছে না, অন্যদিকে কত কাজ এখনো বাকী, মানুষের সামান্য উপকারও তো এখনো করিনি!
কয়দিন ধরে ভাবছি বিষয়টা নিয়ে স্ত্রীর সাথে কথা বলবো, সাধারণ কোন উপজেলা শহরে নদীর কাছে কিংবা ধানের মাঠের পাশে বা গাছ গাছালির পাশে ছোট এক চিলতে জমি কিনে ছোট একটা ঘর বানাবো, নিজের ইচ্ছা মত ক্ষেতে খামারে কাজ করবো, পুকুরে মাছ ধরবো, নিজের হাতে গাছ গাছালির যত্ন নিবো, সন্ধ্যায় কিছু সময় সেই গ্রামের দরিদ্র পিতাদের সন্তানদের বিজ্ঞান কিংবা অংক পড়াবো, রাতে চাঁদের আলোয় বসে থাকবো, খড়ের চুলায় চা বানাবো, অন্ধকারে একা বাইরে সারা গ্রাম হেঁটে আসবো! কত কি!
আমি মনে মনে স্থান নির্বাচন করেও রেখেছি! কক্সবাজারের কোন গ্রামে, বা আরো ভিতরে মহেশখালীর বাঁকে কিংবা এদিকটায় ময়মনসিঙ্ঘের জয়নুল সংগ্রহ শালার পিছনে কিংবা শ্রীমঙ্গলের চা বাগানে প্রবেশের আশে পাশে কোন গ্রামে, নড়াইলের চিত্রানদীর ধারের কথাও মনে পড়ে! এভাবে কত কি স্থানের চিন্তা আমার!
সারাদিন ভাবি, চিন্তা করি, আজ বাসায় ফিরে এই আলোচনা করবো, আমাকে এই শহর থেকে মুক্ত করতে হবে, ইত্যাদি ইত্যাদি। বিশ্বাস করুন যতই সাহস করি না কেন, স্ত্রীর সামনে গিয়ে আমি আর কোন কথাই বলতে পারি না! তিনি আবার কি মনে করে কি উত্তর দেন!
বহু বছর আগে আপনাদের এই শহরে একবার প্রায় বছর খানেক বেকার ছিলাম, উপার্জন ছিল না! জমানো সঞ্চয় প্রায় শেষ করে, চাকুরী বানিজ্য কিছুই না পেয়ে শেষের দিকে খুব হতাশায় পড়ে যাচ্ছিলাম। ভাবছিলাম আমাদের গ্রামের বাড়ী ফিরে যাব, পৈত্রিক ভিটেমাটিতে আবার নুতন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছিলাম! একদিন রাতে প্রিয়তমা স্ত্রীকে বললাম, চলো গ্রামে ফিরে যাই! প্রিয়তমা স্ত্রী এর উত্তর দিতে তেমন সময় নেন নাই, সেকেন্ডের মধ্যেই তিনি বলে দিলেন, "আমার বাবা কি তোমার কাছে তার মেয়ে বিয়ে দিয়েছিলেন গ্রামে নিয়ে রাখার জন্য"!
বিশ্বাস করুন, আমি আর কথা বাড়াই নাই তবে পরদিন থেকে আমি প্রায় দেড় মাস পাগল ছিলাম!
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:১৩