somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিউজল্যান্ড টু ইউরোপ (পর্ব - ২)

০৬ ই জুন, ২০২১ সকাল ৮:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এসএসসির পর আমাদের পরিবারে ভয়াবহ অর্থনৈতিক দূর্যোগ নেমে আসে। যার কারনে আমাকে সরকারী কলেজে পড়তে হয়েছে। এখন মাঝে মাঝে মনে হয় যদি ইন্টার টা প্রাইভেট কোন কলেজে পড়তাম তাহলে হয়ত একটু ভালো করতাম। সরকারী কলেজটা আমার লাইফে অনেকটা নাচুনে বুড়ির জন্য ঢোলের বাড়ির মত। কলেজ লাইফে কোন পরীক্ষায় পাস করতে আমি পারিনি। বেশির ভাগ পরীক্ষায়ত এটেন্ড করিনি। শুধু মিড টার্ম আর ফার্স্ট ইয়ার ফাইনাল দিয়েছিলাম এবং ৪ বিষয় ফেল করি। কিন্তু আমাদের কে সেকেন্ড ইয়ারে উঠতে কেউ বাধা দেয়নি। স্বভাবতই আরো বেপরোয়া হলাম। প্রি-টেস্ট দেইনি, টেস্ট দিসি এবং বাংলা ইংরেজি ছাড়া বাকি সব ফেইল। পরে সাপ্লি এক্সাম দিয়ে আমাদেরকে পরীক্ষায় ফর্ম ফিলাপ করার সুযোগ দেয়। সাপ্লিতেও জাস্ট এটেন্ড করে খালি খাতা জমা দিয়েছি।



এই যে আমার কলেজ লাইফে এত কিছু ঘটছে আমার কলেজে গিয়ে খোজ নেয়ার মত কেউ ছিলো না। আবার কলেজ থেকেও কখনো কোন অভিভাবক ডাকা হয়নি। যদি হতো, তাহলে হয়ত কিছু ক্ষেত্রে আমি সুধরে যেতাম। আমার পরিবারের সব কিছু আমার উপর ছেড়ে দেয়া আমার জন্য অনেক ক্ষতির কারন হয়েছে। আব্বু দেশে ছিলেননা, আম্মুর পক্ষে সম্ভব ছিলোনা কলেজে গিয়ে আমার খোজ নেয়া। সব মিলিয়ে এই খোজ না নেয়াই আমার ক্যারিয়ার ধ্বংশের অন্যতম কারন হলো বলে মনে করি। বাংলাদেশে ব্যাড প্যারেন্টিং বিষয়টা এত বেশি যে! এটাই এখন বাংলাদেশের কালচার।

এর মধ্যে আমি আরো অনেক প্রেমে পড়া শুরু করলাম। প্লে-বয় টার্মটাকে এক্সপ্লেইন করার জন্য আমি হলাম পারফেক্ট উদাহরন। যেখানে যাই সেখানেই প্রেমে পড়ি। এত কিছুর পরও ক্লাস এইটে যে মেয়েটাকে ভালো লেগেছিলো তার সাথে প্রেমটা টিকে ছিলো। জীবনে অনেক মেয়ের সাথেই প্রেম করেছি কিন্তু সে ছিলো কনস্ট্যান্ট। এই মেয়েটা কেন জানি আমাকে ছেড়ে যেতে পারেনি। অসম্ভব সাপোর্ট করতো আমায়। আমার ভুল কাজে আমাকে সাপোর্ট করে সে কোন মহামানবী সাজতে চেয়েছে আমার জানা নেই। তবে এখন আমার মনে হয় সে ভুল ছিলো। আবার এও মনেহয় সে আমার ভুল কাজে সাপোর্ট না করলে হয়ত তার সাথে সম্পর্কই টিকতোনা। সম্পর্ক টিকানোর জন্যই হয়ত আমার ভুল কাজকেও সে সাপোর্ট করত।

যাইহোক, সাপ্লি দিয়ে ফাইনাল পরীক্ষায় বসলাম এবং চার বিষয়ে ফেল করলাম। পদার্থ, রসায়ন, জীব বিজ্ঞান, গণিত। আমি জানতাম আমি ফেল করবো তাও আমি ভার্সিটি এডমিশন কোচিং এ ভর্তি হই। সে সময়ে কেন এই কাজ করেছিলাম আমার জানা নাই। হয়ত সবাইকে দেখাতে যে আমি পড়াশোনা করছি। এর মধ্যে বাসায় চাপ দিয়ে একটা ল্যাপটপ নেই! যেটা পরবর্তীতে নেশা হয়ে গেলো।

ফেল করার পর আব্বু আম্মুকে বললাম লাকসাম আমার ভালো লাগেনা আমি কুমিল্লায় থাকবো। আর কিছু প্রাইভেট পড়বো। আব্বু আম্মু ব্যাবস্থা করলেন। কিন্তু তাতেও যে খুব বেশি লাভ হলো তা না। এক বছর এদিক সেদিক ঘুরে আবার এলো পরিক্ষা। এ বছর যে আমার খুব ভালো প্রস্তুতি বিষয়টা কিন্তু তা না। বন্ধু বান্ধবের হেল্পে আমি রসায়ন বাধে সব বিষয়ে পাস করে যাই। রসায়নের জন্য আরেকটা বছর নষ্ট হলেও এটাও আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া ছিলো। দ্বিতীয় বার ফেল করার পর বাবা মাও আমাকে নিয়ে হতাশ হয়ে গেলেন। পরিবারের ঐ অবস্থায় আমার আব্বুর একটা আশার আলোর দরকার ছিলো যেটা আমি দিতে ব্যার্থ হয়েছিলাম ২য় বারের মত।

ফেল করার পর এক বছর গ্রামের বাড়িতেই ছিলাম। আমার তেমন কোন বন্ধু বান্ধব ছিলো না। ছোট বেলা থেকেই আমি গ্রামে ছিলামনা তাই সেভাবে বন্ধু বান্ধব হয়ে উঠেনি। আব্বু এলাকার রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব তাই কোন কাজ করার আগে ভাবতে হতো আমায়। আমার বয়সি ছেলেরা গ্রামের স্কুল শুরু এবং ছুটির সময় রাস্তাঘাটে আড্ডা দিতো কিন্তু আমি সম্মানের ভয়ে সকাল ১১টায় ঘুম থেকে উঠতাম। গোসল করতাম, খেতাম , ল্যাপটপ নিয়ে বসতাম তারপর সারাদিন ল্যাপটপ। সন্ধ্যার পর একটু বাজারে যেতাম মোবাইলে টাকা রিচার্জ করতে। সারারাত প্রেম করতাম এরপর ভোর রাতে ঘুমাতে যেতাম। পরবর্তী এক বছর আমার এই রুটিনই চললো।

কিন্তু আমার সুপার গ্লু মার্কা প্রেমিকা এবার আমার সিনিয়র হয়ে গেলো। সে আমাকে একদিন একটা কথা বলেছিলো, আমি তার জীবনে অভিশাপ। সে আমাকে ছুড়ে ফেলতে পারছেনা এটাই তার জীবনের বড় ব্যার্থতা। নিজ হাতে তার ন্যাশনাল ইউনির ফর্ম ফিলাপ করলাম, ভর্তি করালাম। নিজেকে অনেকটা হাতেমতাই মনে হচ্ছিলো।

এই এক বছরে আমি একটা ভালো কাজ করি সেটা হলো বিদেশে পড়াশোনা বিষয়ে ভিবিন্ন ব্লগ পড়া শুরু করি। রাগিব হাসান আর রাজন আলম নামে এক ভাইয়ের প্রায় ৩০ পর্বের একটা ব্লগ ছিলো সামুতে। নাম ছিলো {আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা}, এই ব্লগ গুলো পড়ে বিদেশে পড়াশোনার বিষয়ে আগ্রহ জন্মায়। তারপর সেই এক বছরে আমি কি কি করেছিলাম সেটা পরবর্তী ব্লগে বলবো

এই লেখাটি ভিবিন্ন পর্বে সাজানো হয়েছে। বাকি পর্ব গুলো এখান থেকে পড়তে পারেনঃ

প্রেম, বিয়ে এবং জীবন পর্ব ১ঃ Click This Link

প্রেম, বিয়ে এবং জীবন। (পর্ব - ২)ঃ Click This Link

প্রেম, বিয়ে এবং জীবন। (পর্ব -৩) ( স্বপ্নের পথে এগিয়ে চলা)ঃ Click This Link

মিশন আমেরিকার ব্যার্থতা এবং একটি শুভ সূচনা। প্রেম, বিয়ে এবং জীবন। (পর্ব -৪)ঃ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০২১ সকাল ৭:০১
১টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×