উপরের ছবিটি প্রতীকী অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে ।
আজ থেকে প্রায় ১৫ বছর আগের ঘটনা । তাদের পরিবার ছাড়া তাদের কেউ স্মরণ করছে কিনা জানা নেই । পত্রিকাতে এই সংক্রান্ত কোন নিউজ দেখে নি অন্তত সমকাল পত্রিকায় দেখি নি । কেউ যদি দেখে থাকেন বলবেন ।
পশ্চিম আফ্রিকার বেনিনে ২০০৩ সালের ২৫ শে ডিসেম্বর বাংলাদেশের ১৫জন সেনাসদস্য মারা যান । সরকার ৩১শে ডিসেম্বর লাশ আনার ঘোষণা দেয় এবং দিনটিকে জাতীয় শোকদিবস হিসেবে ঘোষণা করে । ঐদিনই এক নিভৃতচারী কবি খলিল মাহমুদ , এ ক্ষুদ্র ভু-খণ্ডের প্রতীক শিরনামে একটি কবিতা রচনা করেন সেই ১৫জন শহীদ শান্তিরক্ষীদের উৎসর্গ করে। কবি খলিল মাহমুদ একজন কিং-মেকার ব্লগারও বটেন ।
আমি অনেক চেষ্টা করেও সেই ১৫ জনের ছবি যোগাড় করতে পারেনি । আমি যেহেতু একজন সিভিলিয়ান, তাই আমার পক্ষে উনাদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য যোগাড় করা সম্ভব হয়নি ।
জাতিসংঘে শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের প্রথম শহীদ হলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোঃ ফয়জুল করিম। তিনি ১৯৮৯ সালে সালে নামিবিয়ায় মারা যান । ( তথ্যসূত্র- উইকিপিডিয়া)
এ ক্ষুদ্র ভু-খণ্ডের প্রতীক
কবি- খলিল মাহমুদ
===============
কিভাবে এ মর্মন্তুদ ঘটনার কথা লিখি ?
এমন তরতাজা আত্মদান-- ওহ কী সাংঘাতিক আকস্মিক ।
স্ত্রী-পুত্র-কন্যা- বৃদ্ধ বাবা ও মা -- প্রাণের সুহৃদগণের পানে
কী ভীষণ আবেগে ধাবমান-- অথচ কী সাংঘাতিক আকস্মিক
সিয়েরা-লিওন- লাইবেরিয়া- বেনিন
২৫শে ডিসেম্বর ২০০৩ - কী মর্মন্তুদ ইতিহাস হয়ে গেলো
পনরটি তরতাজা প্রাণ ঢাকার বিমান বন্দরে লাশ হয়ে নামে --
লেঃ কর্নেল আরেফিন- সেই কবে- তখন তিনি মেজর-
কী টগবগে-এসআইএন্ডটি সিলেটে
জুনিয়র স্টাফ কোর্স- সেই কতোদিন আগে--
অথচ মনে হয়- এইতো সেদিন তাকে দেখেছি-
শীতের তীব্র রাতে ক্যাম্পময় ঘুরছেন । শোকস্তব্ধ তাঁর অজস্র প্রশিক্ষণার্থীরা আজ--
ওহ , কী মর্মন্তুদ ঘটনায় না ঘটে গেলো ।
রওনক-মোস্তাফিজ- রকিব- একের পর এক পনেরটি ছবি ও নাম
টেলিভিশনের পর্দায় ভেসে ওঠে
স্ত্রী-পুত্র-কন্যা-বৃদ্ধ বাবা ও মা - প্রাণের সুহৃদগণ -
সেই ছবি কেউ দেখেন- কেউ বা নাম শুনেই হারান সংজ্ঞা
কী সাংঘাতিক আকস্মিক
আব্দুর রহিম-মোশারফ- শফিকুল ইসলাম- পনরটি
তরতাজা নাম-এখন শুধুই নাম- লাশের কফিনে
নামগুলো কী উজ্জ্বল-অথচ কী নিদারুণ করুণতা --
৩১শে ডিসেম্বর ২০০৩- সারাটা দেশ-গোটা জাতি মোহ্যমান -
কী সাংঘাতিক আকস্মিক
পনেরটি তাজা প্রাণ লাশ হয়ে বিমান বন্দরে নামে।
এই মর্মন্তুদ ঘটনার কথা কি লিখা যায় ?
অথচ দেখুন-প্রতিদিন পত্রিকার পাতা ভরে কী করুণ খবর বের হয়-
রফিক-আট মাসের শিশুকে দেখার জন্য সে উন্মাদ হয়েছিল-
সেই শিশু কখনো হাসে- আপন মনে কাঁদে- অকারণে, চারদিকে
ফ্যালফ্যাল করে তাকায়- সে শুধু মানুষ দেখে বাড়িময়-
সেই মানুষ কাঁদে-অশ্রু মোছে -
শিশু তা বোঝে না-
বাবার কবরে সে গড়াগড়ি যায় ,
বাবার হাতের ছোঁয়া আর সে পাবে না কোনদিন ।
পত্রিকায় পড়ি আর অশ্রু মুছি- এ্যালবামের পাতা খুলে নাড়ে
শিশু ছেলে আতিফ-শোকার্ত স্বজনেরা অশ্রু মোছেন-
আতিফ কিছুই বোঝে না-একের পর এক পৃষ্ঠা উলটে
ছবি দেখায় বলে - এ আমার আব্বু
মেজর বাতেন-আতিফের আব্বু-এখন শুধুই ছবি-
সারাটা জীবন আতিফ শুধু এ ছবিকেই দেখবে-নাড়বে-অঝোরে কাঁদবে ।
তার ছবির আব্বু আর কোনদিন আসবে না ঘরে ফিরে ।
ইমতিয়াজ বলেছিলেন, তোমার জন্য দুট্রাংক ভর্তি কতো কী আসছে-
কিচ্ছু ভেবো না লক্ষ্মীটি- এয়ারপোর্টে কিন্তু বেশী করে লোক পাঠাবে
দুট্রাংক ভর্তি কতো কী
চৈতির জন্য এক প্লেনভর্তি কষ্ট এসেছে-
এক পৃথিবীতে সোনা-রত্ন-জহরত-কী তুচ্ছ
চৈতির এক প্লেনভর্তি কষ্টকে কিছুই মুছে দিতে পারে না ।
কাঞ্চন বেগম কাঁদেন-আরিফের মা- উদ্ভ্রান্ত গ্রামবাসী-
মুখে মুখে একটাই প্রশ্ন-আমাদের সোনার টুকরো ছেলেটি
ওহ , কী সাংঘাতিক আকস্মিক ।
মাবুদ-ফরিদ-জাহিদ-আলাউদ্দিন ৩১ শে ডিসেম্বর ২০০৩ এ
পনরটি তরতাজা শান্তির পায়রা লাশ হয়ে বিমান বন্দরে নামে
সারাটা দেশ-গোটা জাতি মোহ্যমান- শোকার্ত রাষ্ট্রীয় স্যালুট-
পনরটি লাশ-
দেখুন- সবাই দেখুন-ওরা লাশ নয়- সমগ্র জাতির অন্তর
কী স্থির অভিন্ন আবেগে কাঁপে- ওরা লাশ নয় -
ওরা পনর জন বীর- তামাম বিশ্বে
এ ক্ষুদ্র ভু-খণ্ডের গৌরব-প্রতীক হয়ে জাগে ।
ভাল থাকুক তাদের পরিবারের সদস্যরা । যার যায় সেই বুঝে, আমার যায় নি তাই আমি তাদের কষ্ট বুঝি না ।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৪১