somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৯)

১৯ শে মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সকাল সম্ভবত ৭ টার দিকে ঘুম ভাঙ্গলো সাগর ভাইয়ের ডাকে। ফিরোজ ভাইয়ের বাসার আরেক রুমমেট। ওনারা মোট চার জন থাকেন। আমি আসায় পাঁচ জন। শুধু সোহেল ভাই ছাড়া বাকি সবাই আমার এলাকার লোক। সাগরের বয়স আমার মতই। ডিভি পেয়ে ওর আমেরিকায় আসা। একটা পিজা শপে কাজ করে ডেইলি ১২ ঘন্টা। ভালই কামায়। গ্রীন কার্ড থাকলে এই এক সুবিধা। কাজ পেতে কোনো প্রবলেম হয় না। তারপরও অদ্ভুত ব্যাপার যে এদেরও মালিক পক্ষ বেশ ঠকায় শুধু মাত্র ভালো ইংরেজি না বলতে পারার কারণে। কাজে মিনিমাম স্যালারিটাও দেয় না। স্টুডেন্টরা ঠকে কাজের পারমিশন না থাকায়, ওরা ঠকে ইংলিশে দুর্বল হওয়ার কারণে। সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হলো এই ঠকানোটা ঠকায় নিজের দেশের মানুষরা :(। আমেরিকান বা বিদেশী ম্যানেজমেন্ট হলে সাধারনত নুন্যতম স্যালারিটা পাওয়া যায়। উপমহাদেশীয় মালিকপক্ষ ভালো করেই জানে যে ডিভি লটারিতে যারা এসেছে, তাদের অনেকেই ভালো ইংলিশ না জানায় বিদেশী মালিকদের প্রতিষ্ঠানে সহজে কাজ পাবে না। এছাড়া ইকোনোমির অবস্থা খারাপ হওয়ায় কাজ পাবার ক্ষেত্রেও কিছুটা সমস্যা আছে। এসবের পুরো সুযোগটা নেয় তারা। ঘন্টাপ্রতি নুন্যতম স্যালারীর অর্ধেক বা তার চেয়েও কমে কাজ করিয়ে নেয় অনেককে দিয়েই। বাংলাদেশী, ইন্ডিয়ান, পাকিস্তানি শপে সাধারনত দুই ভাবে স্যালারি দেয়া হয়- ক্যাশে আর চেকে। যদিও নিয়ম হলো চেকে দেয়ার, তাতে সরকার ট্যাক্স পায়। কিন্তু উচ্চ হারের ট্যাক্সের কারণে আমাদের উপমহাদেশীয় লোকজন কেউই পুরো স্যালারি চেকে দিতে অথবা নিতে আগ্রহী না। সরকার চেকে কেন কম স্যালারি যাচ্ছে সেই প্রশ্ন তুললে এরা ফ্যামিলি বিজনেস, ফ্যামিলির লোকজনই কাজ করে চালাচ্ছে বলে কাটিয়ে দেয়। যারা ক্যাশে নিচ্ছে তাদের অজুহাত আরো সোজা- "জব নাই" অথবা "জবে আওয়ার কম পাই"। নিউ ইয়র্ক সিটি অথরিটিও অনেক ছাড় দেয় এই বিষয়ে, যে কারণে বেশিরভাগ ইমিগ্র্যান্ট, ইল্লিগ্যাল হয়ে যাওয়া লোকজন নিউ ইয়র্ক সিটিতে থাকতে বেশি পছন্দ করে। এছাড়া ট্যাক্স রিটার্ন, সরকারের থেকে বিনামূল্যে মেডিক্যাল ফ্যাসিলিটিস নিতেও অনেকে পুরো ইনকাম শো করতে চায় না। সম্ভবত একটা নির্দিষ্ট অংকের উপরে আয় হলে আর ট্যাক্স রিটার্ন, মেডিকেয়ার এর সুবিধা গুলো পাওয়া যায় না। আমি বিস্তারিত জানি না। তবে এরকমই ব্যাপারটা। নিজে এইগুলোর আওতায় না পরায় খোঁজ খবর নেয়ার কোনো আগ্রহ পাইনি। তবে ক্যাশে স্যালারি নেবার সুযোগ থাকায় আমার মত অনেক স্টুডেন্টদেরই সুবিধা হয়েছে। নাহলে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের কোনো সুবিধা না দেয়ার এই গড এব্যানডন্ড কান্ট্রিতে আমাদের কি হত তা আল্লাহই ভালো জানেন।

সাগর ভাই আমার বয়সী হওয়ায় গল্প বেশ জমে উঠলো। অনেক কিছুই যা জামাল ভাই, সোহেল ভাইয়ের কাছে জিগ্গেস করতে পারিনি, তা ওর কাছ থেকে সহজেই জেনে নিলাম। বেশিক্ষণ অবশ্য গল্পের সুযোগ পাওয়া গেল না। ২৪ ঘন্টার ১২ ঘন্টা কামলা খাটার পর হাতে থাকে ১২ ঘন্টা। আসা-যাওয়ায় ১-১.৩০ ঘন্টা, এরপর রান্না করা, খাওয়া-দাওয়া, গোসল করা, জামা-কাপড় ধোয়া আর অন্যান্য ব্যক্তিগত কাজ সারা। তাই ওকে বেশিক্ষণ আটকে রাখতে পারলাম না। আমি আবার একটু ঘুমিয়ে নিলাম। ঘুম থেকে উঠে ফোন দিলাম রাজীবকে। এই চার মাস ওর সাথে শুধু ফোনেই কথা হয়েছে। ফোন করে বললাম আমাকে এসে নিয়ে যেতে। সোহেল ভাই ওকে কিভাবে আসতে হবে পুরো ডিরেকশন দিয়ে দিলেন। ঘন্টা দুয়েক পরে রাজীব আসলো হাস্যজ্জ্বল চেহারা নিয়ে। এসেই বুকে জড়িয়ে ধরল। কত কথাই না হয়েছে এই কয় মাস, অবশেষে দেখা। বের হলাম রাজিবের সাথে। কোথায় গেলাম বলেন তো? আফসোস বুঝে ফেলেছেন :P। টাইম স্কয়ার। নিউ ইয়র্কে এসে মানুষ প্রথম যেখানে যেতে চায়। টাইম স্কয়ার এক অদ্ভুত জায়গা। এখানে আসলেই আপনার মনে হবে কোনো উৎসবের মধ্যে এসে পড়েছেন, সামারে আসলে তো কথাই নাই। নানান রঙের, নানান জাতির লোকজন। সবাই ফুরফুরে মেজাজে হাঁটছে। সিটি ট্যুরের বাসে ট্যুরিস্টরা ঘুরছে হাসিমুখে ক্যামেরা হাতে। একটু জায়গা ফাঁকা পেলেই পটাপট ক্যামেরায় ছবি তুলছে। আমিও একজনকে ধরে রাজিবের সাথে একটা ছবি তুলে ফেললাম। চারিদিকে অসংখ্য বিলবোর্ড, রকমারি আলো। মাঝে মধ্যে নানান অদ্ভুত সাজে মানুষ জন দাড়িয়ে আছে। ১/২ ডলার দিয়ে তাদের সাথে ছবি তুলতে পারবেন। এখানে আসলে মনে হবে আরে এই নিউ ইয়র্কই তো মুভিতে দেখি। আশেপাশে প্রচুর গিফট শপ। আপনার মানিব্যাগ হালকা করতে তাদের চেষ্টার কোনো কমতি নেই। আরো আছে নামী দামী ব্র্যান্ডের শো-রূম। এদের কাছে আমাদের দেশের ডাকাতরা শিশু প্রকৃতির। টপ গানে একটা লেদার জ্যাকেট সেরকম পছন্দ হয়েছিল। দাম মাত্র ৪৯৯ ডলার। মানে মানে কেটে পরেছিলাম। কিন্তু লোকজন খরচ ও করছে। কোনো দোকান, রেস্টুরেন্ট খালি নেই। কিছু কিনতে, খেতে লাইন ধরতে হয়। প্রচন্ড খিদা লাগায় ঢুকে পরলাম সামনের ম্যাকডোনাল্ডস এ। একটা সীট ও খালি নেই !!!!! ৫ ডলারে ২০ টা চিকেন নাগেটস আর তিন ডলারে দুইটা মিল্ক শেক নিয়ে বাইরে চলে আসলাম। টাইম স্কয়ারে প্রচুর পর্যটক আসায় অনেক রাস্তা বা অর্ধেক রাস্তা পারমানেন্টলি বন্ধ করে চেয়ার টেবিল পেতে দেয়া আছে। তারই একটায় বসে পরলাম। ম্যাকডোনাল্ডস এর মিল্ক শেকটা চরম। এই একটা জিনিসই সম্ভবত এদের ভালো। ম্যাকডোনাল্ডস এর খাবার অত্যন্ত মজার এই ধারণা যাদের আছে তাদের এসে খেয়ে যাওয়ার দাওয়াত থাকলো। আশা ভঙ্গ হলে সেই দায় একান্তই আপনার হবে :P। খাওয়া শেষে ফরটি সেকেন্ড স্ট্রিটে কতক্ষণ এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করে আর কিছু করার না পেয়ে রওয়ানা হলাম রাজিবের বাসার উদ্দেশ্যে।

(চলবে)

অন্যান্য পর্ব:
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৩)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৪)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৫)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৬)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৭)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৮)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৯)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১০)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১১)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১২)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৩)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৪)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৫)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৬)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৭)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৮)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২০)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২১)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২২)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৩)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৪)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৫)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৬)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৭)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৮)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৯)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (শেষ পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ৩:০৮
২৮টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×