হার্টফোর্ড, কানেকটিকাটে যখন আমি প্রথম আসি তখন প্ল্যান ছিল সামারে এখানে থেকে চলে যাব। ফিরোজ ভাই এসে পড়লে নিউ ইয়র্কে ভালো একটা কাজ পাব। তাছাড়া কলেজ নিউ ইয়র্কে। কানেকটিকাটে থেকে তো আর নিউ ইয়র্কে ক্লাস করা সম্ভব না। মন্টানা থেকে ট্রান্সফার হয়ে এসেছিলাম ব্রন্ক্সের হোস্টস কম্যুনিটি কলেজে। ফিরোজ ভাইয়ের বাসা ব্রঙ্কসে থাকায় এই কলেজ চুজ করা। কোনো জায়গা সম্পর্কে না জানলে যা হয় আর কি। ফিরোজ ভাইয়ের বাসা আর কলেজ দুটোই ব্রঙ্কসে হলেও এই রুটে সরাসরি কোনো ট্রেন নেই। অনেকটা পথ ঘুরে যেতে হয়। বাসে একটু তাড়াতাড়ি যাওয়া যায় কিন্তু মাঝে নেমে আবার বাস চেঞ্জ করার ঝামেলা আছে। নিউ ইয়র্ক ভালো মত চিনিনা তাই বাসে না যেয়ে ট্রেনেই যেতাম।
কিউনি সিস্টেমের কম্যুনিটি কলেজগুলোয় নিয়ম হচ্ছে আই.ই.এল.টি.এস, স্যাট, জি.আর.ই. যাই থাকুক না কেন একটা ছোট অ্যাসেসমেন্ট টেস্ট দিতে হয়, বাধ্যতামূলক। জুলাইয়ের শেষের দিকে কয়েকদিনের ছুটি নিয়ে নিউ ইয়র্ক গেলাম এডমিশন টেস্ট, রেজিস্ট্রেশন এইসব কাজ শেষ করে আসতে। কলেজ থেকে একের পর এক ইমেইল আসছিল। প্রথমবার কলেজে যাওয়া। নিউ ইয়র্কের কম্যুনিটি কলেজগুলো আমাদের দেশের প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির মত দেখতে। শুধু বিল্ডিং। ইন্টারন্যাশনাল অফিসে গিয়ে এডভাইসরের সাথে কথা বলার জন্য ঢোকার সময় থেকেই বিস্ময়ের পালা শুরু। সিকিউরিটি গার্ড থেকে শুরু করে ক্লার্ক, স্টুডেন্ট সবাই কালো। ব্রঙ্কস কালোদের এলাকা কিন্তু কলেজেও যে ডাইভারসিটি থাকবে না এটা ভাবিনি। বাংলাদেশী, ইন্ডিয়ান তো দুরের কথা একটা চাইনিজ অথবা মেক্সিকান পর্যন্ত দেখলাম না। নিজেকে কেমন জানি এক বিলের এক মোষ মনে হচ্ছিল । এর পরে রিসেপশনের মহিলা আমার পরে আসা এক ছেলেকে অজানা এক ভাষায় কিচির-মিচির করে আগে পাঠিয়ে দিল। আমি জিগ্গেস করায় বিরক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল "আই উইল কল ইউ হয়েন ইটস টাইম" !!!!! অগ্যতা অপেক্ষা। মিনিট পাঁচেক পরেই ডাক আসলো। এডভাইসর মহিলা খুবই ভালো। সব কিছু বুঝিয়ে দিল সুন্দর করে। পরশু এক্সাম দেয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করলাম। আমাকে প্রিপারেশনের জন্য এক গাদা কাগজ ধরিয়ে দিল। ম্যাথ, ইংলিশের লিসেনিং আর রাইটিং এক্সাম দিতে হয়েছিল যতদুর মনে পরে। প্রিপারেশনের জিনিসপত্র দেখে আমার তো গলা শুকিয়ে গেল। বিকট সব জিনিস । ম্যাথ আমি বরাবরই ভয় পাই। এরপর আবার পরিচিত জিনিসগুলোর নাম ও ইংলিশে হয়ে প্যাঁচ লেগে যাচ্ছিল সব। একদিনে যা পারি প্রিপারেশন নিয়ে গেলাম আল্লাহর নামে পরীক্ষা দিতে। পরীক্ষা বেশ সহজ হলো। কম্পিউটারাইজদ এক্সাম হওয়ায় শেষ হওয়ার সাথে সাথেই রেজাল্ট। সাফল্যের সহিত উত্তীর্ণ ।
পরেরদিন গেলাম বাংলাদেশ থেকে নিয়ে আসা মেডিক্যাল সার্টিফিকেট, ব্যান্ক স্টেটমেন্ট, স্কুল-কলেজের সার্টিফিকেট আর এম.এস.ইউ এর ট্রান্সক্রিপ্ট নিয়ে। ঐদিনই সব ফরমালিটিস সেরে কোর্স রেজিস্ট্রেশন করে কানেকটিকাটে চলে আসব এটাই ছিল আমার প্ল্যান। পেপারস সব সাবমিট করলাম। এরপর কোর্স এডভাইসিং এর জন্য গেলাম এডভাইসরের কাছে। ঝামেলা শুরু এখান থেকেই। আমাকে যার কাছে পাঠানো হয়েছিল উনি ছিলেন সাধারণ এডভাইসর। যার সাথে আমি এতদিন ইমেইলে যোগাযোগ করেছি উনি হচ্ছেন লিসান্কা সোতো, ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট এডভাইসর। আরেকজন ছিলেন সান্দ্রা ল্যাকায়, ট্রান্সফার ক্রেডিট ইভালুয়েটর। তারা আমাকে বলেছিল এম.এস.ইউ তে করা ১২ ক্রেডিটের ৯ টা তারা এক্সেপ্ট করবে। যখন সাধারণ এডভাইসর আমাকে বেসিক কোর্সগুলো দিলেন তখন আমি বললাম এই কোর্সগুলোতো আমি আগে করে এসেছি, ওই ক্রেডিট গুলোতো ট্রান্সফার হবে। উনি বললেন তোমার ফাইলে তো কিছু লেখা নেই। তুমি তাহলে লিসান্কা সোতোর সাথে দেখা করে আসো। গেলাম তার সাথে দেখা করতে। উনি অফিসে নেই। কখন আসবে তাও বলতে পারছে না কেউ। আমি জিগ্গেস করলাম এইটা কেমন কথা যে কখন আসবেন তোমরা কেউ জানো না !!!!! উত্তরে রিসেপশনিস্টের হাত আর ঠোঁট উল্টানো দেখলাম। পরের দিনের এপয়েনমেন্ট নিয়ে চলে আসলাম। রাত্রে বেলা লিসান্কা সোতোকে ইমেইল করলাম সমস্যাটার কথা জানিয়ে। পরেরদিন একই কান্ড। মিজ সোতো অফিসে নেই। আমি বললাম তাহলে অন্য কোনো ইন্টারন্যাশনাল এডভাইসরের কাছে পাঠাও। গেস হোয়াট.....শী ওয়াজ দ্যা অনলি ওয়ান । গেলাম আবার প্রথম এডভাইসরের কাছে। খুলে বললাম ব্যাপার। উনি বললেন তাহলে সান্দ্রা ল্যাকায় এর কাছে যাও। ও ক্রেডিট ইভালুয়েট ফর্ম ফিল আপ করে দিলে আমি তোমাকে এডভান্স কোর্স দিব। কেউ বিশ্বাস করবে না বললে, মিজ সান্দ্রা ল্যাকায় ছুটিতে। সে আসবে আমার ক্লাস শুরু হওয়ার তিন দিন পর................
(চলবে)
অন্যান্য পর্ব:
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৩)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৪)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৫)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৬)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৭)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৮)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৯)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১০)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১১)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১২)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৩)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৪)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৫)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৬)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৭)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৮)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৯)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২০)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২১)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২২)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৩)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৪)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৫)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৭)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৮)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৯)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (শেষ পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ৩:০৬