somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২০)

৩১ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাজিবের বাসা তখন ছিল ১১১ স্ট্রিট, রুজভেল্ট এভিনিউতে। টাইম স্কয়ার থেকে ৭ ট্রেন ধরে সোজা চলে গেলাম। সারা রাস্তা রাজীব আমাকে নিউ ইয়র্ক সিটির সাবওয়ে সিস্টেম বুঝাতে বুঝাতে নিয়ে গেল। আমি তখন নিশ্চিত ছিলাম, জীবনেও এই সাবওয়ে সিস্টেম আমার মাথায় ঢুকবে না। প্রতিবারই হারিয়ে যাব। নতুন আসা সবারই মনে হয় এরকম লাগে। এক মাসের আনলিমিটেড রাইড ১০৪ ডলার। কাজ খুজতে হবে, জায়গা চিনতে হবে, এইসব ভেবে ঐটাই কিনে ফেললাম। স্টেশন থেকে নেমে রাজিবের বাসা ১৫ মিনিটের রাস্তা। ওই নেইবারহুডটা স্প্যানিশ লোকজনে ভরা। নিরিবিলি রাস্তা। রাজিবের বাসাটা ছিল এক বাঙালি পরিবারের। উপরে ওনারা থাকেন আর সেমি বেজমেন্ট ভাড়া দিয়েছেন রাজিবদের। ছিমছাম বাসা। দুইটা বেডরুম, একটা কিচেন কাম ডাইনিং, একটা টয়লেট। ১১৫০ ডলার ভাড়া। ফিরোজ ভাইদের বাসার তুলনায় অনেক ভালো। কিন্তু ঝামেলা হলো, বাড়িওয়ালা আন্টি প্রায়ই না বলে হুটহাট চলে আসেন। কিচেন ইউজ করেন। তার মেয়ের টিচার আবার ডাইনিং এ পড়ায়। এক্সট্রা ঝামেলা। দেখা যায় সবাই আড্ডা দিচ্ছে, সিগারেট খাচ্ছে, আন্টি তখন এসে হাজির। কি ইম্বারেসিং পরিস্থিতি। সে আবার আসলে যেতে চায়না। যাই হোক, রাজিবদের বাসায় ওরা থাকত ৩ জন। রাজীব, তারেক, অনিক. তিন জনই স্টুডেন্ট। একই সাথে নিউ ইয়র্ক এসেছিল। সন্ধ্যা হওয়ার পরে যখন যাই যাই করছি তখন রাজীব বলল, আজকে থাকেন। যেয়ে তো কোনো কাজ নেই। রাজীব ও তখন কোনো কাজ করছিল না। ৩ মাস হয় এসে তেমন কোনো ভালো কাজ না পাওয়ায়, আজকে এইটা কালকে ঐটা এমন করেই যাচ্ছিল। অনিক আর তারেক তখন আসেনি। ভাবলাম থেকেই যাই। ওদের সাথে পরিচয়টাও হবে। আর ফিরোজ ভাইদের বাসায় গেলে তো বোবা হয়ে থাকতে হবে। নানান চিন্তা করতে করতে অনিক এসে পড়ল। আবার আড্ডা। রাত ভালই বাড়ল। তখন আর যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তারেকও আসলো কতক্ষণ পর। কি করব, লাইফ কিভাবে কাটবে, দেশের কথা, কে কি করতাম দেশে, এইসব কথায় আর রান্না করে খেতে খেতে প্রায় ভোর। ঘুমানোর সময় আমি নিচে শুতে গেলাম, রাজীব কিছুতেই দিবে না। বলল আমার বাসায় এসে আপনি মাটিতে ঘুমাবেন আর আমি বিছানায় !!! অসম্ভব। একপ্রকার জোর করেই আমার নিজের বিছানায় ঘুমাতে দিল।

দুপুরের সময় ঘুম থেকে উঠে মাত্র কি করব আলাপ করতেছি এমন সময় বাড়িওয়ালী আন্টির তলব রাজিবকে। ঘটনা হলো আমরা যখন ঘুমিয়ে আছি, তখন তিনি একবার এসে দেখে গেছেন যে বাসায় একজন এক্সট্রা লোক আছে। তিনি ভেবে নিয়েছেন রাজীব তাকে না জানিয়ে আরেকজন লোক তুলেছে। এই নিয়ে ইন্টারগেশন করতে ডাকা। রাজীব সব বলার পরেও উনি তেমন একটা বিশ্বাস করলেন না। বললেন থাকতে চাইলে এক্সট্রা ভাড়া দিতে হবে। রাজীব বলল আমাকে এই কথা. আমি বললাম থাকা যাবে? তাইলে আপনাদের সাথেই থাকি। ও খুশি। বলল পরে আন্টির সাথে কথা বলবে। এরপর ফোন দিলাম অর্ণবকে। অর্ণব তখন কলেজে। কলেজ শেষ করে এসে পড়ল রাজিবের বাসার ঠিকানা নিয়ে। স্কুলের পর ওর সাথেও এই প্রথম দেখা। স্কুলে ওকে আমরা মজা করে আয়রন ম্যান ডাকতাম সব সময় ব্যায়াম করত এই জন্য। সেই চিকনা আয়রন ম্যান এখন লম্বায় চওরায় সত্যিকারের আয়রন ম্যান !!!!! ওর পেটা শরীর দেখে আর নিজের স্ফীতমান ভুড়ির দিকে চেয়ে মনটাই বিষাদ হয়ে গেল। শালারে ইচ্ছা করলো দেই দুইটা লাগায়া। কিন্তু দুইটা দিলে চারটা খাওয়ার সম্ভবনা প্রবল তাই ওই চিন্তা বাদ দিলাম। অর্ণব ঘন্টা খানেক থেক চলে গেল। ও থাকে লং আইল্যান্ডে। ভালই দূর, কাজ ও আছে, তাই আটকালাম না। অর্ণবও আমার মতই ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট। কিন্তু ও এসেছে প্রায় ৫ বছর। ব্যাচেলর প্রায় শেষের দিকে বারুচ কলেজে। অর্ণব যাওয়ার পরে আমি আর রাজীব রওয়ানা দিলাম জ্যাকসন হাইটসের দিকে। উদ্দেশ্য বেচারা পেট বাবাজিকে দুইটা ভালো-মন্দ খাবার দিয়ে খুশি করা। রাজীব বলল ভাই জাইরু খাবেন? আমি বললাম এইটা কি মহার্ঘ বস্তু? বলল মূলত: ফ্রায়েড রাইস আর ল্যাম্ব কারী। খারাপ না। ৫ ডলার। খেয়ে দেখেন। জাইরু সাধারনত রাস্তার পাশে ভ্রাম্যমান গাড়ি অথবা কার্ট-এ করে বিক্রি করে। বেশিরভাগের মালিক বাঙালিরা। খেয়ে আমার কাছে এমন আহামরি কিছু লাগেনি। অবশ্য খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে আমার মোঘল রুচি। অনেকেরই জাইরু বেশ প্রিয়। খাওয়া-দাওয়ার পর হাট বাজার রেস্টুরেন্টে যেয়ে চা। হাটবাজারের চা টা একটু স্পেশাল। দুধ, অর্ধেক নরমাল আর অর্ধেক স্কিম মিল্ক। হাট বাজারের চা জ্যাকসন হাইটসে নামকরা। তারপর এদিক ওদিক হাটাহাটি, জায়গা চেনা। আশেপাশে কোথাও কাজ পাওয়া যায় কিনা একটু দেখে অনিকের জন্য এক প্যাকেট জাইরু নিয়ে আবার বাসায়।

বাসায় এসে সবাই মিলে আলাপ করতে লাগলাম, কোথায় কি করা যায়। ওরা ওদের এক্সপেরিয়েন্স দিয়ে বলল যে নিজে কাজ করে নিউ ইয়র্কে থেকে, খেয়ে ভালো কলেজে পড়া অসম্ভব। আমিও চিন্তায় পরে গেলাম। ইন্টারনেটে নানান জায়গায় কম টিউশন ফিস এর ইউনিভার্সিটি খুঁজে ওই রাত ও পার হয়ে গেল। সকাল বেলা আবার আন্টির কাছে ধরা। এইবার উনি মোটামুটি শিওর যে রাজীব ওনাকে ফাঁকি দিয়ে আমাকে উঠাইছে। ভাড়া দেয়ার আলটিমেটাম দিয়ে উনি বিদায় হলেন। এইবার আমার একটু মেজাজ খারাপই হলো। দুই দিন তো কোনো গেস্ট থাকতেই পারে, এত তান্না-বান্না করার কি আছে এইটা নিয়ে X(। বিকালে শিবলী আসলো দেখা করতে ওর কিছু বন্ধুদের নিয়ে। রাজিবের কাছ থেকে বিদায় নিলাম। শুধু শুধু থেকে ওকে ঝামেলায় ফেলার কোনো মানে হয়না। আসলে পরে একেবারে বাড়িওয়ালার সাথে কথা বলে তল্পিতল্পা নিয়ে আসব। শিবলীর সাথে পার্কে যেয়ে কতক্ষণ ব্যাডমিন্টন খেলে ঘুরলাম ম্যানহাটনে। ম্যানহাটনে রাস্তা একটু ফাঁকা ফেলেই গাড়িতে টান। আর সাথে মিউজিক তো আছেই। সেই যেন দেশের উত্তরা রোডে যা হত। পরে আড্ডা হলো শিবলীর বন্ধু'র বাসায়। আরো ৫/৬ জনের সাথে পরিচয় হলো ওখানে। সবাই সিটিজেন নয়তো গ্রিন কার্ড হোল্ডার। সবাইকেই কাজ যোগাড় করে দিতে অনুরোধ করলাম। স্টুডেন্টদের কাজের পারমিশন নেই জেনে কেউ তেমন কোনো আশা দিলনা। রাত্রে কুইন্সের বিখ্যাত আলাদিন রেস্টুরেন্টে খেয়ে (বলাই বাহুল্য যে এইবারও শিবলী বিল দিতে দিল না) শিবলী ব্রঙ্কসে ফিরোজ ভাইয়ের বাসায় নামিয়ে চলে গেল।

(চলবে)

অন্যান্য পর্ব:
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৩)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৪)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৫)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৬)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৭)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৮)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৯)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১০)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১১)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১২)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৩)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৪)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৫)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৬)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৭)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৮)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৯)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২১)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২২)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৩)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৪)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৫)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৬)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৭)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৮)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৯)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (শেষ পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ৩:০৮
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

সম্পর্ক

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২


আমারা সম্পর্কে বাঁচি সম্পর্কে জড়িয়ে জীবন কে সুখ বা দুঃখে বিলীন করি । সম্পর্ক আছে বলে জীবনে এত গল্প সৃষ্টি হয় । কিন্তু
কিছু সম্পর্কে আপনি থাকতে চাইলেও থাকতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×