somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লালন ফকির ও কতিপয় গুরুতর প্রসঙ্গঃ পর্ব-৭ (শেষ পর্ব)

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সকাল ১০:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পর্বঃ ৭ (শেষ পর্ব)
অবশ্য লালনকে নিয়ে এত বিস্তর কথা বলার কোন প্রয়োজন ছিল না, যদি এই মহাপুরুষকে ঘিরে আমাদের ঈমান ও আকীদা বিধ্বংসী একটি কুৎসিত আবহ গড়ে না উঠতো। আমাদের দুর্ভাগ্য, যে ব্যক্তি মুসলমানই ছিলেন না, যার মধ্যে ইসলাম বলে আদৌ কোন পদার্থ ছিল না, যার গানের পারিভাষিক চোরাপথে শুধুই অশ্লীল ইঙ্গিতের ছড়াছড়ি, যার মরমিয়া পয়গাম হলো নিখাদ যৌনতার কথকতা, কি বদনসীব আমাদের, তাকেই আমরা কেউ কেউ আউলিয়া ভেবে বিভ্রান্ত হতে ভালবাসি। এবং এক্ষেত্রে সরকারী পৃষ্টপোষকতা, প্রচারমাধ্যমসমূহের অত্যুৎসাহী ভূমিকা এবং সর্বোপরি ইসলামের ঘোরতর দুশমন কিছু মতলবী অসম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষ বুদ্ধিজীবির মানবপ্রীতি আজ লালনকে এমন এক শীর্ষবাসী মহৎ-এ পরিনত করেছে, যা এমনকি বহু আলেমকেও কিয়ৎপরিমান বিভ্রান্ত করছে। এই বিভ্রান্তির শুরু, পূর্বে উল্লেখ করেছি, অনবধানবশত পাকিস্থান আমল থেকে, যে কারণে জানাযা ও দাফন কাফন বিহীন অবস্থায় লালনের দেহটি যে গহ্বরে রতি, তার উপরে সযত্নে নির্মিত হয়েছে হযরত নিযামুদ্দিন আউলিয়া (রহঃ) এর পবিত্র মাযার-এর অনুকরণে এক বিশাল মনোরম স্মৃতিসৌধ। সমাধি না বলে গহ্বর বলছি এই কারণে যে, লালনের মৃত্যুর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই প্রকাশিত হিতকরী পত্রিকার একটি সংখ্যায় এই প্রামাণ্য তথ্য বর্তমান যে, তার কোন জানাযাও হয়নি, দাফন কাফনও হয় নি, একটু শুধু হরিনাম কীর্তন হয়েছিল। এবং এই জনশ্রুতিও বর্তমান যে, লালনকে গহ্বরস্থ করা হয় উত্তর দক্ষিণ নয়, পর্ব-পশ্চিমে লম্বাভাবে। হিতকরীর এই সংখ্যাটি যেহেতু লালনের মৃত্যু বৎসরেই প্রকাশিত, উল্লেখিত অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার যে বর্ণনা তার বিন্দুমাত্র তথ্য বিভ্রাট নেই। বিশিষ্ট লালন বিশেষ্ণ বসন্ত রঞ্জন পালও বলেন, এটা সর্বৈব সত্য। কিন্তু দুঃখজনক যে এই বিষয়টি ডঃ আবুল আহসান চৌধুরী ছাড়া আর কেউ আমাদের গোচরীভূত করেননি। কেন করেন নি তার দুটি জবাব হতে পারে। হয় আমাদের গবেষকগণ হিতকরীর এই প্রামাণ্য তথ্যটি সম্পর্কে আদৌ ওয়াকিবহাল নয়, না হলে লালনকে আউলিয়ারূপে প্রতিষ্ঠিত করার মতলবী উদ্দেশ্য নিয়ে তারা সত্যকে গোপন করতে চান।

কিন্তু এই ভূমিকা বড় নিন্দার্হ, বড় অমার্জনীয়। কারণ মহৎ কি কুৎসিত যে উদ্দেশ্যই থাক, কিন্তু মানুুষের অসাধুতার কারণে বহু মুসলমানের ঈমানে ও তওহীদি চেতনায় শিরক ও বিদআতের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। বিষয়টি মুসলিম উম্মাহর জন্য গুরুতর।

বলা প্রয়োজন, আমার এই রচনার দ্বিতীয় কোন ল্য নেই। আমি শুধু বাংলাভাষী মুসলিম মিল্লাতকে এক গুরুতর ঈমানী বিপর্যয় থেকে সতর্ক করতে চেয়েছি। আশা করি, কেউ কেউ নিশ্চয়ই আল্লাহপাকের অনুগ্রহে এই বিভ্রান্তি ও গর্হিত ফিতনা থেকে সতর্ক হবেন। কিন্তু এতদসঙ্গে এই আশংকাও করি যে, যারা ইসলামের তি সাধনে তৎপর, মুসলমানকে যারা শিরক ও বিদআত এবং অশ্লীলতায় নিমজ্জিত করতে প্রতিশ্র“তিবদ্ধ, আমার এই আলোচানার কারণে লালনকে তারা একটি মোম অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে দ্বিগুণ উৎসাহে তৎপর হয়ে না উঠে। এই ধরণের অশ্লীলতাপ্রেমী লালন বিশ্বাসীদের জন্য আল্লাহপাক পৃথিবীতে কি শাস্তি উপহার দেবেন বা আদৌ দেবেন কিনা জানি না; তবে এটা জানি ইসলাম যেহেতু আল্লাহর একমাত্র মনোনীত ধর্ম , বিদআত ও অংশীবাদ যেহেতু ইসলামের এক নম্বরের দুশমন, সুতরাং এই লালনে নিমজ্জিত ইসলামদ্রোহীদের আপ্যায়নের জন্য আখেরাতে অপো করছে এক ভয়াবহ অগ্নিকুন্ড, জাহান্নাম। তবে ঈষৎ সান্তনার কথা, তাদের সঙ্গে ঘণিষ্ঠ সাথী হিসেবে ত্রিবেণীতীর্থ মানবদেহরূপ আদি মক্কার মহান সাধক লালন সাঁইও থাকবেন।

আলোচনা অধিক দীর্ঘায়িত করার আবশ্যকতা নেই। কারণ আমি যা বলতে চেয়েছি বা চাই, তা নিশ্চয়ই পাঠকের কাছে অল্পাধিক পৌছাতে সম হয়েছি। আমি চাই, আখেরাতের প্রশ্নে, মুসলমানের সঠিক অভিজ্ঞান রার প্রশ্নে, আমরা যেন লালনের কুহক ও কুহেলিকা উপো করতে পারি। “নিশ্চয়ই শয়তানের চক্রান্ত অত্যন্ত দুর্বল” (সুরা নিসা)। যারা বলেন লালন বস্তুত অশ্লীলতার প্রবক্তা নয়; যারা বলেন লালনের যৌনতা একট্ িবিষয় বটে, কিন্তু লালন যৌনতাকে উত্তীর্ণ করেছেন এক উচ্চ মার্গীয় নান্দনিক আধ্যাতিœকতায়, দেহকে পরিণত করেছেন এক দেহাতীত সৌরভে; এবং তিনি নিজেও ক্রমশ রূপান্তরিত হয়েছেন এক মরমিয়া সিদ্ধ পুরুষে, তাদের কথা একেবারে ফেলে দেয়ার মতো নয়। হয়তো তাই। কিন্তু আমার মনে পড়ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি কৌতুকজনক কেসের কথা। প্রকাশ্য স্থানে আপত্তিকর অবস্থায় এক যুবক-যুবতী পুলিশের হাতে পাবলিক নুইসেন্স এক্টে গ্রেপ্তার হয়েছিল। তাদেরকে যখন আদালতে হাজির করা হলো, যুবতীটি কিছুমাত্র লজ্জিত কি বিচলিত না হয়ে সপ্রতিভ কন্ঠে বললো, আমি দেহ বিক্রয় করি নি, আমি বিক্রয় করেছি জন্মনিয়ন্ত্রক কনডম, তবে তা Practical Demonestration সহ।

লালনও এই মহিলার মতো; তারও কথা, এটা যৌনতা নয়, এ এক গুপ্ত আধ্যাত্নিক জগত। তবে এই জগতে প্রবেশদ্বার হলো নরনারীর মিথুনক্রিয়া; এবং অবুঝ অরসিকেরা যাকে নিন্দা করে, সেটা হলো মূলতত্ব ও সাধন জগতের Practical Demonestration, আফসোস! আত্নঘাতী কিছু মুসলমান এই নোংরা আধ্যাত্নিকতার উপরও আস্থা স্থাপন করে। অধঃপাতের একটা সীমা আছে; কষ্ট হয়, মুসলমান আর কত অধঃপতিত হবে?

শেষ
আগরে পর্ব গুলোঃপর্বঃ ১ পর্বঃ ২ পর্বঃ ৩ পর্বঃ ৪ পর্বঃ ৫ পর্বঃ ৬
১৪টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×