somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্কুল থেকে কলেজঃ কিছু অদ্ভুত কিংবা মজারু কাহানি- ‘হাতা মে ডাবু মে পুই পুই পুই’!!!! :P

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





শরমে কান-টান লাল হয়ে গেছে। হবেই-বা-না কেন? সবেমাত্র প্রাইমারির বেড়া ডিঙ্গিয়ে হাইস্কুলে হামাগুড়ি দিয়েছি। হাফপ্যান্ট পরা ছেড়ে ফুলপ্যান্ট শুরুই করি নি। মাঝে মধ্যে তখনও বুলন্দ দরওয়াজা ভুলবশত খোলা পাই। তাতেই কিনা প্রেম পত্র। খোলা দরজার গুণ কিনা কে জানে? অথচ ক্লাসের মধ্যে ছিলাম সবচেয়ে ছোট। সেটা বয়সে ও আকারেও। সেই হাফপ্যান্ট বাবার উপরি কড়াৎ করে বসন্তের শুকনো বজ্রপাতটা পড়ল।

লজ্জায় লাল্টু আমি শরমে শাল্টু হয়ে সেই চিঠিটি সেদিন আরেক সহপাঠির কাছ থেকে নিতে পারি নি। সেই সহপাঠির বদান্যতায় চিঠিটি আমার ভাইবোন-পাড়া প্রতিবেশীদের মাঝে চালান হয়ে সে কি হাসাহাসি-কাশাকাশি-নাচানাচি মাইরি। ঐ হাফপ্যান্ট পরা বয়সেই শরম কত প্রকার ও কি কি বুঝেছিলুম? তবে আর যাই হোক, এই ঘটনার পর থেকে বুলন্দ দরওয়াজাতে খিল লাগাতে আর ভুল করি নাই।



ক্লাস ফোরে উঠলাম। রোল নাম্বার ২। রোল ১ না হওয়াতে মারাত্মক অভিমান হল। পাড়াতে কানাঘুষা। মেধাবী পোলা না কদু। এ যে ইজ্জতের ছাওয়াল। বাড়িতে গিয়ে মাকে নিরাসক্ত গলায় বললাম ‘আমি এখন থেকে বকরী (পাঁঠার প্রেমিকা) তাড়াবো। পড়াশুনা আর করব না। লেখাপড়া ভাল্লাগে না। পানসে! টেস্ট পাই না।’ হাফপ্যান্ট বাবাজির এই ধরণের স্ট্রাটেজিতে বাড়ির মধ্যে হাস্যরসাত্মক পরিবেশের উদয় হল।

ডিসিশনে অনড়। ধানের গোলার ছাদে বসে ছাগল বিষয়ক ধ্যান করি। পিচ্চির ভীষণ অভিমান! সবার উৎসুক জিজ্ঞাসা! কেন এই রেভালিউশনারি সিদ্ধান্ত? অনেক চাপাচাপির পর শানে নুযুল উন্মোচন করলুম জাতির সামনে।

স্কুলের অদূরেই আমাদের বিশাল ধানক্ষেত। সাথে মস্তবড় পুকুর ও বাগান। সেই ধানক্ষেতে প্রায়শই বে-আক্কেল, বে-ফাজিল ছাগল-বকরীরা হামলা চালাত। তো আমার দায়িত্ব ছিল এই নির্বোধ ছাগদিগকে দেখলে তাড়িয়ে দেওয়া। যেহেতু স্কুল থেকেই এদের দেখা যায়, সেহেতু আমাকে ক্লাস চলাকালীন সময়ও গিয়ে তাড়া দিয়ে আসতে হত। আর এদের তাড়াতে গিয়ে আমি নিজেও একটু আলসেমী করে হাওয়া-বাতাস গায়ে নিতাম বাগানে বসে আম-জাম ইত্যাদি খেয়ে। পরীক্ষার সময়েও একই কাহিনি। তাই আমার অভিযোগ এই বকরী তাড়ানোর দায়িত্ব আমার উপর অর্পিত না হলে আমার রোল নম্বর কিছুতেই ২ হত না!!

এখন আমি তাই পাঁঠার প্রেমিকাদের তাড়ানো বা চরানোকে পেশা হিসেবে নিতে চাই। স্বাধীন ও চাপমুক্ত পেশা। ...নো পড়াশুনা, ডু (খেদাও) বকরী!! ভদ্ররনোকের এক কথা!!!!



ছুডুকালে একটু বেশি মনে হয় লাজুক ছিলাম। দুষ্টুও কম ছিলাম না। হালিম বিড়ি খাওয়ার গল্প তো ইতোমধ্যে শুনেছেন! যদিও বাড়ি থেকে ছিল নানারকম বিধি নিষেধ। অন্যছেলেদের সাথে মারামারি করা যাবে না, না বলে কোথাও যাওয়া যাবে না, অশ্লীল কথা বলা যাবে না, অন্যের গাছের ফল-মূল চুরি-মুরি করা যাবে না ইত্যাদি নীতিকথা।

বাড়িতে তখন অনেক কাজের লোক। এরা সবাই মনে হয় স্পাই। ভুল-টুল হলে ফেলুদা সেজে সোজা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট। ফলে নানারকম চিকিৎসার এন্তেজাম হত রোগ সারানোর জন্য। তাই সবসময় পিচ্চি আমরা এই কর্তৃপক্ষের ভয়ে তটস্থ থাকতাম। কিন্তু হলেও অক্ষরে অক্ষরে কি আর পালন করা যায় নিয়ম-নীতি? কে কবে করেছিল, শুনি? ফলে মাঝে মধ্যেই শুদ্ধি অভিযানের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে?

আর এ কারণেই পাড়ার ছেলেদের সাথে তেমন একটা বন্ধুত্ব হয়ে উঠে নি। তারপরও মাঝে মাঝে এক সাথে খেলাধূলা করতাম। বিশেষ করে মার্বেল।

তখন লক্ষ করতাম বালকেরা প্রায় আদিবাসি ওঁরাও যুবতী মেয়েদের চিল্লায়ে চিল্লায়ে বলত, ‘হাতা মে ডাবু মে পুই পুই পুই’। এতে মেয়েরা ক্ষেপে গিয়ে দাবড়ানী দিত। আর বখাটে ছেলেদের দল বেশি করে উৎসাহ পেয়ে নব উদ্যোমে তা রিপিট করত। আমিও ছেলেদের সাথে কোরাস করেছি। প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। প্রায় বাঁশঝাড়ে হাগু করি। এত কিছু বোঝার বয়স আছে। যা হয় হোক পাছে।
একদিন ওঁরাও বিগাল দা’র কাছে জানতে চাইলাম এর মাজেজা। সেদিন থেকেই মার্বেল খেলায় দফারফা। কারণ যে-কোনোভাবেই হোক তা কর্তৃপক্ষ জেনে গেছে যে আমি সাঁওতাল মেয়েদের (আমাদের ওখানে ওঁরাওদের সাঁওতাল হিসেবেই সবাই জানে) ‘হাতা মে ডাবু মে পুই পুই পুই’ বলেছি।

এখানে ‘হাতা’ মানে ছেলেদের... /:) ; আর ‘ডাবু’ হচ্ছে মেয়েদের... :-0 ; আর ‘পুই পুই পুই’ মানে... :`> । বুঝেছেন তো! আপনি কী বুদ্ধিমান, মাইরি?

আমি চার ফুটি হাফপ্যান্ট বাবাও অন্নেক বুদ্ধিমান ছিলাম। রামধোলাইয়ের মাধ্যমে এই বেশি বুদ্ধির কিছুটা ঐ অর্থবছরের বাজেটে কর্তন করা হয়েছিল।

কানে কানে বলিঃ হুনছি, এখনকার ছুডু ছুডু স্মাঠ ছেলেমেয়েগুলো স্মার্টফোনে হাতা-ডাবুর হাট-বাজার বসিয়েছে। আচ্ছা, এরা কি কর্তৃপক্ষের খবরদারীতে পড়ে বাজেট কর্তনের শিকার হয় না এখন? নাকি কর্তৃপক্ষও...। ;) X(

***************************************************************************************
@অাখেনাটেন/সেপ্টেম্বর-২০১৮


সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ৮:৩১
৬০টি মন্তব্য ৬০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×