somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টিউটোরিয়াল : কিভাবে আপনার প্রথম চলচ্চিত্রটি বানাবেন ? -০৮

২২ শে মার্চ, ২০১১ বিকাল ৩:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সামান্য কৈফিয়ত :
কথা ছিল, বইটি বেরুবে এই বছরের বই মেলায়। কিন্তু আয়োজনটা বড় বলেই নানা কাজের ফাঁকে আর লেখাটা শেষ হয়েও শেষ করা হয়ে ওঠেনি। এত বেশি সম্পাদনা করতে হচ্ছে যে, নিজেই অবাক হয়ে যাচ্ছি।

যাই হোক, ব্লগে আবারও লেখাটা দেয়া শুরু করলাম। তবে এবার মাঝখানে অনেক অনেক অংশ বাদ দিয়ে সরাসরি চলে যাচ্ছি ফ্রেম কম্পোজিশনে।
আরেকটা কথা, লেখার কোথাও ভুল থেকে গেলে দয়া করে ধরিয়ে দেবেন। ভীষণ কৃতজ্ঞ হব।

শুরুর আগে :
শুটিং শুরুর আগে ক্যামেরায় গৃহীত শট সম্পর্কে সামান্য জ্ঞান অর্জন করে নেই। বিশেষত কম্পোজিশন সম্পর্কে মৌলিক ধারণা না থাকলে সমস্যায় পড়তে হবে।
আসুন জেনে নেয়া যাক, কম্পোজিশনের মৌলিক নিয়মগুলো। তার আগে জেনে নেই কম্পোজিশন কী ?

কম্পোজিশন :
একটা ফ্রেমের মধ্যে কোথায় কোন জিনিসটা রাখবেন, কিভাবে রাখবেন, কোনটাকে গুরুত্ব দেবেন, কোনটাকে দেবেন না, কোনটা বড় হবে, কোনটা ছোট হবে ইত্যাদি ব্যাপারগুলো সাজানোই কম্পোজিশন।

কম্পোজিশনের কিছু মৌলিক নিয়ম :
আপনি জীবনে কখনও না কখনও অবশ্যই আপনার পরিচিত জনের ছবি তুলেছেন। যখনই ছবি তুলেছেন, তখনই না জেনেই কিছু নিয়ম-কানুন মেনে নিয়েছেন। যেমন : যার ছবি তুলেছেন, তাকে ফ্রেমের মাঝখানে রেখে ছবি তুলেছেন, তার চেহারা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, তাকে চেনা যাচ্ছে, তার মাথা কাটা যায় নাই ইত্যাদি ইত্যাদি। কোন নিয়ম-কানুন না জেনেই যে কেউ এই রকম ফ্রেমে ছবি তুলতে পারে।
কিন্তু যেহেতু আপনি জীবনের প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে যাচ্ছেন, স্বভাবতই আপনি আর না জেনে কাজ করবেন না।
আসুন, জেনে নেয়া যাক সাধারণ নিয়মগুলো ---

০১) হেড রুম :
যখনই কারো ছবি তুলতে গেছেন, তার মাথা উপর সামান্য জায়গা ছেড়েছেন যাতে করে তার মাথা না কাটা যায়। ফ্রেমের উপরের দিকে শেষ সীমানা থেকে তার মাথা পর্যন্ত ছেড়ে দেয়া এই জায়গাটাকে বলে হেড রুম।
এই ক্ষেত্রে আপনার মডেল ক্যামেরার দিকে সরাসরি তাকিয়ে আছেন। এইভাবে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে ছবি তোলাকে বলে সাবজেকটিভ স্টাইল। আমরা পাসপোর্ট সাইজ ছবি তোলার সময় সব সময় সাবজেকটিভ স্টাইলে ছবি তুলে থাকি।

হেড রুম কতটুকু হবে ?
হেড রুম হিসেবে ছেড়ে দেয়া জায়গাটি অনেক বেশি হলে আপনার মডেলের ছবি ভালো লাগবে না। আবার হেড রুম অনেক কম হলেও ভালো লাগবে না। মাথা কাটা গেলে তো বাজে লাগবে।
সাধারণত উপর নিচে ফ্রেমে মোট জায়গার তিন ভাগের একভাগের থেকে ছোট হয় হেড রুম। এর বেশি হলে বাজে লাগে।
তবে একটা কথা মনে রাখবেন, চলচ্চিত্রে বিশেষ উদ্দেশ্যে মাথা কাটা গেলেও সেই ছবি নিয়ম মেনে তোলা। এই রকম ছবি আমরা অহরহই চলচ্চিত্রে দেখে থাকি। সেই নিয়ম আমরা পরে শিখব।

আদর্শ মাপের হেড রুম

০২) সাবজেকটিভ ও অবজেকটিভ স্টাইল :
ইতিমধ্যে আপনি জেনে গেছেন, মডেল ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে থাকলে সেটা সাবজেকটিভ স্টাইল। তাহলে ক্যামেরার দিকে না তাকিয়ে ছবি তুলতে সেটাকে কোন স্টাইল বলব ? বুঝে গেছেন, জানি। সেটা অবজেকটিভ স্টাইল।
টিভি রিপোর্টাররা যখন সরাসরি ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে পিটিসি দেন, তখন সেটা সাবজেটিক স্টাইল শট হয়।
অন্য দিকে কোন মডেল ক্যামেরার দিকে না তাকালেই শটটি অবজেকটিভ হয়ে যায়।
এবার নিচে দুটি উদাহরণ দেখুন ।


সাবজেকটিভ স্টাইল


অবজেকটিভ স্টাইল


০৩) লুক রুম :
অবজেকটিভ স্টাইলে ছবি তুললে মডেল ক্যামেরার দিকে তাকায় না। ফলে সে তাকায় ফ্রেমের কোন এক দিকে। সেটা ডান বা বায়ে হতে পারে।
যেমন নিচের ছবিতে মডেল তাকিয়ে আছে ডান দিকে।

লুকরুমের সাধারণ কম্পোজিশন (রুল অব থার্ড না মেনে)

সে যে দিকে তাকায় সে দিকে যে ফাকা জায়গা রাখা হয় সেটাই লুক রুম। ফ্রেমের যে দিকে তাকিয়ে আছে মডেল, সেই দিকের সীমানা থেকে মডেলের নাক পর্যন্ত ফাকা জায়গাটাকে বলে লুক রুম।
সাধারণত মডেলের পেছনের দিকে কম জায়গা রাখা হয়, সামনে বেশি জায়গা রাখা হয়। নিচের ছবিতে দেখুন, মডেলের ডানপাশে বেশি জায়গা রাখা হয়েছে।

লুকরুমের সাধারণ কম্পোজিশন (রুল অব থার্ড মেনে)

কিন্তু যদি এর উল্টোটা করা হয়, অর্থাৎ মডেলের পেছনে বেশি জায়গা রাখা হয়, তবে মডেলের পেছনের এই ছেড়ে দেয়া জায়গাটিকে অনর্থক শূন্য জায়গা বলে মনে হয়।
যেমন নিচের ছবিতে দেখুন, মডেলের সামনে জায়গা না রেখে পেছনে জায়গা রাখা হয়েছে, ফলে ছবিটিতে মডেলের পেছনের জায়গাটিকে অস্বাভাবিক শূন্য মনে হচ্ছে।
কোন কারণ ছাড়াই লুক রুম না রেখে পেছনে বেশি জায়গা ছেড়ে দেয়াটা ঠিক নয়। তাতে করে পেছনে যে অস্বাভাবিক শূন্যতা সৃষ্টি হয়, সেটা ফ্রেমের সৌন্দর্যহানি ঘটায়।


অন্য দিকে সামনে জায়গা ছাড়তে ছাড়তে অতিরিক্ত জায়গা ছাড়লেও সেটা ভালো দেখায় না। যেমন নিচের ছবিতে মডেলের সামনে লুক রুম রাখতে হিয়ে অতিরিক্ত জায়গা ছাড়া হয়েছে।



লুক রুম কতটুকু হবে ?
লুক রুম ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকরী নিয়মটি হল দ্যা রুল অব থার্ড। আসুন এবার এই নিয়মটি বুঝি।

০৪) দ্যা রুল অব থার্ড :
গোটা ফ্রেমটাকে ডানে বামে এবং উপর নিচে তিন ভাগ করে ফেলার পর সেটা ধরে ছবি তোলার নিয়মকে বলে দ্যা রুল অব থার্ড। সাধারণত এই রুল অব থার্ড মেনে লুক রুম রাখা হয়। ডানে বা বায়ে যে দিকে মডেল তাকায়, সে দিকে তিন ভাগের দু’ভাগ জায়গা ছেড়ে দেয়া হয়। বাকী এক ভাগ জায়গা মডেলের পেছনে রাখা হয়। মডেলের মাথার উপর হেডরুম রাখার ক্ষেত্রেও অনেক সময় রুল অব থার্ড মানা হয়। নিচের ছবিটি ভালো করে দেখলেই রুল অব থার্ড বুঝে যাবেন ।
লুক রুম রাখার ক্ষেত্রে বর্তমানে এই রুল অব থার্ড প্রায় সকল ক্ষেত্রেই মেনে চলা হয়।




মডেল : স্মৃতি আঁচল।
ফটোগ্রাফি : এটিএম জামাল।

(চলবে)

আমি চেষ্টা করছি এই টেকনিক্যাল বিষয়গুলো যতটা সহজ করে লেখা যায়, ততটা সহজ করে লিখতে। যাতে করে যে কেউ এই ধরনের বিষয় খুব সহজে বুঝে ফেলে। আমি কি সহজ করে লিখতে পারছি ?

পর্ব - ০১
পর্ব - ০২
পর্ব -০৩
পর্ব - ০৪
পর্ব - ০৫
পর্ব -০৬
পর্ব - ০৭
পর্ব -০৯
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:৪৩
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×