আগের কাহিনীর পর.........।
তার পরদিন ঘুম থেইকা উইঠা আমার রুমমেট আমারে বাসার কিছু জিনিস দেখাইয়া দিল। আর কইল আমাদের এইখানে আমরা সবাই আপন আপন রান্না কইরা খাই, আপনেরেও খাওয়া লাগবে। আমারে কয়েকটা পাতিল দেখাইয়া দিয়া কইল এখন থেইকা আপনি এইগুলা ইউজ করবেন। আমি চিন্তা করলাম লাইফে ম্যাক্সিমাম রান্না এক্সপেরিয়েন্স হইল খিচুড়ি, তাও শিখছি হাজি দানেশের হলে থাকতে যাইয়া। আর আগের শেখা আর একটা জিনিস পারতাম সেইটা হইল ডিম ভাজা। চিন্তা করলাম আস্তে আস্তে এইগুলা দিয়াই শুরু করা লাগবে।
আর এক বড় ভাই ছিলেন আমাদের সাথে, উনি আমারে বাথরুমে নিয়া গেলেন তারপর কইয়া দিলেন এইটা হইল বাথরুম, এইটার উপ্রে উইঠা কাম সারবা না ভুলেও। বইসা পা ঝুলাইয়া কাম সারবা। নাইলে পইড়া দাত-টাত ভাঙতে পার। যেহেতু দেশে আমারা আলাদা টাইপ বাথরুম ব্যাবহার করি, ব্যাপারটা আমার কাছে একটু ইন্টারেস্টিংই লাগছিল। আমি কইলাম অক্কে। এরপর দুইদিন ঘুমাইয়া ঘুমাইয়া জেট ল্যাগ কাটানোর চেষ্টা করলাম। একদিন আমার রুমমেট আমারে কইল চলেন আপনারে রুমের চাবি বানাই দেই। আমি কইলাম চলেন। একটা দোকানে যাইয়া উনি দোকানদাররে চাবিটা দিলেন আর দোকানদার ব্যাটা দেখি মেশিন দিয়া দুই সেকেন্ডের মধ্যে চাবি বানাইয়া দিল! আমি তো পুরাই টাস্কিত! দেশে থাকতে ঘইষা ঘইষা চাবির নকল বানাইতে দেকছি! এইখানে দেখি চাবি বানানর মেশিন ও আছে!!
সেই মুহূর্তে আমার হাতে কাজকাম বলে কোন জিনিস ছিল না। খালি রান্না করা আর খাওয়া। একদিন আমার রুমমেট কইল, আপনার সোশ্যাল তো এমনিতেই আসার কথা, মাগার ইদানীং দেখছি আইয়ে না। আপনের সোশ্যাল অফিসে যাইয়া এপ্লাই কইরা আসা লাগবে (সোশ্যাল সিনিউরিটি নাম্বার ওয়ালা কার্ডটা ছাড়া কেউ কাজ দেওয়া ইলিগ্যাল। কাজ পাইতে গেলে ওইটা মাস্ট)। আমি কই অক্কে! মাগার সমস্যাটা হইল আমি ওইখানে ক্যামনে যাইতাম। উনি আমারে কইলেন এইখান থেইকা ট্রেইন লইয়া অমুক ইস্টেশনে নামবেন, ইস্টেশন থেইকা বাইর হইয়া দেখবেন, “জাইরো”র দোকান গুলাতে বহুত বাঙ্গালি কাম করতেছে। আপনি ওইখানে যে কুনো বাঙ্গালি ভাইরে জিগাইলে আপনেরে দেখাইয়া দেবে। এরপর উনি আমারে ট্রেনের টিকিট কাটার অটোমেটেড সিস্টেমটা দেখাইয়া দিলেন।
পরের দিন তো আমি পুরাই এক্সাইটেড !!! ঘুম থেইকা তাড়াতাড়ি উঠছি!!! তারপর বাইর হইয়া ট্রেইন স্টেশনে গেলাম। টিকেটও মেশিন থেইকা কাটলাম। এখন টিকেট (মেট্রোকার্ডটা) ঘষা দিয়া ভিটরে যাওয়া লাগবে। আমি তো জানি না ক্যামনে গেঁটে ঘষা দেওয়া লাগবে। দাঁড়াইয়া দেক্তাছি যে লোকজন একের পর এক লোক চইলা যাইতেছে, মাগার আমার আর সাহস হইতেছে না। একবার সাহস কইরা ঘষাটা দিয়াই দিলাম। মাগার কাম হইল না। এরপর কার্ডটা উলটাইয়া পালটাইয়া করেকবার ঘষা দিলাম। একবার ভুলে কামটা হইয়া গেল আর এই বান্দা শিইখা গেল ক্যামনে মেট্রোকার্ডটা ইউজ করা লাগে। এরপর ট্রেইনে উইঠা পরলাম। ট্রেনে উইঠা পরলাম মহা ফাপড়ে! একটু পর পর স্টেশন এনাউন্স করতেছে মাগার আমি কিচ্ছুই বুঝতেছি না। কেরে? আমি না ক্লাস ওয়ান থেইকা ইংলিশ পইড়া বড় হইছি! বুদ্ধি কইরা ট্রেনের লেখাগুলা দেখা শুরু করলাম। ওইখানে দেখায় কুন স্টেশনে আছি, পরের কুনটা, তার পরে কুনটা...।।
একসময় ওই স্টেশনে পৌঁছাইলাম। ট্রেন থেইকা দৌড়াইয়া বাইর হইয়া পরলাম, বলা তো যায় না আগেই যদি দরজা বন্ধ হইয়া যায়!!! বহুত গলি ঘুপচি পার হইয়া একসময় এক্সিট সাইনটা দেইখা মাটির তলা দেইখা বাইর হওয়া পরলাম। দেখতাছি, আসলেই ছোট্ট ছোট্ট লোহার দোকান ঘরের উপ্রে আমাদের অনেক দেশি ভাই “হাট-ডাগ” আর “জাইরো” বেচতাছে। জানে পানি পাইলাম। যাইয়া এক দেশি ভাইয়ের লগে গল্প শুরু কইরা দিলাম আমি নতুন আইছি বইলা...। উনারে একটু পর জিগাইলাম, ভাই কইতে পারেন সোশাল সিকিউরিটি এডমিনিস্ট্রেশন এর অফিসটা কোন দিকে? উনি কইলেন যে উনি জানেন না। ব্যারথ হইয়া আরেক দেশি ভাইরে জিগাইলাম, উনিও জানেন না। কয়েকজনরে জিগাইয়াও জখন পাইলাম না তখন দেখলাম চেয়ারে এক বয়স্ক সাদা ভদ্রলোক বইসা আছে। মনে করলাম এরই জিগান লাগবে। সাহস কইরা তার সামনে খাড়াইলাম।
যাইয়া বহুত কষ্ট কইরা কইলাম, এস্কিউজ মি? লোকটা তারপরে মাথা তুইলা একরকম বিরক্ত হইয়া জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাইল। এইবার আমার পালা, আমি কি কইতাম। কিসের যেন ভয় চাইপা ধরছে আমারে, মুখ দিয়া কুনু কথাই বাইর হইতেছে না। পড়লাম মহা ফাপড়ে! একটু পরে বহুত জোরাজুরি কইরা মুখ দিয়া কইলাম “সোশ্যাল সিকিউরুটি অফিস?” । লকটা মনে হয় বুঝতে পারছে যে আমি নতুন পাবলিক, আমারে রাস্তার ওইপারে একটা বিল্ডিং দেখাইয়া দিল। আর আমিও থ্যাঙ্কিউ কইয়া বাইছা গেলাম।
রাস্তা পার হইয়া একটা দরজায় দেখি লেখা আছে, সোশ্যাল সিকিউরিটি এডমিনিস্ট্রেশন। আস্তে কইরা ভিত্রে ঢুইকা গেলাম। যাইয়া তো আমি আবার তব্দা খাইলাম। দেখলাম ওরা এইখানেও মানুষের জুতা খুইলা চেক কইরা/স্ক্যান কইরা ভিত্রে ঢুকাইতেছে। আমি তো মনে মনে করছিলাম এইরাম চেক খালি এয়ারপোর্টেই হয়। যাইয়া দেখি, গ্রামীণফোন সেন্টারে যেমন নম্বর লইয়া লাইন দেওয়া লাগত এইখানেও সেইরাম নম্বর দিয়া লাইন নেওয়া লাগতেছে। একটু পর যখন আমার পালা আইল, আমারে এক সুন্দরি মহিলা জিগাইল কি করা লাগবে, আমি ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় কইলাম, আমি নয়া পাবলিক, কার্ডের জন্য এপ্লাই করতে আইচি। সুন্দরি সব শুইনা আমারে একটা ফরম দিয়া, পূরণ কইরা আবার লাইন ধরতে কইল।
এইবার ফরম পূরণ কইরা আরেক সুন্দরির কাছে গেলাম, সুন্দরি আমারে কয় যে আমি কি প্রাইভেট বাসায় থাকি কি না? আমি কইলাম না তো। তারপরে উনি কইতেছেন, এপয়েন্মেন্ট নম্বর আছে কি না? আমি কই না। আমি কইলাম আমি তো এপইন্মেন্ট কইরা আসি নাই। সুন্দরি কয়েকবার একই প্রশ্ন কইরা বিরক্ত হইয়া কয় আমার নেটিভ ল্যাঙ্গুয়েজ কি? আমি মনে মনে কই ক্যারে? আমার নেটিভ ল্যাঙ্গুয়েজের কথে ক্যারে? সুন্দরির মতলবটা কি? উত্তর দিলাম বাংলা। উনি এরপর ফোনে কথা কওয়া শুরু করলেন। একটু পর উনি রিসিভারটা আমার দিয়ে বাড়াইয়া দিলেন। আমি তো আতংকিত হইয়া আস্তে আস্তে কইরা কইলাম। হ্যালো!
ওইপাশ থেকে মিষ্টি গলায় পরস্কায় বাংলায় এক সুন্দরি কইতেছে আপনার এপার্টমেন্ট নম্বর কি? আমি কইলাম টুট... টুট…। উনি কইলেন আপনি ফরমে এইটা লিখতে ভুলে গেছেন। তারপর উনি কইলেন আমার সামনের সুন্দরিরে ফোনটা দিতে। আর আমি এইদিক মনে মনে শরমে মাথার চুল ছিড়তেছি। সুন্দরি কইতেছিল এপার্টমেন্ট নম্বর আমি খালি শুনতেছিলাম এপয়েন্মেন্ট নম্বর। চুলামার। মান সম্মান বইলা আর কিছু থাকল না। এরপর তাড়াতাড়ি কইরা এপার্টমেন্ট নম্বরটা বসাইয়া দিয়া ফরমটা জমা দিয়া মানে মানে কাইটা পড়লাম। তার আগে সুন্দরি একটা ভুবনভুলানো হাসি দিয়া কইয়া দিল কয়েকদিনের মধ্যে দরকারি জিনিসটা পাইয়া যাইবেন।
আগের পর্বগুলার লিঙ্ক শূন্য, এক, দুই, তিন,চার, পাঁচ, ছয়, সাত,আট,নয়, দশ,এগার, বার, তের, চৌদ্দ।
(চলতে থাকপে......।)
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০১৬ সকাল ৯:৩৭