somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

আমিই সাইফুল
একজন ইউরোপ প্রবাসী, জীবনের নানা চড়াই-উতরাই পার করে আজকের এই আমি। ব্লগে আবেগ অনুভূতি শেয়ার করি যেগুলো হয়ত সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হয়না। আমি একজন অনুভূতির ফেরিওয়ালা......

মিশন আমেরিকার ব্যার্থতা এবং একটি শুভ সূচনা। নিউজল্যান্ড টু ইউরোপ। (পর্ব -৪)

০৯ ই জুন, ২০২১ ভোর ৬:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমার ভার্সিটি লাইফ ভালোই চলছিলো, আগের পোস্টে একটা জিনিস মেনশন করতে ভুলে গিয়েছিলাম। প্রাক্তনের বোনের বিয়েতে আমি ড্রেসিং টেবিল উপহার দিলেও আমি কিন্তু অনুষ্ঠানে যাইনি। তো যাইহোক, আমার আমেরিকায় এডমিশন প্রসিডিওর শুরু করলাম৷ এপ্লাই করলাম নর্দান স্টেট ইউনিভার্সিটিতে। সাউথ ডাকোটায় প্রচুর ঠান্ডা, তাপমাত্রা সবসময়ই মাইনাসে থাকে। তাই ইন্টারন্যাশনাল ছাত্ররা সেখানে খুব কম যায়। তাই তাদের এডমিশন পাওয়াটা সহজ ছিলো। সেসময় ইএমকে সেন্টারের এডভাইজর সুসান রহমতুল্লাহ ম্যাম আমাকে ওখানে রেকোমেন্ড করলেন। সেসময় আমার সাথের সবাই মোটামুটি ৪/৫ টা ইউনির i-20(এডমিশন লেটার) নিয়ে ভিসা ইন্টারভিউ ফেস করতো। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভিসা অফিসার এতে ইমপ্রেসও হতো। কিন্তু আমারত একটা i-20 আনতেই পরান যায় যায় অবস্থা। সুসান ম্যামের উপদেশে আমি একটা i-20 নিয়েই ভিসা ইন্টারভিউ ফেস করার সিদ্ধান্ত নিলাম।

ইন্টার্ভিউ ফেস করার পূর্বে ফাইনান্সিয়াল কিছু পেপার্স রেডি করা লাগে। আমাদের ফাইনান্সিয়াল অবস্থা মোটামুটি খুবই বাজে তখন। আব্বুর কিছু পরিচিত মানুষ ছিলো যারা আব্বুর একাউন্টে টাকা রাখে যার স্টেটমেন্ট দিয়েই আমি ইন্টার্ভিউ ফেস করবো এছাড়া কোন উপায় নেই। আমার আর ফরহাদের একই সাথে ইন্টারভিউ ছিলো। ইউএস এম্বাসির একটা ভালো দিক হলো ইনিস্ট্যান্ট ডিসিশন দেয়, নেগেটিভ অথবা পজেটিভ সাথে সাথেই জানিয়ে দেয়। এম্বাসিতে গিয়ে সবার দিকে তাকাই, সবাই নিজের চিন্তায় মগ্ন। একটা জিনিস খেয়াল করলাম, যাদের ভিসা এপ্রোভ হচ্ছে তাদের সবার মাঝেই একটা আভিজাত্যর ছাপ আছে। না সিরিয়াসলি, এটা রেসিজম না!!! ওরা খুব ভালো ভাবে ট্রেনিং প্রাপ্ত তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ওদের চোখ এড়ানো কঠিন। ওরা মানুষ দেখলেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বুঝতে পারে কারা জেনুইন স্টুডেন্ট আর কারা আমার মত যেকোনমতে আমেরিকায় পৌঁছাতে পারলেই হলো টাইপ স্টুডেন্ট। আমার ইন্টারভিউ ১মিনিটের হয়েছিলো এবং রিজেক্ট হলাম। রিজেক্ট হওয়ায় আমি যতটা না কষ্ট পেলাম তার চেয়ে বেশি কষ্ট পেলো আব্বু আম্মু। আমি জানতাম রিজেক্ট হওয়াটা স্বাভাবিক কিন্ত আব্বু আম্মু ভেবেছিলেন আমার সাথে হয়ত ম্যাজিকাল কিছু হবে। কিন্তু লাইফত আর ম্যাজিক না তাইনা!!!

ভিসা রিজেক্ট হওয়ার পর আপন মানুষদের আচরণ আবার পরিবর্তন হওয়া শুরু করলো। চাচী ফুপিরা আম্মুকে এমন এমন কথা শুনাতো যে উনি আরো বেশি ডিপ্রেশনে পড়তেন। আব্বুও স্বাভাবিকভাবে নেয়নি এই ব্যার্থতা টা, এবং তিনি স্ট্রোক করে বসলেন। কুমিল্লার সবচেয়ে ভালো হসপিটালের আব্বুর চিকিৎসা হলো, সাবেক এমপি থেকে শুরু করে মেম্বার চেয়ারম্যান সবাই আব্বুকে দেখে গেলেন। আর সবার কেমন যেন অবজ্ঞার দৃষ্টি আমার দিকে। কেউ কেউত বললেন আমাকে নিয়ে এত টেনশন না করতে, পাস করে বের হলে একটা চাকরির ব্যাবস্থা করে দিবে। আর আমাকে বললেন এবার যাতে অন্তত সিরিয়াস হয়ে পাসটা ঠিক সময়ে করি। এই বিষয়গুলো মোটেই আমার জন্য সহজ ছিলোনা, আমি আরো ডিপ্রেশনে ভুগতে থাকলাম। আব্বুর আত্নীয় স্বজনরা জায়গা জমির হিসাব নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়লেন, কে কি পাবে না পাবে তা নিয়ে পরিবারে হট্রোগোল। এর মধ্যে আমার দাদির ভাই আসলেন; আব্বুকে বললেন, আমি দেশে কখনো কোন কাজ করিনি বিদেশে গিয়ে কি করে খাবো!!! আগে দেশে কোন একটা এনজিও বা কিছুতে ২/৩ বছর যাতে জব করায় তারপর যাতে বাহিরে পাঠায়। তখন উনার ছেলে নৌকায় করে গ্রীসে এসেছিলেন আর এটাই উনার কাছে সফলতা। যদিও পরবর্তীতে উনাকে ইউরোপ থেকে ডিপোর্ট করা হয়। আমাকেও তিনি সেই ফর্মুলায় ইউরোপ পাঠানোর পরামর্শ দিলেন। আমার আব্বু সাফ জানিয়ে দিলেন প্রয়োজনে দেশেই রাখবে আমাকে তাও অবৈধ ভাবে ইউরোপ পাঠাবেনা আমাকে।

আব্বু সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফেরার পর উনার ভাইয়েরা আমাকে নিয়ে বসতে চাইলেন। আব্বু সেখানেও আমার পক্ষ নিলেন!!! বললেন, আমার ছেলে কি করবে না করবে সেটা আমি দেখবো তোমাদের ভাবতে হবেনা। আমার প্রাক্তন সেসময়ে অনেক সিম্প্যাথি দেখিয়েছেন, ইউরোপ যাওয়ার চিন্তা বাদ দিয়ে মিডেল ইস্টে গিয়ে পরিবারের হাল ধরতে অনুরোধ করলেন। সেসময়ে অন্বেষা অনেক সাপোর্টিভ ছিলো, একমাত্র তারই মনে হতো আমেরিকা হয়নিত কি হয়েছে!! অন্য কোন দেশে আমার ঠিকই হয়ে যাবে। অন্বেষা মেয়েটির তখন আমার প্রতি এতটা ভরসা ছিলো যা আমার নিজের প্রতিই নিজের ছিলোনা। আমার ইউনিভার্সিটির এসাইনমেন্টের প্রায় সবগুলোই অন্বেষার করে দেয়া। বড় আপুরা এবং আমার ক্লাসমেটরাত ভাবতেই লাগলো আমার সাথে হয়ত অন্বেষার প্রেম চলছে। কারো ভাবনায় কি আসে যায়!!! ও আমাকে আগের মতই সাপোর্ট দিয়ে গেছে। আর এর জন্য উনি ডিপার্টমেন্টের হেডের কাছে বকাও খেলেন কারন, কোন এক টিচার বুঝে ফেলেছিলেন আমার এসাইনমেন্টের লেখা আমার হাতের না। এবং বন্ধুদের মাধ্যমে জানতে পারেন আমার সব এসাইনমেন্টের প্রায় সবগুলোই অন্বেষার করে দেয়া। আর ডিপার্টমেন্টের বড় ভাইরাও বিষয়টি ভালো ভাবে নেননি!! কিন্তু তাতে কি আসে যায়??? ইশরাত আগের মতই হেল্প করতো আমাকে। আমরা একসাথে আগের মতই ফুচকা খেতাম আর ওর ছোটবোনকে দিয়ে এসাইনমেন্ট লেখানো শুরু করলাম।

ঢাকায় ফিরে এসে আবার সেই এজেন্সিতে গেলাম!!! মনির ভাই বললেন নিউজিল্যান্ডে ট্রাই করতে। নিউজিল্যান্ডে তখন কিছু ভিসা হচ্ছিলো!!! কিন্তু নিউজিল্যান্ডের জন্য আইইএলটিএস বাধ্যতামূলক। আবার আইইএলটিএস করার মত সময় নেই। তাই উনাকে অনুরোধ করলাম কোন ভাবে আইইএলটিএস ছাড়া এডমিশন নেয়া যায় কিনা দেখতে৷ তখন একটা স্কুলে মার্কেটিং ম্যানেজার হিসেবে জব করতো আমাদের কুমিল্লার এক বড় ভাই। মনির ভাইয়ের মতে উনি যদি আমাকে একটা ইন্টার্নাল টেস্টের ব্যাবস্থা করে দেয় তাহলে আমার আর আইইএলটিএস লাগবেনা। কিন্তু ঐ ভাই জানালেন এটা কোন ভাবেই সম্ভব না। এটা শুধু এক্সেপশনাল ক্ষেত্র বিশেষে এই পরীক্ষার ব্যাবস্থা করা হয়। কিন্তু, আমার এমন ভালো কোন রেজাল্ট ছিলোনা যে উনি আমার জন্য এক্সেপশনাল ব্যাবস্থা করবেন। আব্বুকে জানালাম বিষয়টি; উনি ঐ ভাইয়ের এলাকায় খোজ খবর নিলেন। এবং উনি উনার পলিটিকাল কানেকশন খুজে বের করে তার মাধ্যমে ঐ ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করলেন। যে কোন কারনেই হউক ঐ ভাই এত স্ট্রং রেফারেন্স অবজ্ঞা করতে পারেননি এবং আমার জন্য একটা ইন্টার্নাল টেস্টের ব্যাবস্থা করা হলো। এবং এবারো আমি ম্যাজিকাল কিছুর অপেক্ষায় রায়হান ভাইয়ের আইইএলটিএসএর ভিডিও দেখে এক সপ্তাহ প্র‍্যাক্টিস করলাম।


এই লেখাটি ভিবিন্ন পর্বে সাজানো হয়েছে। বাকি পর্ব গুলো এখান থেকে পড়তে পারেনঃ

প্রেম, বিয়ে এবং জীবন পর্ব ১ঃ Click This Link

প্রেম, বিয়ে এবং জীবন। (পর্ব - ২)ঃ Click This Link

প্রেম, বিয়ে এবং জীবন। (পর্ব -৩) ( স্বপ্নের পথে এগিয়ে চলা)ঃ Click This Link

মিশন আমেরিকার ব্যার্থতা এবং একটি শুভ সূচনা। প্রেম, বিয়ে এবং জীবন। (পর্ব -৪)ঃ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০২১ সকাল ৭:০৩
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×