somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৫)

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সর্বনের সাথে মাঝে মধ্যে ঘোরাঘুরি করা হত। সর্বন প্রায় বছর তিনেক হলো এখানে। পুরো বোজম্যান ওর নখদপর্নে। কিন্তু ওর ও গাড়ি না থাকায় এই ট্রাভেল গাইডের প্রতিভা তেমন একটা কাজে লাগে না। কাজ শেষে আমি আর ও হাটতাম একসাথে ক্যাম্পাসের আশেপাশে। ও তাজাকিস্তানের কথা বলত, আমি বলতাম বাংলাদেশের কথা। ভার্সিটির কোন মেয়ে কেমন থেকে শুরু করে কি নিয়ে না আলাপ হত ওর সাথে। ওর সাথে কথা বলার সময় মনে পরে যেত পুরনো বন্ধুদের কথা..........রিহাদ, শোভন, দীপ্ত, রিসাল, নাবিল, আসিফ, ডিউক.......ভালো আছিস তো তোরা? আমার কথা মনে পরে তোদের? কত কিছুই না করার ছিল একসাথে......কিছুই করা হলো না। যখন ফিরব তখন এত কিছু করব একসাথে যে এই না থাকা সব বছরগুলা পোষায়া নিব। শুধু ভয় তোদের সময় হবে তো তখন?

সর্বন আমাকে বলত- "ব্রাদার একদিন একসাথে বিজনেস করব, এই রিলেশন থাকবে সারা জীবন" :(। আহা ওর সাথে কত কথা, কত হাসি, কত বদমাইশি প্ল্যান.....সর্বন নাচত দারুন। যে কোনো মিউজিকের তালে তাল মিলিয়ে নেচে যেত। তাজাকিস্তানে নাকি ছোট বেলা থেকেই সব ছেলে মেয়েদের নাচ শিখানো হয়। কনডো'র ভিতরে মাঝে মাঝেই এই নাচ চলত। আমি, এলিজাবেথ, ব্রুক ওর সাথে তাল মিলানোর ব্যর্থ চেষ্টা করতাম। আমরা পারতাম না তাই আমরাও হাসতাম, সর্বনও হাসত। না পারতাম তাতে ক্ষতি কি? মজাটাই ছিল আসল। সর্বন আবার হিন্দী মুভির বিরাট ফ্যান। তাই ভালো হিন্দী মুভি খুঁজে দেয়া ছিল আমার দায়িত্ব। তাজিক একসেন্টে ও মাঝে মাঝে যখন হিন্দী গান গাইত, সেটা হতো এক চরম জিনিস :P। মেয়ে পটানোর জন্য হিন্দী মুভির রোমান্টিক ডায়লগ ও ইংলিশে বলত। বিশ্বাস করেন, ভালো কাজ হতো :D

সর্বনের সাথে সৌদি ছেলেদের অনেক খাতির ছিল, যার কারণে আমার সাথেও ওদের খাতির হতে বেশি সময় নেয়নি। সৌদি ছেলেদের ইংলিশের অবস্থা অত্যন্ত করুন। ইউ.এস.এ'র ভিসা পাওয়া ওদের জন্য ডাল-ভাত টাইপ ব্যাপার। এমনকি নুন্যতম ইংলিশ স্কিলও দরকার হয় না। আমি এমন কাউকে খুঁজে পাই না যে আই.ই.এল.টি.এস অথবা টোফেল দিয়ে এসেছে। তাই আসার পর ই.এস.এল. কোর্সেই এদের এক-দেড় বছর চলে যায় তারপর এরা কাজ চালানোর মত ইংলিশ বলতে পারে। তাও মাঝে মাঝে বলতে যেয়ে দাত ভাঙ্গার উপক্রম করে। এমন অদ্ভুতভাবে বাক্য গঠন করে যে আপনি বুঝলেও হেসে গড়াগড়ি খেতে ইচ্ছা করবে। প্রথম প্রথম যখন আসে তখন ওদের মত ভদ্র আর কেউ নাই। পুরা ভিজা বিড়াল। একটু পুরানো আর ইংলিশ শিখার পর ওরা হার মানায় অন্য সবাইকে। পার্টি, ড্রিংকস করা, রাফ ড্রাইভিং সব কিছুতেই। ওপেন রাস্তায় সীসা খাওয়ার জন্য পুলিস ধরে নাই এমন কোনো সৌদি মনে হয় মন্টানায় খুবই কম। আমার ব্যক্তিগত ধারণা সৌদি ছেলে-পেলে আমেরিকায় যে লাইফ লিড করে, তাতে খোদ আমেরিকানরাও ওদের হিংসা করে। আপনাদের অনেকেরই বোধয় জানা নেই, সৌদি আরব থেকে কেউ বিদেশে পড়তে গেলে, তার টিউশন ফিস, হাতখরচ, বাড়িভাড়া, খাবার খরচ সবই সৌদি বাদশাহ বহন করে। যদি বউ সাথে থাকে তাহলে তার জন্য এক্সট্রা টাকা পায় ওরা, যতগুলো বাচ্চা হয় সবার জন্যই টাকা পায়। অবশ্য এজন্য সরকারের সাথে ওদের একটা চুক্তি থাকে যে পড়াশুনা শেষ করে ওরা দেশে ফিরে যাবে। ক্যাম্পাস যে কয়টা দামী গাড়ি ছিল আমার জানামতে প্রতিটাই সৌদিদের। কোনো ফাংশন করতে গেলে যেখানে বাজেটের চিন্তায় অন্য সবার ঘুম হারাম হয়ে যেত সেখানে ওরা এম্বেসীতে একটা এপ্লিকেশন করলেই হয়ে যেত। কুয়েতি স্টুডেন্টরাও এমন সুবিধা পায় তবে সৌদিদের মত এত নয়। অনেক সৌদি স্টুডেন্টকেই দেখতাম ৪/৫ গুন দাম দিয়ে প্যাকেট করা কাটা পেয়াজ কিনতে, কারণ পেয়াজ কাটতে গেলে চোখ জ্বলে !!!!! এটা ওদের বিলাসিতার ছোট্ট একটা উদাহরণ। বিলাসিতার বিপক্ষে আমি নই। টাকা থাকলে একই কাজ হয়ত আমিও করতাম। এটা বলা শুধুমাত্র ওদের অবস্থা সম্পর্কে আপনাদের একটু ধারণা দেয়ার জন্য। আমি ঠিক করে রেখেছিলাম যে কেউ যদি কোনদিন বাংলাদেশীদের অবগ্গা করে কিছু বলে (যেমন শোনা যায়) তার বড়লোকি ছুটায়া দিব কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে এমন কোনো পরিস্থিতি কখনো হয়নি। যাদের সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল তারা সবাই বাংলাদেশীদের অনেক প্রশংসা করেছিল সৎ আর কর্মঠ বলে।

(চলবে)

*** অনেকদিন পর লিখলাম..........মন মেজাজ খুবই খারাপ। সবাই যখন শাহবাগে তখন আর আমার নিজের কাহিনী লিখতে ইচ্ছা করে না। ইচ্ছা করে ওই হায়েনাদের ফাঁসীর দাবিতে মিছিল করি আমিও, মিশে যাই জনতার কাতারে, অংশ হই ইতিহাসের। '৭১ দেখতে পারিনি, ২০১৩ তেও থাকতে পারলাম না........এর চেয়ে কষ্টের আর কি হতে পারে? এর উপরে আছে প্রবাসী কিছু ছাগুর ম্যাতকার। এদের যা ইচ্ছা করে তা করতে পারিনা.........শাহবাগে যারাই আছেন জেনে নিন, আমরা যারা প্রবাসে আছি, তারা সরাসরি থাকতে না পারলেও আত্মিক ভাবে আপনাদের সাথে আছি সবসময়। ক্লাসের সময় অথবা কাজের সময়, মনটা পরে থাকে আপনাদের সাথেই। শাহবাগে থাকা সকলের জন্য শুভকামনা..........জয় আমাদের হবেই। দাবী একটাই, রাজাকারদের ফাঁসী ছাড়া রায় নাই। জয় বাংলা।

অন্যান্য পর্ব:
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৩)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৪)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৫)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৬)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৭)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৮)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৯)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১০)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১১)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১২)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৩)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৪)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৬)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৭)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৮)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৯)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২০)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২১)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২২)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৩)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৪)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৫)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৬)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৭)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৮)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৯)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (শেষ পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ৩:০৯
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×