(আগের লেখার সম্প্রসারিত অংশ)
“ভারতের মানুষকে অভুক্ত রেখে, বাংলাদেশে চাল রপ্তানি সম্ভব নয়।” সে সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বাংলাদেশ সরকারের চাল রপ্তানির অনুরোধের প্রেক্ষিতে এক পর্যায়ে বলেছিলেন। এটা নিয়ে তখন মিডিয়ায় বেশ সমালোচনা হয়েছিলো। একটি রাষ্ট্রের অসহায়ত্ব যে আসলে কী, কেমন ও কতোটা নাজুক হতে পারে, জীবনে প্রথমবার আমি উপলব্ধি করলাম। ইতিপূর্বে আফ্রিকার নাইজারে একবার দেখেছিলাম, সেখানকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মামাদৌ তানাজা জাতিসংঘের কাছে, তাঁর দেশে ফসলহীনতার দরুন আসন্ন দুর্ভিক্ষের শঙ্কা জানিয়ে খাদ্য সহায়তা চেয়েছিলো। জাতিসংঘ তাঁর আহ্বানে যে কোনও কারণেই হোক তখন সারা দেয়নি (খুব সম্ভবত দূর্নীতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিলো কারণ)। ফলাফল নাইজারে ভয়াবহ খাদ্য সংকট, দুর্ভিক্ষ, অনাহারে মৃত্যু বহু দরিদ্র মানুষের। রাষ্ট্র অসহায়। জনগণ অসহায়। ২০০৭ সালে সিডর পরবর্তী খাদ্য সংকট, চালের সংকট আমাদেরকেও অনেকটা কাছাকাছি পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছিলো। ভারত ছাড়া সে যাত্রায় উদ্ধারের কোনও উপায় ছিলো না। এটা ষোলো কোটি মানুষের খাদ্য সংকট। ধনী ও সামর্থ্যবানদের কিছু হতো না নিঃসন্দেহে। কিন্তু বহু সংখ্যক দরিদ্র মানুষকে নিশ্চিতভাবেই অনাহারে, অর্ধাহারে থাকতে হতো। ভাত না খেয়ে থাকতে হতো। ভারতের দিকে ভীষণ তৃষ্ণা নিয়ে চাতকের চোখে তাকিয়ে সবাই। রাষ্ট্র, জনগণ সবাই। সর্বত্র শ্বাসরুদ্ধকর উত্তেজনা, উৎকণ্ঠা। বন্ধু ভারত নিরাশ করেনি আমাদের। তৎকালীন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তীর শুরুর ওই নাবোধক তীর্যক মন্তব্য (এছাড়াও বিভিন্ন সময় তাঁকে, বাংলাদেশকে ভারতের মতো ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হবার নসিহত করতে দেখেছি। যে কারণে তিনি সমালোচিতও হয়েছিলেন।) উৎকণ্ঠা বাড়ালেও, শেষমেশ ভারত সেখানকার বাজারদরেই বিরাট পরিমাণের চাল রপ্তানি করে বাংলাদেশে। চাইলে, চালের দাম আরও বেশি দাবি করতে পারতো ভারত, তাহলেও বাংলাদেশকে কিনতে হতো। চাল ক্রয়ের কোনও বিকল্প ছিলো না আমাদের সামনে। এই চাল ফিলিপাইন বা থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করতে গেলে চালের দাম, পরিবহন খরচ সবমিলিয়ে সার্বিক খরচ দুতিন গুন বেড়ে যেতো। তাতেও ঘাটতি সম্পূর্ণরূপে পূরণ হতো না। ভারত বাংলাদেশের অনুরোধ রেখেছিলো। তাদের বাজারদরেই চাল রপ্তানি করেছিলো। ভারতের সেই চাল আসার পরই চালের মূল্য আবার ৪০/৫০ টাকা থেকে কমে ১৫ টাকায় এসেছিলো।
(আগের লেখাটি)
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১২:৩২