"সরকার যদি মিথ্যা কথা বলে প্রেসনোট দেয়, তবে সে সরকারের উপর মানুষের বিশ্বাস থাকতে পারে না। জীবন ভরে একই কথা শুনিয়াছি ‘আত্মরক্ষার জন্যই পুলিশ গুলি বর্ষণ করতে বাধ্য হয়’। এ কথা কেউ বিশ্বাস করবে? যারা মারা গেল তাদের ছেলেমেয়ে, মা-বাবা তাদের কি হবে?...একথা ভেবে ভীষণভাবে ভেঙে পড়েছি আমি। কিছুতেই মনকে সান্ত্বনা দিতে পারছি না। কেন মানুষ নিজের স্বার্থের জন্য পরের জীবন নিয়ে থাকে?..."
উপরের কথাগুলো বাঙালী জাতির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান ৮ই জুন, ১৯৬৬, রোজ বুধবার-এ লিপিবদ্ধ করেছেন। কারণ তথাকথিত মৌলিক গণতন্ত্রের স্রষ্টা স্বৈরাচার আইয়ুব খান ‘শুট টু কিল’ আদেশের মাধ্যমে কিছু সময় আগেই বৈষম্যবিরোধী মানুষের উপর নির্বিচারে…!
ইতিহাসের কী নির্মম পরিহাস! ঠিক ৫৮ বছর পরে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানের ঔরসজাত কর্তৃক অনুদার কিংবা জিঘাংসামূলক কর্মকান্ডের ফলস্বরূপ গোটা দেশের মানুষ (গুটিকয়েক বঙ্গালাঙ্গার বাদে) জাতির পিতার সেই বিষাদপূর্ণ কথামালা পুনরাবৃত্তি করে চলেছে গত কয়েকদিন ধরে… ”...কেন মানুষ নিজের স্বার্থের জন্য পরের জীবন নিয়ে থাকে…?”
২
ইউটিউবে BBC-র একটি নিউজে চোখ আটকে গেল। প্যারামিলিটারি গ্রুপের সাঁজোয়া যানের ছাদের উপর একটি মানব অবয়ব শুয়ে আছে (প্রথমে প্রাণহীন লাশ মনে করেছিলাম)। সম্ভবত সাভারের মেইন রোডের কাছে এসে সেই লাশকে ছাদ থেকে নিচে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হল। অবাক হয়ে দেখলাম লাশের মাথাটা একটু নড়ে উঠল। মানে তখনও জীবিত। কয়েকজন জওয়ান সেই অর্ধমৃত ছেলেটিকে রাস্তার ডিভাইডারের ওপারে ময়লার বস্তার মতো ছুঁড়ে ফেলল। তখনও কী ছেলেটি জীবিত নাকি মৃত? এ দৃশ্য দেখার পর টানা কয়েক ঘন্টা ট্রমার মধ্যে গেছে। এ আমি কী দেখলাম! ভিজুয়ালাইজ করুন দৃশ্যটা। কী নিষ্ঠুর! কী নির্মম! কী হ্নদয়বিদারক!
একটি রাষ্ট্রীয় বাহিনী যাদের জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা। সেই তারাই প্রকাশ্য দিবালোকে মধ্যযুগীয় বর্বরতায়…!
চেতনামিশ্রিত হেলমেট বাহিনী, ধর্মমিশ্রিত রগকাটা বাহিনী কিংবা জাতীয়তাবাদমিশ্রিত এরকম সমগোত্রীয় অন্যান্য বাহিনীর নৃশংসতা সম্পর্কে কারো অজানা নয়। তাই বলে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ কিংবা ‘গণতন্ত্রের মানসকন্যা’র উর্দিপরা…? এ কোন ধরনের গণতন্ত্রের উদ্ভাবন করেছেন মাননীয় ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’?
এরপর যেভাবে আমরা কুম্ভীরাশ্রু বিসর্জনের দৃশ্য প্রতিনিয়ত দেখে চলেছি, তাতে মনে হচ্ছে ক্রিস্টোফার নোলান কর্তৃক হরর জনারার কোনো মুভি থ্রিডি চশমা লাগিয়ে হল-এ বসে দেখছি। গায়ে চাপিয়েছি গন্ডারের চামড়া। এসব ঘটনা পরম্পরা কি এ জনমে ভোলা সম্ভব? Gen Z - Gen Alpha যে জিনিসের সাক্ষী হিসেবে থেকে গেল তা কীভাবে ভবিষ্যতে সংজ্ঞায়িত হবে? মিথ্যাচারের যে পসরা সাজানো হয়েছে তা দেখে মিঃ গোয়েবলস জীবিত থাকলে লজ্জায় মুখ লুকাতেন কি না?
পলকে পলকে মিথ্যার ছানাপোনা কীভাবে তরুন থেকে যুবা, যুবা থেকে পেকে বয়স্ক মিথ্যাই পরিণত হচ্ছে অতি অল্পসময়ে; তা কি বঙ্গ ইতিহাসে নয়া সংযোজন নয়? কী নিদারূণ রসিকতা জাতির সঙ্গে! যেন কেউ কিচ্ছু দেখছে না; যেন কেউ কিচ্ছু জানে না; যেন কেউ কিচ্ছু ভাবছে না। কানার হাটবাজারে বঙ্গের ম্যাঙ্গো আদমীরা সকলেই অন্ধ!
বঙ্গবন্ধুর কথা দিয়েই শেষ করি, “ …তবে এদের ত্যাগ বৃথা যাবে না। এই দেশের মানুষ তার ন্যায্য অধিকার আদায় করবার জন্য যখন জীবন দিতে শিখেছে তখন জয় হবেই, কেবলমাত্র সময়সাপেক্ষ…।”
যুগে যুগে খেটে খাওয়া বঙ্গসন্তানদের প্রতিপক্ষ বানানোর ভুলের ইতিহাসে মাশুল দিয়ে বাবা, কাকা, চাচারা সেই কবেই চলে গেছে। কাকিমা বিস্মৃতির জাতক হয়ে--যায় যায়…! মহাপরাক্রমশালী আপাকে জাতির পিতার সেই ‘কেবলমাত্র সময়সাপেক্ষ’ কিংবা সময় কি আদৌ ক্ষমা করবে? বঙ্গের ইতিহাস ভিন্ন কথাই বলে…? তবে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে শোধরানোর সময় এখনও ফুরিয়ে যায় নি মনে হয়। কিন্তু মিলিয়ন ডলার কোশ্চেন, 'শোধরাবেন কী...'?
*******************************************************************
@আখেনাটেন/জুলাই-২০২৪
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৮:৫৩