somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৪)

৩১ শে মে, ২০১৩ রাত ১০:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জার্নি করে আসার পরও ইমেল ভাইয়ের সাথেই ট্রেনিং শুরু করলাম একটুও রেস্ট না নিয়ে। আমাকে উনি আগেই বলেছিলেন প্রথমে কিছুদিন ট্রেনিং নিতে হবে। আমি তাই ভাবলাম যত তাড়াতাড়ি শিখব তত তাড়াতাড়ি পেমেন্ট পাওয়া শুরু করব। সারা রাত তার সাথে বসে থাকলাম, দেখলাম কিভাবে কি করতে হয়। পরদিন সকালে ম্যানেজারের সাথে পরিচয়। বললেন ঠিক মত শিখ, এক-দেড় সপ্তাহ পর পেমেন্ট শুরু হবে। এরপর থেকে শুরু হলো প্রতিদিন ৮-১০ ঘন্টা ফ্রি কামলা দেয়া। এক সপ্তাহ পর হার্টফোর্ডে সামারের সবচেয়ে বড় কনসার্ট ডেভ ম্যাথিউসের কনসার্ট শুরু হলো। দুই দিন পয়সা ছাড়া কি খাটনি। প্রতিদিন ১৪-১৫ ঘন্টা। পুরো মোটেল সোল্ড আউট হয়ে গেল। ভাবলাম মালিক হয়ত কিছু হলেও বোনাস দিবে। কিসের কি? কিপ্টা ব্যাটা একটা পার্টি পর্যন্ত দিল না। উল্টা কনসার্ট শেষ হয়ে গেল, আমাকে যে বলছিল দেড় সপ্তাহের ট্রেনিং এর কথা তা পার হয়ে তিন সপ্তাহ হলো, কিন্তু পেমেন্টের কোনো নাম গন্ধ নাই। ইমেল ভাইও অবাক কারণ উনিও এতদিন ট্রেনিং করেন নাই। আমরা বুঝলাম চান্সে পেয়ে আমাকে ফ্রি খাটাচ্ছে। তখন মানু কাকা মানে মানু পাটেল বললেন "এইভাবে কাজ হবে হবে না। তুমি বল জব দিলে দেন, না দিলে নাই। আমি চলে যাই। এইভাবে আর কতদিন? তুমি না বললে এইভাবে ফ্রি খাটাবে আরো অনেক দিন"।

পরের দিন আমি যখন মন:স্থির করে ফেলেছি আজকে এসপার ওসপার কিছু একটা করেই ফেলবো তখনই ম্যানেজার বলল কালকে থেকে তোমার পেমেন্ট শুরু। তুমি রেডী। আমি মনে মনে বলি- "শালা রেডী তো হইছিলাম আরো দুই সপ্তাহ আগে, আর এখন বলস আমি রেডী.......এতদিন যে বেগার খাটলাম ঐটা কি?" যাই হোক মনের সব কথা মুখে আনা যায় না। শুরু করলাম পরের দিন থেকে। ঐদিন কাজের সময় ভাবতেই ভালো লাগছিল যে আজকে ফ্রি কামলা দিচ্ছি না, ঘন্টার সাথে সাথে টাকা পাব।

মোটেলের ফ্রন্ট ডেস্কের কাজ বেশ আরামের অন্যান্য জবের তুলনায়। আমার নাইট শিফট। রাত ১১ টা- সকাল ৭ টা। রাত্রে সাধারনত গেস্ট একটু কম আসে। উইকেন্ডে অবশ্য রাত্রেই বেশি আসে। নাইট ক্লাব, স্ট্রিপ ক্লাব অথবা বার থেকে। মোটামুটি সবাই কিঞ্চিত হলেও মাতাল থাকে। কেউ টাকা বেশি দেয়, কেউ কম। তখন আবার কোস্তা-কুস্তি করে বাকি টাকা বের করতে হয়। কেউ মাঝে মধ্যে টাকা না দিয়েই বলে আমি তোমাকে মাত্র টাকা দিয়েছি। এগুলো শেষ হলে অনেকে রুম খুঁজে বের করতে পারেনা। অন্য রুমে যেয়ে ধাক্কাধাক্কি করে। ওই রুমে আবার কেউ থাকলে সে ক্ষেপে যায়.........মারামারি লাগার অবস্থা হয়। ক্যামেরায় যদি দেখি যে এমন কিছু হচ্ছে তখন আমি যাই আল্লাহর নাম নিতে নিতে ঝগড়া থামাতে। কে জানে আমাকেই আবার মাইর দিয়া বসে নাকি দুই গ্রুপ মিলে :P। যদিও হাতে ব্যাটন আর পিপার স্প্রে থাকে তবুও রিস্ক থেকেই যায়।

আমেরিকার এই ধরনের ছোট-খাট মোটেলগুলো ড্রাগস ডিলিং, ইল্লিগাল প্রস্টিটিউশন, আরো যত দুই নাম্বার কাজ আছে সব কিছুর আখড়া। যারা এগুলা করে তাদের সবাইকেই ফ্রন্ট ডেস্কের আমরা মোটা-মুটি চিনি। কারণ এরা রেগুলার মোটেলে আসে। আসবেই বা না কেন? বদ্ধ রুমের চেয়ে নিরাপদ জায়গা আর কই পাবে? আমরাও রুম দেই তাদের যতক্ষণ পর্যন্ত না আমাদের সাথে তারা কোনো ঝামেলা করে। রুম না দিয়ে উপায় নেই। এই ধরনের মোটেলগুলো এদের উপরেই বিজনেস করে। আমাদের মোটেলের আশেপাশে যত একই ধরনের মোটেল আছে সবগুলোরই এক অবস্থা। মোটেলে আমাদের ফ্রন্ট ডেস্কে যথেষ্ট সিকিউরিটি আছে। পুরোটা ১০ ইঞ্চি পুরু বুলেট প্রুফ কাঁচ দিয়ে ঘেরা। হার্টফোর্ড কালো প্রধান শহর হওয়ায় বেশিরভাগ গ্রোসারী শপ, লিকার স্টোর এমনকি ব্যান্কেও বুলেট প্রুফ কাঁচ দেয়া থাকে। আমার কথা শুনলে আপনাদের রেসিস্ট মনে হতে পারে কিন্তু এর জন্য দায়ী কালোরাই। বেশিরভাগ আকাম-কুকামের মধ্যে এরাই জড়িত। আর এদের ব্যবহারও খারাপ। সাদারা হয়ত মনে মনে আমাদের মত ব্রাউন পিপল অথবা ব্ল্যাক পিপলদের পছন্দ করে না, কিন্তু তাদের ব্যবহারে কখনই এটা বুঝা যায় না। ঝামেলার মধ্যেও এরা কম। কালোদের মধ্যে একটা অদ্ভুত জিনিস আছে, এদের মধ্যে যারা ভালো তারা সেইরকম ভালো, আর যেগুলা বদ ওগুলা মহা বদ, পাঁজির পা ঝাড়া টাইপ। কোনো মধ্যম টাইপ লোক নাই এদের মধ্যে। আমার কথা থেকে পুরোপুরি বিচার করা যাবে না কারণ আমি শুধু নিজে যা দেখেছি তাই বলছি।

তো ইল্লিগাল বিজনেসের সাথে জড়িত লোকজনের কারণে প্রায়ই মোটেলে পুলিশ রেইড দেয়। প্রথম প্রথম তো আমার আত্মা প্রায় বের হয়ে যেত পুলিশ দেখলে কারণ আমি ইল্লিগালি কাজ করছি। ধরা পড়লে সোজা ডিপোর্ট করবে। প্রথম পুলিশ এসেছিল আমার জব শুরুর দ্বিতীয় দিন। আমি সেইদিন একা। এক ড্রাগ ডিলারকে খুঁজছিল। অফিসে ঢুকে সব রেজিস্ট্রেশন পেপার, ক্যামেরা ফুটেজ চেক করলো। আমি কখন আসছি, ওই লোকের ছবি দেখিয়ে বলল আসার পর একে দেখছি নাকি এইসব। খুঁজে পাওয়ার পর ওরা আরো ব্যাক আপ আসতে বলল। ব্যাক আপ আসার পর আমার কাছ থেকে কি-কার্ড নিয়ে ৫ মিনিটের মধ্যে ব্যাটাকে গ্রেফতার করে চলে গেল। পরে আমি বুঝেছিলাম যে ভয় অমূলক ছিল। ওরা যেই কাজে আসে সেইটাই করে। আর ডিপোরটেশনের কাজ ইমিগ্রেশন পুলিশের, সাধারণ পুলিশের না। এরপরও পরের কয়েকবার পুলিশ আসলে বুক দুরুদুরু করত। আস্তে আস্তে সব নরমাল হয়ে গেল। পুলিশের সাথে ডীল করা এখন ডাল-ভাত টাইপ ব্যাপার। কোনো ঝামেলা হলে আমি নিজেই মাঝে মধ্যে পুলিশ কল দেই। অনেককেই চিনে গেছি। কোনো পুলিশ রাত্রে রুটিন চেকিং এ আসলে একসাথে সিগারেট, কফি খাই। রিসেন্ট ঘটনা নিয়ে আলাপ করি।

তবে একবার ঝামেলা একটা হয়েছিল...................

(চলবে)

অন্যান্য পর্ব:
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৩)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৪)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৫)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৬)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৭)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৮)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৯)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১০)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১১)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১২)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৩)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৪)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৫)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৬)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৭)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৮)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৯)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২০)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২১)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২২)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৩)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৫)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৬)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৭)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৮)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৯)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (শেষ পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ৩:০৭
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×