একটা সমাজ, জাতি, রাষ্ট্র শুধু একক কোন ব্যাক্তির প্রচেষ্টার ফলাফল নয়। সমাজ, জাতি, রাষ্ট্র গড়ে উঠে হাজারো মানুষের ছোট ছোট অবদানে, ছোট ছোট ত্যাগে, ছোট ছোট ভালবাসায়, রাষ্ট্র বা দেশকে যদি আমরা ফুলের বাগানের সাথে তুলনা করি, সেখানে বড় যে গাছটা দেখেন সেটাই সব কিছু নয়, সেই বাগানের দূর্বাঘাসেরও একটা সৌন্দর্য্য আছে, তাকেও সম বা ইকুয়েল মর্যদা দেয়ার আছে, বড় গাছে না ছড়ে সেই দূর্বাঘাসে যে লোকটা শুয়ে আকাশের সৌন্দর্য্য দেখে, তা কি কখনো খেয়াল করেছেন, দুর্বাঘাসের জায়গাতে যদি কাদামাটি থাকত তবে কি কোন কবি সেখানে শুয়ে মাথার নীচে হাত দিয়ে আকাশের দিকে তাকাত, নিশ্চয় না! ফলে বাগানের ছোট চারাটাও ফেলনা নয়! ঠিক সমাজ, জাতি, রাষ্ট্রের কথাও আমাদের এভাবে বিবেচনা করা দরকার। যে মানুষটা এই সমাজ, জাতি, রাষ্ট্রে জন্মেছেন তিনি পাহাড়, জঙ্গল, গ্রাম, শহর যেখানেই থাকুন না কেন, সেও এই বাগানের ফুল এবং ঔলিক সৌন্দর্য্য! অনেকের হয়ত স্বাভাবিক দেখা চোখে কোন অবদান থাকে না, আদতে হয়ত তার কোন পুরুষ/নারী এই সমাজ জাতি রাষ্ট্র গঠনে অবদান রাখেই বা রাখবে, ফলে তারও সুষ্টু পরিচর্যা দরকার!
বেশী লেখা তো আবার আপনারা পড়েন না, আসেন সামান্য উদাহরণ দেই। কবি জসিম উদ্দিনকে ভাল জানেন এখন আর তেমন লোক কই, তাকে কেন পল্লীকবি বলা হত তা আর কে মনে রেখেছে! উনাকে নিয়ে কোন গবেষণা বা দৃঢ় উচ্চারণ কই। পল্লীকবি জসিমউদ্দিন কি কি লিখেছেন সে খবর কে আর রাখে? অথচ বিশ্বাস করুন, এই পল্লীকবি হাজারো কাজে স্থানে আমাদের মনে দাগ দিয়ে গেছেন। আরো ধরি মাত্র একটি গানের কথাই, তিনি লিখেছেন 'প্রাণ সখি রে, ওই শোন কদম্ব তলে বংশী বাঁজায় কে? বংশী বাঁজায় কে রে সখি বংশী বাঁজায় কে, আমার মাথার বেনী বদল দিবো তারে এনে দে, প্রাণ সখি রে...... ।" আহ কি কথা, কি সুর। আমাকে যদি কোন স্টেজে দাঁড়িয়ে শুধু এই গানের ব্যাখ্যা দিতে বলেন, আমি ঘন্টার পর ঘন্টা সেই দৃশ্য গুলোর ব্যাখ্যা দিতে পারবো, আহ, কি সুমধুর দৃশ্য তিনি কয়েক লাইনেই আমাদের বলে গেছেন। অথচ এই লোকের কথাই আমরা ভুলে গেছি, এমন আরো কত নাম না জানা ফুলের খবর আমরা রাখি নাই, রাখতে চাই নাই। অথচ এই ফুল গুলোর সুঘ্রানেই আমাদের সমাজ, জাতি, রাষ্ট্র গড়ে উঠেছে। কবি রবীন্দ্রনাথ, কবি নজরুলকেও যেখানে মনে রাখতে চাই না, সেখানে এরা আর কি! যাদের আরো ছোট অবদান, তাদেরতো খাতায় নামই নেই! খুব দুঃখের বিষয় বটে!
কথা গুলো মনের দুঃখেই বললাম, কথা হচ্ছে কে বা কার চেষ্টায় এই ছোট ছোট ত্যাগ গুলো আমাদের সামনে আসতে পারে, হ্যাঁ, এর জন্য চাই একজন সুবিবেচনার সুশাসক। আসলে একজন সুশাসকের ঐকান্তিক চেষ্টা হওয়া উচিত, বাগানের ছোট বড় সব গাছ ফুলের সব অব্দান স্বীকার করা এবং এই ছোট ছোট ত্যাগী মানুষ গুলোর কথা প্রকাশ্যে সমাজ, জাতির সামনে পেশ করা। সমাজের বড়রা যখন সমাজ গঠনে ছোটদের ভুমিকা বড় করে প্রকাশ করে তখন সমাজের বেশীর ভাগ মানুষ খুশি হয় এবং সমাজ এগিয়ে যায়, সমাজ সভ্য হয়, মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত বেড়ে উঠে এবং এদিন সেই সমাজ মজবুত ও শক্ত হয়।
স্বাধীনতার এত বছর পরেও আমাদের সেই একজন সুচিন্তার সুবিবেচনার সুশাসক আসে নাই, যিনি প্রকাশ্যে বলবেন, ঐ যে পালতোলা নৌকায় জেলেরা মাছ ধরছে, তারাই আমাদের প্রাণ কিংবা ফসলের মাঠে সোনালী ধান হাতে মানুষটাই আমাদের জান!
আমি এখনো তেমনি একজন সুশাসকের অপেক্ষা করি, নিশ্চয় কেহ একজন এসে এই কথা বলবেই!
(ছবি গুলো নেট থেকে নেয়া, গানের লিঙ্ক কমেন্ট দেখুন)
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:১৩