somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৮)

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাশেদ ভাইয়ের বাসায় একদিন গরম গরম খিচুরী আর মুরগির মাংশ খেয়ে, পরে কি আর ডাইনিং এর ওই অখাদ্য ভালো লাগে? আমি ও তাই প্রায়ই নানান অজুহাতে রাশেদ ভাইয়ের বাসায় হাজির হয়ে যেতাম। এছাড়া বাংলায় কথা বলার জন্য ও ভিতরটা হাঁসফাঁস করত। ওনাদের বাসায় গেলে খাওয়ার সাথে সাথে চরম একটা আড্ডাও হত। উইকেন্ডের দুইদিন ওনার বাসায় খাওয়া ছিল ধরা বাধা। মাকসুদ ভাই ও আসতেন সেইদিন। আমি রাশেদ ভাই, মাকসুদ ভাই, মিশু মিলে আড্ডা হত চরম। রাত ২-৩ টা কখন যে বেজে যেত খেয়াল থাকত না।

মানুষ খুব খারাপ এবং লোভী। বসতে পেলে শুইতে চায়। সেই অবস্থা হয়েছিল আমার। রাশেদ ভাইকে বললাম ভাই এক কাজ করি, আমি বাজার করে আপনাদের বাসায় রাখি, এসে রান্না করে খাব। ভালোমানুষ বড়ভাই আর কি বলবে.....আমি ও পাকাপাকি সেটল হয়ে গেলাম ওনাদের ঘাড়ে :P এরপর থেকে বাজার করে ওনাদের ফ্রিজে রাখতাম আর কাজের পর হাতে একটু সময় থাকলেই ওনাদের বাসায় যেয়ে রান্না করে খেতাম। বাংলাদেশ থেকে আম্মু বারবার বলা সত্তেও রান্না শিখে আসি নাই। তার ঠেলা বুঝছি তখন। সবসময় তো আর রাশেদ ভাইকে রান্না করতে বলা যায় না। তার উপর উনি টি.এ. হওয়ায় ব্যস্ত ও থাকতেন খুব। তাই বললাম ভাই আমাকেই রান্না শিখান। শুরু হলো রান্না শিখার পালা। বেশিদিন লাগেনি। দুই-তিন দিন। মুরগি, খিচুরী, মাছ। সব কিছুই এক রেসিপিতে। হলুদ, মরিচ, আদা, রসুন, পেয়াজ সব একসাথে দিয়ে তেলে ভাজ। লবন আর পানি দিয়ে বসিয়ে দাও, সিম্পল।

রাশেদ ভাই গোছানো মানুষ। রান্নার প্রতি ও আগ্রহ খুব। আর আমি তো পয়দাই হইছি খাওয়ার জন্য। খিলগাঁওয়ের মুক্তার বিরিয়ানি, ভোলা ভাই, ঢাকা হোটেল, মৌচাকের স্বাদ, মজা, শান্তিনগরের বিসমিল্লাহ, হক রেস্টুরেন্ট, কাকরাইলের কস্তুরী, বিপাশা হোটেল, মতিঝিলের ঘরোয়া, ধানমন্ডির সুনামি, স্টার, পুরান ঢাকার নান্না, মামুন, নিরব হোটেল কোন জায়গার ওয়েটাররা আমাকে না চিনত.....তাই রাশেদ ভাইয়ের সাথে রান্নার ট্যাগ টিম হতে বেশি সময় নিল না। দেশ থেকে রেসিপি বই নিয়ে এসেছিলাম। তার সাথে আম্মু'র কাছ থেকে আম্মু'র স্পেশাল মজার রেসিপি লেখিয়ে নিলাম। আর ইন্টারনেট তো আছেই। নরমাল দিনে কোনমতে ব্যাচেলর খিচুরী, ভাত, মাংশ খেয়ে পার করতাম কিন্তু প্রতি উইকেন্ডে নতুন কিছু রান্নার প্লান থাকত.........পোলাও, ফ্রায়েড রাইস, ফ্রায়েড চিকেন, বাটার চিকেন, চিকেন বিরিয়ানি, চিংড়ি ভুনা, মোঘলাই পরোটা, গরুর রেজালা, মুরগির রোস্ট, ডিমের কোর্মা, লাচ্ছি আরো কত কিছু বানানোর চেষ্টা করেছি (যাদের জিভে জল আসছে তাদের বলি অসহায়দের খাবারে নজর দিয়েন না। আপনাদের ঘরে কি মা-বোন থুক্কু খাবার নাই?)। বেশিরভাগই ডিজাস্টারে পরিনত হলেও কিছু আইটেম সত্যিই খুব ভালো হত। এইসব দিনে মাকসুদ ভাই ও আসতেন। ওনার বাসায় ও আমাদের দাওয়াত থাকত তবে ওনার একা সব করতে হত তাই সংখ্যাটা হাতে গোনা। রান্নার টেস্ট কেমন হবে সে নিয়ে কি সাসপেন্স !!!!! সারাদিন বলতে গেলে অভুক্ত থাকার পর সেই খাওয়ায় যে কি স্বাদ লাগত........ভরপেট খাবার পর বাসার সামনের মাঠে বেঞ্চের উপর বসে ঠান্ডার ভিতর কোক আর সিগারেট খাওয়া, মাঝে মধ্যে বিয়ার........ঠিক সেই মুহুর্তে মনে হত.......উমমম লাইফ ইজ বিউটিফুল।

(চলবে)

অন্যান্য পর্ব:
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৩)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৪)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৫)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৬)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৭)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৯)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১০)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১১)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১২)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৩)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৪)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৫)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৬)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৭)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৮)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৯)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২০)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২১)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২২)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৩)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৪)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৫)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৬)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৭)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৮)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৯)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (শেষ পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ৩:১২
৪১টি মন্তব্য ৪১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×