ছবি - wallpapercave.com
আল কোরআন মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরিত। আল কোরআন শতাব্দীর পর শতাব্দী জীবন ও জগৎ সম্পর্কে কোটি কোটি মানুষের অন্তর্দৃষ্টি খুলে দিয়েছে। বদলে দিয়েছে তাদের ভেতর থেকে, খুলে দিয়েছে তাদের সম্ভাবনার দ্বার।দিয়েছে প্রশান্ত ও পরিতৃপ্ত জীবন। আর তাই আল কোরআন সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, " আমি এ কল্যাণময় গ্রন্থ তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতসমূহ অনুধাবন করে এবং বুদ্ধিমান ব্যক্তিগণ গ্রহণ করে উপদেশ" (সূরা সোয়াদ , আয়াত - ২৯)।
তারপরেও আমরা কেন বিশ্বাস করব আল কোরআন মহান আল্লাহর কালাম ? কেন বিশ্বাস করব আল কোরআন মানুষের রচনা নয় ?
কারন - মহান আল্লাহপাক রাসুল (সাঃ) এর প্রতি আল কোরআন অবতীর্ণ করেছেন এবং রাসুল (সাঃ) সেই কিতাবকে তার উম্মতের প্রতি যথাযথভাবে পৌঁছে দিয়েছেন এবং তাদের সামনে তা যথাযথভাবে ব্যাখ্যাও করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, " স্পষ্ট প্রমাণাদি ও গ্রন্থাবলীসহ। আর আপনার প্রতি আমরা কুরআন নাযিল করেছি, যাতে আপনি মানুষকে যা তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে , তা স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেন এবং যাতে তারা চিন্তা করে।'' (সুরা নাহল, আয়াত - ৪৪)। এখানে (সমগ্র কোরআনে) রাসুল (সাঃ) শুধু মহান আল্লাহপাক কর্তৃক তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছেন এবং এসব কিছু তিনি করেছেন আল্লাহপাকের নির্দেশিত পথে যেখানে ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের প্রতিফলন ঘটেনি ।
আল কোরআনে রসুল (সাঃ) এর ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের প্রতিফলনের পরিবর্তে কোথাও কোথাও তাঁর চিন্তাকে পরিমার্জিত করা হয়েছে। যখন রসুল (সাঃ) আগ্রহী অন্ধ বৃদ্ধের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির দিকে মনোযোগ দিলেন, তখন সূরা আবাসায় তাঁর এ কাজটি যে উচিত হয় নি, তা পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে। রসুল (সাঃ) যখন স্ত্রীদের মনরক্ষা করার জন্যে মধু না খাওয়ার শপথ করেছিলেন, তখন সূরা তাহরিমের প্রথম আয়াতে তা সংশোধন করে নিতে বলা হয়। রসুল (সাঃ) দু-একটা ছোটখাটো মানবীয় ত্রুটিকেও আল কোরআন সংশোধন করে দিয়েছে, যেন এ কাজটা আল্লাহ অনুমোদিত কাজ হিসেবে প্রচলিত না হয়ে যায়। যদি কোরআন মানব রচিত হতো, তবে রচনাকারী তার ভুলকে কখনোই প্রকাশ্যে আনতেন না বরং তিনি যে কত সঠিক, আয়াতে আয়াতে তা-ই প্রমাণ করার চেষ্টা হতো।
ছবি - sangbadchorcha.com
মুসলমানদের জন্য এক জীবনে যা দরকার, তার সবই সাজানো রয়েছে আল কোরআনের পরতে পরতে। সুস্থ-সুন্দর, সুখী-পরিতৃপ্ত জীবনের জন্যে যা প্রয়োজন, আল কোরআনের পাতায় পাতায় রয়েছে তারই দিক-নির্দেশনা । পবিত্র কোরআনে মুসলমানদের করণীয় কাজের দিকনির্দেশনার পাশাপাশি তাদের প্রতি উপদেশ স্বরুপ বেশ কিছু আয়াত আছে। আসুন আমরা সেগুলো সম্পর্কে জানি -
আল কোরআনের উপদেশাবলী
১। আল কোরআনে দু ধরনের আয়াত আছে, সুস্পষ্ট ও অস্পষ্ট। তোমরা অস্পষ্ট আয়াত নিয়ে বেশী তথ্যানুসন্ধান ও ঘাটাঘাটি করোনা এবং মনগড়া ব্যাখ্যার আশ্রয় নিওনা ।(সুরা আলে ইমরান, আয়াত ৭)।
"তিনিই আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন। তাতে কিছু আয়াত রয়েছে সুস্পষ্ট, সেগুলোই কিতাবের আসল অংশ। আর অন্যগুলো রূপক। সুতরাং যাদের অন্তরে কুটিলতা রয়েছে, তারা অনুসরণ করে ফিৎনা বিস্তার এবং অপব্যাখ্যার উদ্দেশে তন্মধ্যেকার রূপকগুলোর। আর সেগুলোর ব্যাখ্যা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না। আর যারা জ্ঞানে সুগভীর, তারা বলেনঃ আমরা এর প্রতি ঈমান এনেছি। এই সবই আমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে। আর বোধশক্তি সম্পন্নেরা ছাড়া অপর কেউ শিক্ষা গ্রহণ করে না। "।
২। যার যার পাপ-পূণ্য তার তার । কেউ কারো পাপের বোঝা বহন করবে না ।(সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত - ১৫)।
"যে সৎপথ অবলম্বন করবে, সে তো নিজেরই মঙ্গলের জন্য সৎপথ অবলম্বন করে এবং যে পথভ্রষ্ট হবে সে তো পথভ্রষ্ট হবে নিজেরই ধ্বংসের জন্য। আর কোন বহনকারী অন্য কারো ভার বহন করবে না। কোন রাসূল না পাঠানো পর্যন্ত আমি কাউকেই শাস্তি দান করি না"।
৩। পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো তাদের সাথে সঙ্গে মন্দ ব্যবহার করো না।(সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত - ২৩)।
"তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং তাদের সাথে সম্মানসূচক কথা বল"।
৪। অনুমতি ছাড়া কারো ঘরে প্রবেশ কোরো না।(সুরা নুর, আয়াত - ২৭ & ২৮)।
"হে মুমিনগণ, তোমরা নিজেদের ঘর ছাড়া অন্য কারো ঘরে তার অধিবাসীদের অনুমতি না নিয়ে এবং তাদেরকে সালাম না করে প্রবেশ করো না। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। অতঃপর যদি তোমরা সেখানে কাউকে না পাও তাহলে তোমাদেরকে অনুমতি না দেয়া পর্যন্ত তোমরা সেখানে প্রবেশ করো না। আর যদি তোমাদেরকে বলা হয়, ‘ফিরে যাও’ তাহলে ফিরে যাবে। এটাই তোমাদের জন্য অধিক পবিত্র। তোমরা যা কর আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবগত"।
৫। জীবনে মধ্যপন্থা অবলম্বন করো।(সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত - ২৯)।
"তুমি একেবারে ব্যয়-কুষ্ঠ (কৃপণ) হয়ো না এবং একেবারে মুক্ত হস্তও হয়ো না। তাহলে তুমি তিরস্কৃত ও নিঃস্ব হয়ে বসে থাকবে"।
৬। সন্তান হত্যা কোরো না।(সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত - ৩১)।
"দারিদ্রের ভয়ে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করো না। তাদেরকে এবং তোমাদেরকে আমিই জীবনোপকরণ দিয়ে থাকি। নিশ্চয় তাদেরকে হত্যা করা মারাত্মক অপরাধ"।
৭। অবাধ যৌনাচারে লিপ্ত হয়ো না । (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত - ৩২)।
"আর ব্যভিচারের ধারে-কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং নিকৃষ্ট আচরণ "।
৮। না জেনে (অনুমান দ্বারা) কোনো কিছুর অনুসরণ করবে না।(সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত - ৩৬)।
"যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই সেই বিষয়ে অনুমান দ্বারা পরিচালিত হয়ো না। নিশ্চয় কর্ণ, চক্ষু ও হৃদয় ওদের প্রত্যেকের নিকট কৈফিয়ত তলব করা হবে"।
৯। মানুষের সাথে নম্র ভাষায় কথা বলো।(সুরা ত্বহা, আয়াত - ৪৪)।
"তোমরা তার সঙ্গে নম্র ভাষায় কথা বলবে। হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভয় পাবে"।
১০। অনর্থক কাজ থেকে বিরত থাকো ।(সুরা মুমিনুন, আয়াত - ৩)।
(মুমিন তারাই), যারা অনর্থক ক্রিয়াকলাপ থেকে বিরত থাকে।
মহান আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে আল কোরআনের আলোকে জীবন গড়ার ও চলার তওফিক দান করুণ
চলবে -
===============================================================
পূর্ববর্তী পোস্ট -
আল কোরআনের উপদেশাবলী - পর্ব - ১০ Click This Link
আল কোরআনের উপদেশাবলী - পর্ব - ৯ Click This Link
আল কোরআনের উপদেশাবলী - পর্ব - ৮ Click This Link
আল কোরআনের উপদেশাবলী - পর্ব - ৭ Click This Link
আল কোরআনের উপদেশাবলী - পর্ব - ৬ Click This Link
আল কোরআনের উপদেশাবলী - পর্ব - ৫ Click This Link
আল কোরআন সংকলন-সংরক্ষণের ইতিহাস - Click This Link
আল কোরআন এর ২৬ টি আয়াত বাতিল চেয়ে আদালতে দায়ের করা রিট বাতিল করলো ভারতের সুপ্রিম কোর্ট
- Click This Link
আল কোরআনের উপদেশাবলী - পর্ব - ৪ Click This Link
আল কোরআনের উপদেশাবলী - পর্ব - ৩ Click This Link
আল কোরআনের উপদেশাবলী - পর্ব - ২ Click This Link
আল কোরআনের উপদেশাবলী - পর্ব - ১ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ১২:০৬