somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রেম তবু প্রেম নয় (৭ ম পর্ব)

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



নিলয়ের থার্ড ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা চলছিল তাই কেউই ওকে ওর বাবার অসুস্থতার কথা জানায়নি।বাড়ির এই ধরণের পরিস্থিতিতে নিলয় একদম শান্ত ধীর-স্থির হয়ে যায়।নিলয় একদিনেই ভেতর থেকে বদলে যায় অনেকখানি।

-তুই দেশের বাড়ি যা।
নিলয়কে মা বলে।
-গিয়ে কি করবো?কেউতো টাকা দেবেনা।
নিলয় বলে।
-তুই টাকা চাইতে যাবি কেন?তুই কাকার কাছে গিয়ে বল সব জমি বিক্রি করে দিবি।
-আর কতটুকু জমি আছে?
-চার বিঘা।
-বাঁকী দশ বিঘার কি হলো?
-বিক্রি করে তোর বাবার চিকিৎসা চলছে।
নিলয়ের মা হতাশ কন্ঠে বলে।
-ব্যাংকে?
-শেষ।
নিলয় কছুক্ষণ চুপ করে থাকে।
-মা,ভয় পেয়োনা।তোমার ছেলে তো আছে।আগামীকাল আমি কাকার কাছে যাবো।

নিলয় ট্রেন থেকে নেমে ভ্যানে না চড়ে হাঁটা শুরু করে।মাটির রাস্তা।পথের দুই পাশে আখের ক্ষেত।বাতাস বইছে শন শন করে।নিলয়ের মনে হয় বাতাসের শব্দ নয় কোথাও কিছু একটা ধ্বসে পড়ার একটানা এক ঘেঁয়ে শব্দ হচ্ছে।

-আরে নিলয় যে!ভালো আছো বাবা?বাবার শরীর কেমন এখন?
রহিম সাহেব প্রশ্ন করেন।
-কাকা আমি ভালো আছি।বাবার শরীর ভালো না।
-কি আর করবে বাবা?সবই উপর ওয়ালার ইচ্ছা।
রহিম কাকা উনার বাড়ির দিকে চলে যান।নিলয় পুকুরের পাশ দিয়ে কাকার বাড়িতে ঢুকে পড়ে।উঠানে কাকি হাঁসের খাবার দিচ্ছে।নিলয়কে দেখে হাসে।
-কাকা কই?
-ঘরে নামাজ পড়ছে।
নিলয় কাকার ঘরে গিয়ে বিছানায় বসে।কাকা নামাজ শেষ করে জায়নামায গুছাতে গুছাতে নিলয়ের কাছে আসে।
-দাদার বর্তমান অবস্থা কি?
নিলয়কে করিম সাহেব প্রশ্ন করে।
-আবার ঢাকায় নিতে হবে।
নিলয় জানায়।
-তোর আর কতদিন লাগবে পাশ করে বেরুতে?
-আরও এক বছর হলে অনার্স শেষ হবে।তার পর এম এস।
-তাহলে তো আরও অনেকদিন।চল খেয়েনি।তারপর কথা হবে।
বড় ভাইয়ের ছোট ছেলেটা নিলয়কে দেখে দৌড়ে আসে।নিলয় ওর ব্যাগ হতে চকলেটের প্যাকেট বের করে দেয়।জামা-কাপড় বদলিয়ে লুঙ্গী পড়ে পুকুরে গিয়ে স্নান সেরে আসে।মাটির বারান্দায় খাবার সাজিয়ে ভাবি বসে আছে।ভাবি ভাত বেড়ে দেয়।
-কতদিন পরে এলে বলতো নিলয়?তোমার দাদা তোমার জন্য মাছ মারার কত আয়োজন করেছে।
-ভাবি পরীক্ষা চলছিল তাই অনেকদিন আসা হয়নি।
খাওয়া শেষ করে নিলয় কাকার সাথে বসে।জমি বিক্রয় করবে জানায়।কাকা কিছুক্ষণ চুপ থাকে।তারপর বলে,ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছেনা।আর যদিও বা পাওয়া যাচ্ছে তো দাম পাওয়া যাচ্ছেনা।নিলয় ভেতরে ভেতরে ঘাবড়ে যায়।নিলয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে ওর কাকা কিছু একটা আঁচ করে নেয়।
-ভয় পাস কেন?আমি তো আছি।
দেশ হতে ফিরে আসার পর বিশ দিন পার হলেও ওর কাকা ওদের বাড়িতে আসেনা।প্রচন্ড টেনশন নিয়ে নিলয় দিন পার করতে থাকে।এর মধ্যে নিলয়ের থার্ড ইয়ারের রেজাল্ট হয়।নিলয় ফার্স্ট ক্লাস পায়।সোহেলের সাথে ফোনে কথা হয়।এক সপ্তাহের মধ্যে ক্লাস শুরু হবে।নিলয় ক্রমশঃ অস্থির হয়ে পড়ে।শেষে আবার কাকার কাছে যায়।
-কাকা,জমি বেচার কিছু হলো?
-না।কেউ জমি কিনতে চাচ্ছেনা।
-দামও বলছেনা?
-দাম বলছে না কেনার মতই।বিশ থেকে পঁচিশ হাজার টাকা শতাংশ বলে।
-বল কি?এখানে খালের জমিই পঁচাত্তর হাজার টাকা শতাংশ।আর ধানী জমি বিশ-পঁচিশ?
-এই জন্যেই তো বলছি বেচার দরকার নাই।
নিলয় কিছুক্ষণ চুপ করে ভাবে।এই কাকাকে তার বাবা কত ভালোবাসে,আর ভালোবাসার প্রতিদান স্বরুপ তার বাবা কোন একদিন কোর্টে উঠে দাঁড়িয়ে বলেছিল-“আমার বাবার নাম যাদব অধিকারী।আমরা তিন ভাই।আমি মাধব অধিকারী।আমার বড় ভাই মোঃ লতিফ সরকার ওরফে বিপ্লব অধিকারী আর ছোট ভাই মোঃ করিম সরকার ওরফে রিপন অধিকারী।পঁয়ষর্টি সালে আমাদের পিতৃহীন পরিবারকে জোড় করে ধর্মান্তরিত করা হয়।আমি বাড়ি হতে পালাতে সক্ষম হয়েছিলাম।তাই আমাকে ধর্ম বদলাতে হয়নি।আমাদের সমুদয় সম্পত্তিতে আমাদের তিন ভাইয়ের সমান অধিকার”।আজ সেই দুই ভাইয়ের কেউ তার পাশে নাই।নিলয় যখন মেঠো পথ উদভ্রান্তের মত হাঁটছিল তখন তার সামনে অনিশ্চিত এক ভবিষ্যৎ আর চোখ ভরা জল।
১ম পর্ব (Click This Link)
২য় পর্ব (Click This Link)
৩য় পর্ব (Click This Link)
৪র্থ পর্ব (Click This Link)
৫ ম পর্ব (Click This Link)
৬ ষ্ঠ পর্ব (Click This Link)

চলবে……….
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:২৬
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×