somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খ্যাতির লাগিয়া :: পর্ব-৫

০১ লা অক্টোবর, ২০০৮ সকাল ১০:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একজন নবীন লেখকের প্রথম বই ছাপা হবার 'সকরুণ' ইতিহাস


বাল্যশিক্ষায় আমাদের পাঠ্য বইয়ে ছিল- 'গণি মিয়া একজন কৃষক। তাহার কোন নিজের জমি নাই। সে অন্যের জমি চাষ করে।'
আমার বাবা একজন কৃষক ছিলেন। বাল্যশিক্ষা পড়তে পড়তে বড় হতে হতে বুঝতে পারি, আমার বাবারও কোন নিজের জমি নেই, তিনি অন্যের জমি চাষ করেন।
কিন্তু তাঁর ছেলে-সন্তানেরা, অর্থ্যাৎ আমরা যেন কৃষক না হই, যাতে অন্যের জমি চাষ করতে না হয়, সেজন্য বই হাতে পাঠশালায় পাঠিয়েছিলেন। পড়ালেখা শিখে একদিন অনেক বড় হবো, জর্জ, ব্যারিষ্টার, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হবো- আমার চেয়ে আমার বাবার খ্যাতি হবে বেশি, লোকজন বলবে, জলিল মিয়ার বড় ছেলে করিম মিয়া একজন বড়----। তাঁর চোখে মুখে এবং মনের ভিতরে আরো কতো স্বপ্ন আর কতো আশা ছিল যার ইয়ত্তা নেই।
চাকরির জন্য পড়ালেখা করতে হবে। অনেক কষ্টে গাঁয়ের স্কুল আর কলেজে লেখাপড়া করে শহরের দিকে পা বাড়ালাম। আমার দূর সর্ম্পর্কীয় এক মামা আমার জন্য একটা লজিংয়ের ব্যবসহা করেছিলেন। বাসার নাম ঠিকানা নিয়ে একদিন সন্ধ্যায় গিয়ে সে বাসায় হাজির হলাম।
বেশ ছিমছাম একতলা বাড়ি। বাড়িওয়ালার এক মেয়ে এক ছেলে। মেয়ে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে, ছেলের বয়স মাত্র চার বছর। ছেলেকে পড়ানোর জন্য আমাকে মাথা না ঘামালেও চলবে; পড়াতে হবে মেয়েটিকে।
বাসায় পৌঁছেই দেখি আমার আলাদা ঘর, ঘরে চেয়ার-টেবিল-খাট, আলনা সব আলাদা। যেন আজই আমার আসার কথা জেনে ঘরখানা এভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা হয়েছে।
লক্ষ্মীর মতো মেয়েটির নাম পারুল। ঠিক আমার ছোট বোনটির মতো মায়াময় চেহারা, দেখলেই আদর করতে ইচ্ছে করে।
সন্ধ্যায় চা-নাস্তা খেয়ে পড়াতে বসলাম। পারুল খুব মেধাবী মেয়ে। ক্লাসে সর্বদা তার রোল নম্বর এক হয়। সব সাবজেক্টেই সে ভালো, তবে তুলনামূলকভাবে ইংরেজিতে একটু দুর্বল। তারপরও ইংরেজিতে সচরাচর আশির নিচে কখনো পায় না।
আমার ধারণা হলো, অংক আর ইংরেজি পড়ানো ছাড়া আমার দ্বারা একে পড়ানোর আর কিছু নেই। আমি বরাবরই অংকে ভালো, পড়াতে কোন সমস্যা হবে না। কিন্তু এস.এস.সি এবং এইচ.এস.সি উভয় পরীক্ষায় ইংরেজিতে আমার নম্বর শতকরা ৩৫-এর ঘরে ছিল। অর্থ্যাৎ, আমি ইংরেজিতে দুর্বল। আমার মতো দুর্বলের দ্বারা অন্য একজন দুর্বলকে ইংরেজি পড়ানো সম্ভব, যার কেবল পাশ নম্বরেই চলে। কিন্তু পারুলকে পড়াতে সাংঘাতিক বেগ পেতে হবে, কারণ তার দরকার লেটার মার্কস।
পড়ানোর সময় পারুলকে খুলেই বললাম, দেখো, ইংরেজিতে আমি একটু দুর্বল। তাছাড়া আমাদের সময়ে যে বই ছিল এখন তা অনেক বদলে গেছে, পড়াও হয়েছে আগের তুলনায় অনেক কঠিন। কাজেই, তোমাকে যে সাবজেক্টটা আগামী কাল পড়াতে হবে, ওটা আমাকে আজই জানিয়ে দিবে, যাতে পড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত প্রিপারেশন নিতে পারি।
'ঠিক আছে' বলে পারুল আমার দুর্বলতাটুকু মেনে নিল।
রাতে খাবারের পর দশটার দিকে শোবার আয়োজন করছিলাম। দরজায় টোকা দিয়ে পারুলের মা ঘরে ঢোকেন। চেয়ারে বসতে বসতে তিনি বলেন, একটা কথা বলতে চাইছিলাম।
আমি সংকুচিত হয়ে বসে কথা শোনার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।
তিনি বলেন, পারুলকে তো অন্য সাবজেক্ট পড়ানোর দরকার পড়ে না, ইংরেজিতে একটু কাঁচা বলে-
আর বলতে হবে না খালাম্মা, আমি বুঝতে পেরেছি। আমিও পারুলকে পড়াবার জন্য মনের মধ্যে সাহস পাচ্ছিলাম না। ও খুব মেধাবী ছাত্রী। ওকে ইংরেজি পড়াতে পারে এমন একজন লজিং মাস্টার রেখে দিবেন। বলে আমি উঠে আমার ব্যাগ গোছাতে শুরু করি।
খালাম্মা বলেন, এই রাতে কোথায় যাবেন? রাতটা থেকে গেলে হয় না? কাল সকালে নাস্তা করে যান।
না খালাম্মা, আমাকে এখনই যেতে হবে। মনে মনে বলি, এ কথাটা খাবারের আগে বললেই ভালো করতেন। এক বেলা খেয়ে ঋণ রেখে গেলাম।
বিদায়ের বেলা পারুলের মুখখানি অতিশয় ম্লান ও আহত দেখালো। আমার মনে হলো, সে কিছুটা অপরাধ বোধে ভুগছে; আমার ইংরেজিতে দুর্বলতার কথাটি মাকে বলে দেয়ায় চাকরিতে যোগদানের তিন-চার ঘন্টার মাথায় আমার অব্যাহতি ঘটলো। আমি জানি, এ জিনিসটা তাকে সামান্য হলেও কষ্ট দিবে। আবার এ-ও জানি, একজন ইংরেজিতে দুর্বল গৃহ-শিক্ষককে বাসায় পুষবার জন্য তার মন যেমন সায় দিবে না, বা দৈবাৎ সায় দিলেও তার মা-বাবার কাছে সে আমার পক্ষে আর কোন অজুহাত দাঁড় করাতে পারবে না; কারণ আমি ইংরেজিতে দুর্বল এ কথাটি সে নিজেই প্রকাশ করেছে; প্রকাশ না করলেও তা আপনা আপনিই ফাঁস হয়ে যেত।
পারুলকে বললাম, মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করো।
পারুল মাথা নিচু করে মাটির দিকে তাকালো।

সে রাতে আমি কৌশিকদের বাসায় উঠেছিলাম। কৌশিক আমার স্কুল জীবনের বন্ধু। ওর বাবা নারায়নগঞ্জের এক স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। গ্রামের স্কুলে এস.এস.সি পাশ করার পর ওরা পুরো পরিবার বাবার সাথে ফতুল্লায় বসবাস করতে শুরু করে।
পাশাপাশি গ্রামে আমাদের বাড়ি ছিল। কৌশিক ছিল দারুণ মেধাবী ছেলে। আমার অবস্থা তথৈবচ, টেনে টুনে ক্লাস পার হয়ে সর্বোচ্চ ডিগ্রীটা অর্জন করতে পারলেই আমার চলবে।
কৌশিকের সাথে আমারই বন্ধুত্ব ছিল সবচাইতে বেশি। বন্ধুদের মধ্যে বোধ হয় আমারই ওদের বাসায় সবচাইতে বেশি যাওয়া-আসা হতো। কৌশিক লেখালেখি করতো, আমিও চেষ্টা করতাম, তবে ওর মতো হতো না। আমি ছিলাম ওর একনিষ্ঠ পাঠক-ভক্ত ও সমঝদার। ওর লেখাকে অতি জীবন ঘনিষ্ঠ মনে হতো। আমার মনে হতো, ও যেসব গল্প লিখে তা আমাকে কল্পনা করেই লিখে। ওর গল্পে আমি আমার নিজ জীবনের ছায়া দেখতে পেতাম। আমার নিজের সম্পর্কে ও কী ভাবে? কখনো অযত্ন-লালিত অবহেলিত অনাথ কিশোর- সে আমি। কখনো মায়াবী মেয়ের অভিমানী প্রেমাস্পদ- সেও আমি। এজন্য ওর গল্প আমাকে খুব টানতো। ওকে দেখে মাঝে মাঝে আমি খুব অনুপ্রাণিত বোধ করতাম।
কৌশিকের বড় বোন শিমু আপা আমাকে খুব স্নেহ করতেন। ওর ছোট বোন নিপাও একেবারে আপন বোনের মতো ব্যবহার করতো।
ওদের বাসায় ঘন ঘন যাতায়াতের কারণ ছিল মূলত সাহিত্য আলোচনা করা। কৌশিকের লেখা আমিই বেশি পড়তাম, সেই সুবাদে আলোচনায় আমার দাপট থাকতো বেশি। শিমু আপা এবং নিপা মাঝে মাঝে আমার সাথে একমত পোষণ করতেন, তবে তাঁরা ঢালাও ভাবে কৌশিকের সমালোচনা করতেন। অন্যদিকে, সুযোগ মতো আমার ছোট খাটো কবিতাগুলোকে যেই বের করতাম, তা তাঁরা লুফে নিতেন।

কৌশিকদের বাসায় ঢুকেই বুঝলাম ওরা আজকাল খুব ভালো নেই। ওর দু-বোন ও মা এবং ও নিজে- এই চার জনের সংসার, বাবা বেঁচে নেই। কৌশিক যখন কলেজে সবে দ্বিতীয় বর্ষে পা দিয়েছে, ওর বড় বোনটির বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে বলে দুশ্চিন্তায় ওর বাবা-মার ভালো ঘুম হয় না, ঠিক ঐ সময় কোন এক নিষ্ঠুর দুপুরে স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথে ওর বাবা গাড়ি চাপা পড়ে মারা যান। বেসরকারি স্কুলটিতে কোন পেনশন সুবিধাদি নেই। তবে কর্তৃপক্ষ একটা মহৎ কাজ করেছিলেন, কৌশিকের মাকে জুনিয়র ক্লাসে পড়ানোর জন্য একটা শিক্ষয়িত্রীর পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন। চারজনের সংসার তখন ওর মায়ের কাঁধে। কৌশিক খুব মেধাবী ছাত্র ছিল। সামান্য নম্বরের জন্য সে এস.এস.সি-তে মেধা তালিকায় স্থান হারিয়েছিল, এইচ.এস.সি-তে যেন অবশ্যই প্রথম বিশ জনের মধ্যে থাকতে পারে এ লক্ষ্যেই সে এগোচ্ছিল। কিন্তু তাকে হোঁচট খেতে হলো। মায়ের বোঝা হালকা করার জন্য প্রথমে একটা দুটো করে ছাত্র পড়ানো শুরু করে, তারপর ধীরে ধীরে পুরোদমে সে টিউশনি করতে শুরু করে দেয়। আশানুরূপ ফল হয়নি, তবে যা হয়েছে তা আমাদের চেয়ে অনেক ভালো, এবং ও মেধাবী বলেই এরূপ ফল অর্জন সম্ভব হয়েছিল। আজকের কোচিং সেন্টারের গোড়াপত্তন হয়েছিল সেই সময় থেকেই।
আমি কী করবো, কোথায় খাব? বোঝার ওপর শাকের আঁটিও ভার। শহরের বাসায় একটা ছেলেকে বেশিদিন বিনে পয়সায় খাওয়ানো যায় না।
কৌশিককে বললাম, একটা টিউশনি যোগাড় করে দিতে পারবি?

কৌশিক আমাকে একটা টিউশনি যোগাড় করে দিয়েছিল। তা থেকে যা পাব তার পুরো অংশটা কৌশিকদের খরচের সাথে যোগ করে দিব, অর্থ্যাৎ আমি একজন পেয়িং গেষ্ট হিসাবে থাকবো বলেই মনে মনে স্থির করলাম।
তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র। ছেলেটির শখ হলো ছবি আঁকা। পড়তে বসে পড়ে না, কেবল ছবি আঁকে। বকা দিলে কলম দিয়ে চোখে খোঁচা দিতে আসে। আমি ওকে পড়ানো শুরু করলাম। সপ্তাহে ছয়দিন পড়াতে হবে, মাসিক বেতন আপাতত একশো। ছাত্রের উন্নতি হলে আরো গোটা পঞ্চাশেক বাড়ানো হবে।
প্রথম দিনই বুঝলাম আমি তার খুব বন্ধুতুল্য গৃহ-শিক্ষক হতে পারবো। কারণ, সে যেসব ছবি আঁকে বাল্যকালে আমিও তা প্রচুর আঁকতাম। সে খাতায় রং পেন্সিল দিয়ে আঁকে, আমি মাটির পেন্সিলে স্লেটের ওপর আঁকতাম। কখনো পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলিতে মাটির ওপর দাগ কেটেও আঁকতাম।
ওর নাম বিল্লাল মিয়া, তবে সবাই বীলু বলে ডাকে।
বীলু আমাকে প্রথম দিনই হাতির ছবি এঁকে দেখালো। ছবিটা সুন্দরই হয়েছে, তবে চোখ দুটো আকারে সামান্য বড় হয়ে গেছে, শূঁড়টাও হয়ে গেছে একটু বেশি মোটা। আমার মনে পড়ে ওর মতো বয়সে আমি আরো সুন্দর করে হাতি আঁকতে পারতাম।
ওর খাতায় আমার হাতি আঁকা দেখে বীলু অভিভূত হয়ে গেল। বললো, স্যার, আমি এটার ওপর পাঁচবার হাত ঘুরাবো, তারপর এরকম একটা হাতি বানাবো (আসলে সে আঁকবে)।
বীলুর হাত শিল্পীর হাত- ওর হাতি আমার হাতিকে ছাড়িয়ে গেল। পাঠ্য বইয়ের পড়া বাদ দিয়ে ছবি নিয়েই সারাটা সময় সেদিন কেটে যায়। যাবার সময় বাংলা বইয়ের একটা ছড়া হোমটাস্ক দিয়ে খুশি মনে বের হয়ে গেলাম।
ছবি আঁকা-ঝুকা আর হোমটাস্ক দিয়ে আমার টিউশনির কাজ বেশ ভালোভাবেই চলে যাচ্ছিল। বীলুর মা-বাবা খুব খুশি- ওর দুষ্টুমি আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে, পড়ায় কতোখানি মনোযোগী হয়েছে, বা কতোখানি উন্নতি সাধিত হয়েছে তা গৌণ। তাঁদের ভাবখানা এই, আমি এখন বীলুর পীর বাবা, তাকে যা বলবো সে মন্ত্রমুগ্ধের মতো তা শুনবে। আসলেও তাই।
একদিন বাসায় ঢুকতেই বীলুর মা এক ভয়ংকর অভিযোগ উত্থাপন করেন বীলুর বিরুদ্ধে- সে নাকি বাইরে থেকে এক জঘন্য অশ্লীল ভাষা শিখে এসেছে যা অনর্গল আওড়ে যাচ্ছে, কারো কথাই শুনছে না। শেষমেষ তার মা তাকে বকা দিয়েছিলেন। বকা খেয়ে অভিমান করে বীলু বাথরুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে বসে আছে। সে গত পাঁচ ঘন্টা যাবত কিচ্ছু খাচ্ছে না। তার মা তাকে ডেকে ডেকে দরজায় মাথা ঠুকে রক্ত বের করার উপক্রম করছেন, কিন্তু বীলুর অভিমান পড়ে না।
আমি বাথরুমের দরজায় দাঁড়িয়ে ডাকলাম, বীলু।
জ্বি।
বেরিয়ে এসো।
সুবোধ বালকের মতো দরজা খুলে বাইরে এসে অপরাধীর মতো বীলু সামনে দাঁড়ায়। ভয়ে ভয়ে আমার দিকে চোখ বড় করে এক দৃষ্টিতে সে তাকায়।
বললাম, তুমি নাকি খারাপ কথা বলছো?
জ্বি না স্যার, আমি বলেছি- বীলু অকপটে সেই অশ্রাব্য অশ্লীল কথাটা বলতে না বলতেই আমি দুহাতে ওর দুগাল কষে দুই ঘা চড় মারলাম- সঙ্গে সঙ্গে আ আ শব্দে বিকট আর্তনাদে কয়েক পাক ঘুরে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো বীলু- সে যন্ত্রণায় ছটফট করছে-
আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ়- বীলুর মা তাড়াতাড়ি ছেলেকে উঠিয়ে খাটে শুইয়ে কাঁদতে শুরু করে দিলেন- বাবা বীলু- বাবা রে- কথা বল- অমন করছিস কেন?
আমি দ্রুত পানি এনে বীলুর চোখে মুখে ছিটিয়ে দেই। প্রায় আধ ঘন্টার মতো শ্রুশ্রূষার পর বীলু স্বাভাবিক হয়- মাঝে মাঝে একেকটা বুকফাটা দীর্ঘশ্বাস বেরোয়।
বীলুর মা কাঁদ কাঁদ হয়ে আছেন, তিনি বিব্রত। আমি বীলুকে কী বলে আদর করবো সেই ভাষা খুঁজে পাই না।
বীলুর বাবা যখন বাসায় ফিরলেন- বাবা বলে কাঁদতে কাঁদতে সে তাঁর কোলে ঝাঁপিয়ে পড়লো- তিনি কিছু বুঝতে পারছেন না।
কি হয়েছে বাবা, কি হয়েছে? তিনি জিজ্ঞাসা করেন। কিন্তু বীলু কিছু বলে না। তিনি আমাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, ওর মা কিছু বলেন না। আমি বলি, চাচা মিয়া, আজ আমার মনটা ভালো ছিল না। তাই ওকে মেরেছি।
বীলু তখন ওর বাবার বুকে লেপ্টে ছিল। বাবা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। তাঁর চোখে অশ্রু জমে উঠেছে, আমি চোখের দিকে না তাকিয়েও বুঝতে পারি।
কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর বীলুর বাবা বলেন, দুঃখ নিয়েন না। ও তো আপনার ছোট ভাইয়ের মতোই। ছোট ভাইকে মারলে কিছু হয় না।
আমার চোখের পানি আর থামিয়ে রাখতে পারি না। আমি বলি, চাচা মিয়া, আমার পরীক্ষা শুরু হচ্ছে, পড়াশোনার অনেক চাপ। কুলোতে পারবো না।
আমি সপ্তাহ দুয়েক পড়িয়েছিলাম। কিন্তু বীলুর বাবা আমাকে এক মাসের বেতন দিলেন, তাও একশো নয়, একশো পঞ্চাশ টাকা। বললেন, আইসেন, মনে লইলেই চইল্যা আইসেন। তারপর ভিতরের ঘরে গেলেন বীলুকে কোলে করে।
আমার ধারণা, বীলুর মা কিংবা বাবা জীবনে কোনদিন বীলুর গায়ে একটা আঙ্গুলের টোকাও দেননি। সেই সোনার টুকরোর গায়ে আমি পাঁচ পাঁচ দশ আঙ্গুলের চাবুক মেরেছি।

কৌশিকদের দিন চলে না এমনিতেই, তার ওপর আমি জুড়ে বসেছি। চক্ষু লজ্জার জন্য কেউ মুখ ফুটে কিছু বলতে পারে না। আবার এটাও আমি উপলব্ধি করতে পারি, এ বাসা ছেড়ে চলে গেলে ওদের মনেও প্রচুর কষ্ট হবে।
বাড়ি থেকে বাবা আমার জন্য কোন টাকা পাঠাতে পারবেন না সেটা আমি জানি। কিছু দিতে গেলে দেনা করে দেয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। আমার বাবা একজন কৃষক, গণি মিয়ার মতো তিনি অন্যের জমি চাষ করে অতি কষ্টে দিন গুজরান করেন- দেনা করলে তা পরিশোধের উপায় নেই।
শিমু আপার মলিন চেহারা আমার মনকে খুব বিষণ্ন করে দেয়। সেই আগের মতো সাহিত্যের আড্ডা বসে না। খালাম্মা স্কুলের পড়াশোনায় ব্যস্ত, নিপা ব্যস্ত তার নিজের পড়াশোনা নিয়ে। শিমু আপার পড়াশোনা বন্ধ হয়েছে তাঁর বাবার মৃত্যুর আগেই। তখন থেকেই তিনি বিয়ের জন্য প্রতীক্ষায় আছেন- পাত্র এসে পাত্রী দেখে, হাঁটা-চলা, হাত-পায়ের নখ, গোড়ালি ছেড়ে শাড়ির পার উঁচু করতে করতে হাঁটু অব্দি উঠাতে চায়, মনের ভিতরে তেমন বাসনা একাগ্র হলেও ও-পর্যন্ত উঠানো হয় না- কী যে ত্রুটি আছে মেয়েটির পায়ে, খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার চেষ্টা করেও তা খুঁজে বের করা যায় না- শেষ পর্যন্ত পাত্রপক্ষ অর্ধ-হাসি-মুখে বাড়ি ত্যাগ করে- জ্ঞআমরা পরে জানাবোঞ্চ বলে বিদায় নিলেও তা আর পরে জানানো হয় না- কারণ বিয়ের ঘটকালিতে পরে জানানোর অর্থ একটাই- মেয়ে পছন্দ হয়নি- এ কথাটি পাত্রীপক্ষের মুখের ওপর সরাসরি বলতে বাঁধে।
শিমু আপা খুব খুড়িয়ে হাঁটেন না- ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকলে মনে হয় ডান দিকে সামান্য কাত হয়ে আছেন, হাঁটতে গেলে সেই কাতটুকু স্পষ্ট হয়ে ধরা পড়ে।
শিমু আপা স্নিগ্ধ সুন্দরী। গায়ের রং ধবধবে ফর্সা নয়, চেহারায় কোনরূপ ড~গ্রতা নেই- কেমন শান্ত ধীর, দেখলেই মনে হয় যেন কবিতার শরীর।
শিমু আপার জন্য আমার খুব কষ্ট হতে শুরু করে। বুকের ভিতর একটা অসিহরতা অনুভব করতে থাকি, সেই কষ্ট দিন দিন বাড়তে থাকে, বাড়তেই থাকে।
শিমু আপার বাবা আমৃত্যু অপর মানুষের সন্তানাদি পড়িয়ে গেছেন, তাদেরকে মানুষ করার জন্য। তারা বড় হয়ে একদিন তাঁর নাম বলবে, তিনি মরেও অমর থাকবেন। কিন্তু নিজের বড় মেয়েটাকে তিনি পড়াতে পারেননি।
শিমু আপা শিক্ষকের মেয়ে ছিলেন, মা-ও অশিক্ষিতা নন। তারপরও আপা পর পর দুবার এস.এস.সি-তে ফেল করেছিলেন। তৃতীয় বারের মাথায় অংকে গ্রেসসহ তৃতীয় বিভাগে তাঁর পাশ জোটে। এইচ.এস.সি-তে প্রথমবার ফের করলে দ্বিতীয়বারের মতো আর কোন চেষ্টা করা হয়নি- আপার নিজের ওপর যেমন আসহা ছিল না, তেমনি অর্থ-অপচয় করার আর কোন মানসিকতা ছিল না, সঙ্গতিও ছিল না। সেই থেকেই বিয়ের জন্য তাঁর প্রতীক্ষার শুরু।
একদিন আমি মনে মনে খুব উত্তেজনা বোধ করতে লাগলাম। শিমু আপাকে আমি একটা কথা বলতে চাই। সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথম দেখায়ই তাঁকে কথাটা বলবো, ভাবলাম। বলা হলো না, আমার বুক খুব কাঁপছিল। ভাবলাম, একটু পরেই বলবো। দুপুরে বলবো। বিকেলে- সন্ধ্যায়- রাতে।
তার পরের দিন সুযোগটা পেয়ে গেলাম। আমি আর শিমু আপা বাসায় একা। আমি প্রতিজ্ঞায় সিহর- আপাকে বলবো- আপা, আমি আপনার জীবনটাকে এভাবে জ্বলে পুড়ে শেষ হতে দিব না। আপনিও মানুষ। আপনি এভাবে ধ্বংস হয়ে যাবেন, তা আমার সহ্য হবে না। তারপর আপার হাত ধরে বলবো, শিমু আপা, আমি আপনাকে প্রচণ্ড ভালোবাসি। আমরা কি একটা নতুন জীবন গড়তে পারি না? চলুন, আমরা একটা সংসার পাতি।
আমি খাটের ওপর উপুড় হয়ে শুয়ে বালিশে মাথা ঘষছিলাম। এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ টের পাই- আপা আমার পাশে বসে মাথায় হাত রাখছেন। আমি চমকে তাকাতেই আপা বলেন, তুমি কাঁদছো কেন?
কাঁদছি? কই, না তো।
আপা আমার দিকে তাকিয়ে আছেন, আশ্চর্য, আমি যে সত্যিই ফুঁপিয়ে কাঁদছিলাম তা আমি নিজেই টের পাইনি।
কাঁদছো কেন? আপা আবার জিজ্ঞাসা করেন।
আমি হাত দিয়ে চোখের কোনা মুছি। আপা বলেন, বাড়ির কথা মনে পড়েছে খুব? বোকা ছেলে, তুমি কি পুরুষ মানুষ না? পুরুষ মানুষ কি বাড়ির জন্য এভাবে কাঁদে?
আমার খুব খারাপ লাগছে আপা- খুব খারাপ লাগছে- বলেই আমি কাত হয়ে আপার কোলের ওপর মাথা রেখে তাঁর কোমর জড়িয়ে ধরি। আপা আমার মাথায় বিলি কাটেন আর নরম ছোট ছোট শব্দে আমাকে সান্ত্বনার কথা শোনাতে থাকেন। আমি হঠাৎ উঠে বসি, তারপর খপ করে তার হাত ধরে আমার বুকের সাথে মিশিয়ে বলি- আপা, আমার বুকের ভিতর দারুণ কষ্ট। আমি তা বলতে পারছি না আপা- আপা, আমি আপনাকে ছাড়া বাঁচবো না, আপনাকে আমি বিয়ে করতে চাই.....
আপা আমার হাত থেকে আস্তে তাঁর হাত ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে দাঁড়ান। তাঁর চোখ ধীরে ধীরে কঠিন হতে থাকে। আপা বলেন, তুমি আমাকে ভুল বুঝেছ। তুমি যা ভেবেছ আসলে আমি তা নই। আমার চেয়ে তিন-চার বছরের ছোট তুমি, আমার ছোট ভাইয়ের বন্ধু- কী করে আমাকে নিয়ে এমন করে ভাবলে? আমাকে দেখলে কি মনে হয় শরীরের যন্ত্রণায় আমি ছটফট করছি? আপা হঠাৎ উত্তেজিত হতে থাকেন। বলেন, তুমি আমাকে কী মনে করছো? আমাদের সংসার চলে না বলে আমি শরীর বেচে খাই, তুমি তাই ভাবছো? তাই তুমি একটু চেখে দেখতে চাইছ? ছিঃ, এতো নোংরা তোমার মন, এতো নিচ তুমি? চোখে অগ্নিবর্ষণ করে আপা দ্রুত বেরিয়ে গেলেন।
আমার শরীর ঠাণ্ডা বরফ হয়ে আসে। আমি অনুভব করতে থাকি, এতোদিন যা ভেবেছি তা আমার অলীক ভাবনা ছিল। বাস্তবে ফিরে আসি। আমার বাবা একজন কৃষক- গণি মিয়ার মতো- আমার নিজের মতো আমার সন্তান যেন না বলতে পারে আমার বাবা একজন কৃষক ছিলেন- সে উদ্দেশ্যে আমি গ্রাম ছেড়ে শহরে এসেছি। আমার মেধার খবর আমি জানি, আমার বাবা তা বোঝেন না। তিনি বোঝেন এবং গর্বের সাথে উচ্চারণ করেন, আমার পুলা কতো বড় বড় পাশ দেয়- আমার পুলা বড় অইয়া ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, জর্জ, ব্যারিষ্টার অইব- সকল বাবা যেমন চান, আমার গণি মিয়া কৃষক বাবাও তেমনি আরো অনেক কিছু চান, অনেক কিছু ভাবেন। ~েদবাৎ যদি আমি এমন এক উচ্চাসীন ব্যক্তি হয়ে ওঠি, যা কখনো হবার নয়- গ্রাম থেকে আমার বাবা শহরে বেড়াতে আসবেন, পায়জামা পাঞ্জাবি তার পরনে, হাতে মাটির হাঁড়িতে অতি খাঁটি রসগোল্লা, গরুর খাঁটি দুধে যা তৈরি- আমার বাবা খুব গর্ব করে বলবেন, আমি কৃষক আছিলাম, আমার পুলা কত্তো বড় অফিসার অইছে- কিন্তু আমি জানি, কৃষক হওয়াতে কোন গর্ব আর খ্যাতি নেই। জীবন বৃত্তান্তে অতি কৌশলে বাবার আসল পেশা গোপন করে লিখবো- My father is a business magnet.
সেই কৃষক-পুত্র আমি উপলব্ধি করতে শুরু করি- শিমু আপার প্রতি আমার যে টান অনুভব করেছি তাতে হয়তো সত্যিকারের ভালোবাসা ছিল, কিন্তু আমি বুকে টোকা দিয়ে বলতে পারছি না যে তার শরীরের প্রতি আমার কোন লোভ জন্মেনি। আমি কি সত্যিই তাঁকে বিয়ে করতে পারতাম? আমার বাবা- আমার জন্য যাঁর দুচোখে স্বপ্নের অন্ত নেই- তিনি কি এমন একটা বিয়ে মেনে নিবেন? কৌশিক আমার সহপাঠী, সে কি তার চেয়ে বয়সে তিন-চার বছরের বড় বোনকে আমার হাতে তুলে দিবে? সকল অ-সম্ভাবনাকে কাটিয়ে যদিও বা তাঁকে বিয়ে করা গেল- কিন্তু সেটাই তো প্রকৃত জীবনের শুরু। যাঁকে সুখ দেয়ার জন্য বিয়ে করবো তাঁকে কি সত্যিকারের সুখ দিতে পারবো? আমি এক কৃষক-পুত্র, দরিদ্র ছাত্র, সর্বদা নিজের থাকা-খাওয়ার দুশ্চিন্তায় মাথা ভনভন করে, নতুন বউকে কী খাওয়াব?
আমি বুঝতে পারলাম, যা ভেবেছি তা অতি অস্বাভাবিক এবং তা কেবল আবেগের বশেই আমি করেছি।
কৌশিকদের বাসা ত্যাগ করেছিলাম চোরের মতো। বিদায় বেলা দরজায় দাঁড়িয়ে আপাকে ডাকলাম, আপা, আমি চলে যাচ্ছি। দরজাটা আটকে দিন।
শিমু আপা দৌড়ে এসে পথ আগলে বলেননি, তুমি যেও না। তোমার ভুল আমি ক্ষমা করে দিলাম। তুমি ভালোভাবে লেখাপড়া করো, আমার মতো খুড়ো মেয়ে কেন, নিপার মতো সুন্দরী মেয়েই তোমার বউ হবে। তুমি নিপাকে পছন্দ করো না?
চৌকাঠ পার হতেই ঝপাট শব্দে দরজা বন্ধ হয়ে গেল। আমি যেতে যেতে একবার ধীরে পেছন ফিরে তাকালাম, মনে মনে বলি, দেখি, জানালায় কেউ দাঁড়িয়ে কিনা। শূন্য জানালা খাঁ খাঁ করছিল।

ঢাকা শহরে আমার এমন কেউ ছিল না যেখানে জ্ঞবিনে পয়সায়ঞ্চ থেকে খেয়ে পড়ালেখা করা যায়। এমন কেউ বলার কারণ হলো একদিন আমাদের সত্যিকারেই এমন কেউ ধরণের কেউ ছিল। এস.এস.সি-র পর আমার কৃষক-বাবার খুব শখ হয়েছিল আমাকে ঢাকা শহরের কোন এক নামকরা কলেজে ভর্তি করাবেন। তা ছিল আমার অশিক্ষিত বাবার একান্ত ইচ্ছে, তিনি তো আর জানতেন না যে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা না থাকলে কেউ নামকরা কলেজে ভর্তি হতে পারে না। আমি অবশ্য বুঝতে পেরেছিলাম শহরের যে কোন কলেজকেই আমার বাবার কাছে খুব বড় এবং অতি নামকরা কলেজ মনে হতো, এবং যেনতেন একটি কলেজে ভর্তি হলেই আমার বাবার মনোবাসনা পূর্ণ হয়। যেনতেন একটি কলেজে তো ভর্তি হতেই পারি, কিন্তু থাকবো কার কাছে এবং খাবো কী?
আমার এক ফুফু- আমার বাবাকে যিনি ধর্মভাই বলে জান দিতেন, কারণ কোন এক বর্ষাকালে আড়িয়াল বিলে নৌকাডুবি হলে গরুর জন্য কচুরি পানা কাটতে যাওয়া আমার বাবা সেই ফুফু আর তার চার বছরের মেয়েকে উদ্ধার করেছিলেন- সেই ধর্মফুফু থাকেন গেন্ডারিয়ায়। আমাকে নিয়ে, সঙ্গে মাটির হাঁড়িতে রসগোল্লা, বাবা এসেছিলেন তাঁর অতি আদরের ধর্মবোনের বাসায়।
আমার বাবার মন থেকে কোন দিনই এই কষ্টটা দূর হবে না। বাবা ফুফুকে একেবারে আপন বোন ভেবেই কথাটা বলেছিলেন, তোমার বাসায় থাইক্যাই করিম পড়ালেখা করবো। আপন মানুষ থাকতে আবার অন্য ধান্ধা করুম ক্যান?
ফুফু মুখ কালো করে বলেছিলেন, ভাইজানের যা কতা। বাসায় আমার একটা জোয়ান মাইয়া আছে না? একটা কিছু যদি অইয়া যায়।
আমরা সে রাতে লঞ্চ করে বাড়ি ফিরেছিলাম, ফুফুর বাসায় রাতটুকুও থাকা হয়নি। আমার বাবা কোন এক কালে এই ফুফুর জন্য প্রাণান্ত ছিলেন; সেই বাবা রাতারাতি বদলে গেলেন, ফুফুর কথা মুখে উচ্চারণ করাও যেন পাপ হয়ে গেল।

কৌশিকদের বাসা থেকে বের হয়ে পথে যেতে যেতে ভাবছিলাম কোথায় যাওয়া যায়। হঠাৎ খায়ের আর স্বপনের কথা মনে পড়ে। ওরা দুজন জগন্নাথ কলেজে পড়ালেখা করেছে। ওদের বাবাও কৃষক, তবে তাঁরা জমিঞ্চদার, যদিও জমিদার নয়। আমার সাথে ওদের পার্থক্য হলো- মাস শেষে ওদের বাবা সামান্য হলেও কিছু টাকা পাঠাতে পারবেন, ওদের লেখাপড়ার অর্থ যোগান দিতে ওদের বাবার তেমন বেগ পেতে হয় না। আর আমার বাবা তো কিছু পাঠাতে পারবেনই না, যদিও তিনি আমাকে অনেক নামকরা কলেজে পড়াতে চান, উপরন্তু টিউশনি করে যদি মাস শেষে বাড়িতে কিছু পাঠাতে পারি তবে তা দিয়ে হয়তো সংসারের কিছুটা বোঝা হালকা হয়। আমরা এক স্কুলে লেখাপড়া করেছি, স্কুল পাশ করে ওরা শহরের কলেজে ভর্তি হয়েছিল, আমি শহরে থাকবার সুযোগ না পেয়ে গ্রামেই ফিরে গেছি। এখন আবার সেই শহরে ছুটে এসেছি, খ্যাতির জন্য।
লক্ষ্মীবাজারে ওরা থাকে। এর আগে আমি এক-আধবার ওখানে গিয়েছি, কখনো একা, কখনো কৌশিকের সাথে। সকল লাজ-লজ্জা ভুলে গিয়ে ওদের কাছে এসে বললাম, আমি তোদের সাথে থাকবো রে দোস।
ওরা খুশিও নয়, বেজারও নয়। তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমার একটু মাথা গুঁজবার ঠাঁই চাই। ঠাঁই পেলেই দু-একটা টিউশনি নিয়ে কোন রকমে চালিয়ে যেতে পারবো।

ছোট এক কামড়ার বাসা। বাসা না বলে মেস বলাই ভালো। নিচতলার পাঁচটি রুমকে মেসের মতো করে ব্যাচেলরদের ভাড়া দেয়ার ব্যবসহা করেছেন বাড়িওয়ালা। বুয়ার রান্না খাওয়া হয়।
বিবাহিত দম্পতি না হলে বাসা ভাড়া পাওয়া দুঃসাধ্য ব্যাপার। এমন দুর্দিনে পারিবারিক বাসার নিচতলায় ব্যাচেলরস কোয়ার্টার করে বাড়িওয়ালা মহৎ কাজ করেছিলেন। তবে ভাড়ার ব্যাপারটা অতি অভিনব- ফ্যান চালালে মাসিক ভাড়া ২৫০, ফ্যান না চালালে ২০০ টাকা। শীতকালে কোন সমস্যা হবার কথা নয়, যতো গণ্ডগোল বাঁধে নাকি গ্রীষমকালে। মাসে ৫০ টাকা বাঁচানোর আশায় ওরা ফ্যান ছাড়া সিষ্টেমে ভাড়ায় থাকে। তবে রাত বারোটা, একটা, তিনটার দিকে খালি পায়ে আস্তে আস্তে নিচে নেমে এসে দরজায় কান পেতে শোনেন বাড়িওয়ালা, ভিতরে ফ্যান ঘোরার শব্দ পাওয়া যায় কিনা। একটি মাত্র জানালা থাকায় কেবল আলো ঢুকতে পারে, কোন বায়ু চলাচল সম্ভব হয় না। রাতে ভ্যাপসা গরমে সিদ্ধ হয়ে যায়, কিন্তু তবুও ৫০ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া দেয়ার কথা মাথায় আনে না।
এমন দুর্বিষহ গরমেও ওরা ফ্যান ব্যবহার করে না দেখে নিশ্চয়ই বাড়িওয়ালা সন্তুষ্ট চিত্তে বিছানায় গিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমাতেন। কখনো কখনো জোরে দরজা থাপড়াতেন। দরজা খুললে তিনি ভিতরে ঢুকে বলতেন, এতো গোঁঙানির শব্দ হইতেছে কেন? আপনাদের সবার শরীর ঠিক আছে তো?
জ্বি চাচা মিয়া, আমরা সবাই সুসহ আছি।
যাক, আল্লাহ ভরসা। হয়তো ঘুমের ঘোরে বাজে স্বপ্ন দেইখ্যা অমন গোঁঙাইতেছিলেন।
তারপর তিনি আড়চোখে এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখতেন ঘরে অতিরিক্ত কোন মেহমান আছে কিনা। জুতার দিকে তাকিয়ে মনে মনে জুতা গুণতেন। বাড়িওয়ালার এসব চালাকি ওরা সবই বুঝতো।
আমি ওদের সাথে যোগ দেয়ায় বাড়ি ভাড়া ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় নিয়ে গেলেন বাড়িওয়ালা। ওরা প্রতিবাদ করলে তিনি নিখুঁত হিসাবে বুঝিয়ে বললেন, আগে একেক জনকে মাসে ১০০ টাকা করে দিতে হতো, এখন মাত্র ৮৪ টাকা করে, ভাড়া বাড়লো কোথায়? বরঞ্চ ১৬ টাকা করে কমেছে। বাড়িওয়ালার বুদ্ধি দেখে এবং ভাড়া কমানোর ঔদার্য্যে আমরা চমৎকৃত না হয়ে পারি না।
তবে আমরা বেশিদিন বাড়িওয়ালার প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে পারিনি। যতোক্ষণ বাতি জ্বলতো ততোক্ষণ গরম সহ্য করে থাকতাম, বাতি নেভানোর পর ঠিকই ফ্যান ছেড়ে দিতাম।
আমাদের তিনজনের তিনটি ব্যক্তিগত সমস্যা ছিল। আমি কাপড় কাঁচতে পারতাম না। ঘামের গন্ধে কাপড়ের যে অবসহা হতো বাসে চড়লে পাশের মানুষ ঘন ঘন নাক ছিটকাতো, ঘরের ভিতর স্বপন আর খায়ের আবোল তাবোল অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতো। কিন্তু আমি কী করবো, হিমালয় পর্বতমালা উপড়ে ফেলতে পারলেও আমি কাপড় কাঁচতে পারবো না। তবে আমার বড় যে গুণটি ছিল তা হলো রান্না করতে জানা। আমার রান্নার প্রশংসা করতে গিয়ে ওরা বলতো, লেখাপড়া শিখে তুই কী করবি? চাকরি? চাকরি পেলে তো চাকরি করবি। তারচে বরং একটা হোটেলে বাবুর্চির কাজে লেগে পড়। ভালো খাবি, খাওয়া খরচও লাগবে না, আবার মাস শেষে বেতনও জুটবে।
আমি বলতাম, তোরা আমাকে ত্রিশ হাজার টাকা দে, আমি নিজেই ফুটপাতের হোটেল খুলে বসি। সেই হোটেলে তোদেরকে ওয়েটার হিসাবে চাকরি দিব।
আমার রান্নার হাত দেখে ওরা দুজন বললো, বুয়াকে মাসে বিশ টাকা দিয়ে লাভ আছে? ঐ মহিলা ক্যাশ বেতন নেয় ২০ টাকা, বাজার করার সময় মারে ২০ টাকা, এক সেরের জায়গায় দেড় সের চালের ভাত চড়ায়, বাড়তি ভাত চুরি করে বাসায় নিয়ে যায়। এর বদলে তুই-ই রান্নার কাজটা কর।
ওদের কথাটা আমার খাটে, মাসে জনপ্রতি সাতটা টাকা বাঁচাতে পারলে বাস ভাড়াটা লাভ হয়।
ক্লাস শেষে বাসায় ফিরে ক্লান্ত হয়ে পড়ে থাকতাম মাঝে মধ্যে। স্বপন আর খায়েরও বাবুর মতো অপেক্ষায় থাকতো, কখন বাসায় ফিরে আমি রান্না চড়াবো। ওরা রাঁধতে জানে না এটা মাফ করা যায়, সওয়াও যায়। কিন্তু বটিতে পেঁয়াজ কাটা, মরিচ কাটা, আনাজ কোটা, এটাও কি করতে জানে না? এ কাজ করতে তো কোন ট্রেনিং এর প্রয়োজন পড়ে না। আমার শরীরে রাগ ধরে যেত, এবং আমি রান্না না করেই ঘুমিয়ে পড়তাম। ঘুম থেকে জেগে দেখতাম বাজার থেকে ব্রেড এনে চিনি গুলানো পানিতে ভিজিয়ে খেয়ে ডাটের সাথে দুজনে গল্প করছে- আমার জন্য শুকনো এক টুকরো ব্রেড অবশ্য রেখে দিয়েছে, যদিও চিনি ফুরিয়ে গেছে। খিদেয় আমার পেটে আগুন জ্বলতো, অতোটুকু ব্রেড পেটে পড়ার পর সেই আগুন কাঠে কেরোসিন ঢালার মতো প্রবল হয়ে উঠতো।
খায়ের অবশ্য কাপড় কাঁচতে পারতো। আমি যেহেতু রাধুঁনির কাজটা করি, খায়ের তাই কাপড় কাঁচার ভারটা নিল। স্বপন ছিল অধমের অধম, নিরেট অপদার্থ। ভাত খাওয়ার পর বাসনটাও ধুতে পারতো না। ওকে যতো কঠিন বকা দেয়া হয় ও ততো বিনয়ে গলে পড়ে। অথচ ঘর ধোয়া-মোছার দায়িত্বটা আমরা ওকেই দিয়েছিলাম।
আমি কৌশিকের মতো মেধাবী নই। টিউশনি করে সে মা-বোনের সংসার টানছে। আমি কোন টিউশনি পাই না।
হঠাৎ একটা টিউশনি কিভাবে যেন জুটে গেল। তবে কোন মাসিক পারিশ্রমিক নেই। তিন বেলা খাবারের বিনিময়ে দৈনিক দুই বেলা পড়াতে হবে। হয় সকালে অথবা বিকেলে একবার, এবং রাতে নয়টার দিকে আরেকবার। ইচ্ছে করলে প্রতিদিনই খেতে পারি, সে ক্ষেত্রে শর্ত এই যে প্রতিদিনই পড়াতে হবে। এটা আমার জন্য খুব সহজ হয়ে গেল। মেস থেকে মাত্র পাঁচ মিনিটের পথ পেরুলেই টিউশনির বাসা।
এরা এক দরিদ্র বাড়িওয়ালীর অতি দরিদ্র ভাড়াটিয়া, মাইনে দিয়ে গৃহ-শিক্ষক রাখার সামর্থ্য নেই বলেই মনে হলো, অথচ মেয়েকে পড়ানোর প্রয়োজন।
মেয়েটির গায়ের রং ভীষণ কালো, তেমনি অস্বাভাবিক রকম চালাক ও চঞ্চল। প্রতিটি কথায় সে খিল খিল করে হাসে, হাসির শুরুতেই চোখ-টিপ মারে। প্রথম প্রথম আমি চমকে উঠেছিলাম, পরে দেখলাম এটা তার অভ্যাস, কারণ সবার সাথেই সে একইভাবে চোখ টিপে হাসে আর কথা বলে।
তিন সপ্তাহের মাথায় নবম শ্রেণীর কালো মেয়েটি আমাকে হঠাৎ জিজ্ঞাসা করে, স্যার, আপনি আমাকে বিয়ে করছেন না কেন?
আমি অবাক হয়ে যাই, যেন এক দাদার আমলের আবদার- তাকে বিয়ে করতে হবে, যেন পড়ানোর আগে চুক্তি হয়েছিল তাকে পড়ালেই বিয়ে করতে হবে, যেন এমন কথা ছিল অনেক দিনের, অথচ করছি না।
বললাম, আমি কি বিয়ে করতে এসেছি নাকি?
তাহলে কি ফ্রি খেতে চান?
ফ্রি কোথায়, তোমাকে পড়াচ্ছি, তার বিনিময়ে খাচ্ছি।
সে চোখ টিপে হাসে। বলে, আমি কি ঐ খাওয়ার কথা বলেছি?
তাহলে?
কিচ্ছু যেন বোঝে না। সে আহ্লাদিত স্বরে বলে।
আরেকদিন হঠাৎ পিঠ চুলকাতে চুলকাতে আঃ উঃ বলে চেঁচিয়ে ওঠে- পিঁপড়া- পিঁপড়া- বলেই সে পিঠ বের করে বলে, স্যার, দেখেন তো পিঁপড়াটা দেখা যায় নাকি?
মাঝে মাঝে আমি আমার নিজেকে আবিস্কার করে আমি নিজেই চমৎকৃত হয়ে যাই, অবাকও হই। বনফুলের দুই নারী আমি পড়েছি, আমি কি এখনো এক নর রয়ে গেছি? তা না হলে আমি এই মেয়েটির এমন আমন্ত্রণ উপেক্ষা করতে পারলাম কী করে? শিমু আপার সাথে আমার অশালীন আচরণের কথা মনে করে আমি প্রচুর কষ্ট অনুভব করি- নাহ্‌, নিশ্চয়ই ওটা আমি ছিলাম না, ওটা ছিল অন্য একজন, যাকে আমি কোনদিন দেখিনি, যাকে চিনি না। আমার প্রচুর কষ্ট হতে থাকে- আমার শিমু আপা আর কোনদিন আমার আপা হতে পারবেন না, তাঁকে আর কখনো আপা বলে তাঁর কোলের ওপর মাথা রাখতে পারবো না, তিনি আমার মাথার চুলে বিলি কেটে সস্নেহ সান্ত্বনা দিচ্ছেন- এমনটি আর কখনোই হবার নয়। আমি কি বিশ্বাসঘাতকও নই? আমার মনের গভীরে একটা মেয়ে আছে- আমি তার প্রেমপ্রার্থী- তার সাথে ধুমধাম করে আমার বিয়ে হবে, আমি কতো আশা করে আছি, অথচ শিমু আপার দিকে যখন আমি নজর দিয়েছিলাম তখন বেমালুম ভুলে গিয়েছিলাম ঋতু নামক একটি মিষ্টি মেয়ে আছে আমি যার পাণিপ্রার্র্থী।
আমি এই টিউশনিটাও ছেড়ে দিলাম। কারণ আমি জানতাম, প্রেম আর যৌনতা এক জিনিস নয়। মেয়েটাকে কখনো আমি ভালোবাসতে পারবো না, কিন্তু ওর সংস্পর্শে আরো কিছুদিন থাকলে আমিও আগুনে ঝাঁপ দিবই, কারণ, আমি মানুষ, এবং পুরুষ, শরীরের ওপর অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস থাকা ভয়ংকর- আমি নিজেকে অতো মহাপুরুষ মনে করিনি বলেই বিপদ হবার ঠিক আগের মুহূর্তে আত্মরক্ষা করেছিলাম।

খ্যাতির লাগিয়া, উপন্যাস, প্রকাশিত একুশে বইমেলা ২০০৪

খ্যাতির লাগিয়া পর্ব-১
খ্যাতির লাগিয়া পর্ব-২
খ্যাতির লাগিয়া পর্ব-৩
খ্যাতির লাগিয়া পর্ব-৪
খ্যাতির লাগিয়া পর্ব-৫
খ্যাতির লাগিয়া পর্ব-৬
খ্যাতির লাগিয়া পর্ব-৭
খ্যাতির লাগিয়া পর্ব-৮ (শেষ পর্ব)

সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৫:৩১
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০, কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×