ধারাবাহিক উপন্যাস নগ্নবেলা কিস্তি-১
ধারাবাহিক উপন্যাস নগ্নবেলা কিস্তি-২
ধারাবাহিক উপন্যাস নগ্নবেলা কিস্তি-৩
নগ্নবেলা কিস্তি-৪
নগ্নবেলা-৫
নগ্নবেলা-৬
কিস্তি-৭
এসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারে না অহনা। হু-হ্যাঁ করে শেষ করে। খুব বেশি কিছু বললে বলে- চেষ্টা করছে মা। এইবার আসার সময় নিপুণের ব্যবস্থা কইরা তারপর আসবো।
মা আশ্বস্ত হন। খুশির রেখা ঝিলিক দেয় চোখে-মুখে। স্রষ্টার কাছে কৃতজ্ঞতা জানান। জামাইয়ের জন্য প্রাণ ভরে দোয়া করেন।
অহনা জানে মায়ের চাওয়ার পরিধিটা খুব বেশি নয়। নিপুণকে ইতালি পাঠাতে পারলেই তিনি খুশি।
মা যতটা সহজ-সরলভাবে প্রশ্নগুলো করেন- ততটা সহজভাবে উত্তর দিতে পারে না অহনা। স্বামীর সঙ্গে কখনও এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনাও তেমন হয় না। সে বুঝতে পারে; অন্তত আন্দাজ করতে পারে পারভেজের সীমাবদ্ধতা আছে। নিজের থাকা-খাওয়ার খরচ মিটিয়ে আবার বাড়িতেও টাকা পাঠাতে হয়। এসব সামাল দিতেই পারভেজকে গলদঘর্ম হতে হয়। হরহামেশাই নাওয়া-খাওয়ার সময় পায় না।
দু’একবার যে নিপুণের ব্যাপারে পারভেজের সঙ্গে কথা হয়নি তা নয়। তবে বোঝা যায়- পারভেজ সত্যি কথাটা বলতে পারে না অহনার কাছে। কেমন যেন গাইগুই করে। এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করে। মাঝে-মধ্যে বলে- হ্যাঁ দেখছি। আসলে...। এরপর বাকি কথাটা শেষ করতে পারে না পারভেজ। তাতে অনেকটা বুঝে নেয় অহনা। সে তখন অন্য প্রসঙ্গে চলে যায়। শরীর স্বাস্থ্যের খোঁজ নেয়। সময় মতো খাওয়া-দাওয়া করছে কিনা জানতে চায়। অহনা এও বুঝতে পারে- প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে নিলে স্বামী কিছুটা স্বস্তি পায়। অথচ এসব কথা মাকে বলতে পারে না। বললে তিনি কষ্ট পাবেন।
নিজের দেশ, জন্মভূমি। মাতৃভাষায় কথা বলে। এ দেশের শিক্ষা, সংস্কৃতির সঙ্গে বড় হয়েছে। বাবা একেবারে খারাপ পজিশনে নেই। তিনি ভাল চাকরি করেন। সমাজে তার একটা অবস্থান আছে। তার নিজস্ব একটা সার্কেল আছে। বড় পদে আছেন এমন অনেকের সঙ্গে সম্পর্ক আছে। তবুও ছেলের জন্য কিছুই করতে পারছেন না তিনি। মাস্টার্স পাস করে ছেলে বেকার। আর বিদেশ-বিভুঁইয়ে থাকে পারভেজ। লেখাপড়া তেমন নেই। বিদেশী ভাষা আয়ত্তে আনতে পারেনি এখনও। যে নিজেকে রক্ষায়ই হিমশিম খায়, সে কি করে অন্যের জন্য কিছু করবে?
মেট্রিক পরীক্ষা দিয়েছিল পারভেজ। পাস করতে পারে নি। এরপর চেষ্টা তদবির করে জমিজমা বিক্রি করে ইতালি চলে যায়। সাত-আট বছর ধরে সেখানে আছে। এক বছর আগে দেশে এসে অহনাকে বিয়ে করে আবার চলে গেছে। জাফর সাহেব রাজি ছিলেন না। মায়ের ইচ্ছাতে বিয়ে হয়েছে। বাবার সঙ্গে সেকি হট্টগোল। ছেলে ইতালি থাকে এতেই মা বেজায় খুশি। লেখাপড়া দিয়ে কি হবে। নিজের ছেলে মাস্টার্স করে বেকার পড়ে আছে- কই কিছু কি করতে পারছে তার জন্য। তবুও যদি মেয়ের জামাইয়ের কল্যাণে ছেলের একটা গতি হয়। শেষে বাবা কেমন ঝিম ধরে গেলেন। মায়ের কথায় শুধু- হয় হয় করে গেলেন। মায়ের অতি সামান্য একটা চাওয়া। পাঁচ ওয়াক্ত ছাড়াও নফল নামাজ পর্যন্ত পড়েন। জামাইয়ের জন্য দোয়া করেন। ছেলে একদিন ইতালি যাবে এ আশায় বুক বাঁধেন।
তখন সবেমাত্র বিবিএ-তে ভর্তির চেষ্টা করছে অহনা। বিয়ে হয়ে গেল। বিয়ের পর তিনমাস স্বামীর সংসার করেছে সে। পারভেজ চলে গেলে আবার পড়াশোনায় মন দিয়েছে। বিবিএ-তে ভর্তি হয়েছে।
আজ এত কথা মনে পড়ছে কেন বুঝতে পারছে না অহনা। রাত ক’টা বাজে। হাতের কাছে ঘড়ি নেই। সেল ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে রাত ৩টা ৪০ মিনিট।
বাথরুমে পানির কলটা বোধহয় ভাল করে বন্ধ করা হয় নি। পানি পড়ার শব্দ হচ্ছে। নিপুণের রুম থেকে কথা শোনা যাচ্ছে। কথাগুলো স্পষ্ট নয়। এত রাতে কার সঙ্গে কথা বলে ও। মনে হচ্ছে মোবাইল ফোনে কথা বলছে। মোবাইল ফোন কোথায় পেলো সে। আর কার সঙ্গেই বা এত রাতে কথা বলছে?
বিছানা থেকে নামলো অহনা। বাথরুমে গিয়ে মুখে ঠাণ্ডা পানির ঝাপটা দিলো। ডাইনিং রুমে গিয়ে দুই গ্লাস পানি খেলো। নিজের রুমে ঢুকবে এ সময় বেরিয়ে এলো নিপুণ। বললো-
আপু আমাকে পঞ্চাশটা টাকা দিবি।
এত রাতে টাকা দিয়ে তুই করবি?
সকালে হলেও চলবে।
কেন?
মোবাইলে টাকা নেই।
তুই মোবাইল পেলি কোথায়?
একজন আমাকে গিফট করেছে।
একজনটা কে?
তোকে পরে সব বলবো। দিবি কিনা বল?
সকালে মনে করিস।
আচ্ছা।
বিছানায় এসে শুয়ে পড়লো অহনা। ক্রমে ওর চারপাশ আবছা হয়ে এলো। কখন ঘুমিয়ে পড়লো টেরই পেল না।
ঘুম যখন ভাঙলো একটা বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে গেল অহনা। ঠিক কোথায় আছে মনে করতে পারছে না। চোখ খুলে দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকাতে বুকের ভেতরটা ধড়াস করে উঠলো। সেকেন্ডের কাটার টিকটিক শব্দটা যেন বুকের মধ্যে হচ্ছে।
সেল ফোনটা কখন থেকে একনাগাড়ে চিৎকার করছে। ধরতে ইচ্ছে করছে না। বিছানার সঙ্গে লেপ্টে আছে দেহ। কি গভীর আলিঙ্গন। চুম্বকীয় আকর্ষণ। কেউ কাউকে ছাড়তে চাইছে না। কি মোহময়ী মমতা! চোখের পাতাগুলো পরম স্নেহে একে অপরকে জড়িয়ে থাকছে। কিছুতেই আলাদা হতে চাইছে না। সেল ফোনটা কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে আবার হইহুল্লোড় শুরু করেছে। চোখ না খুলে বিছানা হাতড়ে ফোনটা হাতে নিয়ে কানের কাছে ধরলো অহনা। ওপাশ থেকে ভেসে এলো-
শুভ সকাল। আমি আহাম্মক নম্বর ছয় বলছি। এখন সকাল ৯টা বেজে পাঁচ। ঠিক এক ঘণ্টা ২৫ মিনিট পর তোমার ক্লাস। কাজেই আলসেমির বিছানা ছেড়ে তোমার ওঠে পড়া উচিত। এত রাত জাগো কেন? এ জন্যই তোমার চোখের নিচে কালি পড়েছে। রাখছি।