হারাম কে হালাল করার জন্য কি মসজিদ নির্মাণ ই কি এখন শ্রেষ্ঠ পন্থা? আজ বাংলাদের গ্রামের আনাচে কানাচে বিশাল বিশাল আকৃতির চোখ ধাঁদানো মন মাতাবো মসজিদ নির্মান হচ্ছে। অবশ্য আজ থেকে দুই যুগ আগে ও বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে পাঁকা মসজিদের সংখ্যা ছিল হাতেগনা। হয়তো আমার এই লেখা নিয়ে অনেকের ই অনেক ধরনের মন্তব্য থাকতে পারে। আমি সাধারন মানুষের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। গ্রামগঞ্জের আঁনাচে কাঁনাচে পাকা সুন্দর মসজিদ হবে মসজিদে সব ধরনের আধুনিক সুযোগ সুবিধা থাকবে মুসল্লীরা আরাম করে ইবাদত বন্দেগী করবেন প্রতিটি মুসলামের এটা একান্ত কাম্য ও দায়িত্ব। এই ক্ষেত্রে প্রত্যেক মুসলমান তার সাধ্য অনুযায়ী মসজিদের উন্নয়নের কাজে সহযোগিতা ও করে থাকেন।
বর্তমান সময়ে সবচেয়ে আলোচিত নাম আরাভ খান। সম্প্রতি এই আরাভ খান সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের নিউ গোল্ড সুকে আরাভ জুয়েলার্স নামের একটি সোনার দোকান বাংলাদেশের বিভিন্ন খ্যাতিস্পন্ন তাঁরকা সহ বিশ্বের নামীদামী তাঁরকাদের দিয়ে উদ্বোধন করিয়েছেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগে ই আরাভ জুয়েলার্স নিয়ে আরাভ খানের সোস্যাল মিডিয়ার নিজস্ব আইডিতে প্রচার প্রচারণায় তার আসল পরিচয় উন্মোচন করে আমাদের সংবাদ মাধ্যম। আরাভ খান তার আসল নাম না তিনি কখনো নিজেকে সোহাগ মোল্লা, হৃদয় শেখ, আপন এই রকম কয়েকটি নামে পরিচিত করতেন। ২০১৮ সালে ৭ জুলাই ঢাকায় পুলিশের একজন পরিদর্শক মামুন এমরান খান খুন হন। সেই খুনের আসামি হয়ে দেশ ছেড়েছিলেন এই তথাকথিত আরাভ খান । পাশ্ববর্তী দেশ ভারত গিয়ে নিজের নাম পরিচয় পাল্টে নিজেকে আরাভ খান বানিয়ে ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরে পাড়ি জমান। মাত্র দুই থেকে তিন বছরে ই আরাভ খান অলৌকিক হাতের বদৌলতে আরবপতিতে পরিনত হন। দুবাই শহড়ে তার আলিশান বাড়ী পৃথিবীর সবচেয়ে দামী ও আকর্ষণীয় বুর্জ খলিফায় ফ্ল্যাট। সব কিছু মিলে এই যেন এক এলাহী কান্ড। তবে আবাভ খান বা সোহাগ মোল্লা, হৃদয় শেখ, আপন যেই নামেই ডাকিনা কেন তার যে এই অর্থ সম্পদ কোন ভাবেই বৈধ না এটা সবাই নিশ্চিত।এমনকি আমাদের দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উদ্বৃতি দিয়ে বলেছেন আরাভ খানের এই অর্থ সম্পত্তির মুল যোগান দাতা নাকি বাংলাদেশের একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা। আরাভ খানের অপকর্ম আলোচানায় আসার পর এই কথিত আরাভ খান তার সোস্যালমিডিয়ার আইডিতে লাইভে এসে ঘোষনা দিয়েছেন তিনি তার ঐ টাকায় দেশের ৬৪ জেলায় ৬৪ টি আত্যাধুনিক মসজিদ নির্মান করে দিবেন। কি মহৎ একজন ধার্মীক মানুষ এই তথাকথিত আরাভ খান! এই আরাভ খান কিন্তু মাঝে মাঝে সৌদিতে যান হজ্ব ও ওমরাহ উদ্দেশ্যে! আজকের লেখায় আমার মুল প্রশ্ন ই এখানে।
এননটেক্স গ্রুপের ঋন কেলেংকারীর কথা আমাদের অনেকের ই খেয়াল আছে। ২০১০ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত এই এননটেক্স গ্রুপের এমডি মো. ইউনুস বাদল জনতা ব্যংক থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা ঋন নেয়। যেই ঋন নিয়ে তৎকালীন সময় অনেক সমালোচনা ও হয়। ওখানে একটা মজার কান্ড ঘটে ছিল। এই ঋণ পেতে পরিচালনা পর্ষদ ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইউনুস বাদলকে সম্পর্ক করে দিতে ভূমিকা রেখেছিলেন সিবিএ সভাপতি রফিকুল ইসলাম। আর এই রফিকুল ইসলামের নামে করা বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলার ঝাওয়াইল ইউনিয়নের দক্ষিণ পাথালিয়া গ্রামে নির্মিত হয়েছে আলোচিত ২০১ গম্বুজ মসজিদ। রফিকুল ইসলামের ভাষ্য মতে " মসজিদ বানাতে সব মিলিয়ে ২৫০ কোটি টাকা লাগেছিল । ইউনুস বাদল সাহেব পুরো টাইলস সহ সব মিলিয়ে তাঁর অনুদান শতকোটি টাকা ছাড়াবে। " তবে মো. ইউনুস বাদল দাবি করেন, ‘সর্বোচ্চ আড়াই কোটি টাকা দিয়েছেন তিনি। সিবিএ সভাপতি সব সময় একটু বাড়িয়ে বলেন। " যাই হউক ঐ মসজিদ নির্মাণের জন্য ইউনুস বাদলের ব্যাংক লুটের টাকা রফিকুল ইসলাম তার ট্রাস্টের উদ্যোগে নির্মিত মসজিদে ব্যবহার করেছেন এটা তো সত্য।
আজ আমাদের দেশে দুর্নীতির মহোৎসব চলছে। দুর্নীতি আর লুটপাটে দুর্নীতিবাজ আর লুটেরারা যে কে কত অর্থ সম্পত্তির মালিক তা সম্ভবত তারা নিজেরা ও অবগত নন। এই সকল লুটেরা দুর্নীতিবাজরা নিজের পুত পবিত্র ও মহা ধার্মিক প্রমানের জন্য সর্বপ্রথম যেই কাজটি করেন তা হলো একটি মসজিদ বা মাদ্রাসা নির্মাণ। বিশেষ করে মসজিদ নির্মাণেই তাদের উৎসাহ বেশি। তাই অধিকাংশ দুর্নীতিবাজরাই নিজ নিজ এলাকায় একটা করে বিশাল মসজিদ নির্মাণ করেন। আর এই মসজিদ নির্মাণের ফলশ্রুতিতে আমরা তাদের বাহবা দেই। তাদের প্রশংসায় আমরা পঞ্চমুখ। আমাদের ইসলাম ধর্মের বাংলাদেশী অনেক তথা কথিত নেতা ও তাদের জান্নতের সার্টিফিকেট দিচ্ছেন। জুম্মার নামাজের খুতবায় তাদের জন্য দোয়ার স্রোত বইছে। অথচ যেই ব্যক্তি আল্লাহর পবিত্র ঘর মসজিদ নির্মাণের সম্পুর্ন বা অধিকাংশ খরচ বহন করছেন তার ঐ অর্থ সম্পদ কত টুকু পবিত্র অর্থাৎ হালাল পথে উপার্জিত তা আজ আর কেউ বিবেচনায় নিচ্ছেন না।
হালাল রুটি-রুজি ইবাদত কবুলের পূর্বশত। হালাল রুটি ও রুজি শুধু নিজের জন্য তা নয়, বরং পরিবার ও সমাজের সবার জন্য প্রযোজ্য। তার মানে আল্লাহর কাছে ইবাদত কবুলের পূর্বশর্ত হালাল রুজি। যদি কারো শরীরে বিন্দু মাত্র হারাম উপার্জনে কোন মাল থাকে হউক অন্ন, বস্ত্র তার ইবাদত কবুল হবে না । এমনটাই বেলেছেন মহান আল্লাহ ও আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ) । পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘হে মানবজাতি, তোমরা পৃথিবীর হালাল ও পবিত্র বস্তু আহার করো, আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, নিঃসন্দেহে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু...’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৬৮-১৬৯)
পূর্বে আমরা যতটুকু শুনেছি কোন হারাম উপার্জনকারি যদি মসজিদে কোন অর্থ ব্যয় করতে চান ব তাহলে তাকে জানিয়ে দেওয়া তার ঐ টাকা দিয়ে মসজিদের পস্রাবখানা, পায়খানা ইত্যাদি নির্মাণ করা হবে। কারন তার ঐ হারাম টাকা ইবাদত খানায় ব্যবহার করা যাবে না। দ্বিতীয়ত তাকে জানিয়ে দেওয়ার আরো একটি কারন ছিল যে তার টাকা পস্রাবখানা বা পায়খানায় ব্যবহার করা হবে যে তার আরো একটা টা মর্ম ছিল যে, হারাম পথে উপার্জিত অর্থের জন্য তার স্হান সমাজে ও যেমন নিন্মস্তরে আখেরাতে ও ঐ একই স্তরে জায়গায় হবে। যাতে তার ভিতরে একটা অনুশোচনার জন্ম হয় হারাম উপার্জনকারী দুর্নীতিবাজ যেন তার কৃতকর্মের জন্য মহান আল্লাহতালার কাছে তওবা করতে পারেন। যদি ও আল্লাহ সুস্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন কোন বান্দার হক নষ্টকারী ব্যক্তিকে আল্লাহ ততোক্ষণ পর্যন্ত ক্ষমা করবেন না যতক্ষণ পর্যন্ত ঐ মজলুম মানুষ তাকে ক্ষমা না করবেন। কিন্তু আজ আমাদের সমাজ তথা রাষ্ট্র বড়ই আশ্চর্যের। এখানে কার আয়েরর উৎস কি তা না জেনে শুধু মাত্র যেই ব্যক্তির কাছে অগাধ টাকা আছে তাকেই সম্মানের স্হানে বসানো হচ্ছে! জুম্মার নামাজে মসজিদের খতিবরা তাদের ই প্রশংসায় ব্যস্ত। তাদের কাছ থেকে ঐ হারাম টাকা নিয়ে মসজিদ সহ নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নে ব্যস্ত অনেক মসজিদের ই ঈমাম ও খতিব সাহেবগন। তবে আমাদের অনেক হকপথের আলেম ওলেমারা আজো হারাম উপার্জনকারী দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সোচ্চার। আমি ঐ সকল তেলবাজ স্বার্থপর ঈমাম ও খতিব সাহেবদের বলবো যারা হারাম হালালের পরোয়া করছেন না। আরে ভাই আপনারা তো মসজিদের ঈমাম বা খতিব অর্থাৎ সমাজের নেতা। কেন আজ আমাদের মসজিদ গুলির এমন করুন দশা কেন আজ আমাদের মুসলমাদের এমন করুন দশা? একটি বার অন্তুর থেকে ভাবুন। মসজিদে নববীর সেই জন্ম সময়কার কথা ভাবুন। তখন মসজিদ যাই ছিল মুসল্লীগনের ঈমান তো ছিল লৌহের চেয়ে ও হাজার হাজর গুন কঠিন আর বিশুদ্ধতার দিক থেকে তো কোন তুলনাই হয় না। আমি ইতিহাস বিশ্লেষণ যাবো না। শুধু এতটুকুই বলবো মসজিদের অভাব না থাকলো ও মুসল্লীর আজ বড় অভাব। অতএব আমরা চাইবো কোন হারামখোর যেন তার হারামের অর্থ সম্পদে মসজিদ নির্মাণ করে আমাদের বিভ্রান্ত করতে না পারে। আমরা যেন হারাম খোরদের টাকার কাছে বিক্রি না হয়ে যাই। যেহেতু হারামের কোন কিছু শরীরে থাকলে আল্লাহ ইবাদত কবুল করবেন না। জেনে শুনে সজ্ঞানে কেউ যদি হারাম টাকায় নির্মিত কোন মসজিদে নামাজ আদায় করে অর্থাৎ ইবাদ করে আল্লাহ সেই ইবাদত অর্থাৎ নামাজ কবুল করবেন কি না সেটাই আজকের প্রশ্ন? আর স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন অবৈধ হারাম টাকা দিয়ে মসজিদ মাদ্রাসা নির্মাণ করলেই কি পাপ থেকে মুক্তি মিলবে ?