somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২২)

২১ শে মে, ২০১৩ রাত ১০:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অভি ভাই জর্জিয়া থেকে অনেক চেষ্টা করতেছিলেন আমার জবের জন্য। ওনার নিউ ইয়র্কে যত পরিচিত বন্ধু-বান্ধব, বড় ভাই ছিল সবাইকেই বলেছিলেন। একদিন এক ইন্ডিয়ান মেয়ের নাম্বার দিলেন। ওই মেয়ে যখন জর্জিয়া ছিল তখন অভি ভাই ওকে জব ম্যানেজ করে দিয়েছিলেন। ওই মেয়ে অভি ভাইকে বলেছিল আমাকে জব ম্যানেজ করে দিবে মাস্ট। উনি ফোন নাম্বার দিলেন। আমি মেয়েকে ফোন করলাম। মেয়ে বলল কালকে বিকালে ফোন কর, একটা জায়গার ঠিকানা দিব, ওখানে চলে যেও। আমি বলে রেখেছি। জব হয়ে যাবে। ওটাই ছিল ওই মেয়ের সাথে আমার প্রথম ও শেষ কথা। পরেরদিন বিকালে কেন, এর পরের কোনো বিকালেই সেই মেয়ে আমার ফোন ধরেনি। এরপর অভি ভাই দিলেন এক বড় ভাইয়ের নাম্বার। ওই ভাই অবশ্য সোজা কথার মানুষ ছিলেন। মিথ্যা আশ্বাস দেন নাই। বলেছিলেন এক সপ্তাহ সময় দাও, তারপর কিছু একটা জানাতে পারব। আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম সেই ফোন কলের.........আজও মনে আছে কত আকাঙ্খা নিয়ে অপেক্ষা করেছিলাম সেই একটা ফোন কলের জন্য.................

আমি যখন তীব্র হতাশায় জর্জরিত তখন একদিন সকাল বেলা ইমেল ভাইয়ের ফোন। ইমেল ভাইয়ের কথা আগেই বলেছি, ভিসা পাবার পর একটা কনফারেন্সে ওনার সাথে আমার পরিচয়। ঐখান থেকেই ফেসবুক আইডি নেয়া। ইউ.এস.এ তে আসার পর ফোন নাম্বার নিয়ে দুই-তিন বার কথা বলা। এতটুকুই। উনি থাকতেন কানেকটিকাটে। নিউ ইয়র্কের পাশের স্টেট। আমার ফেসবুক স্ট্যাটাসে নিউ ইয়র্ক এসেছি দেখে ফোন দিয়েছিলেন কি অবস্থায় আছি, কি করছি জানার জন্য। বললাম আমার অবস্থার কথা। ইমেল ভাই একটা মোটেলে জব করতেন, কানেক্টিকাটের হার্টফোর্ড সিটিতে। জব পাচ্ছি না বলার সাথে সাথেই উনি বললেন এক কাজ কর, আমার এখানে এসে পর। আমার মোটেলে মাত্র একজন জব ছেড়ে চলে গেছে। সামনে আবার কনসার্ট আছে এখানে। খুবই ব্যস্ত থাকবে তখন মোটেল। একজন লোক খুবই দরকার। আমরা মাত্র তিনজন এখন। আমি জিগ্গেস করলাম, কত আওয়ার দিবে, পার আওয়ার কত করে দিবে? উনি বললেন "তুমি মিনিমাম ৪০ আওয়ার পাবে আর পার আওয়ার ৭ ডলার। সব চেয়ে বড় সুবিধা হলো মোটেলের একটা রুমেই তুমি ফ্রি থাকতে পারবে আর খাওয়াও ফ্রি। সব এমপ্লয়ীরা মোটেলেই থাকে, এখানেই খায়। মোটেলের মালিক ইন্ডিয়ান গুজরাটি। উনি এই সুবিধাটা দিচ্ছেন। আমাকেও রুম দিয়েছে, তুমি আসলে আমার সাথেই থাকবা"। এর চেয়ে ভালো অফার আর কিছু হয় না। তারপরও আমি একটু চিন্তায় পরে গেলাম। মাত্র একমাস হলো নিউ ইয়র্কে এসেছি, এখনি আবার অন্য একটা স্টেটে চলে যাব? আবার স্টেট চেঞ্জ? আবার নতুন জায়গা.....আবার নতুন মানুষ...........ইমেল ভাইকে বললাম ভাই আপনাকে ৩-৪ দিন পরে জানাই? আমি একটু কনফিউজড। ইমেল ভাই বললেন "৩-৪ দিন না তুমি কালকের মধ্যে জানাও নাইলে লোক নিয়ে নিবে। আমি ম্যানেজারকে তোমার কথা বলতেছি। কালকের মধ্যেই তুমি ফাইনাল জানাও"। আমি বললাম ঠিক আছে। সাগর ভাই, সোহেল ভাই, জামাল ভাই, শিবলী, রাজীব সবার সাথেই আলাপ করলাম। কেউই হ্যা বলল না। সবাই বলল থাকেন এইখানেই, একটা না একটা ব্যবস্থা হয়েই যাবে। কিন্তু কেন জানি তাদের কথায় আমি আর তেমন ভরসা পাচ্ছিলাম না। বাসায় কথা বললাম। আব্বু-আম্মু বলল ভালো সুযোগ, দেখতে পারো। ভাইয়াকে ফোন দিলাম ইউ.কে তে। ভাইয়া বলল "তোমার কি মাথা নষ্ট? ফ্রি থাকা-খাওয়ার সুযোগ পাচ্ছ আমেরিকার মত জায়গাতে, আর তুমি চিন্তা করতেছ? এখনি হ্যা বলে দাও। এই সুযোগ হারাইলে আর পাবে না"। আমি তখন কয়েকটা জিনিস হিসাব করলাম। প্রথমত নিউ ইয়র্কে থাকলে জব পাই আর না পাই মাস শেষে বাসা ভাড়া দিতে হবে। দ্বিতীয়ত খাওয়ার খরচ তো আছেই। তৃতীয়ত জব পাওয়ার কোনো সম্ভবনা নিকট ভবিষ্যতে দেখছি না। কানেকটিকাটে গেলে থাকা-খাওয়ার খরচ বাঁচবে, জব রেডি। বাকি থাকলো কলেজ। এখন সামার চলছে। তিন মাস বন্ধ। আমি প্ল্যান করলাম এই মাস ওখানে জব করব তারপর নিউ ইয়র্কে চলে আসব। ততদিনে ফিরোজ ভাই ও চলে আসবেন। উনি আসলে ওনার স্টোরেই কাজ পেয়ে যাব। মাঝখান দিয়ে উপরি লাভ এই তিন মাস থাকা-খাওয়ার কোনো খরচ লাগবে না। যা ইনকাম করব তাই পকেটে থাকবে। সব চিন্তা করে ইমেল ভাইকে ফোন দিলাম। বললাম, ভাই পরশু আসছি। উনি বলে দিলেন নিউ ইয়র্ক থেকে কিভাবে আসতে হবে। ওনার কথা মত পিটার প্যান বাসে টিকেট কেটে ফেললাম। নিউ ইয়র্ক থেকে হার্টফোর্ড যাবার সময় যথেষ্ট ঝামেলা পোহাইতে হয়েছিল। অবশ্য নিজেরই দোষে। নিউ ইয়র্ক সিটির ট্রাফিক সম্পর্কে আমার ততদিনে তেমন কোনো ধারণা হয়নি। নিউ ইয়র্ক সিটিতে একটাই বাস টার্মিনাল- পোর্ট অথরিটি, ফরটি সেকেন্ড স্ট্রিটে। আমি ভেবেছিলাম ব্রঙ্কস থেকে টাইম স্কয়ার ট্রেনে যেতে যদি ১ ঘন্টা লাগে তাহলে ট্যাক্সি নিয়ে গেলে ৩০ মিনিট আগে রওয়ানা দিলেই হবে। তাও আমি ৪৫ মিনিট আগে রওয়ানা হয়েছিলাম। প্রচুর ট্র্যাফিক পেরিয়ে যখন আমি পোর্ট অথরিটি পৌঁছাই তখন হাতে মাত্র পাঁচ মিনিট বাকি আর। পোর্ট অথরিটি বাস টার্মিনাল এক বিশাল জায়গা। শত শত গেট, যেখান দিয়ে বাস ছাড়ে। প্রথমবার যেয়ে আমার কাছে পুরোই গোলক ধাঁধা মনে হয়েছিল। আমার গেট নাম্বার ইনকোয়ারিতে জেনে নেবার পরেও খুঁজে পাচ্ছিলাম না। ফলাফল বাস মিস। পিটার প্যানের কাউন্টারে গিয়ে জানলাম নেক্সট বাস ৩ ঘন্টা পর। আমি বললাম আমি তো আগের বাস মিস করেছি, এখন কি করার? ওরা শুধু টিকেট নিয়ে নেক্সট বাসে যাবার জন্য টিকেটের উপর লিখে সাইন দিয়ে দিল। কোনো এক্সট্রা টাকা নিল না। আমি হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছিলাম। ইমেল ভাইকে ফোন করে বলে দিলাম কখন আসব। এরপর দীর্ঘ ৩ ঘন্টা বাসের জন্য ১৫ নাম্বার গেটের সামনে বসে থাকা। অবশেষে বাস এলো। পিটার প্যানের সবুজ রঙের বাসে চড়ে আবার অজানা, অনিশ্চিত জীবনের পথে চললাম।

(চলবে)

অন্যান্য পর্ব:
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৩)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৪)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৫)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৬)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৭)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৮)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৯)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১০)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১১)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১২)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৩)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৪)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৫)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৬)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৭)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৮)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৯)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২০)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২১)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৩)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৪)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৫)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৬)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৭)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৮)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৯)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (শেষ পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ৩:০৭
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×