somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খ্যাতির লাগিয়া :: পর্ব-২

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ সকাল ৭:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একজন নবীন লেখকের প্রথম বই ছাপা হবার 'সকরুণ' ইতিহাস

বই ছাপতে গিয়ে প্রথম ধাক্কাটা ছিল একান্ত অপ্রত্যাশিত।
কয়শো বই ছাপবেন? তিনশো, না পাঁচশো? প্রকাশক মহোদয় সরল হেসে জিজ্ঞাসা করেছিলেন।
আমাদের দুজনেরই খটকা লাগলো। মাত্র তিনশো বই? বাংলাদেশে আটষট্টি হাজার গ্রাম আছে। প্রতি গ্রামে একটি করে বই পাঠালেও আটষট্টি হাজার বইয়ের দরকার হয়। মুহূর্তে ভুল ভেঙ্গে গেল। প্রতি গ্রামের হিসাবটা একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যায়। প্রতিটি থানায় যদি অন্তত দশটি করে বইও সাপ্লাই দেয়া হয় তবুও ৪৬০ গুণন ১০ অর্থাৎ ৪৬০০ বইয়ের দরকার পড়ে- এর সাথে অতিরিক্ত ৪০০, নিদেন পক্ষে ৫০০০ বই তো অবশ্যই ছাপা প্রয়োজন।
প্রকাশক মহোদয় আশ্চর্য হয়ে বললেন, এতো বই দিয়ে কী করবেন
আমরা তাঁকে খুব সুন্দরভাবে হিসাবটা বুঝিয়ে বলি।
তিনি ভুবন ভুলানো মিষ্টি হাসি হেসে বললেন, ৫০০০ বইয়ের জন্য তো প্রচুর খরচ পড়ে যাবে।
আবারো প্রকাশককে বুঝিয়ে বলি, এটা একটা রগরগে প্রেমের উপন্যাস। চলবে ভালো। ভাগ্য ভালো হলে সুহৃদ রহমানের এই এক বইয়ের দ্বারাই আপনি শীর্ষে পৌঁছে যেতে পারবেন।
তিনি ক্যালকুলেটরে ঠোকাঠুকি করে তাঁর চিরাচরিত হাসি ছড়িয়ে বললেন, প্রায় এক লাখের মতো খরচ পড়বে।
তাঁকে সাহস দিয়ে বলি, আল্লাহর নামে কাজ শুরু করে দিন।
তিনি আচমকা বলে বসলেন, টাকা কি একবারই দিবেন, নাকি ভাগে ভাগে দিবেন?
আমাদের চোখ কুঞ্চিত হয়। কপাল কুঞ্চিত হয়।
তিনি বললেন, অবশ্য সবাই একসাথে সব টাকা দিতে পারেন না। আপনাদেরও হয়তো এতোগুলো টাকা একবারে দেয়া সম্ভব হবে না। আচ্ছা ঠিক আছে, ভাগে ভাগেই দিবেন, কেমন? কাল পরশু হাজার বিশেক নিয়ে আসেন- টাকা হাতে পেয়ে কম্পোজে দিয়ে দিব।
আমি সুহৃদের মুখের দিকে তাকাই। সুহৃদ আমার মুখের দিকে তাকায়। আমরা পরস্পরের দিকে তাকাই। তারপর তাকাই প্রকাশকের দিকে। জিজ্ঞাসা করি, টাকার ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম না যে!
তিনি হেসে বলেন, বই ছাপানোর খরচ তো আর প্রকাশক দিবেন না। ওটা আপনাদেরকেই বহন করতে হবে।
একথা শুনে আমরা বাকরুদ্ধ হয়েছিলাম নাকি অধিক শোকে পাথর হয়েছিলাম তা সঠিক বলতে পারবো না। আমাদের বিসময়ের অন্ত ছিল না- বই বের করার এই ব্যাপারটা যে আমাদের কাছে একেবারে অজানা রহস্য ছিল তা বুঝতে পেরেই প্রকাশক মহোদয় সমুদয় রহস্য ভেদ করে দিয়েছিলেন। তাঁর ভাষ্যানুযায়ী- এদেশে মাত্র গুটিকতক প্রকাশনা সংস্থা গুটিকতক লেখকের বই প্রকাশকের নিজ খরচে ছেপে থাকেন, অন্যরা সেই আদিকাল থেকেই লেখকের গাঁটের পয়সায় লেখকের বই ছেপে আসছেন। আজকের খ্যাতিমান ও বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরীন তাঁর প্রথম দিককার বইগুলো নিজের টাকায় ছাপতেন। জীবন্ত কিংবদন্তি হুমায়ূন আহমেদও তাই করেছিলেন। প্রকাশক এবার আমাদেরকে উৎসাহ দিয়ে বলেন, ঘুমিয়ে আছেন হুমায়ূন আহমেদ সব লেখকের অন্তরে। অতএব, টাকা আনুন, বই ছাপি, যখন হুমায়ূন আহমেদ হয়ে যাবেন তখন ছয় মাস আগে লাখ টাকা অগ্রিম দিয়ে আপনার বইয়ের জন্য লাইন দিয়ে বসে থাকবো।
খ্যাতির মোহে মনে হলো সুহৃদের মাথা ঘুরে গেল- সে বই ছাপবেই, তবে পরিমাণে কিছু কম।
শেষ পর্যন্ত আমরা ৫০০০ এর স্থলে ৫০০ বই ছাপতে মনস্থ করি।

ঝকঝকে অফসেট কাগজে সুদৃশ্য মলাটে ৫০০ বইয়ের স্তূপ দেখে সুহৃদ আত্মহারা হয়ে পড়ে। সত্যি কথা বলতে কী, আমিও। এক ধ্যানে ছাপার অক্ষরে জ্বলজ্বলে নামটার দিকে সুহৃদ তাকিয়ে থাকে- এই নাম সাহিত্যের ইতিহাসে সোনার অক্ষরে লেখা হয়ে গেল- সে বহুদিন অমর থাকবে। আমি সত্যি সত্যিই সুহৃদের ব্যক্তিগত সহকারী (বরং উপদেষ্টা বলা ভালো) এবং স্খলনের স্বত্বাধিকারী বনে গেলাম।
বইয়ের স্তূপ দেখিয়ে প্রকাশক মহোদয় বললেন, ইচ্ছে করলে পুরো পাঁচশো বই আজই নিয়ে যেতে পারেন। সুহৃদের তো এই যন্ত্রণার দিকে এখন কোন খেয়াল নেই, আমি দেখি এ এক বিষম জ্বালা। এতো কষ্ট করে লেখা, নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে ছাপানো বই নিজেদেরকেই বহন করে বিভিন্ন বিক্রয় কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে হবে! লেখক হওয়া তো দেখছি দারুণ কষ্টের কাজ! রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্র, নজরুল- এঁদের বইয়ের কি এমন দশা হয়েছিল?
এ ব্যাপারটাও আমাদের জানা ছিল না। প্রকাশক মহোদয় ইতিহাস থেকে উদাহরণ টেনে বললেন, হুমায়ূন আহমেদ নিজে কাঁধে করে বাংলাবাজারের দোকানে দোকানে ঘুরেছেন, কেউ কেউ বই রেখেছেন, কেউ রাখেননি। আবারো তসলিমা নাসরীন- তিনি কতো কতো মানুষকে দিয়ে বিভিন্ন দোকানে বই চালান দেয়ার চেষ্টা করেছেন! প্রকাশকের কথা শুনে অনুপ্রেরণায় আমরা জ্বলে ওঠি।
শেষ পর্যন্ত খ্যাতিপ্রার্থী এই নব্য লেখকের খ্যাতির প্রচারণায় আরেক মহৎ প্রকাশক স্বেচ্ছায় এগিয়ে এলেন- তিনিই কনক ইসলাম।
কনক বললেন, বইমেলায় আপনারা সবাই আমার স্টলে এসে বসবেন। মনে করবেন, এটা আপনাদেরই স্টল।
কনক আমাদেরকে নাম ফুটাবার নানা ফন্দি ফিকিরের পথ দেখাতে লাগলেন। তাঁর স্টলেই বড় বড় কয়েক বান্ডিল বই এনে জমা রাখলাম, বাকিগুলো সুহৃদের বাসায়।
কনক পুরো বইমেলার বিভিন্ন স্টলে একটি দুটি করে স্খলন জমা দিতে লাগলেন। বইমেলায় সচরাচর নিজের স্টলে অন্য প্রকাশনার বই কেউ রাখতে চান না; নানা অজুহাতে, যেমন রাখবার জায়গা নেই, ইত্যাদি বলে তা ফেরত দেয়া হয়। তারপরও কনকের খ্যাতি ও আবদারের জোরে বেশ কিছু স্টলে স্খলন দেয়া গেল।
বিক্রির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন বুকস্টলে বই বিতরণ করা যে অতিশয় বিব্রতকর ও বিড়ম্বনাময় তা আমাদের জানা ছিল না।
সুহৃদকে সঙ্গে করে ব্যাগ ভর্তি বই নিয়ে আমি বহু বইয়ের দোকানে ঘুরেছি। তখন সুহৃদ কিন্তু লেখক-সুহৃদ নয়, আমার সহকারী। দোকানদারকে দুটি বই এগিয়ে দিয়ে বলি, আমাদের বন্ধুর লেখা একটি সাংঘাতিক উপন্যাস, রাখুন। পরে এসে আরো দিয়ে যাব- আজ দুটিই রাখুন। দোকানী বই নেড়ে চেড়ে পরখ করে- তারপর শুকনো মুখে ফেরত দিয়ে বলে, ভাই, শেলফে কোন জায়গা নেই। রাখা সম্ভব না।
এভাবে দু-চার-দশ দোকান ঘুরি- আমরা বুঝতে পারি না দোকানীরা আমাদের কাছ থেকে বই রাখে না কেন। আমরা কি চোরাই মাল পানির দামে বিক্রি করতে এসেছি? নিজের টাকায় ছাপানো বই, বাজারের সর্বোৎকৃষ্ট কাগজে ছাপানো হয়েছে। কোন দামের বিনিময়ে নয়, কোন চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করার বিনিময়েও নয়, বইগুলো নেহায়েত বিনা শর্তে দিতে চেয়েছি- ওগুলো শেলফে সাজানো থাকবে- সেলিনা হোসেন, হুমায়ূন আহমেদ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, ইমদাদুল হক মিলন, হুমায়ুন আজাদ, সমর মজুমদার, আরো কতো বিখ্যাত নাম- সেসব নামের পাশে আরো একটা নাম শোভা ছড়াবে- সেটি সাগর রহমান- মনের গভীরে এই আশা ছিল। ফার্মগেট, নিউমার্কেট, নীলক্ষেত ঘুরে ঘুরে হতাশ হয়ে, মন খারাপ করে ঘরে ফিরেছি। আমার মনের বেদনা মুখাবয়বে স্পষ্ট ফুটে উঠলে সুহৃদ আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছে, এতে মন খারাপের কী আছে? কেউ বই কিনবে না বলে কি বই লেখা বন্ধ করতে হবে? ওর অভিব্যক্তি দেখে মনে হয়েছে বইটির লেখক আমিই, সুহৃদ নয়।
সুহৃদের মাথায় দারুণ বুদ্ধি। সেই বুদ্ধির কথাই বলি। একদিন সে বড় বড় কয়েক বান্ডিল লিফলেট নিয়ে এলো বইমেলায়। লেখার ধরণটি এ রকমঃ

সৌজন্য কপি !
বেরিয়েছে
সাগর রহমানের প্রথম উপন্যাস
স্খলন
দাম ১২০ টাকা।
যারা বইপাগল,
অথচ বই কিনতে অর্থ নেই
কেবল তাঁদের জন্য রয়েছে
সৌজন্য কপি।

আমি হতবাক- বিনামূল্যে বই বিতরণ!
সুহৃদ বলে, লোকে পয়সা দিয়ে না কিনুক, সৌজন্য কপি হিসাবে পাওয়া বইটি তরুণ-তরুণীদের সংগ্রহে থাকবে- আমার বইটি পড়ে ওরা অত্যন্ত আকৃষ্ট হবে এবং পরবর্তী বইয়ের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করবে। তখন কিন্তু আমি কোন সৌজন্য সংখ্যা বিতরণ করবো না- সেসময় বাধ্য হয়ে ওদেরকে আমার বই কিনতে হবে।
ওর আত্মগরিমায় ও নিজে লজ্জা না পেলেও আমি লজ্জা পেতে থাকি। উৎসুক চোখে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলে ও বলে, ব্যবসা সবাই বোঝে না রে! আমাদের দেশে প্রথম দিকে বিনা মূল্যে চা সরবরাহ করা হতো। মানুষের মধ্যে যখন চায়ের নেশা ধরে গেল তখন বিনা মূল্যে চা সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হলো। নেশা হলো এমন জিনিস যে মানুষ তখন বাধ্য হয়েই দাম দিয়ে সেই চা কিনতে থাকে। আমার বইয়ের ব্যাপারে আমি সেই চা-বিক্রয় নীতিটি অনুসরণ করছি- তুই আপাতত লাভ লোকসানের কথাটি ভুলে যা।
আমি সুহৃদকে বলি, তুই কি সেই প্রবাদটি জানিস?
কোন্‌টি?
মাগনা পেলে মানুষ আলকাতরাও খায়?
সুহৃদ রক্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে দাঁত খিচিয়ে ধমকে উঠলো, করিম!
আমি শান্ত স্বরে বলি, অবশ্য তোর বইটিকে আলকাতরার সাথে তুলনা করছি না, কেবল মাগনা জিনিসের প্রতি মানুষের লোভের কথাটিই তোকে সমরণ করিয়ে দিচ্ছি। এরূপ সৌজন্য সংখ্যা বিতরণ করলে তোর পাঁচশো বই বিক্রি হতে ঘন্টাখানেকের বেশি লাগবে না। দুই হাজার কপি দ্বিতীয় সংস্করণ বের করার অর্ডারটা তাহলে আজই দিয়ে দে। দিবি?
সুহৃদের মন খারাপ হয়। সে দুঃখিত ভাবে বলে, মানুষ সম্পর্কে তোর এরূপ নিচু ধারণা পোষণ করা ঠিক নয়। তাছাড়া মানুষ তো এতো বোকাও নয় যে লিফলেট হাতে পেয়ে মাগনা বইয়ের লোভে ছুটে এসে স্টলে ভিড় জমাবে। লিফলেটে স্পষ্ট উল্লেখ আছে- যারা বইপাগল, অথচ বই কিনতে অর্থ নেই কেবল তাঁদের জন্য রয়েছে সৌজন্য কপি। সবাই যেমন বই-পাগল নয়, আবার সব বই-পাগলও বই কিনতে অসমর্থ নয়, এবং বই কিনতে অসমর্থ হলেও মাগনা বই নিতে যে সংকোচ বোধ করবে না তা কিন্তু নয়। অতএব, দেধারছে বই হাওয়া হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। অথচ বিজ্ঞাপনটার কি চমক তা তুই বুঝতে পারছিস? তোর মাথায় তো আবার এসব সূক্ষ্ম জিনিস ঢোকে না। দারুণ অভিনব স্টাইলের বিজ্ঞাপন- সৌজন্য কপি। মানুষ বই পড়ে না এই অপবাদটা আমি মানি না, আসলে মানুষের বই কেনার সঙ্গতি খুব একটা নেই। বই পেলেই মানুষ বই পড়ে। আমি মানুষের হাতে বই তুলে দিতে চাই। বিনা মূল্যে বই বিতরণের এই মহৎ উদ্যোগ দেখে মানুষ চমৎকৃত হবে। বই আর কয়টা বিলাবো, মাঝখান থেকে আমার নামটা চারদিকে ছড়িয়ে পড়বে।
আমি হাঁ করে সুহৃদের দীর্ঘ বক্তৃতা শুনি। সে আমার পিঠে চাপড় মেরে বলে, এসব স্ট্র্যাটেজি তোকে বুঝতে হবে রে দোস!
কিন্তু সুহৃদের কোন কূটবুদ্ধিই আমার পছন্দ হয় না। অবশ্য মানুষকে ধোকা দিয়ে অর্থ ও যশ-খ্যাতি অর্জনের সুযোগ হাতছাড়া করার মতো অতোখানি বোকা আমি নই। একই সঙ্গে, সুহৃদের বইগুলো এভাবে ওর কর্তৃত্বে ও বুদ্ধিতে উড়ে হাওয়া হয়ে যাবে তা-ও আমি চাই না। ও বই লিখেছে, নিজের টাকা খরচ করেছে, প্রয়োজনে আরো করবে, কিন্তু তা আমার নির্দেশ মতোই হতে হবে। সুহৃদ কে?
কারো মতের বিরোধিতা করে নিজের মত প্রতিষ্ঠার একটা সুন্দর পন্থা আছে, তা আমি অনেক ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করে থাকি। কোন মহৎ ব্যক্তি কখনো এরূপ করেছেন কিনা আমার জানা নেই। তবে আমি করি। ব্যাপারটা তেমন কিছুই নয়, বিপক্ষ ব্যক্তির ছোট খাটো দর্শনকে যুগোত্তীর্ণ, মহৎ এবং মানব কল্যাণকর আখ্যা দিয়ে নিজে যেটা চান সেটাতে গিয়ে বলতে হবে, আসলে আপনার এই মতবাদটা ঐ রকম না, এই রকম--- তারপর নিজের মতবাদটি বলুন। দ্বিতীয় ব্যক্তি ভাববেন, হ্যাঁ, উনি তো আমার সব মতের সাথেই একাত্মতা পোষণ করেছেন, যেহেতু এটার সাথে উনি একমত না তাহলে এ ব্যাপারে উনি যেটা বলেন সেটাই সর্বোত্তম পন্থা।
খ্যাতির লাগিয়া সুহৃদের লিফলেট-বিতরণ পরিকল্পনাকে অভিনব আখ্যা দিয়ে বললাম, তোর বুদ্ধির কোন তুলনাই নেই। তুই যে এত সুদূরপ্রসারী চিন্তা-ভাবনা করেছিস তা আমার মাথায়ই ঢোকেনি।
আমার কথায় সুহৃদ ডগমগ হয়ে ফুলে ওঠে।
আমি বলি, খ্যাতির শীর্ষে ওঠার এটা একটা মোক্ষম সুযোগ। তুই দেখে নিস, দুহাতে ঠেলেও মানুষের ভিড় কমাতে পারবি না। তবে বই কিন্তু সবাইকে দেয়া যাবে না।
কেন? সুহৃদ প্রশ্ন করে।
আমি বলি, সবাইকে বিনা মূল্যে বই দিলে মানুষ ভাববে এটা একটা অখাদ্য। বই দিতে হবে বেছে বেছে।
সুহৃদ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকায়। আমি বলি, সবাইকে বই দেয়া যাবে না। আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে। সহজলভ্য জিনিসের কোন কদর হয় না। একটা সৌজন্য কপি পাওয়ার জন্য মানুষের ঘাম ঝরিয়ে ছাড়বো।
ঘাম ঝরাবার দরকার কী?
কারণ নিষিদ্ধ এবং দুর্লভ বস্তুর প্রতি মানুষের লোভ ও আকর্ষণ চিরন্তন। কষ্ট করে বই হাতে পেলে মানুষ এটার কথা চিরদিন মনে রাখবে এবং চারদিকে বলে বেড়াবে। হুরহুর করে তোর নামও ছড়িয়ে পড়বে। আমি বললাম।
আরো বলতে থাকি, যারা বই নিতে আসবে তাদেরকে একটা কঠিন ইন্টারভিউর মধ্য দিয়ে আসতে হবে এবং কেবল উত্তীর্ণগণের সুহস্তেই অমূল্য উপন্যাসখানি তুলে দেয়া হবে। তবে, প্রাথমিক ইন্টারভিউতেই পঞ্চাশ ভাগ ছাটাই করে দিতে হবে।
এটা অন্যায় হবে। সুহৃদ দার্শনিকের মতো মন্তব্য করে। একটু চিন্তা করে তারপর বলে, কোন ছাটাই মাটাই না, কোন ইন্টারভিউয়েরও দরকার নেই। লিফলেটটা হবে একটা টোকেন বা পাসের মতো। যারাই স্টলে এসে এটা দেখিয়ে বই চাইবে, তাদের প্রত্যেককেই বই দেয়া হবে। আমি ক্রেতাদের সাথে কোন প্রতারণা করতে চাই না।
আমি বলি, লিফলেট তো কম করে হলেও পাঁচ হাজার হবে। যদি পাঁচ হাজার লোক এসে বইয়ের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ে, এতো বই কোথায় পাবি? ছাপিয়েছিস তো মাত্র পাঁচশো।
আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে বই দেয়া হবে। বই শেষ হয়ে গেলে কি বই বানাবো নাকি?
তাহলে তোর বিজ্ঞাপনে এই কথাটি যোগ করা দরকার ছিল- আগে আসলে আগে পাবেন। এতে ক্রেতাদের ছোটাছুটির দৃশ্যটাও উপভোগ করা যেত।
বইমেলা শুরু হয়েছে প্রায় দু-সপ্তাহের মতো, কিন্তু এ যাবত আমরা দু-অধমই কলুর বলদের মতো খ্যাতির জন্য খেটে যাচ্ছি। আমার কথা হলো, সুহৃদের নাম ফুটলে কি আমার নামও ফুটবে না? সজল, জাহিদ, নায়লা, পিয়াল, হারুন- ওদের নামও কি ফুটবে না? বিখ্যাত সুহৃদ রহমানের বই দেখিয়ে কি আমরা সবাই বলবো না, এ লোকটা (বা ছেলেটা বা লেখকটা) আমার (বা আমাদের) বন্ধু? তবে ওরা আসছে না কেন? দেখছে না কেন যে খ্যাতি কিনতে হলে কতো কষ্ট করতে হয়? এবার আসুক ওরা, আমি জম্মের মজা দেখাব।
সকল প্যাঁচাল বন্ধ করে লিফলেট বিতরণ শুরু করলাম। চার-পাঁচটা টোকাই ভাড়া করা হলো। ওদের হাতে লিফলেটের বান্ডিলের সাথে ওদের প্রাপ্য পারিশ্রমিকও অগ্রিম দিয়ে দিলাম। চোখের পলকে ওরা হাওয়া হয়ে গেল। আমি সুহৃদের ভিতরকার ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার আভাস পাই- ও ভাবছে, প্রতি সেকেন্ডে প্রতি মিনিটে লিফলেটগুলো অসংখ্য-অগুণতি মানুষের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে- ওটাতে এক নজর চোখ বুলিয়েই তাঁরা একজন লেখকের নাম জীবনে এই প্রথম বারের মতো দেখতে পাচ্ছেন- সাগর রহমান, সাথে তার বইটির নামও- স্খলন। কতো কতো মানুষের কাছে সুহৃদের ছদ্ম নামটি পৌঁছে যাচ্ছে, তার নাম ছড়িয়ে পড়ছে, সুহৃদ তখন এই উত্তেজনায় বুঁদ হচ্ছে।
আমরা নিজেরাও লিফলেট বিতরণ শুরু করলাম। তবে এই প্রথম দেখলাম লিফলেট বিতরণ করতে গিয়ে সুহৃদ সংকোচে মিইয়ে যাচ্ছে, ওর দেখাদেখি আমিও।
বাংলা একাডেমির বটমূলে পা ঝুলিয়ে বসেছিল অনেক তরুণ-তরুণী। বিশেষ রোগের বিশেষ লিফলেট ছড়ানোর মতো আমি সবার সামনে গিয়ে দ্রুত লিফলেট ছাড়ছিলাম। কেউ হাত বাড়িয়ে নিল, কারো হাত গলে নিচে পড়ে গেল, কারো উরুর ওপরে লেগে রইল। হঠাৎ আমার খেয়াল হয়, আমার এই কার্যকলাপে অনেকে বিরক্ত হচ্ছে। কেউ কেউ মজা পেয়ে ঠাট্টা-রসিকতা করছে।
জনাব সুহৃদ রহমান কোথায়? চারদিকে তাকিয়ে ওকে খুঁজি। দেখি, এক তীক্ষ্ণ ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন সুহৃদ দুহাত বুকের ওপর পাকিয়ে সিহর দাঁড়িয়ে আছে, আমার দিকে ওর ধ্যান-মগ্ন দৃষ্টি। মেজাজটা গেল বিগড়ে। ওর নাম ফুটাবার জন্য আমি জুতার তলা খসাব, আর উনি বাবুর মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তা দেখবেন? বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডে এ ঘটতে দেয়া যায় না। রক্ত-চোখে ওর দিকে তেড়ে গিয়ে ঝাঁঝালো স্বরে বলি, আমি কি তোর চাকর নাকি? এই নে- ওর হাতে সবগুলো লিফলেট সঁপে দিয়ে আমি সুরসুর করে মঞ্চের দিকে রওনা হলাম।

একাডেমি চত্বরের মঞ্চে আজ একটি যাত্রাপালা মঞ্চসহ হচ্ছে। একটি মেয়ে অতি করুণ আর সুরেলা কণ্ঠে খালি গলায় টেনে টেনে পল্লীগীতি গাইছে যার ভাবার্থ- ঘর ছেড়ে শহরে পড়তে যাওয়া ভাইটি আর ফেরত আসেনি। বইমেলার ভিতরে মানুষের অনর্গল কোলাহল, অথচ এই চত্বরে এই পড়ন্ত বিকেলে উপবিষ্ট শ্রোতারা তন্ময় হয়ে মেয়েটির গান শুনছে। এতো সিহর, অনড় আর মগ্ন হয়ে মানুষকে গান শুনতে আমি কখনো দেখিনি। মেয়েটির কণ্ঠেও যেন কী এক অপূর্ব সুধা ঝরে। ফোক গানের খুব একটা ভক্ত আমি নই, তারপরও আব্দুল আলীম, আব্বাস উদ্দিন ও তদীয় পুত্র মোস্তফা জামান আব্বাসী, ফরিদা ইয়াসমিন- এঁদের গান আমি মনোযোগ দিয়ে শুনি- মনের টানেই আমার মনোযোগ হয়। এই অভ্যাসটি অবশ্য একেবারে আমার জন্মগত অভ্যাস নয়, সুহৃদের সাথে থাকতে থাকতে ওর থেকেই আমি কিছুটা আবেশিত হয়েছি।
আমি আশ্চর্য হলাম- সুহৃদ কি কালা? বধির? বটমূলের যে জায়গাটাতে ও দাঁড়িয়ে আছে ওখান থেকে এ গানের সুর নিশ্চয়ই ওর কানের ভিতরে ঢুকবে- যে গান শোনার জন্য সুহৃদ নাওয়া-খাওয়া-ঘুম ভুলে গিয়ে, বহু পথ পায়ে হাঁটার কষ্টের কথা ভুলে গিয়ে ছুটে যায় জল-কাদা ডিঙ্গিয়ে, রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে দূরের- অতি দূরের প্রত্যন্ত গাঁয়ে; বড় বাড়ির রাখাল-কামলারা রাত জেগে মুর্শিদী-ভাওয়ালী-কাওয়ালী গায়, সুহৃদ তাদের সাথে মিশে যায়; আশ্বিনে গাঁয়ে গাঁয়ে নবান্নের উৎসব হয়- জারি-সারি-মারফতী গানের ধুম পড়ে যায়, সুহৃদ সেসব গানের আসরে গিয়ে একেবারে বয়াতীদের গা ঘেঁষে বসে, দোহারীদের সাথে তাল মিলায়; কোথায় মধুমালা-মদন কুমারের যাত্রাপালা, আলোমতি-প্রেমকুমার, সয়ফল মূলক-বদিউজ্জামান, রহিম বাদশা-রূপবান কন্যার যাত্রা পালা হবে- অজানা কোন্‌ ভ্রমর এসে সুহৃদের কানে কানে এসব খবর বলে যায়, সুহৃদ সেখানে ছুটে যায়- নাওয়া-খাওয়া-ঘুম ভুলে সেখানে মজে থাকে। এই সুহৃদ কি সেই সুহৃদ? ওর ঠিক কানের কাছে অনবরত গানের সুর ভেসে আসছে, আর সেই সুরের প্রতি ওর বিন্দু মাত্র আকর্ষণ নেই। ওকে এখন খ্যাতির নেশায় ধরেছে, বই ছাপানোর নেশায় ধরেছে। ওকে খ্যাতির শীর্ষে যেতে হবে। পল্লীগীতির মোহ আর নেই।
ছোটবেলা থেকেই এসবের প্রতি সুহৃদের দারুণ ঝোঁক। প্রথম প্রথম আমরা ওকে গেঁয়ো ডাকতাম- আধুনিক যুগের ছেলেরা যাত্রা আর পল্লীগান নিয়ে এতো মাতামাতি করবে কেন? ওরা সিনেমা দেখবে- দেশী সিনেমা, বিদেশী সিনেমা- বড় বড় ইংলিশ মুভিগুলোর ফিলসফি নিয়ে আলোচনা করবে- নিজ জীবনে তা থেকে শিক্ষা কিংবা কু-শিক্ষা নিবে। আর ও-কিনা---। কিন্তু আমাদের এই সমালোচনাকে ও মোটেও পাত্তা দিত না। ওর অহংকার আরো বেড়ে গেল নবম শ্রেণীতে ওঠার পর। বাংলা সাহিত্যে আমাদের পাঠ্য তালিকাভুক্ত পল্লী সাহিত্য পড়েই ও আমাদের চোখে খোঁচা দিল- এটা পড়েছিস? এই নামটা দেখ- ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। এই পণ্ডিত ব্যক্তি বলেছেন- পল্লী সাহিত্যই হলো সাহিত্যের প্রাণ। তোরা তো সাহিত্যই বুঝিস না, সাহিত্যের প্রাণ বোঝার মতো জ্ঞান তোদের কোত্থেকে হবে?
অনেক পরে হলেও আমি সুহৃদের সাথে এ ব্যাপারে একমত হতে পেরেছি, তবে তা সঙ্গোপনে, প্রকাশ্যে ওর সাথে একমত হওয়ার অর্থ আমার ওপর ওর আধিপত্য প্রদর্শনের ক্ষমতা প্রদান করা।
সুহৃদ বলে, আমরা যতোই ইংলিশ আর হিন্দী গানে মাতামাতি আর মাখামাখি করি না কেন, পল্লীগানের সুরেই কিন্তু আমাদের নাড়ীর টান ধরা পড়ে। আমি ওর সাথে একমত। তবে পরিতাপের বিষয় হলো, আব্বাস উদ্দিন আর আব্দুল আলীমকে বাদ দিলে আমাদের দেশের কোন বড় শিল্পীই কিন্তু পল্লীগীতির প্রতি কোনরূপ ঝোঁক দেখাননি। তবে বড় শিল্পীরা যে পল্লীগীতি একেবারে গাননি তাও কিন্তু নয়। আশ্চর্যের বিষয় হলো, তাঁরা যে গানটাই গেয়েছেন, ওটাই তাঁদের হিট গানে পরিণত হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়- রূপ সাগরে ঝলক মারিয়া কি রূপ তুই দেখালি মোরে- কুমার বিশ্বজিতের কণ্ঠে শুধু এই গানটিই নয়- তোমরা একতারা বাজাইও না গানটি তো এখন সর্বশ্রেণীর প্রিয় গানে পরিণত হয়েছে। সর্বশেষ ডলি সায়ন্তনীর কোন্‌ বা পথে নিতাই গঞ্জ যাই কিংবা প্রাণের বান্ধবরে, বুড়ি হইলাম তোর কারণে- তপন চৌধুরীর জ্বালাইয়া গেলা মনের আগুন সহ আরো প্রচুর গান আজকাল মানুষের মুখে মুখে ফেরে। এগুলো তো গেল সেই গান যে-গুলোকে আমরা পল্লীগান বলে চিহ্নিত করে থাকি। আধুনিক, ছায়াছবির গান বা অন্য যে কোন গানই হোক না কেন- যে-গুলোতে পল্লীগানের সুরের ছোঁয়া আছে সেগুলো কিন্তু অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছে। এখানে জনপ্রিয়তারও একটা মানদণ্ড উল্লেখ করা আবশ্যক। জনপ্রিয়তা হতে পারে সহান ভেদে, সময় ভেদে, আবার সামগ্রিকভাবে। ১৪ কোটি মানুষের বাংলাদেশে যদি ২ কোটি লোকের বাস হয় শহরে, তাহলে যে গানটি শহরের ৫০ ভাগ নাগরিকের পছন্দ, সামগ্রিক হিসাবে তা মাত্র ৮ ভাগ জনপ্রিয়। অন্যদিকে, একটি পল্লীগান গ্রামাঞ্চলের ২০ ভাগ মানুষের প্রিয় হলেও সামগ্রিক ভাবে তা ১৫ ভাগের ওপরে, যা শহুরেদের দ্বিগুণ। শহুরে প্রায় গানই খুব দ্রুত আসে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দ্রুত হারিয়ে যেতে থাকে। পল্লীগীতি হলো মাঝিদের গান, জেলেদের গান, কৃষকের, মজুরের, রিক্সাওয়ালার, রাখালের গান- আপামর ও আসল মানুষের গান, যা তাঁদের প্রাণের গান, প্রাণ থেকে বেরিয়ে আসা গান, প্রাণের ভিতরেই জীবন্ত থাকে সেই গান- বর্ষায় মাছ ধরার সময়, গুন টানার সময়, নৌকা বাওয়ার সময়, রাখালের গরু চরানোর সময় সেই গান আপনা থেকেই বাজতে থাকে।

সুরের মূর্ছনায় শহুরে এবং অ-শহুরে নির্বিশেষে সবাই নিমগ্ন হয়ে আছে- আমি যখন হেঁটে ভিতরে প্রবেশ করছিলাম আমার পায়ের আওয়াজ খুবই রুক্ষ ও প্রকট হচ্ছিল। সাবধানে একটি চেয়ারে বসে পড়লাম এবং সজ্ঞানে আমার ডানের চেয়ারটি খালি রাখলাম।
সুহৃদ আমার ডানের খালি চেয়ারটিতে এসে বসে আমার হাতে চাপ দিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে, অপূর্ব!
আমি গায়িকা মেয়েটির রূপের প্রতি দৃষ্টিপাত করি- সুন্দরী বটে, তবে কালো- পাউডার মাখিয়ে শরীর ফর্সা করা হয়েছে। ফর্সা না বানালেও চলতো, ওর গানেই আমি মুগ্ধ হয়েছি।
সুহৃদ আবার আমার হাতে চাপ দেয়। নিচু স্বরে জিজ্ঞাসা করে, কী বলিস? আমি বিরক্ত চোখে ওর দিকে তাকাই। ও একটা অশ্লীল শব্দ উচ্চারণ করে বলে ওঠে, এ -টা এতোদিন কোথায় ছিল?
আমি মৃদু ভর্ৎসনা করে বলি, ষ্টুপিড!
সুহৃদ বলে, আমি ডলি সায়ন্তনীর কণ্ঠেও কোনদিন এমন গান শুনিনি।
ডলি সায়ন্তনী দেখতে সুন্দরী, লাবণ্যময়ী, ওর প্রথম ক্যাসেট হে যুবক শুনে আমি ওর জন্য পাগল হয়েছিলাম। সুহৃদও পাগল হয়েছিল, তবে ঠিক ডলি সায়ন্তনীর জন্য নয়, ও পাগল হয়েছিল ওর গানের জন্য। আর ডলি সায়ন্তনীর গান ওর যেজন্য ভালো লাগে তারও একটা পটভূমি আছে বইকি।
প্রথম যৌবনে, কিংবা কৈশোর ও যৌবনের দুর্বিষহ সন্ধিক্ষণে যে সহপাঠিনীকে ওর প্রচুর ভালো লেগেছিল, সাপের কামড়ে যদি সেই মেয়েটির মৃত্যু না হতো, বহুদিন পর হঠাৎ হে যুবক ক্যাসেটের প্যাকেটের গায়ে ডলি সায়ন্তনীর ছবি দেখেই সে চমকে লাফিয়ে বলে উঠতো- বীনা- বীনা----
বীনার মতো সুন্দরী মেয়েকে দেখলে যে কোন যুবকের হৃদ্‌স্পন্দন দ্রুত হতো- আমরা কেউ বীনার কাছাকাছি যেতে পারিনি, যেতে পেরেছিল শুধু সুহৃদ, একান্ত কাছাকাছি, বীনার মনের গহীন আঁধারে সুহৃদের জন্য একটি ভালোবাসার দীপ জ্বলেছিল। সুহৃদের প্রতি আমাদের সে কী ঈর্ষা আর ক্ষোভ!
জাংলা থেকে লাউশাক কাটতে গিয়ে সবুজ লাউ-লতার মতো চিকন সুতানলী সাপ বীনার হাতে দংশন করেছিল। বীনা যখন হারিয়ে গেল, মনে হয়েছিল আমার বুকটাও ভেঙ্গে খানখান হয়ে গেছে। আমার মতো সকল যুবকের বুকে ছিল সুদীর্ঘ দীর্ঘশ্বাস। আমরা সবাই যেন প্রিয়াহারা, পরাজিত সৈনিক- অন্তরের শত্রুতা ভুলে সুহৃদের সাথে বুক মিলাই, ওর মতোন করে চোখের অশ্রু ফেলি।
এরপর বহুদিন চলে গিয়েছিল। আমি, স্বপন আর খায়ের তখন লক্ষ্মীবাজারের এক মেসে থাকি, সুহৃদ মাঝে মাঝে এসে আড্ডা দেয়। একদিন সুহৃদকে সঙ্গে নিয়ে আমি গিয়েছিলাম আমার খালার বাসায়। আমার খালুজান পিডিবিতে চাকরি করেন, বছর খানেক যাবত আগারগাঁওয়ের কলোনিতে বাসা নিয়ে থাকতে শুরু করেছেন।
ঋতু, আমার খালাত বোন, আমি যার প্রেম-প্রার্থী, কিন্তু আমার প্রেমে যার আদৌ কোন আস্থা নেই বলে মনে হয়- কখনো মনে হয় তাকে আমি পেয়েছি, আবার মনে হয় তার কূল আমি কখনোই পাবো না- সে আমার জন্য একটা হে যুবক কিনে রেখেছিল। আমার কোন রেডিও-ক্যাসেট প্লেয়ার ছিল না, কিন্তু স্বপনের ছিল। একদিন দুপুরে হুট করে আমাদের সেই অস্বাস্থ্যকর মেসে এসে ঋতু দেখেছিল, আমরা অতি পুরনো দিনের পরোটা ভাজার হিন্দী গান শুনছি, অতি নিবিষ্ট মনে। ঋতুর অভিব্যক্তিতে আমাদের পশ্চাৎপদতার ওপর কোন কটাক্ষ ধরা পড়েনি। সে হয়তো কেবল অবাক হয়ে ভাবছিল আমরা তিনটি প্রাণী কী করে ওখানে থাকি।
যখন ঋতু আমার হাতে ওটি দেয়- ক্যাসেটের কভারটি দেখেই সুহৃদ চমকে ওদিকে তাকায়। তারপর আমার হাত থেকে নিজের হাতে নিয়ে মুগ্ধ চোখে এক ধ্যানে ডলি সায়ন্তনীর দিকে তাকিয়ে থাকে, অনবরত আঙ্গুল বুলাতে থাকে।
ডলি সায়ন্তনীর চেয়ে ঋতু দেখতে অনেক অনেক সুন্দরী। তেমনি ঋতুর চেয়ে বীনা ছিল আরো ধারালো। কিন্তু সুহৃদ পুরুষ হয়েও ঋতুর দিকে ঘন ঘন তাকায়নি, একবারের দৃষ্টিতে ২-৩ সেকেন্ডের বেশি দৃষ্টি সিহর রাখেনি। আমি লক্ষ্য করেছি, সেই স্বল্পক্ষণের চোখাচোখির সময় ঋতু অতিশয় মৃদু মুচকি হেসেছে, যার আঘাতে দু-চারটি পাহাড় ধ্বসে যেতে পারে, কিন্তু সুহৃদের মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়া নেই। সুহৃদের এরূপ প্রতিক্রিয়াহীনতায় আমি নিশ্চিন্ত এবং যুগোপৎ শংকিত হচ্ছিলাম। আমি ঋতুর মন পেতে চাই, কিন্তু তার মনের নাগাল পাওয়া যায় না, সে-মন কেবলই উড়ে বেড়ায়, কিছুই বোঝা যায় না। সুহৃদকে নিয়ে এ বাসায় ঢোকার পরই মনে হয়েছিল, বিলকুল ভুল হয়ে গেছে। ঋতুর সামনে সুহৃদ আমার সাক্ষাৎ প্রতিদ্বন্দ্ব্বী; সর্বগুণে ও আমার চেয়ে অনেকাংশে শ্রেয়তর। আমি সুহৃদের কাছে হেরে যাব? রাজকন্যাকে এই বুঝি হারালাম নিজের ভুলের জন্য।
সুহৃদকে একেবারে নির্জীবের মতো থাকতে দেখে আমি খুব শংকামুক্ত হলাম, নাহ্‌- কোন ভয় নেই। সুহৃদ আমার খুব ভালো বন্ধু, বিশ্বস্ত বন্ধু, আমার আরাধ্য ধনের দিকে ও হাত বাড়াবে না।
ঋতুর প্রতি সুহৃদের অনাগ্রহ আমাকে খুব চিন্তিতও করে তুললো।
কখনো কোন সুন্দরীর প্রতি উপেক্ষা প্রদর্শন করেছেন? রুক্ষ স্বরে কথা বলেছেন? তাচ্ছিল্য প্রদর্শন করেছেন? রক্ত মাংসে গড়া সুসহ মস্তিস্কের তরুণেরা তো কোন সুন্দরীর সাথে এক টুকরো কথা বলতে পারলেই বাকি জীবনের জন্য ধন্য, কটু কথা বলার ঘটনা কেউ ভাবতেই পারে না। কিন্তু দৈবাৎ একটি ছেলে, যেমন সুহৃদ যখন এই রূপবতী মেয়েটির প্রতি ক্রমাগত উপেক্ষা প্রদর্শন করে আসছিল, আমার বিশ্বাস সুহৃদের প্রতি ঋতুর আকর্ষণ ততই ঘনীভূত হচ্ছিল। যে-সুন্দরীকে সবাই পূজা করার সুযোগ পেয়ে ধন্য, তার প্রতি কোন আকর্ষণ দেখাবে না সে কেমন যুবক? তাকে দেখে নেয়া চাই। আর দেখে নিতে গিয়েই হয়ে যায় সমর্পিতা।
সুহৃদের তখন এক ধ্যানে ঋতুর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকার কথা ছিল। ও তা করেনি। ও কেবলই দেখছিল জ্ঞডলি সায়ন্তনীঞ্চ নামক একটি উঠতি গায়িকাকে- তাঁর গানের ক্যাসেটের কভারে বন্দি ছবিটাকে।
আমি ডলি সায়ন্তনীর চেহারায় বীনার কোন ছিটেফোঁটা দেখি না। আমি সজলকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। কৌশিককে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। জাহিদকে, পিয়ালকে, হারুনকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। নায়লা, ঝিনুক এবং পিংকিকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। জিজ্ঞাসা করেছিলাম নার্গিসকেও। ওরা সবাই আমার সাথে একমত- সুহৃদকে বীনা-রোগে ধরেছিল।
সুহৃদ একদিন আমাকে বলে, করিম, তুই কি পুনর্জন্মে বিশ্বাস করিস?
আমি বলি, পুনর্জন্মে না, আমি পুনরুত্থানে বিশ্বাস করি। কারণ আমি মুসলমান। তুই যদি মুসলমান হয়ে থাকিস, তাহলে এমন প্রশ্ন আর মুখে আনবি না, খবরদার।
সুহৃদ চুপসে যায়। তবে আরেকদিন ও কায়দা করে বলে, আমার কী মনে হয় জানিস? মনে হয় বীনা মরেনি।
আমি আশ্চর্য হই ওর কথায়। ও বলে, বীনাকে তো পোড়ানো হয়নি। সাপে-কাটা মানুষের কোন সৎকার করা হয় না। কলার ভেলায় পানিতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। যদিই বা কোন ওঝার অছিলায় সেই মড়া বেঁচে ওঠে!
আমি ওকে একটা কঠিন বকা দিয়ে বলি, তোর মনে এতোসব আজগুবি কথা আসে কোত্থেকে? ওর সৎকারের সময় আমরা ছাত্র-শিক্ষক সবাই ওদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। তুই আমার পিঠ ঘেঁষে পেছনে দাঁড়িয়ে তোর চোখের পানিতে আমার জামা ভিজিয়ে দিচ্ছিলি। মনে নেই?
সুহৃদ আমার কথা বিশ্বাস করলো না। বললো, আমার মনে পড়ে না। আমি তো জীবনে কোন পোড়ানোও দেখিনি, কবর দেয়াও দেখিনি। তুই বোধ হয় কোন স্বপ্ন-টপ্নের কথা বলছিস।
আমি সুহৃদের মনের কথা বুঝতে পেরেছিলাম। ওর বিশ্বাস, বীনা মরে যাওয়ার পর ডলি সায়ন্তনী হয়ে জন্মলাভ করেছে। দ্বিতীয় জনমে বীনা ওর পূর্ব জনমের রূপ নিয়েই জন্মেছে, কিন্তু কোন সমৃতিই বয়ে আনেনি। আনলে কি সে সুহৃদকে এভাবে ভুলে থাকতে পারতো?
আমি ওর ভুল ভাঙ্গিয়ে দিয়েছিলাম। বীনার মৃত্যুর সময় আমাদের সবার বয়সই ছিল ১৩-১৪র কোঠায়। বীনার মৃত্যুর প্রায় পাঁচ-সাত বছর পর ডলি সায়ন্তনীর আবির্ভাব- এ যদি পূর্ব জন্মের বীনাই হতো তবে ডলি সায়ন্তনীর বয়স তো মাত্র পাঁচ কী সাত বছর হওয়ার কথা, তাঁর বয়স কম করে হলেও বিশ বছর হবে। এক জীবন শেষ হওয়ার আগেই তো আর অন্য জীবনে পুনর্জন্ম হতে পারে না। তাছাড়া, পুনর্জন্ম হলেই যে পূর্ব জন্মের আদল নিয়ে জন্মাবে তা-ও কি সম্ভব? অন্য যে বিষয়টি হাস্যকর তা হলো কেবল সুহৃদের কাছেই মনে হয়েছে যে ডলি সায়ন্তনীর চেহারা অবিকল বীনার মতো- আর কেউ এটা মানে না।
কিন্তু সুহৃদ কিছুতেই আমার বোঝ গ্রাহ্য করে না, ওর সেই এক গোঁ, বীনা মরেনি, ওকে সাপে কেটেছিল, কলার ভেলায় ওর মরদেহ ভাসিয়ে দেয়া হয়েছিল। ঐশী ক্ষমতা প্রাপ্ত কোন ওঝার অলৌকিক কেরামতিতে বীনা বেঁচে উঠেছিল। ওর বিশ্বাসের মূলে এক অতি উদ্ভট যুক্তি ছিল- বেদের মেয়ে জোসনা নাকি সত্যিকারের ঘটনা। ওর মতো মননশীল ও আধুনিক লেখকের দেখার কথা রোমান হলিডের মতো কালজয়ী মুভি-সিনেমা, অন্তত বাংলাদেশের বিখ্যাত আর্টফিল্মগুলো, আর ও কিনা অতি সাধারণ মানুষের ছবি দেখে দেখে দিন দিন নির্বুদ্ধি হচ্ছে! আমার খুব আফসোস হয়েছিল।

মেয়েটির গান গাওয়া শেষ, এখন দৃশ্য পরিবর্তন। মঞ্চ খালি। শ্রোতাদের মধ্যে মুগ্ধ প্রতিক্রিয়ার সরব গুঞ্জরণ ভেসে ওঠে।
সুহৃদ আমাকে ঠেলা দিয়ে বলে, কিছু লিফলেট তোর বাম দিকের লোকটার হাতে দে। উনাকে বল বাম দিকে একটা করে পাস করতে।
আমার মেজাজ তখনো তিরিক্ষি। ওর দিকে তাকাই। ও বলে, এতো রাগ দেখাচ্ছিস কেন? এগুলো কি শেষ করতে হবে না?
আমি সুহৃদকে বলি, তারচে বরং তুই এক কাজ কর। প্রত্যেক সারির প্রথম লোকের হাতে তুই একগুচ্ছ করে লিফলেট ধরিয়ে দে, তারপর বলে দে ওগুলো তাদের পাশের লোকের হাতে পাস করার জন্য।
সুবোধ এবং বাধ্যগত বালকের মতো সুহৃদ আমার আদেশ পালন করে। কাজ শেষ করে আবার পাশে এসে বসে।
আমার বাম পাশের লোকটা খুব উৎসাহিত হয়ে আমার কাছ থেকে একটা লিফলেট চেয়ে নেন। ওটা পড়ে তিনি আরো উৎসাহিত হয়ে পড়েন, তাঁর দেখাদেখি তাঁর পাশ থেকে আরো একজন, আরো একজন, এভাবে প্রায় দশ-বারো জনের হাতে আমাদের লিফলেট পৌঁছে যায়।
আমরা একটা নতুন উত্তেজনা অনুভব করতে থাকি।
একটা ছেলে, কাঁধে ওর কবিতার ঝুলি হবে হয়তো, হয়তো কবি হবার সাধনা এবং অধ্যবসায়ে ব্যাকুল, হাসি মুখ নিয়ে পেছনে এসে মাথা নিচু করে আমার কানের কাছে তার মুখ আনে। তারপর নরম স্বরে জিজ্ঞাসা করে, ভাই, বইটা কি আপনার লেখা?
বিব্রতকর প্রশ্ন। যদি বলি আমার নিজের লেখা তাহলে মিথ্যা বলা হয়। ছেলেটি ভাববে নিজের বইয়ের বিজ্ঞাপনের জন্য নিজেই লিফলেট ছাড়ছি। যদি বলি আমার লেখা নয় তাহলে তার পরবর্তী প্রশ্ন হবে সুহৃদকে লক্ষ্য করে। সুহৃদ এ প্রশ্নের উত্তর এড়াতে পারবে না। ছেলেটি তখন সুহৃদের সম্পর্কে একই জিনিস ভাববে।
ছেলেটি বললো, আপনাদের সাথে আমি একটু কথা বলতে চাই।
কথা বলবেন? বলুন।

খ্যাতির লাগিয়া, উপন্যাস, প্রকাশিত একুশে বইমেলা ২০০৪

খ্যাতির লাগিয়া পর্ব-১
খ্যাতির লাগিয়া পর্ব-২
খ্যাতির লাগিয়া পর্ব-৩
খ্যাতির লাগিয়া পর্ব-৪
খ্যাতির লাগিয়া পর্ব-৫
খ্যাতির লাগিয়া পর্ব-৬
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৫:২৯
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×