মন্টানায় আমাদের বেশিরভাগ সময় কাটত ঘরে বসে আড্ডা দিয়ে, ক্যাম্পাসে ঘুরে আর রান্না করে। শীতের প্রকোপ একটু কমলে হাটতে বের হতাম সবাই মিলে, খেয়ে আসতাম বাইরে থেকে। হেটে যাওয়ার মত আশেপাশে জায়গা একটাই ছিল "গ্যালাটিন ভ্যালী মল"। তবে মাঝে মধ্যে আহসান আন্কেল, রুমা আন্টি, তুর্য, দীপ্র আর আমরা সবাই মিলে সিনেমা দেখতে যেতাম আমাদের বাংলাদেশ স্টুডেন্ট এসোসিয়েশনের খরচে। আমাদের স্টুডেন্ট এসোসিয়েশনের একটা ফান্ড আছে, যার মূল ইনকাম হলো এম.এস.ইউ তে হওয়া "ইন্টারন্যাশনাল ফুড বাজার" এ পার্টিসিপেট করে যে লাভ হয় তা। ফুড বাজারের বিষয়ে অন্য একটা পর্বে বলব। ঐটা নিয়ে আরেকটা ছবি ব্লগ করার ইচ্ছা আছে। ছবি ছাড়া ঐটা বলে বুঝানো সম্ভব না। ফুড বাজারের লাভের একটা বড় অংশ বাংলাদেশে পাঠানো হয়, কোনো একজন গরিব মানুষকে রিকশা, ভ্যান বা অন্য কিছু কিনে দিয়ে সাবলম্বী করার জন্য। এই আইডিয়াটা সম্ভবত আহসান আঙ্কেলের। বাকি টাকা দিয়ে সারা বছর সিনেমা দেখা, কোথাও সবাই মিলে খেতে গেলে খরচ করা হয়। এম.আই-৪ আর দ্যা এভেন্জার্স বোজম্যানে দেখা। দ্যা এভেন্জার্স থ্রি-ডি তে দেখেছিলাম, রিলিজ পাওয়ার সাথে সাথেই
স্কিইং এর জন্য মন্টানা বিখ্যাত। প্রচুর তুষারপাত হয় এখানে। এখানকার মানুষজনও তুষারপাত খুব পছন্দ করে। তুষারপাত হয়নি দেখে মন খারাপ ক্লাসের কয়েকজনের, এমন দৃশ্য বহুবার দেখেছি। এমন এলাকার মানুষ স্কি করতে পছন্দ করবে এ আর আশ্চর্যের কি.....আমেরিকান বন্ধুরা তুষারপাত হলে একটু সুযোগ পেলেই স্কিইং এ চলে যেত। অস্ট্রেলিয়ানরা দেখতাম সবাই দল বেধে যেত। আমার খুব ইচ্ছা ছিল স্কি করা শিখব। বরফের স্তুপের উপর ছুটব তীরবেগে, যেমনটা পড়ি মাসুদ রানার বইতে। আমি ভুলে গিয়েছিলাম অভাগা যেইদিকে যায়, সাগর ঐদিকেই শুকিয়ে যায়। স্কি করতে যেয়ে ব্যাথা পাওয়া, হাত-পা ভাঙ্গা নতুন কিছু না। নতুনদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা আরো বেশি হয় বলে শুনলাম। দুইটা সমস্যা সামনে আসলো তখন। আমার হেলথ ইন্সুরেন্স ছিল না, বাই চান্স কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে বিরাট অংকের টাকা গচ্চা যাবে। এছাড়া আমার বাংলাদেশের ইন্সুরেন্স এখানেও কাভার করবে বলে যে ভুজুং ভাজুং ভার্সিটিকে দিয়েছিলাম তাতে ধরা খাওয়ার ও একটা সম্ভবনা থাকে। নানান চিন্তা করে চার মাস মন্টানায় থাকা সত্তেও একবার স্কিইং এ যাইনি, যেখানে অন্যান্য স্টেট থেকে এখানে মানুষ স্কি করতে আসে। এই আফসোস কিভাবে দূর করি? আমার মাঝে মধ্যে খুব জানতে ইচ্ছা করে "দারিদ্র্য তুমি মোরে করেছ মহান, তুমি মোরে দানিয়াছ খ্রীষ্টের সম্মান" এই কথাগুলো নজরুল কি দেখে, কি ভেবে লিখেছিলেন............
(চলবে)
অন্যান্য পর্ব:
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৩)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৪)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৫)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৬)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৭)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৮)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৯)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১০)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১১)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৩)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৪)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৫)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৬)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৭)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৮)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৯)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২০)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২১)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২২)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৩)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৪)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৫)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৬)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৭)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৮)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৯)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (শেষ পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ৩:১১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




