দেখতে দেখতে এক যুগ পার হয়ে গেল। ২০০৩ সালের ২৫শে ডিসেম্বর পশ্চিম আফ্রিকার বেনিনে বিমান দুর্ঘটনায় জাতিসংঘে কর্মরত ১৫জন সেনাসদস্য শহীদ হন। সেই সেনা সদস্যদের প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা। আশা করি তাদের পরিবার ভালোই আছেন।
২০০৩ সালের সালের ৩১শে ডিসেম্বর তৎকালীন সরকার দিনটিকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করেন। কবি খলিল মাহমুদ সেই ১৫জনকে নিয়ে এ ক্ষুদ্র ভূ-খণ্ডের প্রতীক শিরোনামে একটি কবিতা লিখেন জা নিম্নরূপ-----------------
কিভাবে এ মর্মন্তুদ ঘটনার কথা লিখি?
এমন তরতাজা আত্মদান--ওহ, কী সাংঘাতিক আকস্মিক ৷
স্ত্রী-পুত্র-কন্যা-বৃদ্ধ বাবা ও মা-প্রাণের সুহৃদগণের পানে
কী ভীষণ আবেগে ধাবমান-- অথচ কী সাংঘাতিক আকস্মিক।
সিয়েরা লিওন--লাইবেরিয়া--বেনিন
২৫ ডিসেম্বর ২০০৩ কি মর্মন্তুদ ইতিহাস হয়ে গেলো---
পনরটি তরতাজা প্রাণ ঢাকার বিমান বন্দরে লাশ হয়ে নামে---
লেঃ কর্নেল আরেফিন-- সেই কবে-- তখন তিনি মেজর--
কী টগবেগে--- এস়আই় এন্ড টি সিলেট
জুনিয়র স্টাফ কোর্স--সেই কতোদিন আগে --
অথচ মনে হয়-- এই তো সেদিন তাঁকে দেখেছি---
শীতের তীব্র রাতে ক্যাম্পময় ঘুরছেন। শোকস্তব্ধ তাঁর অজস্র প্রশিক্ষণার্থিরা আজ
ওহ কী মর্মন্তুদ ঘটনাই না ঘটে গেল।
রওনক-- মোস্তাফিজ--রকিব-- একের পর এক পনরটি ছবি ও নাম
টেলিভিশনের পর্দায় ভেসে উঠে--
স্ত্রী--পুত্র--কন্যা-- বৃদ্ধ বাবা ও মা-- প্রাণের সুহৃদগণ---
সেই ছবি কেউ দেখেন--- কেউ বা নাম শুনেই হারান সংজ্ঞা
কী সাংঘাতিক আকস্মিক।
আব্দুর রহিম--- মোশাররফ--শফিকুল ইসলাম-- পনরটি
তরতাজা নাম-- এখন শুধুই নাম-- লাশের কফিনে
নামগুলো কী উজ্জল-- অথচ কী নিদারুণ করুণতা
৩১ ডিসেম্বর ২০০৩- সারাটা দেশ-- গোটা জাতি মোহ্যমান--
কী সাংঘাতিক আকস্মিক
পনরটি তাজা প্রাণ লাশ হয়ে বিমান বন্দরে নামে
এই মর্মন্তুদ ঘটনার কথা কি লিখা যায় ?
অথচ দেখুন-- প্রতিদিন পত্রিকার পাতা ভরে কী করুণ খবর বের হয়--
রফিক আট মাসের শিশুকে দেখার জন্য সে উন্মাদ হয়েছিল--
সেই শিশু কখনো হাসে-- আপন মনে কাঁদে-- অকারণে, চারদিকে
ফ্যালফ্যাল করে তাকায়-- সে শুধু মানুষ দেখে বাড়িময়--
সেই মানুষ কাঁদে-- অশ্রু মোছে--
শিশু তা বোঝে না--
বাবার কবরে সে গড়াগড়ি যায়,
বাবার হাতের ছোঁয়া আর সে পাবে না কোনদিন ।
পত্রিকায় পড়ি আর অশ্রু মুছি--- এ্যালবামের পাতা খুলে নাড়ে
শিশু ছেলে আতিফ--- শোকার্ত স্বজনেরা অশ্রু মোছেন
আতিফ কিছুই বোঝে না-- একের পর এক পৃষ্ঠা উলঠে
ছবি দেখায়, বলে এ আমার আব্বু।
মেজর বাতেন-- আতিফের আব্বু-- এখন শুধুই ছবি---
সারাটা জীবন আতিফ শুধু এ ছবিকেই দেখবে-- নাড়বে-- অঝোরে কাঁদবে।
তার ছবির আব্বু আর কোনদিনই ফিরে আসবে না।
ইমতিয়াজ বলেছিলেন, তোমার জন্য দু ট্রাংক ভর্তি কতো কী আসছে---
কিচ্ছু ভেবো না লক্ষ্মীটি---এয়ারপোর্টে কিন্তু বেশি করে লোক পাঠাবে--
দু ট্রাঙ্ক ভর্তি কতো কী।
চৈতির জন্য এক প্লেন ভর্তি কষ্ট এসেছে--
এক পৃথিবীভর্তি সোনা-রত্ন-জহরত-কী তুচ্ছ
চৈতির এক প্লেনভর্তি কষ্টকে কিছুই মুছে দিতে পারে না।
কাঞ্চন বেগম কাঁদেন-- আরিফের মা-- উদ্ভ্রান্ত গ্রামবাসী
মুখে মুখে একটাই প্রশ্ন-- আমাদের সোনার টুকরা ছেলেটি
ওহ কী সাংঘাতিক আকস্মিক।
মাবুদ--ফরিদ--জাহিদ--আলাউদ্দিন-৩১ডিসেম্বর২০০৩
পনরটি তরতাজা শান্তির পায়রা লাশ হয়ে বিমান বন্দরে নামে
সারাটা দেশ--গোটা জাতি মোহ্যমান-- শোকার্ত রাষ্ট্রীয় স্যালুট
পনরটি লাশ--
দেখুন-- সবাই দেখুন--ওরা লাশ নয়--সমগ্র জাতির অন্তর
কী স্থির অভিন্ন আবেগে কাঁপে-- ওরা লাশ নয়--
ওরা পনর জন বীর-- তামাম বিশ্বে
এ ক্ষুদ্র ভূ-খণ্ডের গৌরব-প্রতীক হয়ে জাগে।।
ভাল থাকুক তাদের পরিবার, যেন বৃথা না যায় তাদের বলিদান।।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:১২