somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাঙ্গাল মস্তিষ্কের বি - উপনিবেশায়ন, নোকতা ৩ঃ ওরিয়েন্টালিজম, মিডিয়া, এবং "জঙ্গি" মুসলমান

২৩ শে মে, ২০২০ বিকাল ৩:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



একজন শ্বেতাঙ্গ যখন তার নিগ্রো দাসের দিকে প্রভুসুলভ দৃষ্টিতে তাকায়, তার সে তাকানোর মধ্যে এমন ঘৃণা, অবজ্ঞা এবং অস্বীকারের প্রবনতা স্পষ্ট থাকে, যা উক্ত নিগ্রোর পরিচয়, তার অস্তিত্ব, তার ইতিহাস, তার সংস্কৃতি - সবকিছুকে সেই দৃষ্টি নিক্ষেপের মাধ্যমেই মাটির হাজার হাজার হাত নীচে পুঁতে ফেলে। সে নিগ্রোর আর একটি আত্মপরিচয় নিয়ে উঠে দাঁড়াবার কোন ক্ষমতা থাকে না।

অ্যামেরিকায় দাসপ্রথার বিরুদ্ধে কলমধারী গুটিকয় কালোচামড়ার মানুষের একজন, ফ্রেডরিখ ডগলাসের "ন্যারেটিভ অফ দা লাইফ অফ ফ্রেডরিখ ডগলাস, অ্যান অ্যামেরিকান স্লেভ, রিটেন বাই হিমসেলফ" বইয়ে ওপরের উক্তিটি পেয়েছিলাম। একই কথার পুনরাবৃত্তি খুঁজে পাই হারলেম রেনেসাঁর কবি আমিরি বারাকার কবিতায়, হালের কোয়ান্তিন তারান্তিনোর মুভি জ্যাঙ্গো আনচেইনডেও।
কেবল দৃষ্টিনিক্ষেপের দ্বারা কীভাবে একটি মানুষের আত্মপরিচয়কে বিলীন করে দেয়া যায়, উপরের উক্তি - তার খুব যথাযথ একটি রিপ্রেজেন্টেশন।

এই জাজমেন্টাল দৃষ্টিনিক্ষেপের প্রক্রিয়াটিকে অ্যাকাডেমিক পরিভাষায় বলে "গেজিং"। গেজিং ব্যক্তিগতপর্যায়ে হতে পারে, সামাজিক হতে পারে, রাষ্ট্রীয়ভাবেও হতে পারে। গেজিং হতে পারে লিঙ্গের ভিত্তিতে, গেজিং হতে পারে ধর্ম পরিচয়ের ভিত্তিতেও। ব্যক্তিমানুষের আত্মপরিচয় বিনির্মাণে এই গেজিং বিশাল ভূমিকা পালন করে। আপনাকে কে কীভাবে দেখছে - এর উপর আপনার অস্তিত্বশীল হয়ে ওঠা অনেকাংশে নির্ভরশীল।

সহজ একটা উদাহরণ দিই -

চিন্তা করে দেখুন, আপনি হয়তো খুব সুন্দর এক প্রভাতে একাকী রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছেন। পীঠে শীত - বসন্তের মিঠে রোদ, গায়ে বসন্তের বাতাস, কানে কোকিলের ডাক, আগের রাতে ঘুমানোর আগে প্রেমিক/প্রেমিকার সাথে ফোনে যে আলাপ হয়েছে, তার সুখস্মৃতি মাথায় ঘুরছে। এমন সময় দেখলেন, রাস্তার উল্টো দিক থেকে কেউ হেঁটে আসছে হনহনিয়ে, আপনার বরাবর। লোকটা আর একটু কাছাকাছি আসার পর দেখা গেল - সে খুব উৎকটভাবে আপনার দিকেই তাকিয়ে আছে। বেশ খানিকটা কাছাকাছি আসার পর সে তার চোখ আপনার থেকে সরিয়ে নিলো, আপনিও নীচে, বা অন্য কোনদিকে তাকিয়ে তাঁকে ক্রস করে সামনে এগুলেন। এতে আপাত অস্বস্তি তো কেটে গেল, কিন্তু যে সুন্দর একটা মুহূর্ত স্বাধীনভাবে আপনি উপভোগ করছিলেন, তার রেশ কেটে গেল কিনা?

এরকম ঘটনা আমার সঙ্গে প্রায়ই ঘটে - ঘটেছে। আপনার সঙ্গে ঘটেনি?

অন্যের গেজিং এর ফলে আমরা যে অস্তিমান হয়ে উঠি, আমাদের প্রাত্যাহিক জীবন থেকে তুলে আনা একটি নৈমিত্তিক ঘটনা এটি।
এবার , যদি খানিকটা অ্যাকাডেমিক পরিভাষায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক নীরুকুমার চাকমার থেকে ধার করে বলি, যিনি নিজে আবার জ্যা পল সারত্রের অস্তিত্ববাদী দর্শনসূত্র থেকে ধার করে বলেন -

- ' প্রতিক্ষণেই অন্য ব্যক্তি আমার দিকে তাকায়। এ ধরণের তাকানোর ফল হলো, আমি অন্য ব্যক্তির বস্তু হয়ে যাই, এবং আমার স্বাধীনতা হারাই। ... আমি স্বাধীন, কিন্তু অন্য ব্যক্তির বস্তু হওয়া থেকে পরিত্রাণ পাবার মত স্বাধীন নই।'

বাঙ্গাল মস্তিষ্কের বিউপনিবেশায়ন সিরিজের আমার তৃতীয় এ লেখায় মূলত প্রাচ্য এবং ব্রিহদার্থে পুরো পৃথিবীর মুসলিমদের দেখার/গেজিং - এর উদ্দেশ্যে পাশ্চাত্যের তৈরি, তাদের কলোনিয়াল রুলের সমবয়সী একটি চশমা/লেন্স নিয়ে আলোচনা করবো। সাদা লোকদের আরব মুসলিমদের দুনিয়া দেখার সে চশমার নাম - ওরিয়েন্টালিজম, বাংলা করলে যার অর্থ হবে প্রাচ্যতত্ত্ব ব্যবসায়। ধারাবাহিকভাবে - এই ওরিয়েন্টালিজম কীভাবে ২০২০ সালের বাংলাদেশের প্রেক্ষিতেও প্রযোজ্য, তা নিরুপনের চেষ্টা থাকবে পুরো লেখায়।

ওরিয়েন্টালিজম, বা প্রাচ্যতত্ত্ব ব্যবসায়ে - যেভাবে শুরুঃ



ছবি - দখলকৃত মিশরে সমরনায়ক নেপোলিয়ন বোনাপার্ট (১৭৯৮)

১৭৯৮ সালে নেপোলিয়ান বোনাপারটের অধীনে ফ্রান্স মিসর দখল করে। নেপোলিয়ানের মিশর দখলের সাথে অন্যান্য ইউরোপিয়ান রাজ্য, যেমন পর্তুগিজ, ওলন্দাজ , বা স্প্যানিয়ারডদের রাজ্য দখলে একটা মৌলিক পার্থক্য দেখা যায় এই জায়গায়, যে - নেপোলিয়ান নিজের সৈন্যদের সাথে জীববিজ্ঞানী, ভাষাতত্ত্ববিদ, নৃতাত্ত্বিক, প্রকৌশলী, স্থপতি, এবং ঐতিহাসিকদের এক বিশাল বহর সাথে করে নিয়ে উপস্থিত হন, যারা মিশরে তাদের দখলদারির পুরোটা সময় জুড়ে মিশরীয় সভ্যতা সংস্কৃতি নিয়ে সরেজমিনে গবেষণা করেন, অবশ্যই দখলকৃৎ মিশরীয় মানুষের কাছ থেকে কোনরকম অনুমতি নেয়া ছাড়াই, এবং ফ্রান্সে ফেরত আসার পর কয়েক ভলিউমে তাঁরা মিশরের জনজীবন, ইতিহাস, সংস্কৃতি নিয়ে তাদের আন্ডারস্ট্যান্ডিং ভলিউমের পর ভলিউম মোটা মোটা বইয়ে উপস্থাপন করেন। সে উপস্থাপন মিশরের সমাজ বাস্তবতার থেকে ভিন্ন এক উপস্থাপন। সে উপস্থাপনের রাজনৈতিক দাবী ছিল এই যে - মিশরের মানুষ নিজেরা নিজেদের রিপ্রেজেন্ট বা উপস্থাপন করতে পারে না, তাদের উপস্থাপন করা, বা তাদের হয়ে তাদের কথা বলা - ফরাসিদের নৈতিক দায়িত্ব।
ওরিয়েন্টালিজমের জনক, ফিলিস্তিনি অরিজিনের , কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির তুলনামূলক সাহিত্যতত্ত্বের অধ্যাপক - এডওয়ার্ড সাঈদ উল্লেখ করেন, ঐতিহাসিকভাবে ওরিয়েন্টালিজমের সূচনা এখানেই।

এডওয়ার্ড সাঈদ এবং ওরিয়েন্টালিজমঃ


ছবি - এডওয়ার্ড সাঈদ (১৯৩৫ - ২০০৩)

১৯৭৮ সালে, চতুর্থ আরব ইসরায়েল যুদ্ধ শেষ হবার পাঁচ বছর পর - কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির প্রফেসর এডওয়ার্ড ডব্লিউ সাঈদ, ওরিয়েন্টালিজম নামের বইটি প্রকাশ করেন - যা সাথে সাথে সারা পৃথিবীর ইন্টেলেকশিয়া/ বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করে। এ আলোড়ন ছিল ইতিবাচক, এবং নেতিবাচক। কেন? জানতে হলে, আমাদের বুঝতে হবে সাঈদ তার এ বইয়ে এমন কি নতুন তত্ত্বের অবতারণ করেন।

ইতিহাসের দীর্ঘ পরিক্রমায় পাশ্চাত্যের পলিটিকাল এবং সিভিল সোসাইটিতে প্রাচ্যের জনমানুষ ও তাদের সংস্কৃতিকে দেখার, বোঝার, বিচার ও উপস্থাপন করার একটি একপেশে, বা স্টেরিওটিপিক্যাল প্রক্রিয়াই হল ওরিয়েন্টালিজম, যার সাথে প্রাচ্যের প্রকৃত সমাজ বাস্তবতার খুব একটা মিল নেই।


যেমন - ইউরোপিয়ান সাহিত্যে, চিত্রকলায় মধ্যপ্রাচ্যের বদলে উল্লেখ করা হত "দ্যা এক্সোটিক ওরিয়েন্ট" হিসেবে। সেই জাদুবিদ্যা আর মোহনীয় অঞ্চলের মুখ্য চরিত্র হিসেবে বাধ্যতামূলকভাবে উপস্থিত থাকতো স্যাক্সি বেলি ড্যান্সার রমণীবৃন্দ- যারা পাশ্চাত্যের চিত্রকলায় বা সাহিত্যে সর্বদাই পুরুষের ভোগের জন্যে প্রস্তুত হয়ে আছে, সঙ্গে আরও থাকতো অশিক্ষিত বর্বর পুরুষরা, হাতে নাঙ্গা তলোয়ার হাতে বরাবরই রক্তপাতের জন্যে প্রস্তুত। একইভাবে প্রাচ্যতত্ত্বে ভারতবর্ষ মানেই জাদুটোনায় বিশ্বাসী যোগী-সন্ন্যাসী, নাঙ্গা সাধু, আর সাপুড়ের দেশ বলে প্রচার করা হত।





ছবি - হারেমের নারী




ছবি - মিসরের মশক বিক্রেতা রমণী

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে - মধ্যপ্রাচ্য, বা ভারতের একটা আংশিক বাস্তব উপস্থাপন হয়তো ওরিয়েন্টালিজম করে, কিন্তু তাদের এ উপস্থাপন সরলীকৃত, আরোপিত, এবং উক্ত অঞ্চলের জনগণের প্রতি দাসসুলভ মনোভাবের পরিচায়ক।

একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে।

ছোট বেলায় ডিজনির আলাদিন/ অ্যারাবিয়ান নাইটস কার্টুন দেখে দেখে বড় হয়েছি, কিন্তু এটার সূচনাসঙ্গীতের লিরিক সেসময় মনোযোগ দিয়ে , বা চিন্তা করে শুনি নি। লিরিকটা এই -

Oh I come from a land, from a faraway place
Where the caravan camels roam
Where they cut off your ear
If they don't like your face
It's barbaric, but hey, it's home


লিরিকের মধ্যেই স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হচ্ছে যে - আমি সেই আরব দেশের লোক, যেখানে মানুষ বর্বর, তোমার চেহারা পছন্দ না হলেই কান কেটে রেখে দেবে, যেখানে যাতায়াত ব্যবস্থা বলতে কেবল উট - ই উপস্থিত। প্রিন্সেস জেসমিনের স্যাক্সি আউটফিটের কথা চিন্তা করুন, সাথে জাদুটোনা , ম্যাজিক কার্পেট , বোতলের মধ্যে জিন - সব মিলিয়ে এক্সোটিক ওরিয়েন্টের একটি পারফেক্ট চিত্রায়ন।


ছবি - অ্যারাবিয়ান নাইটসের কুশীলব এবং এক্সোটিক ওরিয়েন্ট

ওরিয়েন্টালিজমের বৈশিষ্ট্যঃ

১। সাঈদ বলেন, প্রাথমিকভাবে শিল্প - সাহিত্য - সমাজতত্ত্বের মাধ্যমে ওরিয়েন্টের একটা রূপ তৈরি করা হয়, যেটা আপাত নিরীহ, সাধারণ, স্বাভাবিক, এবং প্রাচ্যের মানুষের জন্যে উপকারী বলে মনে হয়। কেননা, পাশ্চাত্যের প্রভুশ্রেণী এমন একটি বর্বর জাতিগোষ্ঠীর ব্যাপারে কথা বলছে, যারা তাদের নিজেদের উপস্থাপন করতে পারে না।

এভাবে, প্রাথমিকভাবে সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মাধ্যমে একটা মগজধোলাই-প্রক্রিয়ার থ্রুতে নিজেদের ইডিওলজিক্যালি বা আদর্শিক ডমিনেশন তৈরি করার পর অক্সিডেন্ট, বা পাশ্চাত্য তার এই প্রকল্পকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে তার রাজনৈতিকীকরণ করে। আজ হতে একশো বছর আগেও এই রাজনীতি করণের এক মাত্র মাধ্যম ছিল মিলিটারি আগ্রাসন। আর এখন বিশ্বব্যাপী পাশ্চাত্যের এই দমনমূলক প্রোপ্যাগান্ডা ছড়ানোর দায়িত্ব একনিষ্ঠভাবে পালন করছে পাশ্চাত্যের মিডিয়া

২। ওরিয়েন্টালিজম সবসময় 'আমি - তুমি', 'আমরা - তোমরা', বা 'অক্সিডেন্ট - ওরিয়েন্ট' মেরুকরণে বিশ্বাসী।

উদাহরণ -
"আমরা যুক্তিবাদী - ওরা অজ্ঞতার অন্ধকারে নিমজ্জিত",
"আমরা নারীমুক্তির পথিকৃৎ - ওরা নারীদের হয় ভোগ করে, নইলে জোর করে বস্তা পরিয়ে রাখে",
"আমরা শিক্ষিত - ওরা অশিক্ষিত বর্বর"

এখানে লক্ষ্য করবার মত খুব ইন্টারেস্টিং একটা ব্যাপার হল - পাশ্চাত্য জ্ঞানকাণ্ডের, প্রাচ্যিয় মুসলিমদের এই যে একটা নির্দিষ্ট স্টেরিওটাইপে বা ছকে ফেলে অস্তিত্বশীল করে তোলার প্রকল্প - এই ছকবাঁধা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো প্রাথমিকভাবে কোন প্রাচ্যের মুসলমানের জন্মসূত্রে ক্যারি করে না, এমনকি অভিযোগগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে সত্যও নয়। সাঈদ উল্লেখ করেন - তিনি নিজে ফিলিস্তিনে জন্মানো এবং বড় হওয়া খ্রিস্টান। ইসরায়েলি দখলদারির কারণে তার পরিবারও অসংখ্য ফিলিস্তিন মুসলিম পরিবারের সাথে বাস্তুচ্যুত হয়ে রাষ্ট্রবিহীন নাগরিকে পরিনত হয়েছিলেন। তিনি বলেন - পাশ্চাত্যের চিত্রকলা, সাহিত্য, সঙ্গীত, থিয়েটার, সিনেমার একটা বড় অংশে আরবদের যেভাবে উপস্থাপন করা হয়, তার সাথে তার নিজের দেখা আরব জীবনের কোন মিল নেই। পাশ্চাত্যের এ সুচতুর ধাপ্পাবাজি তাঁকে পরিণত বয়সে উদ্বুদ্ধ করে ওরিয়েন্টালিজম বইটি লিখবার জন্যে।

৩। ওরিয়েন্টালিজম তত্ত্ব অনুযায়ী - প্রাচ্যের মানুষদের চরিত্র কখনো বদলায় না। তাঁরা হাজার বছর আগেও বর্বর ছিল, গত শতাব্দীতেও বর্বর ছিল, তাঁরা এখনো বর্বর।

ইতিহাস পাঠের একটা আবশ্যকীয় বৈশিষ্ট্য হল, সময়ের সাথে সাথে ইতিহাস পাঠের দৃষ্টিভঙ্গী বদলে যায়। একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের মানুষকে দেখার, বোঝার, বিচার করবার দৃষ্টিভঙ্গী বদলে যায়।

যেমন '৪৭ এর আগে বাঙ্গালী মুসলিম, '৭১ এর আগে বাঙ্গালী মুসলিম এবং ২০২০ সালের বাঙ্গালী মুসলিমের পরিচয় এক না। প্রথমটা - বাঙ্গালী মুসলমানের স্বাধিকার আদায়ের লড়াইএর সময়, দ্বিতীয়টা ধীরে ধীরে মধ্যবিত্ত বাঙ্গালী মুসলমানের পরিচয় তৈরির সময়, আর এখন, বাঙ্গালী মুসলমান তাদের উপর সংঘটিত সব ঐতিহাসিক নির্যাতন - নিপীড়নের বিরুদ্ধে কথা বলা শুরু করেছে রাজনৈতিকভাবে , এবং শিল্প সাহিত্যের মধ্য দিয়ে।


এদিকে, দিন বদলায়, মাস বদলায়, প্রশান্ত মহাসাগর আর অ্যাটল্যান্টিক মহাসাগরের পানির ঘনত্ব বাড়ে কমে - কিন্তু পাশ্চাত্যের চোখে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলমানদের চরিত্র কখনো বদলায় না। দিনের পর দিন, বছরের পর বছর সিরিয়া - ফিলিস্তিন - মিশরের মেয়েরা হল্টারনেক বিকিনি পরে কোমরে ঝালর আর ঘাঘরা ঝুলিয়ে বেলি ড্যান্স করতেই থাকে, তাদের পুরুষরা রক্তপিপাসু - অশিক্ষিত বর্বরই থেকে যায়। তাঁরা কখনোই পড়াশোনা করে না, জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চা করে না। তাদের মূল কাজ একটাই - আল্লাহু আকবর বলে শরীরে বোম বেঁধে ইহুদী - খ্রিস্টানদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়া।

সাঈদ বলেন, যদিও প্রাথমিক ভাবে ফ্রান্স এবং ব্রিটেনের হাতে ধরেই ওরিয়েন্টালিজমের জন্ম, কিন্তু বর্তমান বিশ্বে ওরিয়েন্টালিজমের মূল প্রচারক অ্যামেরিকা নিজে। তাদের ওরিয়েন্টাল পলিসি পরিপূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করে ইসরায়েলের সাথে তাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক।


ওরিয়েন্টালিজম - পাশ্চাত্য মেইনস্ট্রিম মিডিয়ায় মুসলমানদের রিপ্রেজেন্টেশন - এবং অ্যাপোলোজেটিক মুসলিম



দীর্ঘদিন ধরে অ্যাকাডেমিক ডিসকোর্স আকারে প্রতিষ্ঠিত ওরিয়েন্টাল থিওরিকে মাঠে প্রয়োগের সময় কাজ করে মিলিটারি। আর সামরিক আগ্রাসনকে বৈধতা দান করে বিশ্বব্যাপী প্রবল শক্তিধর পাশ্চাত্যের মিডিয়া, সিনেমা, গান, এবং সাহিত্য।

এডওয়ার্ড সাঈদ উল্লেখ করেন, ওরিয়েন্টালিজম নিয়ে গবেষণার ব্যাপারে তার প্রাথমিক অনুপ্রেরণা ছিল ১৯৭৩ সালে আরব - ইসরায়েল চতুর্থ যুদ্ধের সময় অ্যামেরিকার মিডিয়ায় আরবদের রিপ্রেজেন্টেশন। বর্বর মিশর আর সিরিয়ান আর্মি ঘাটে মাঠে মার খাচ্ছে ইসরায়েলিদের বিরুদ্ধে, এই ছিল তাদের প্রচারণা। কিন্তু শীঘ্রই দেখা যায়, পৃথিবীর অন্যান্য আর সব জাতির মতই মিশর - সিরিয়ানরাও লড়তে জানে। ১৯৭৩ সালের লড়াই আরবদের এর আগে ক্রমাগত ইসরায়েলিদের হাতে পরাজয় এবং ইসরায়েলের কাছে হারানো ভূমির একাংশ তাঁরা ফেরত পায়।



পরবর্তীতে সাঈদ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া কীভাবে ইসলাম / মুসলমানদের উপস্থাপন করে, তার ওপর কাভারিং ইসলাম নামে আলাদা একটি বই ই লেখেন। উক্ত বইয়ে তিনি উল্লেখ করেন - আরব ইসরায়েল যুদ্ধের সময় থেকেই , নিজেদের অবিচ্ছেদ্য মিত্র, যাদের জন্মের এগারো মিনিটের মাথায় অ্যামেরিকা রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে, সেই ইসরায়েলকে পৃথিবীর বুকে এক উঁচু মরালীটির স্থানে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে শুরু হয় পাশ্চাত্য মিডিয়ার প্রাচ্যের মুসলিমদের চরিত্রহননের প্রকল্প। ইরানে রেভলিউশান সংঘটিত হবার পর তাদের বিশ্ব মানবতার জন্যে হুমকিস্বরূপ ভয়াবহ সন্ত্রাসী রূপে পৃথিবীর বুকে উপস্থাপনের দায়িত্ব অ্যামেরিকান মিডিয়া সুচারুরুপ সম্পন্ন করে। মিশেল ফুঁকো ওয়াজ দা অনলি পারসন, যিনি পাশ্চাত্য মিডিয়ার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ইরানিয়ান রেভলিউশানের পক্ষে কথা বলেন, কিন্তু ফুঁকো ভক্তদের দুর্ভাগ্য যে ফুঁকোর ইরান সংক্রান্ত ভবিষ্যৎবানী পরবর্তীতে সঠিক প্রমাণ হয় নি। তার সূত্র ধরে ৯/১১ এর টেররিস্ট অ্যাটাকের জন্যেও অ্যামেরিকান মিডিয়া আজও ফুঁকোকে অংশত দায়ী করে।


কিছুটা সাঈদ থেকে ধার করে, কিছুটা নিজের চিন্তা থেকে, ওয়েস্টার্ন মিডিয়ার মিডল ইস্ট এবং গ্লোবাল মুসলিমদের রিপ্রেজেন্টেশনের কিছু চরিত্র তুলে ধরছি -

১। পাশ্চাত্যের মিডিয়া ইসলাম সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য নিজেদের এজেন্ডার বাইরে গিয়ে, পূর্ণাঙ্গভাবে প্রকাশ করে না। এ ব্যাপারে তাদের জারনালিজম ইনভেস্টিগেটিভ না, বরং ওরিয়েন্টাল থিওরির মতই ফ্ল্যাট ন্যারেটিভ।
উদাহরনঃ মধ্যপ্রাচ্যে হামাসের সৈন্যদের দ্বারা ইসরায়েলি সাধারণ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে বলে তাঁরা সারাক্ষণ প্রচার করতে থাকে, কিন্তু গাযা ও পশ্চিম তীরে যে অহরহ সাধারণ ফিলিস্তিনি নাগরিকদের তিন জেনারেশন বাস্তুচ্যুত হয়ে রিফিউজি ক্যাম্পে মানবেতর জীবন যাপন করছে - তাদের নিয়ে কোন কথা পাশ্চাত্য মিডিয়া বলে না।

২। তাঁরা বিশ্বব্যাপী তারকাখ্যাতি অর্জনকারী ব্যক্তিত্বদের দিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে জাতিসংঘের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে মানবতার বার্তাবাহী রূপে প্রেরন করে, কিন্তু তাও নির্দিষ্ট ভু অঞ্চলে। তাদের ছকের ভেতরে।
উদাহরনঃ আঞ্জেলিনা জোলিকে বাংলাদেশের শরণার্থী রোহিঙ্গা মুসলিমদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করতে বাংলাদেশে আসতে দেখা গেছে, বা সিরিয়ায় শরণার্থীদের সাথে সশরীরে দেখা করা সহ, তাদের নিরাপত্তা নিয়ে বার বার নিজের শঙ্কা প্রকাশ করতে দেখা গেছে। কিন্তু ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী জনগণ, যারা ১৯১৭ সাল থেকেই নিজের মাতৃভূমি থেকে বিতারিত হচ্ছে প্রতিদিন, তাদের ব্যাপারে এই হলিউড সেনসেশন কোনদিন মুখ খুলেছেন কিনা, বা খুললেও পাশ্চাত্য মেইনস্ট্রিম মিডিয়া কোনদিন তা হাইলাইট করে প্রচার করেছে কিনা, আমাদের জানা নেই। কিন্তু আমাদের এটা জানা আছে যে, মায়ানমারের চীনের সাথে লবিং থাকার কারণে মায়ানমার অ্যামেরিকার স্ত্রাটেজিক শত্রু। আর সিরিয়ার বাশার আল আসাদ এখনো ক্ষমতায় বসে আছেন রাশিয়ার ডান হাত তার কাঁধের ওপর থাকার কারণে।

৩। যদি কোথাও মুসলমানদের দুঃখে ওয়েস্টার্ন মিডিয়াকে কান্না করতে দেখা যায়, সেখানেও জড়িত থাকে তাদের গ্লোবাল পলিটিক্সের স্বার্থ।
উদাহরনঃ চীনের উইঘুর অঞ্চলের মুসলিমদের নিয়ে পাশ্চাত্যের সাংবাদিকদের খুব জান বাজিরেখে করা রিপোর্ট দেখা যায়। এটাকে মুসলিমদের প্রতি তাদের সহানুভূতির বদলে চীনের সাথে তাদের সাপে নেউলে সম্পর্কের জের হিসেবে পাঠ করলে ভুল হয় না।

৪। বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের শতকরা পাঁচ শতাংশ, বা তারও কম পরিমাণ সন্ত্রাস ইসলামের নামে ঘটলেও, যেকোনো সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ডে মুসলিম বা ইসলাম সংশ্লিষ্টতা পেলে পাশ্চাত্যের মিডিয়া তাঁকে সবচে বেশী গুরুত্ব দিয়ে প্রচার প্রসারের দায়িত্ব নেয়। এবং তাদের রিপোর্টের শিরোনামে গ্লোবাল মুসলিম টেররিস্ট , বা জঙ্গি মুসলমানের পরিচয় তৈরিই সর্বাধিক গুরুত্ব পায়। কিন্তু সমগ্র মুসলিম বিশ্বের প্রায় নিরানব্বই শতাংশ মানুষ যে ধর্মের নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করে, এটা কখনো পাশ্চাত্য মিডিয়ায় হেডলাইন হয় না।


ছবি - ইসলামের নামে সন্ত্রাসবাদ মিডিয়াতে কাভারেজ পায় অন্যান্য সন্ত্রাসবাদের সংবাদের তুলনায় ৭৫৮% বেশী।
সুত্রঃ Our World in Data.Net

ডেনিশ ও ফ্রেঞ্চ শারলি হেবদোতো ইসলামিস্ট ফান্ডামেন্টালিস্ট অ্যাটাক হবার পর পৃথিবীব্যাপী সাধারণ মুসলিমরা প্রতিবাদে সরব হন। আমার নিজের তখন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ছিল, আমি নিজেও স্ট্যান্ড উইথ প্যারিস হ্যাশট্যাগে নিজের প্রোফাইল পিকচার ফ্রান্সের পতাকার রঙে রাঙ্গিয়েছিলাম। সাধারণ মুসলিমদের সাথে সাথে পৃথিবীর বিভিন্ন মুসলিম দেশগুলির ধর্মগুরুরাও একই সঙ্গে এই মিলিট্যান্ট অ্যাটাকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে।

কিন্তু পাশ্চাত্য, তথা অ্যামেরিকান বা ইউরোপের মিডিয়ায় এই প্রতিবাদি মুসলিম মেজরিটি কোন শিরোনাম বানাতে সক্ষম হয় না। মিডিয়ার শিরোনাম হয় - ইসলামী জঙ্গি আক্রমণের শিকার প্যারিস বা ডেনমার্ক।

৫। মুসলিম সম্প্রদায়কে ঘিরে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে সংবাদ বিকৃত করা, বা পূর্ব সন্দেহের জের সন্ত্রাসবাদী ঘটনায় বৈশ্বিক মুসলমানদের জড়িত করে ফেলার একটা প্রয়াস ওয়েস্টার্ন মিডিয়ায় বরাবর ছিল।

সাঈদ বলেন - অ্যামেরিকান মিডিয়ার একটা অংশকে অ্যামেরিকার কোন মসজিদের আরবিতে দেয়া খুতবাকে আরবি না জানা অ্যামেরিকান শ্বেতাঙ্গদের সামনে অ্যামেরিকার ধ্বংস চাওয়া বক্তৃতা হিসেবে মনগড়া ইংরেজি সাবটাইটেলে প্রচার করেছে একসময়।
এছাড়াও এডওয়ার্ড সাঈদ উল্লেখ করেন, ৯/১১ - এর আগে অ্যামেরিকার বুকে সংঘটিত হওয়া ইতিহাসের সবচে বড় সন্ত্রাসী আক্রমণ অকলোহামা ষ্টেট বম্বিং, (এপ্রিল ১৯৯৫)র কথা, যা সংঘটিত হবার সাথে সাথেই অ্যামেরিকার মেইনস্ট্রিম মিডিয়া, ক্রমাগত এফবিআই এর বরাতে এই আক্রমণকে মিডল ইস্টের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ হিসেবে ঢালাও ভাবে প্রচার করা শুরু করে।


ছবি - অকলোহামা ষ্টেট বম্বিং, এপ্রিল ১৯৯৫

সাঈদ তখন ক্যানাডায় বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে বক্তৃতা করছিলেন। ঘটনার দিন বিকেলে অ্যামেরিকান মিডিয়ার কমপক্ষে পঁচিশটা এজেন্সি থেকে তাঁকে ফোন করে এই ঘটনার ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়। সাঈদ অভিযোগ করেন, তাঁকে সবাই এই প্রিজাজমেন্ট থেকেই প্রশ্নই করছিল বারবার যে, যেহেতু তিনি মিডল ইস্টে জন্মানো এবং বড় হওয়া, কাজেই - প্রাচ্যের সন্ত্রাসীদের সাইকোলজি তার বোঝার কথা।




ছবি - অকলোহামা ষ্টেট বম্বারস

পরবর্তী তদন্তে বেরিয়ে আসে যে পুরো হামলার পরিকল্পনাকারী ছিল অ্যামেরিকান আর্মির সে দুই প্রাক্তন শ্বেতাঙ্গ সদস্য। তাদের এহেন কর্মকাণ্ডের জন্যে খ্রিস্টান হোয়াইট সুপ্রিমিস্ট বলে পাঠ করবার বহু সুযোগ থাকলেও, অ্যামেরিকান মিডিয়া কখনোই তাদের আলোচনার আলোচনার স্রোত সেদিকে প্রবাহিত করে নি। কিন্তু ৯/১১ এর পর অ্যামেরিকা বা ইউরোপে সংঘটিত যত সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের সাথে মুসলিমরা জড়িত - তাঁকে ইসলামিক জঙ্গি কর্মকাণ্ড বলে উপস্থাপন করবার চেষ্টায় কোন কসুর অ্যামেরিকা বা ইউরোপিয়ান মিডিয়া কখনো করে নি।

৬। পৃথিবীব্যাপী কাকে টেনে তুললে অ্যামেরিকান সুপ্রিমেসির প্রোপ্যাগান্ডা হাসিল হবে - পাশ্চাত্য মিডিয়া, সে ছক কষে সে অনুপাতে আচরণ করে। উদাহরণস্বরূপ - তুরস্কের সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী ওরহান পামুক ইসলামপন্থী এবং অটোম্যান সাম্রাজ্যের প্রতি সিমপ্যাথেটিক এরদোয়ান সরকার বা তার আগের সেকুলার ইসলামিক সরকার বিরোধী। আবার ২০১৪ সালে, যে বছর পুরো রমজান মাস জুড়ে ইসরায়েল পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি জনগণের উপর মুষলধারে বোমা বর্ষণ করে গেছে, সে বছর সাহিত্য নোবেল পান প্যাত্রিক মোদিয়ানো। তার সবচে উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম মিসিং পারসনের বঙ্গানুবাদ - দুই বাংলা মিলিয়ে কেবল আমিই করেছিলাম। বইটি পড়লে বোঝা যায়, মোদিয়ানো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইহুদীদের পরিচয় সংকটকে মূলধারার আলোচনায় সন্নিবেশ করতে চান। বিশ্বব্যাপী #আই_সাপোর্ট_গাজা - তে যে বছর সোশ্যাল মিডিয়া প্লাবিত হয়ে গিয়েছিল, সে বছরই, গ্লোবাল ইহুদী ও ইসরায়েলপন্থীদের চেহারা রওশন করতে মোদিয়ানোকে নোবেল দেয়া হয়েছিল বললে ভুল হবে না, তার বইয়ের অনুবাদক হিসেবে এদাবি আমি করছি। ইংরেজি ভাষা সাহিত্যের শিক্ষক, একজন লেখক এবং অনুবাদক হিসেবে আমার মতে - মোদিয়ানো পৃথিবীর সেরা লেখকদের কাতারে পড়েন না।

৭। একইভাবে, অ্যামেরিকা বা ওয়েস্টের সাথে সুসম্পরক রাখে না এমন যেকোনো প্রাচ্যের সফল ব্যক্তিদের চরিত্রহনন করাও ওয়েস্টার্ন মিডিয়ার একটা ফেভারিট পাস্টটাইম।


ছবি ১৫ - প্রিন্সেস ডায়না এবং দোদি ফাইয়াদের বিয়ের ওপর দা সানডে টাইমসের বর্ণবাদী রিপোর্ট অনলাইনে এভেইলেবল না থাকায়, সাঈদের বক্তৃতা থেকে নেয়া ছবি

সাঈদ উদাহরণে বলেন - প্রিন্সেস ডায়না এবং আরব ধনকুবের দোদি ফাইয়াদের মৃত্যুর পূর্বে পুরো ব্রিটিশ এবং অ্যামেরিকান প্রেস বর্বরের মত তাদের পেছনে লেগেছিল দোদির অরিজিনকে বর্ণবাদী ওরিয়েন্টাল ডিসকোর্সে ফেলে কাটাছেঁড়া করবার জন্যে। সাঈদ উল্লেখ করেন লন্ডনের প্রমিনেন্ট পত্রিকা দা সানডে টাইমসের নাম - যারা ডায়না আর ফাইয়াদের ছবিসহ ১৫,০০০ শব্দের কাভার স্টোরি করে, "দা ম্যাচ মেইড ইন মেক্কা" , বা মক্কাপন্থী জুটি শিরোনামে। সাঈদ প্রশ্ন করেন - একটা সমাজ, যারা নিজেদের সভ্য দাবী করে, যারা কথায় কথায় কালচারাল প্লুরালিটির বুলি ঝাড়ে, তাদের মিডিয়া এরকম অসভ্য আচরণ কেন করবে?





ছবি - পাশ্চাত্যের মিডিয়ার চোখে প্রাচ্যের মুসলমান

প্রাচ্যের মুসলিম বলতেই ওয়েস্টার্ন মিডিয়া চেক স্কার্ফে মুখ ঢাকা, ডান হাতে কোরআন আর বাম হাতে অটোম্যাটিক রাইফেল নিয়ে ফিলিস্তিনি তরুণের ছবিকে বিশ্বের সামনে উপস্থাপন করেছে। হলিউডে আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার, চাক নরিসের মত অ্যাকশন হিরোদের দিয়ে একের পর এক সিনেমা বানিয়েছে - যাতে স্টেরিওটাইপড প্রাচ্য মুসলিমরা কেবলই ফ্যানাটিক, জঙ্গি। পৃথিবীর একমাত্র ভাষা যেটা এই মুসলিম গোষ্ঠী বোঝে তা হল অস্ত্রের ভাষা। গলায় ছুরি না ধরলে - বা ঘুষি মেরে নাক ভেঙ্গে দেয়ার আগ পর্যন্ত যে প্রাচ্যের মুসলিমদের কিছু বোঝানো যায় না। ওরিয়েন্টালিজমের সূত্র ধরেই প্রথমবারের মত বৈশ্বিক মুসলমানদের পশ্চিমা মিডিয়া কীভাবে পৃথিবীর অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর সম্মুখে উপস্থাপন করে , তা গুরুতরভাবে আলোচনার সম্মুখীন হয়।

অ্যান্টি মিডল ইস্টার্ন ফিলিংস কীভাবে বৈশ্বিক অ্যান্টি মুসলিম ফিলিংস এ কনভার্ট হচ্ছে এ বিষয়ে গুরুতর বোঝাপড়া দরকার। বৈশ্বিক মুসলিম জাতিকে ক্রমাগত একটা দোষারোপ করার এবং নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করার ফলাফল হচ্ছে এই যে - এখন ইসলাম নিয়ে কেউ কথা বলতে গেলেই , তাঁকে "মুসলিম অ্যাপলোজিস্ট" এর লেবেল বা ট্যাগ লাগিয়ে দেয়া হয়। ফলশ্রুতিতে, পাশ্চাত্যে মুসলিম পরিচয়ের সিগনিফায়ারস - যেমন দাঁড়ি, টুপি, বা হিজাব পরিধান করে চলাচল করা মুসলিমদের ক্রমাগত একটা ভিন্ন চোখে দেখার টেনডেন্সি তৈরি হয়ে গেছে। বৈশ্বিক মুসলমান, এখন তার ধর্মপরিচয়ের কারণে সর্বত্রই হাত জড়ো করে ক্ষমাপ্রার্থীর ভঙ্গীতে দাঁড়িয়ে থাকবে - এটাই যেন প্রাচ্য - পাশ্চাত্যের অধিকাংশ "মুক্তমনা" "আধুনিকতাপন্থী" দের চাওয়া।


বাঙ্গালী মুসলমানের স্টেরিওটাইপঃ

প্রসঙ্গতই প্রশ্ন চলে আসে , ওরিয়েন্টালিজম প্রকল্পের হাত ধরেই বৈশ্বিকভাবে মুসলমানদের সন্ত্রাসবাদী ট্যাগ দিয়ে করজোড়ে ক্ষমাপ্রার্থীরূপে দাঁড় করানো নিয়ে পাশ্চাত্যের রাজনৈতিক ও মিডিয়াভিত্তিক যে প্রয়াস, সে অ্যাপলোজেটিক মুসলিম সোসাইটি প্রতিষ্ঠার সামাজিক প্রয়াসের আঁচ বাংলাদেশের গায়ে এখনো এসে লেগেছে কী না?

এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে আমাদের সময় - আমাদের ভৌগলিক অবস্থান - আমাদের আঞ্চলিক রাজনৈতিক অবস্থা, এবং ওয়ার্ল্ড অ্যাকাডেমিয়ার গবেষণায় উঠে আসা সাম্প্রতিক সময়ের তথ্যের প্রেক্ষিতে।


স্টকহোম ইউনিভার্সিটির পলিটিক্যাল সায়েন্সের প্রফেসর ডঃ ইশতিয়াক আহমেদ, তার ২০১৩ সালে প্রকাশিত "পাকিস্তানঃ দা গ্যারিসন ষ্টেট" বইয়ে উল্লেখ করেন, ১৯৪৭ এ দেশভাগের সময় প্রাথমিকভাবে ব্রিটিশ এম্পায়ারের ইচ্ছা ছিল না ভারত - পাকিস্তান দুইভাগে ভাগ করার। তাঁরা ভারত ছেড়ে যেতো, কিন্তু দুটো বিশ্বযুদ্ধেই ব্রিটিশ এম্পায়ারের সহায়তায় আসা ভারত- পাকিস্তানের যে সম্মিলিত সেনাবাহিনী, সেটাকে তাঁরা তাদের প্রয়োজনের সময়ে ভবিষ্যতেও ব্যবহার করবে এই ছিল তাদের নিয়ত। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে লবিং রেখে চলা প্রো সোশ্যালিস্ট পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হবার প্রধান দাবীদার হয়ে উঠছেন যখন, তখন ব্রিটিশ - অ্যামেরিকান যৌথ কম্যান্ড একটা গোপন আন্ডারস্ট্যান্ডিং এ পৌঁছান যে, বৈশ্বিক পুঁজিবাদের বিকাশ এবং কমিউনিজম বিরোধী তাদের যে প্রোপ্যাগান্ডা - তাতে হয়তো বৃহৎ ভারতকে আর সামিল করা যাবে না। কাজেই তাদের ভেঙ্গে দিয়ে একটা অংশকে অন্তত তাদের করায়ত্ত রাখতে হবে। এভাবে, জন্মসূত্রেই পাকিস্তান অ্যামেরিকান লবিতে যোগদান করে।



ছবি - হিন্দুস্তান টাইমস পত্রিকার ফটোসাংবাদিক অমল কেএসের বরাতে প্রাপ্ত এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের একটি ছবি, যাতে দেখা যাচ্ছে ভারতের একটি মিনারে হিন্দুত্ববাদের পতাকা।
সূত্রঃ view this link

তবে সাম্প্রতিক সময়ের বিবেচনায় মনে হয়, উপরুক্ত যুক্তির প্রেক্ষিতে ব্রিটিশরা ভারত ভাগ না করলেও পারতো। নিঃসন্দেহে ভারত এখন আর সোভিয়েত ইউনিয়নের পকেটে নেই। ২০২০ সালের প্রেক্ষিতে দক্ষিণ এশিয়ায়, তথা পাকভারত উপমহাদেশের রিপ্রেজেন্টিটিভ পাওয়ার ভারতে এখন প্রবল ক্ষমতাধর ডানপন্থী বিজেপি সরকার দিল্লীর মসনদে। মোদি সরকারের নির্বাচনী শ্লোগান - "সবকা সাথ সবকা বিকাস" হলেও দ্বিতীয় দফায় নির্বাচিত হওয়া মাত্রই সংবিধানের ৩৭০ নং ধারার বিলুপ্তি ঘোষণা করে কাশ্মীরের আংশিক স্বায়ত্তশাসন রদ, সিটিজেন অ্যামান্ডমেন্ট অ্যাক্ট (সিএএ) এবং ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্ত্রার (এনআরসি) - ইত্যাদি ঘোষণায় ভারতে অবস্থিত মুসলিম জনগোষ্ঠীর যে বিক্ষোভের খবর দেশী - বিদেশী বিভিন্ন গনমাধ্যমে আসছে, তাতে অন্তত এটা স্পষ্ট হয় যে - ভারতের অন্তত একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী , বিজেপি সরকারের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট নয়।



ছবি - ব্লুমবার্গ নিউজের ফটো সাংবাদিক প্রশান্ত বিশ্বনাথনের বরাতে পাওয়া এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের একটি ছবি, ভারতের দিল্লীতে একটি দেয়াললিখন - all opposers of the CAA (Citizenship Amendment Act), NRC (National Register of Citizens) and NPR (National Population Register) are ‘anti-nationals, traitors, and terrorists hiding in the country’

বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশ মেনে - ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য যদি না ও করি, এতটুকু কন্সারন শেয়ার করা হয়তো অপরাধ হবে না যে - বাংলাদেশের ঘাড়ের ওপর প্রায় অর্ধেক মহাদেশের সমান সাইজের একটি রাষ্ট্রে যদি প্রবল ডানপন্থী একটা অবস্থান পোক্ত হয় - তবে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ, যাদের অধিকাংশই মুসলিম, তাদের মধ্যেও সাম্প্রদায়িক একটা ঘৃণার বীজ ধীরে ধীরে অঙ্কুরিত হতে শুরু করবে। বাংলাদেশের শিক্ষিত মুসলিমের একটা বড় ব্যক্তিজীবনে অংশ ধর্ম পালন করে না। সূক্ষ্মভাবে সাম্প্রদায়িক আচরণের শিকার হলেও, তা তার জান - মালের নিরাপত্তার জন্যে খুব বড় কোন থ্রেট নয় বলে, সাধারণত ধর্ম বিষয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকে। কিন্তু গণমাধ্যম এবং নিউমিডিয়ার থ্রুতে যদি নিজের ঠিক পাশের দেশটিতে স্বধর্মীয়দের একটা উগ্র সাম্প্রদায়িক রাজনীতির শিকার হতে দেখে, তবে প্রাকৃতিকভাবেই বাঙ্গালী মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার নোংরা খেলায় জড়িয়ে পড়বে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ সরকারের জন্যে একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে এই সাম্প্রদায়িক রাজনীতির আগুণ নেভানো। কিন্তু আমরা আমাদের কমনসেন্স থেকে জানি - যারা সংখ্যায় বড়, শক্তিতে বড় শিষ্টাচারের দৃষ্টান্ত স্থাপন করবার মূল দায়িত্বও তারই। ভারতের হিন্দু এবং বাংলাদেশের মুসলিম সম্প্রদায়কে তাই দায়িত্ব নিয়ে স্টেরিওটাইপের খেলা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

বাংলাদেশের কি করা উচিৎ হবে না, সেটা পাকিস্তানের দিকে তাকালেই বোঝা সবচে সহজ। ইতোমধ্যেই পাকিস্তান বৈশ্বিকভাবে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় একটি ব্যার্থ রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তাদের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইমরান খান তার ভাষণে, সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের তুলনা করে সামাজিক - অর্থনৈতিকসহ অধিকাংশ ইস্যুতেই পাকিস্তানের বাংলাদেশের থেকে পিছিয়ে থাকার ব্যাপারে হতাশা ব্যক্ত করেছেন।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে, সাম্প্রদায়িকতা এবং সন্ত্রাস ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান তবে কি?

আনন্দের ব্যাপার এই যে, ২০১৯ সালের গ্লোবাল টেরোরিজম ইনডেক্স রিপোর্টে বাংলাদেশের অবস্থান ৩১ তম, যেখানে ভারতের অবস্থান ৭ম, আর পাকিস্তানের ৫ম । সাম্প্রদায়িক, জাতিগত সহিংসতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের এটা অবশ্যই একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। বাংলাদেশের এই সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী অগ্রগতি বজায় রাখার জন্যে মিলিতভাবে কাজ করতে হবে সরকার এবং জনগণ উভয়কেই।

আমি বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার বিরুদ্ধে খুব গুরুত্বপূর্ণ শত্রু হিসেবে "মুক্তমনা" , "সেকুলার" , "আধুনিকতাপন্থী" - নামে একটি সক্রিয় গোষ্ঠীকে চিহ্নিত করতে চাই। মসজিদে - মিম্বরে এবং ওয়াজ মাহফিলে বসে যে সমস্ত "ইমাম ও খতিব" অমুসলিমদের বিরুদ্ধে বাঙ্গালী মুসলমানদের খেপিয়ে তোলে , তাঁরা, এবং এই তথাকথিত এই "সেকুলার - ইসলামবিদ্বেষী - মুক্তমনা" সম্প্রদায় একে অপরের পরিপূরক দুটি সম্প্রদায়। এই দুই গ্রুপের এজেন্ডাও কম বেশী এক। অ্যাটেনশন সিক করা, এবং সমাজে - দেশে একটা অস্থিতিশীলতা তৈরি করা।, উগ্রপন্থি "ওয়ায়েজ" দের হাতে সহিংসতার উপকরণ তুলে দেয়ার গুরুদায়িত্ব দেশে, এবং মূলত বিদেশে বসে এই "সেকুলার মুক্তমনা" সম্প্রদায় নিষ্ঠার সাথে পালন করেন।

তাদের কার্যকলাপ সংক্ষেপে -

(ক) ইসলামের ইতিহাস ও মূলনীতিকে একটি রক্তপিপাসু, যুদ্ধবাজ, লুটেরা, নারীলোভী জাতির ইতিহাস বলে "ওরিয়েন্টালাইজড" করা
(খ) ইসলাম ধর্মের প্রচারক রাসুল (সঃ) থেকে নিয়ে পরবর্তী ইসলামী খলিফাসমূহকে অত্যন্ত কুৎসিতরূপে চরিত্রহনন করা
(গ) মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মগ্রন্থ নিয়ে ক্রমাগত উপহাস কটূক্তি করা
(ঘ) মুসলমান মানেই বিজ্ঞানবিরোধী, মধ্যযুগীয় বর্বর , শিশুকামী , জামাত শিবির - ওয়েস্টার্ন মিডিয়ার আদলে এই শ্লোগান প্রচার এবং প্রসার করা।
(ঙ) কোরআন এবং হাদিস আংশিকভাবে কেটেছিঁড়ে, জোড়াতালি লাগিয়ে , ইন্টারনেটের ভুয়া রিসোর্সকে প্রধান রেফারেন্স বানিয়ে ইসলামকে জঙ্গিবাদের, রক্তপিপাসুদের ধর্ম হিসেবে উপস্থাপন করা, এবং দাবী করা যে , যদিও তাঁরা "মুক্তমনা" অর্থাৎ ধর্ম (মূলত ইসলাম) বিদ্বেষী, তবুও তাদের ইসলাম সংক্রান্ত আন্ডারস্ট্যান্ডিং ই একমাত্র, এবং প্রকৃত আন্ডারস্ট্যান্ডিং। (প্রমাণ চাইলে ঘুরে আসুন এই লেখার কমেন্ট সেকশনে - view this link

ফলশ্রুতিতে বাঙ্গালী মুসলিম, যার ধর্মকর্ম মূলত শুক্রবারে নামাজ পড়তে যাওয়া, রমজান মাসে রোজা রাখা আর কোরবানি দেয়ার মধ্যেই কমবেশী সীমাবদ্ধ, নিজের মুসলিম পরিচয় নিয়ে যে খুব একটা অ্যানালাইটিক চিন্তাভাবনায় অভ্যস্ত নয়, খুব স্বাভাবিকভাবেই সে তথাকথিত সেকুলার মুক্তমনার সুপরিকল্পিত পরিচয় সন্ত্রাস, বা বাঙ্গালী মুসলমানের আত্মপরিচয় কেড়ে নেয়ার যে ফাঁদ, তাতে পা দিচ্ছে। সে তার ধর্ম পরিচয় নিয়ে লজ্জা পাচ্ছে। পাবলিক ফোরামে নিজের ধর্ম পরিচয় ও ধর্মবিশ্বাসকে পাশে চাপিয়ে রেখে আলাপচারিতার একটা প্রবণতা তাদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে। তাদেরই কেউ , ইসলাম যার ঘনিষ্ঠ জীবনাচারের অংশ নয় , সে হঠাৎ উগ্রপন্থী হয়ে উঠছে সেই রাসুল (সঃ) , বা কোরআনের অবমাননায় - যার, যাদের আদর্শ, শিক্ষার একটা পরিপূর্ণ স্বজ্ঞা তার নিজের মধ্যে নেই, কিন্তু তার, তাদের প্রতি সেই মুসলিমটির ভালোবাসা প্রচুর। দুর্ঘটনা ঘটছে। বাঙ্গালী মুসলিমের বদনাম হচ্ছে। মুক্তমনারা ভিকটিম গেম প্লে করছে।

বাঙ্গালী মুসলমানের এমতাবস্থায় খুবই সতর্কতার সঙ্গে নিজেদের সমাজ, জীবনব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে হবে; সামগ্রিকভাবে ইসলাম নিয়ে নয়, বরং বাঙ্গালী মুসলিমের জীবনাচার নিয়ে "মুক্তমনা" দের অভিযোগগুলির সত্যতা যাচাই করতে হবে; নিজেদের সংশোধন করতে হবে; এবং নিজেদের যদি ভুলভ্রান্তি থেকে থাকে, সে ক্ষেত্রে নিজেদেরই এগিয়ে এসে প্রতিবাদ করতে হবে - বাঙ্গালী মুসলমানের চরিত্রহননের অভিসন্ধিওয়ালা ধড়িবাজদের আগেই। নইলে "সেকুলার মুক্তমনা"দের পরিচালিত ধারাবাহিক পরিচয় সন্ত্রাসের জেরে বাঙ্গালী মুসলমানদের রাতে ঘুমানো মুশকিল হয়ে দাঁড়াবে। বারবার আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াতে হবে। সে আয়নায় নিজের অতিপরিচিত চেহারার বদলে আবিষ্কার করতে হবে এক প্রবল উগ্রবাদী, পশ্চাৎপদ, ঘৃণ্য জঙ্গির চেহারা। বাঙ্গালী মুসলমানের কপালে সে আরোপিত কলঙ্কের দাগ, সংঘবদ্ধ এবং ধারাবাহিক পরিচয় সন্ত্রাসের কালিমা ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিনের, রাতের পর রাত দাঁড়িয়ে পানির ঝাপটা দিলেও দূর হবে না।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১০:০৪
১২টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×