somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এ ক্ষুদ্র ভু -খণ্ডের প্রতীক ( ২০০৩ সালে বেনিনে দুর্ঘটনায় বাংলাদেশের ১৫ জন শান্তিরক্ষী শহীদ হন)

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


উপরের ছবিটি প্রতীকী অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে ।

আজ থেকে প্রায় ১৫ বছর আগের ঘটনা । তাদের পরিবার ছাড়া তাদের কেউ স্মরণ করছে কিনা জানা নেই । পত্রিকাতে এই সংক্রান্ত কোন নিউজ দেখে নি অন্তত সমকাল পত্রিকায় দেখি নি । কেউ যদি দেখে থাকেন বলবেন ।
পশ্চিম আফ্রিকার বেনিনে ২০০৩ সালের ২৫ শে ডিসেম্বর বাংলাদেশের ১৫জন সেনাসদস্য মারা যান । সরকার ৩১শে ডিসেম্বর লাশ আনার ঘোষণা দেয় এবং দিনটিকে জাতীয় শোকদিবস হিসেবে ঘোষণা করে । ঐদিনই এক নিভৃতচারী কবি খলিল মাহমুদ , এ ক্ষুদ্র ভু-খণ্ডের প্রতীক শিরনামে একটি কবিতা রচনা করেন সেই ১৫জন শহীদ শান্তিরক্ষীদের উৎসর্গ করে। কবি খলিল মাহমুদ একজন কিং-মেকার ব্লগারও বটেন ।

আমি অনেক চেষ্টা করেও সেই ১৫ জনের ছবি যোগাড় করতে পারেনি । আমি যেহেতু একজন সিভিলিয়ান, তাই আমার পক্ষে উনাদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য যোগাড় করা সম্ভব হয়নি ।

জাতিসংঘে শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের প্রথম শহীদ হলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোঃ ফয়জুল করিম। তিনি ১৯৮৯ সালে সালে নামিবিয়ায় মারা যান । ( তথ্যসূত্র- উইকিপিডিয়া)


এ ক্ষুদ্র ভু-খণ্ডের প্রতীক
কবি- খলিল মাহমুদ
===============


কিভাবে এ মর্মন্তুদ ঘটনার কথা লিখি ?
এমন তরতাজা আত্মদান-- ওহ কী সাংঘাতিক আকস্মিক ।
স্ত্রী-পুত্র-কন্যা- বৃদ্ধ বাবা ও মা -- প্রাণের সুহৃদগণের পানে
কী ভীষণ আবেগে ধাবমান-- অথচ কী সাংঘাতিক আকস্মিক
সিয়েরা-লিওন- লাইবেরিয়া- বেনিন
২৫শে ডিসেম্বর ২০০৩ - কী মর্মন্তুদ ইতিহাস হয়ে গেলো
পনরটি তরতাজা প্রাণ ঢাকার বিমান বন্দরে লাশ হয়ে নামে --

লেঃ কর্নেল আরেফিন- সেই কবে- তখন তিনি মেজর-
কী টগবগে-এসআইএন্ডটি সিলেটে
জুনিয়র স্টাফ কোর্স- সেই কতোদিন আগে--
অথচ মনে হয়- এইতো সেদিন তাকে দেখেছি-
শীতের তীব্র রাতে ক্যাম্পময় ঘুরছেন । শোকস্তব্ধ তাঁর অজস্র প্রশিক্ষণার্থীরা আজ--
ওহ , কী মর্মন্তুদ ঘটনায় না ঘটে গেলো ।
রওনক-মোস্তাফিজ- রকিব- একের পর এক পনেরটি ছবি ও নাম
টেলিভিশনের পর্দায় ভেসে ওঠে
স্ত্রী-পুত্র-কন্যা-বৃদ্ধ বাবা ও মা - প্রাণের সুহৃদগণ -
সেই ছবি কেউ দেখেন- কেউ বা নাম শুনেই হারান সংজ্ঞা
কী সাংঘাতিক আকস্মিক

আব্দুর রহিম-মোশারফ- শফিকুল ইসলাম- পনরটি
তরতাজা নাম-এখন শুধুই নাম- লাশের কফিনে
নামগুলো কী উজ্জ্বল-অথচ কী নিদারুণ করুণতা --

৩১শে ডিসেম্বর ২০০৩- সারাটা দেশ-গোটা জাতি মোহ্যমান -
কী সাংঘাতিক আকস্মিক
পনেরটি তাজা প্রাণ লাশ হয়ে বিমান বন্দরে নামে।
এই মর্মন্তুদ ঘটনার কথা কি লিখা যায় ?
অথচ দেখুন-প্রতিদিন পত্রিকার পাতা ভরে কী করুণ খবর বের হয়-
রফিক-আট মাসের শিশুকে দেখার জন্য সে উন্মাদ হয়েছিল-
সেই শিশু কখনো হাসে- আপন মনে কাঁদে- অকারণে, চারদিকে
ফ্যালফ্যাল করে তাকায়- সে শুধু মানুষ দেখে বাড়িময়-
সেই মানুষ কাঁদে-অশ্রু মোছে -
শিশু তা বোঝে না-
বাবার কবরে সে গড়াগড়ি যায় ,
বাবার হাতের ছোঁয়া আর সে পাবে না কোনদিন ।

পত্রিকায় পড়ি আর অশ্রু মুছি- এ্যালবামের পাতা খুলে নাড়ে
শিশু ছেলে আতিফ-শোকার্ত স্বজনেরা অশ্রু মোছেন-
আতিফ কিছুই বোঝে না-একের পর এক পৃষ্ঠা উলটে
ছবি দেখায় বলে - এ আমার আব্বু
মেজর বাতেন-আতিফের আব্বু-এখন শুধুই ছবি-
সারাটা জীবন আতিফ শুধু এ ছবিকেই দেখবে-নাড়বে-অঝোরে কাঁদবে ।
তার ছবির আব্বু আর কোনদিন আসবে না ঘরে ফিরে ।

ইমতিয়াজ বলেছিলেন, তোমার জন্য দুট্রাংক ভর্তি কতো কী আসছে-
কিচ্ছু ভেবো না লক্ষ্মীটি- এয়ারপোর্টে কিন্তু বেশী করে লোক পাঠাবে
দুট্রাংক ভর্তি কতো কী
চৈতির জন্য এক প্লেনভর্তি কষ্ট এসেছে-
এক পৃথিবীতে সোনা-রত্ন-জহরত-কী তুচ্ছ
চৈতির এক প্লেনভর্তি কষ্টকে কিছুই মুছে দিতে পারে না ।

কাঞ্চন বেগম কাঁদেন-আরিফের মা- উদ্ভ্রান্ত গ্রামবাসী-
মুখে মুখে একটাই প্রশ্ন-আমাদের সোনার টুকরো ছেলেটি
ওহ , কী সাংঘাতিক আকস্মিক ।

মাবুদ-ফরিদ-জাহিদ-আলাউদ্দিন ৩১ শে ডিসেম্বর ২০০৩ এ
পনরটি তরতাজা শান্তির পায়রা লাশ হয়ে বিমান বন্দরে নামে
সারাটা দেশ-গোটা জাতি মোহ্যমান- শোকার্ত রাষ্ট্রীয় স্যালুট-
পনরটি লাশ-

দেখুন- সবাই দেখুন-ওরা লাশ নয়- সমগ্র জাতির অন্তর
কী স্থির অভিন্ন আবেগে কাঁপে- ওরা লাশ নয় -
ওরা পনর জন বীর- তামাম বিশ্বে
এ ক্ষুদ্র ভু-খণ্ডের গৌরব-প্রতীক হয়ে জাগে ।


ভাল থাকুক তাদের পরিবারের সদস্যরা । যার যায় সেই বুঝে, আমার যায় নি তাই আমি তাদের কষ্ট বুঝি না ।

সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৪১
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার ভোট আমি দেব ঘরে বসে মোবাইলে দেবো- একটি ইউটোপিয়ান প্রস্তাবনা

লিখেছেন বিদ্রোহী ভৃগু, ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ৮:২৭

আমার ভোট আমি দেব
ঘরে বসে মোবাইলে দেবো- শ্লোগানে মূখর হোক তবে এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

প্রযুক্তিতে হোক অবিশ্বাসের নাশ: সামাধান-ভোট এপস: “দ্বাদশ নির্বাচন” বা “ইলেকশন বিডি২০২৪



আসন্ন দ্বাদশ জাতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাকে কমেন্ট ব্যান করা হয়েছে!

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:২০



ব্লগার শেরজা তপন আজ একটা পোষ্ট দিয়েছেন।
ক্যাচাল পোষ্ট। উনার কাছে আমি এরকম পোস্ট আশা করি নাই। আমি মনে মনে ভেবেছিলাম- শেরজা সাহেব একজন বিচক্ষণ ব্লগার।যাইহোক, প্রচুর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য জ্ঞান : গাঁজা !!! একবার খেয়ে দেখবেন নাকি ?

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ১২:০১

গাঁজা খাওয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট টার্মগুলো বেশ কাব্যময় !!

১) গাঁজা তৈরির আগে যে কাঠের তক্তায় গাঁজা কাটা হয় তার নাম হচ্ছে 'প্রেমতক্তি'৷ যে ছুরি বা কাটনি দিয়ে গাঁজা কাটা হয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাকে দেখছো কেমন || চিত্রা সিং-এর গাওয়া একটা চমৎকার গান

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ১:৫৬

আমাকে দেখছ কেমন
আমি কি তেমনি আছি
নাকি অনেক বদলে গেছি
আমাকে দেখছ কেমন

মনে কি তোমার পড়ে
মনে কি তোমার পড়ে
আমাকে প্রথম দেখে
হৃদয় হারালে যেদিন
কাঁপা হাতে চিঠি লিখে
দুজনে সেদিন থেকে
সকল দ্বিধাকে রেখে
হলাম যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পছন্দের বিষয়ে পড়ালেখা করা সম্ভব হয়নি

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৪:৫৬


কথা উঠল পড়ালেখা নিয়ে। ছাত্র কেমন ছিলাম, সে প্রসঙ্গও উঠে এল। কথা যেহেতেু উঠলই, খুলে বলা যাক। আমার পড়ালেখা এক প্রত্যন্ত গ্রামে। সেখানে মানসম্মত পড়ালেখা বলতে যা বোঝায়, তা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×