আসুন... একটি পরিস্থিতি বলি আপনাদের, তাহলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে।
ধরুন... পাশাপাশি দুইটা বাড়ি, দুই প্রতিবেশীর দুই সন্তান। একজন SSC পরীক্ষায় গোল্ডেন A+ পেয়েছে আর অপরজন কওমি মাদ্রাসার পরীক্ষায় গোল্ডেন A+ পেয়েছে। এখন দুই প্রতিবেশীই পাড়ায় মিষ্টি খাওয়াইতে গিয়ে দেখা। এখন SSC পরীক্ষার্থীর মা বলছে "আপা আমার ছেলে তো পাশ করেছে... এই নেন মিষ্টি খান।"
কিন্তু কওমি পরীক্ষার্থীর মা বলছে "উহু... না না ঐ মিষ্টি তো খাওয়া যাবে না। আপনার ছেলেতো জেনারেল লাইনে পড়ে পাশ করেছে। সে বিজ্ঞান (বিবর্তন), ইংরেজি তারপর কমার্সের ছাত্র বলে ব্যাংক, সুদ... এইসব পড়ে পাশ করেছে। ঐ মিষ্টি তো হারাম। তাই আপনার মিষ্টি আমি খাবোনা। তবে... আপনি আমার মিষ্টি খাবেন কারণ আমার ছেলে কওমি মাদ্রাসা থেকে ইসলাম, কোরান, হাদিস এইসব পড়ে পাশ করেছে। এগুলো সোয়াবের কাজ। তাই... আমি আপনার ছেলের পাশের মিষ্টি না খেলেও আপনি আমার ছেলের পাশের মিষ্টি খাবেন।"
এখন বলেন তো... কার কোন মিষ্টি খাওয়া উচিৎ?
লজিক্যালি বলতে... বাংলাদেশের নারী ফুটবলাররা আর সালেহ আহমদ তাকরীম দুজনেই বাংলাদেশের নাম বাইরের বিশ্বে তুলে ধরেছে। হিসাব মতে আমাদের তাদের দুজনের সাফল্যই উজ্জাপন করার উচিৎ। কিন্তু... এই দুই পক্ষের মধ্যে একটি পক্ষের সমর্থকদের অপর পক্ষের প্রতি ব্যাপক ঘৃণা ও বিদ্বেষ মনের মধ্যে। আশাকরি বুঝেছেন কোন পক্ষের কথা বলছি। জি হ্যাঁ... আমি হুজুরদের কথাই বলছি।
নারী ফুটবলাররাও আমাদের সন্তান। তারা আমাদের দেশের নাম উজ্জ্বল করেছে। অথচ এই হুজুরের দল এই নারী বিজয়ীদের নামে ফতোয়া দিচ্ছে, তাদের হয়রানি করছে, কুৎসা রটাচ্ছে, এমনকি তাদের গ্রামের বাড়িতেও হামলা করছে। ফেসবুকে দেখলাম একজন নারী ফুটবলারে গ্রামের বাড়ীতে হুজুররা হামলা দিয়েছে এবং তার মা, বাবা সহ তাদের পরিবার পরিজন কে হুমকি ধমকি দিয়েছে এবং বলেছে তাদের মেয়ে সহ তারা সবাই দোযখে যাবে। এভাবে তারা এই নারী ফুটবলারদের হেনস্থা করছে। অন্যদিকে এই হুজুররাই আবার চাচ্ছে আমরা যেনো আমাদের আরেক সন্তান সালেহ আহমদ তাকরীম কে নিয়ে উল্লাস করি।
দেশের সন্তান হিসেবে... এই দুই পক্ষের সকলেরই ভালোবাসা ও শুভকামনা প্রাপ্য ছিলো। কিন্তু শুধু নারী বলে এই ফুটবলারদের কি হুজুরদের এই ঘৃণা ও বিদ্বেষ প্রাপ্য ছিলো? ধর্মীও দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে সত্যিই ঘৃণা ও বিদ্বেষ প্রাপ্য ছিলো, আর তা তারা পেয়েছেও।
শেষকথা... যেহেতু আমরা হাফিজ সালেহ আহমদ তাকরীম কে সমান ভালোবাসা ও মর্যাদা দিলেও হুজুররা কোনদিনো নারী ফুটবলারদের ভালোবাসা ও মর্যাদা দেবে না। তাই তাদের বলবোও না। তবে, আমি ব্যক্তিগত ভাবে নারী ফুটবলারদের এই মুহূর্তে বেশী সমর্থন জানাই কারণ তারা দেশে নারীদের উন্নয়নে ও তাদের চিন্তাধারা পরিবর্তনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। আমাদের দেশে মেয়েরা এখন শিক্ষার দিক দিয়ে আগের তুলনায় এগিয়ে আসলেও দেশের প্রতি অবদানে তাদের ভূমিকা খুবই কম। এই নারী ফুটবলাররা সেই অবস্থা থেকে উন্নয়নের প্রথম সিঁড়ি হতে পারে।
হয়ত ভবিষ্যৎ এ যদি কোনো নারী হাফিজা কে দেখি যে বিদেশের মাটিতে গিয়ে দেশের মুখ উজ্জ্বল করছে তখন হয়তো তাদেরকেও আমি এই নারী ফুটবলারদের মতোই সমান সমর্থন দেবো। কিন্তু আমি জানি তা কোনদিনো সম্ভব না কারণ ইসলামী বিশ্ব তাদের নিজেদের নারীদেরো সমর্থন করে না। যেখানে মেয়েদের জোরে কথা বলাই হারাম সেখানে মেয়েরা বিদেশে গিয়ে সবার সামনে সুউচ্চ গলায় কোরান পড়ে শোনাবে... তা শুধু কল্পনাতেই সম্ভব।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১২:৪১