somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৪)

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইন্টারন্যাশনাল ফুড বাজার

এম.এস.ইউ. তে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট কম হলেও যারা আছে তারা বিভিন্ন দেশের। এইসব স্টুডেন্টদের জন্য এম.এস.ইউ. কর্তৃপক্ষ প্রতিবছর ইন্টারন্যাশনাল ফুড বাজারের আয়োজন করে। প্রত্যেকটা দেশ তাদের নিজস্ব ২-৩ রকম খাবার পরিবেশন করতে পারে। এই ফেস্টিভালটায় প্রচুর মানুষ হয়, যাদের বেশির ভাগই বোজম্যানের সাধারণ মানুষ। এরা খুব আগ্রহ নিয়ে এখানে আসে। কারণ একই ছাদের নিচে এত দেশের খাবার একই সাথে পাওয়া আর কোথাও সম্ভব না। ওদের হিসাবে দাম ও মোটামুটি কম। প্রতিটা আইটেম ১-৫ ডলারের মধ্যে হয়। যারা একটা আইটেম বানায় তারা সাধারনত দাম বেশি রাখে। খাবারের পপুলারিটির উপরেও দাম নির্ভর করে। খাবারের মান? ১০০% স্বাস্থ্যসম্মত। এম.এস.ইউ. এর ফুড ইন্সপেক্টর খাবার তৈরী থেকে শুরু করে সার্ভ করা পর্যন্ত ৫ মিনিট অন্তর অন্তর চেক করে। একটু তারতম্য হলেই পুরো খাবারই ফেলে দেয়। খাবারের স্বাদ? উমমম পাকা রাধুনিদের মত তো আর হয়না কারণ বেশিরভাগ স্টুডেন্টরাই বানায়। তারপরও মোটের উপর খারাপ হয়না। যারা পারে তারাই তো বানায়। আমাদের খাবার সবসময়ই জনপ্রিয়, রুমা আন্টির মত অসাধারণ রাধুনি থাকায়। রুমা আন্টি থাকায় আমাদের খাবার নিয়ে কোনো চিন্তাই করতে হয়নি। যদিও আন্টিই সব করতেন কিন্তু কি কি আইটেম হবে তার ডিসিশন নিতে দিতেন আমাদেরকেই। সবাই মিলে ডিসিশন নিয়ে আন্টিকে জানালে উনি শুরু করতেন প্রিপারেশন। রান্না কিন্তু কারো বাসায় হোতনা। এম.এস.ইউ. কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে বিরাট এক রান্নাঘরে সবাই একসাথে রান্না করত। সে এক এলাহী কারবার। উফফ আন্টির ধৈর্যও ছিল। ওই জায়গায় প্রচন্ড গরমের মধ্যে নিজেই সব করে যেতেন। আমরা হেল্প করতাম কিন্তু আদৌ আন্টির কোনো হেল্প হতো কিনা সে ব্যাপারে আমার যথেষ্ঠ সন্দেহ আছে। জিনিসপত্র এনে দেয়া আর একটু নাড়ানাড়ি এই আমাদের কাজ ছিল। তাও আমাদের হাত পুড়ে যাবে এই ভয়ে আন্টি আমাদের বেশিক্ষণ নাড়তেও দিতেন না। খাবার বিক্রি আর প্রদর্শন ছাড়া প্রতিযোগিতাও হত। খাবারের স্বাদ আর স্টল সাজানোর উপরের ভিত্তি করে প্রথম, দ্বিতীয় আর তৃতীয় নির্ধারণ করা হত। আফসোস প্রথম আর দ্বিতীয় সবসময় সৌদি আর ইন্ডিয়ানদের মধ্যেই থাকত। এর প্রধান কারণ স্টল সাজানোয় সৌদিদের বাজেট থাকত অনেক। ওরা এজন্য ওদের এম্বেসী থেকে এইড পেত। আর ইন্ডিয়ানরা সংখ্যায় ছিল অনেক। প্রায় ৪০-৪৫ জন। অনেক মানুষ অল্প করে চাঁদা দিলেও অনেক টাকা। আর যারা ১ম, ২য়, ৩য় হয়, এম.এস.ইউ. পরের বছর তাদের স্পন্সর করে। এই টাকাও ওদের ধরা বাঁধা ছিল। আমরা ছিলাম মাত্র ৯ জন। এর মধ্যে একজন গোনার বাইরে কারণ ওনাকে কোনো কাজেই কোনো সময় পাওয়া যেতনা। এরপরেও ২০১১ তে বাংলাদেশ তৃতীয় হয়েছিল। মজার ব্যাপার হলো সৌদি আর ইন্ডিয়ানরা ১ম, ২য় হলেও প্রফিটে আমাদেরকে ছাড়িয়ে যেতে পারত না। এর একমাত্র ক্রেডিট রুমা আন্টির। খাবার মজা হওয়া ছাড়াও, অনেকদিন থাকার কারণে আন্টি জানতেন কতটুকু ঝাল দিলে আমেরিকানরা সহ্য করতে পারবে বা কেমন হলে ওদের রসনার তৃপ্তি হবে। ওভাবেই উনি রান্না করতেন তাই আগের বছর যারা খেয়ে যেত তারা পরবর্তী বছরে আবার এসে আমাদের খুঁজত। এই বছর কি হবে কে জানে.......রুমা আন্টিরা বোজম্যান থেকে মুভ করেছেন :(। ২০১২ এর ফুড বাজারে আমাদের আইটেম ছিল লাচ্ছি, চিকেন সমুচা আর ভেজিটেবল রোল। লাভের অংকটা চার সংখ্যা ছুয়েছিল :)

> চলছে রান্নার প্রস্তুতি



























> আমাদের স্টল























> বাঙালি সাজে রুমা আন্টির ফ্রেন্ড বেকী



> ফুড বাজারের হাল হকিকত



















































































































































> সৌদি স্কার্ফ এর ব্যাপক চাহিদা











> নাচ গান ছাড়া আবার উৎসব হয় নাকি























































(চলবে)

অন্যান্য পর্ব:
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৩)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৪)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৫)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৬)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৭)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৮)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৯)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১০)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১১)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১২)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৩)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৫)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৬)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৭)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৮)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৯)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২০)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২১)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২২)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৩)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৪)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৫)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৬)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৭)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৮)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৯)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (শেষ পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ৩:১০
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×