somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নভোনীল (পর্ব-১২)

১৩ ই আগস্ট, ২০২০ দুপুর ২:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



নভোনীল-১

রিম সাবরিনা জাহান সরকারের অসম্পূর্ণ গল্প নভোনীল এর দ্বিতীয় পর্ব
নভোনীল (তৃতীয় পর্ব)

নভোনীল এর চতুর্থ পর্ব ....

নভোনীল-৫
নভোনীল-৬
নভোনীল পর্ব - ৭
নভোনীল পর্ব- ৮ ( রিম সাবরিনা জাহান সরকারের অসম্পূর্ণ গল্পের ধারাবাহিকতায়)
নভোনীল নবম পর্ব
নভোনীল পর্ব-১০ ( রিম সাবরিনা জাহান সরকারের অসম্পূর্ণ গল্পের ধারাবাহিকতায়)
নভোনীল-১১ (রিম সাবরিনা জাহান সরকারের অসম্পূর্ণ গল্পের ধারাবাহিকতায়)



শিক্ষা সফর থেকে ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায় নভো-মৃন্ময়ীদের। বিদায় নিয়ে যে যার বাসায় চলে যায়। নভো যখন বিদায় নিচ্ছে মৃন্ময়ী তখন বনলতা সেনের মত চোখ তুলে বলেছিল-

এত অল্প দিনের আয়ু কেন দিলে তুমি বিধি
লক্ষ যুগের আয়ু আমায় দিতে তুমি যদি
নভোকে আমার আমি বারেবার ভালবেসে যেতাম নিরবধি.......।

নভো তার বেত ফলের মত ম্লান দুটি চোখের দৃষ্টিতে সহজেই পড়ে নিয়েছিল মৃন্ময়ীর চোখের ভাষা। তারপর বড় করে চোখের পলক ফেলে হাত নেড়ে চলে গিয়েছিল আলো-আধারীর পথ ধরে সামনের দিকে।

বাসায় ফিরে দ্রুত জমা-কাপড় বদলে, হাত-মুখ ধুয়ে কিছুটা সতেজ হয়ে সামান্য খেয়ে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিয়েছে ঘুমের আশায়। কিন্তু ঘুমের পরিবর্তে মহাস্থানগড়ের স্মৃতিগুলোই যেন জোনাকির মত বার বার জ্বলে আর নিভে। রাতে শুয়ে শুয়ে এসব এলোমেলো ভাবনার অতলে ডুবে গিয়ে কখন যে ঘুমিয়ে গেছে তা বলতে পারবেনা। ঘুম ভাঙ্গে সকালে । আজ আর ইউনিভার্সিটিতে যাওয়ার ঝামেলা নেই। শুধু অপেক্ষা আর অপেক্ষা নভো কখন ছবিগুলো পাঠাবে।

বিকেলে ছাদে উঠে মরে যাওয়া রোদের আলোয় দূরের আকাশে একটা চিলকে উড়তে দেখে ভাবতে লাগলো জীবনানন্দ দাশের সোনালী ডানার চিল কি এটাই নাকি? ইস! যদি একটা কবিতা লিখা যেত তবে বেশ হতো।

সন্ধ্যার অন্ধকার নেমে আসে পৃথিবীতে। শিশিরের শব্দের মত চিল তার রোদের গন্ধ মুছে ফেলে ডানা থেকে। কিন্তু নভো যেন মৃন্ময়ীর হৃদয়ের গভীর থেকে গভীরে শিকড় গাড়ছে। পৃথিবীতে অপেক্ষার মত অসয্য কষ্ট মনে হয় আর কিছু নেই। তাইতো এই তরুনীর আজ কোন কিছুই ভাল লাগছেনা।

রাত তার রহস্যের চাঁদরে ধরনীকে মুড়ে দিচ্ছে আর ঠিক তখনই মৃন্ময়ীর কাছে খামটা এলো। কে দিয়ে গেল, কখন দিয়ে গেল এসব ভাবার তার সময় নেই। সে তার ও নভোর ছবি দেখতে অস্থির। নিজের রুমের দড়জা বন্ধ করে বিছায় উপুর হয়ে সিনেমার নায়িকার মত ভাব নিয়ে খাম এর মুখ ছিড়ে ফেললো। মুখে ফুটে উঠেছে লাজের আভা। কিন্তু পরক্ষণেই তা বদলে গিয়ে ক্রোধে হয়ে উঠলো ফণীনির মত। চোখ স্থির হয়ে আছে ছবিগুলোর দিকে, দৃষ্টিতে অবিশ্বাসের ছাপ স্পষ্ট।

নভোর সাথে ঘনিষ্ট হয়ে আছে দুটি তরুনী, তথচ সেখানে থাকার কথা চিল মৃন্ময়ীর। সব কিছু ভুলে নভোর জন্য মনে সৃষ্ট হতে লাগলো ঘৃণা। ঝড় উঠেছে, তুমুল ঝড়। বাহিরে দেখে সে ঝড় দেখার উপায় নেই।

এক সপ্তাহ হয়ে গেল নভো দেখা পাচ্ছেনা মৃন্ময়ীর। সে ভেবে পেলনা কি হয়েছে মৃন্ময়ীর। অসুস্থ, দুর্ঘটনা.....। না আর ভাবতে পারছেনা সে। অজানা একটা আতঙ্ক যেন গ্রাস করেছে নভোকে।

নভো গতকাল গিয়েছিল মৃন্ময়ীদের বাসায় কিন্তু বাসায় তখন কেউ ছিলনা। তাই বাধ্য হয়ে কিছু না জেনেই ফিরে আসতে হয়েছে তাকে। মনকে প্রবোধ দিয়েছে এই বলে যে-যা কছিুই ঘটুক মৃন্ময়ী ভাল আছে।

আজকে ইউনিভার্সিতে নভোর সাথে মৃন্ময়ীর দেখা হলো। নভো বেশ উৎফুল্ল নিয়ে মৃন্ময়ীকে জিজ্ঞেস করল- কোথায় ডুব দিয়েছ। ইউনিভার্সিতে নেই, বাসাতে নেই, ছিলে কোথায়?

মৃন্ময়ী নভোকে দেখে তেমন কোন প্রতিক্রিয়া দেখালো না। শুধু শুখনা মুখে বলল-আছি নিজের মধ্যে।

নভো-মুড অফ কেন ?

মৃন্ময়ী চুপ।

নভো-কথা বলছনা কেন ?

মৃন্ময়ী তবুও চুপ।

নভো-সমস্যাটা কি ?

মৃন্ময়ী যেন এবার ফেটে পড়লো রাগে। বললো-জানোনা সমস্যা কি? লজ্জা করে না বলতে। যাদের সাথে শ্রীকৃষ্ণ সেজে ছবি তুলেছ তারা কোথায়? তাদের নিয়েই থাকো। আমাকে খুঁজছ কেন।

নভো যেন আকাশ থেকে পড়ল। আমি ছবি উঠিয়েছি অন্য মেয়ের সাথে তাও আবার ঘনিষ্ট হয়ে এ কথা তুমি বলতে পারলে ?

মৃন্ময়ী-হ্যা পেরেছি। কারণ চোখে না দেখলে আমিও বিশ্বাস করতাম না। ছবিগুলোইতো প্রমাণ।

নভো-নিশ্চয় কোথাও ঘাপলা আছে ? কি হয়েছে আমি জানিনা। তবে ছবিগুলো দেখলে বুঝতে পারবো। আছে তোমার কাছে ওগুলো। বিশ্বাস করো ওখানেতো আমরা ছাড়া আর কারো ছবি তুলিনি। তাহলে....।

মৃন্ময়ী-না এখানে নেই। বাসায় আছে। কাল দেখাতে পারবো।

মৃন্ময়ীর রাগী ভাবটা একটু কমেছে। কোথাও কোন গোলমাল আছে এই বিষয়টা তার মাথায়ও এসেছে। বিকেলে দুজন মিলে ছবি নিয়ে বসলো।

নভো-ছবিগুলো কে দিয়েছে তোমাকে ?

মৃন্ময়ী-কেন, তোমারইতো পাঠানোর কথা ছিল, তুমি পাঠিয়েছো।


নভো-কথা থাকলেও আমি পাঠাইনি। কারণ নিজের হাতে দিবে বলে ব্যাগে রেখে দিয়েছি। এই বলে ব্যাগ থেকে প্যাকেট বের করে ছবি বের করলো।

মৃন্ময়ী-ছবি দেখে তার মনের আকাশে ঘনিয়ে আশা ঘন আধার মেঘ কেটে গেল। তাহলে ঐ মেয়ে দুটির সাথে তোমার ছবি এল কি করে।

নভো-আগের ছবিগুলো খুটিয়ে দেখে বলল-যেমন করে ছবিগুলো তোমার হাতে এলো , তেমনি আমাকে ওখানে জুড়ে দেওয়া হয়েছে।

মৃন্ময়ী-উফ! প্রতারণা। শ্রেফ প্রতারণা।

নভো-ঠিক তাই। দেখো ছবির নভোর মাথার সাথে শরীরের অসামঞ্জতা রয়েছে। শরীর এর গঠন অনেক মোটা আর গলা থেকে মাথাটার দিকটা অন্যরকম। বুঝাই যাচ্ছে আমার ছবি থেকে মাথা কেটে এডিট করে ওই ছেলের শরীরে বসিয়ে দিয়ে নভোকে জুড়ে দেওয়া হয়েছে।

মৃন্ময়ী- হ্যা তাইতো। সূক্ষভাবে না দেখলে বুঝাই যায়না, তুমি না অন্য কেউ।

নভো-কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কে করলো, কেন করলো এমন কাজ।

মৃন্ময়ী-আমাদের সম্পর্কের ফাটল ধরাতে করা হয়েছে এসব। অপরাধীকে সনাক্ত করতে হবে।

নভো- শুধু সনাক্ত নয়। অপরাধীকে বের করে মুখোমুখি হবো কেন এই ষড়যন্ত্র...........................




ছবি-নিজের তোলা।

অটঃ চলতে থাকুক এই ধারাবাহিকতা। গল্প শেষে যেন রেকর্ড হয় সামুতে বা বাংলাদেশে যে এক গল্পের লেখক(২০ জন) ।কম বেশি হতে পারে, গল্পের সমাপ্তির উপর নির্ভর করবে লেখক সংখ্যা।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০৯
২৩টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×