২০১৪ সালের কোন একসময় সামুর এক ব্লগারের সাথে সামুতে ব্লগিং এর সূত্র ধরে ফেসবুকে যুক্ত ছিলাম। তিনি তখন পড়াশোনার জন্য দেশের বাইরে থাকতেন। কয়েকদিন বেশ ভালোই মেসেজে কথাবার্তা হয়েছিল। আমি তাকে জানিয়েছিলাম, আমি ইন্টার পাশের পর আর পড়ালেখা করি নাই । তিনি সেটা বিশ্বাসও করেছিলেন। যেকোন ভাবে হোক আমি তার আসল আইডি’র খোঁজ পেয়েছিলাম। পরে একসময় তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় । ২০১৫ সালের পর থেকে তিনি তো আর ব্লগেই আসেন না। সব লেখাও ব্লগ থেকে সরিয়ে ফেলেন।
করোনার সময়ে হঠাৎ করে তার কথা মনে পড়েছিল । পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম, তিনি পরিবার নিয়ে ভালোই আছেন । এখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। ইচ্ছে আছে একদিন তার সাথে গিয়ে দেখা করে চমকে দিব ।
রবীন্দ্রনাথ তাঁর আত্মপরিচয় প্রবন্ধে লিখেছেন,
“মানুষের প্রকৃতির মধ্যে সবই যদি চিরন্তন হয়, কিছুই যদি তাহার নিজে গড়িয়া লইবার না থাকে, আপনার মধ্যে কোথাও যদি সে আপনার ইচ্ছা খাটাইবার জায়গা না পায় তবে তো সে মাটির ঢেলা। আবার যদি তাহার অতীতকালের কোনো একটা চিরন্তন ধারা না থাকে তাহার সমস্তই যদি আকস্মিক হয় কিংবা নিজের ইচ্ছা অনুসারেই আগাগোড়া আপনাকে যদি তাহার রচনা করিতে হয় তবে সে একটা পাগলামি, একটা আকাশকুসুম।
মানুষের এই প্রকৃতি অনুসারেই মানুষের পরিচয়। তাহার খানিকটা পাকা খানিকটা কাঁচা, তাহার এক জায়গায় ইচ্ছা খাটে না আর - এক জায়গায় ইচ্ছারই সৃজনশালা। মানুষের সমস্ত পরিচয়ই যদি পাকা হয় অথবা তাহার সমস্তই যদি কাঁচা হয় তবে দুইই তাহার পক্ষে বিপদ।“
মানুষের পরিচয় কিসে শিক্ষা না কর্মে নাকি উভয়ের যোগফল । মানুষের মধ্য যদি আত্মবিশ্বাস থাকে , মানুষ যদি ভুল না করে , নিজের ভুল স্বীকার করার সাহসিকতা থাকে তবে সেই মানুষের পক্ষে নিজের একটা পরিচয় সৃষ্টি করা অসম্ভব নয় কখনো।
রবীন্দ্রনাথ তাঁর কৃপণতা প্রবন্ধে লিখেছেন,
মানুষের শক্তির মধ্যে একটা বাড়তির ভাগ আছে। সেই শক্তি মানুষের নিজের প্রয়োজনের চেয়ে বেশি। জন্তুর শক্তি পরিমিত বলিয়াই তারা কিছু সৃষ্টি করে না, মানুষের শক্তি পরিমিতের বেশি বলিয়াই তারা সেই বাড়তির ভাগ লইয়া আপনার সভ্যতা সৃষ্টি করিতে থাকে।
কয়েক দিন আগে আমাকে একজন জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি তো জীবনে অনেক কিছু করার চেষ্টা করলা কিন্তু কিছুই তো করতে পারলা না। তুমি যে বিজনেসে ফেল মেরেছ অন্যজন তো সেটা দিব্যি করে যাচ্ছে। পড়ালেখাও ঠিকমত করতে পারলা না। খালি বাপের টাকা নষ্ট করতেছ। তোমার পরিবারের অন্য সদস্যরা যার যার পজিশনে অত্যন্ত সফল। তোমার বাপ মারা গেলে তো তোমার অবস্থা শোচনীয় হয়ে যাবে। আমার ধারণা, তোমার বদমেজাজ আর জেদের কারণে তোমার এই অবস্থা।
আমি তারে বললাম, সবাই পারতেছে আমি পারতেছি না, আমাকে দিয়ে কখনো কিছু হবে না । এসব ভেবে তো আমি আমার জীবন শেষ করে দিতে পারি না। আমার ভাবনা আমারেই ভাবতে দেন। আমার জায়গায় আপনি থাকলে অনেক আগেই আত্মহত্যা করে বসতেন। আমার ভবিষ্যৎ আল্লাহ্র রহমতে অনেক ভাল।
লেখা শেষ করছি ,প্রয়াত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাজী আবদুল মান্নান এর একটি লেখা থেকে উদ্ধৃতি থেকে । তিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রথম উপন্যাস ‘রাইফেল, রোটি , আওরাত’ উপন্যাসের ভূমিকায় লিখেছিলেন,
‘’ মানুষ এবং পশুর মধ্যে বড় একটা পার্থক্য হচ্ছে, পশু একমাত্র বর্তমানকেই দেখে, মানুষ দেখে অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতকে এক সঙ্গে বিবেচনা করে। যখন কোন ব্যক্তি এবং সমাজ একমাত্র বর্তমানের মধ্যেই আবর্তিত হতে থাকে তখন সর্বনাশের ইশারা প্রকট হতে থাকে।‘’
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৩০