somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খ্যাতির লাগিয়া :: পর্ব-৭

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ বিকাল ৫:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একজন নবীন লেখকের প্রথম বই ছাপা হবার 'সকরুণ' ইতিহাস


পত্রিকা প্রকাশের ব্যাপারে সুহৃদের আগ্রহ, পরিশ্রম আর দক্ষতা আমাকে মুগ্ধ করে। ঘোষণার দ্বিতীয় দিনে সে প্রায় দু-হাজারেরও বেশি লিফলেট বানিয়ে ফেললো, সেই সাথে গোটা পঞ্চাশেক পোস্টার। এগুলো নিয়ে আমরা কৌশিকের ওখানে গিয়ে উঠলাম- উদ্দেশ্য, আমার সম্পাদনা পরিষদ গঠন করা, পোস্টার আর লিফলেটগুলো বিতরণের ব্যবস্থা করা।

আমার নিজের পত্রিকা, আমিই এর প্রধান সম্পাদক। কিন্তু সার্বক্ষণিক দায়-দায়িত্বের জন্য একজন কুশলী, দক্ষ ও কর্মঠ সম্পাদকের দরকার, যে আমার ডান ও বাম উভয় হাত হিসাবে আমাকে সাহায্য করবে, এবং আমার আদেশ নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলবে। কে হবে সম্পাদক? এ ব্যাপারে কারো কোন সন্দেহ নেই যে পত্রিকা প্রকাশের জন্য সুহৃদই হলো সম্পাদক হিসাবে যোগ্যতম। কিন্তু সে বললো, সম্পাদক হিসাবে তার নাম ছাপা হলে তার অসুবিধা আছে। কিসের অসুবিধা? কেমন অসুবিধা? সে খুলে বলে না। তবে আমি সবই বুঝি। আমার অধীনে থেকে সুহৃদ দায়িত্ব পালন করতে নারাজ, এটা তার 'ইগো' বা অহমিকা। আমি আরো জানি, আমার প্রস্তাবে পত্রিকা বের হলেও এর সর্বময় ক্ষমতা একমাত্র সুহৃদের হাতেই সংরক্ষিত থাকবে, সে আমার অধীনস্থ সম্পাদকের পদ গ্রহণ করুক বা না করুক, আমি এর প্রধান সম্পাদকই হই বা এক অধস্তন কর্মচারিই হই। সে সর্বদা নিশ্চুপ, অতি বিনয়ী, ধৈর্য্যশীল, সংযমী, আপাত সে সকলের দ্বারা আদিষ্ট হয়ে কার্য সম্পাদন করে থাকে এবং এটাই তার মোক্ষম শক্তি, এ দ্বারাই সে অত্যন্ত অদৃশ্য উপায়ে আমাদের সবার ওপরে আধিপত্য বিস্তার করে আছে। আরো একটা কারণ আছে। নিজের মুখে নিজের প্রশংসা করা যায় না। আমাদের পত্রিকা বের হবে, সেই পত্রিকার প্রতি পাতায় সুহৃদ রহমানের গল্প, কবিতা, উপন্যাসের বিজ্ঞাপন ছাপা হবে, তার লেখার জ্ঞান-গর্ভ সমালোচনা থাকবে- সুহৃদ হয়তোবা চাইবে না ওর চক্ষুলজ্জার জন্য, আমি চাইব না ওর বিজ্ঞাপনের ডামাডোলে আমার 'খ্যাতি' নিষ্প্রভ হবার আশংকায়, কিন্তু আমার নিজের পত্রিকা বলে তো আমি একাই সর্বেসর্বা নই- জাহিদ, কৌশিক, নায়লা, ওরা সবাই মিলে সুহৃদের স্খলন নিয়ে বড্ড মাতামাতি করবে। পত্রিকার সম্পাদক সুহৃদ রহমান হলে এ কাজগুলো অত্যন্ত দৃষ্টিকটু দেখাবে, সবাই ভাববে, বাহ্‌, সম্পাদক সাহেব তো ভালোই নিজের নাম ফাটাচ্ছেন!
সুহৃদ সাফ বলে দিল, সম্পাদনা পরিষদে তার কোন নাম ছাপা হবে না।
কিন্তু সম্পাদক হিসাবে তো একটা নাম থাকা চাই- যদিও তার করার কোন কিছুই থাকবে না, সে পুতুল সম্পাদকও নয়, আবার 'ছায়া সম্পাদক'ও নয়, সে একটা নাম মাত্র- যার একটা অস্তিত্ব আছে কিন্তু কর্তৃত্ব নেই- সকল কর্তৃত্ব প্রধান সম্পাদকের কুক্ষিগত, যার ক্ষমতা আবার সুহৃদের সুনিয়ন্ত্রণে।
সুহৃদ বললো, পত্রিকার সম্পাদক নির্বাচনের আগে আমাদের আরেকটা কাজ করার আছে, যা হলো সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ। পত্রিকা প্রকাশের জন্য খরচ কে যোগাবে?
বিজ্ঞাপন থেকে। আমি বলি।
সবাই আশান্বিত হয়, সুহৃদ বক্র হাসে। বলে, বিজ্ঞাপনদাতা ঠিক করেছিস?
তোরা প্রত্যেকে দুটা করে বিজ্ঞাপন ঠিক করবি। আমি বলি।
জাহিদ ফট করে বলে উঠলো, তাহলে পত্রিকা নিয়ে তোর এতো মাদবরি কেন? আমরা সবাই সমান। আমরা সবাই রাজা।
সুহৃদ জাহিদকে থামিয়ে বলে, দুষ্টুমি পরে করিস। করিমের কথা মতোই আমরা আগে কাজ শুরু করি, দেখি কদ্দুর কি হয়।
সত্যি আমার মন খারাপ হয়ে যায়। এ পত্রিকার নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব আমার দখলে রাখা আর সম্ভব হচ্ছে না বুঝতে পারি। আমি আমার উঁচুগলা ভাব ক্রমশ নামিয়ে আনতে থাকি, তবে কোনমতেই হাল ছাড়া যাবে না, আমি ভাবি। আমার কর্তৃত্বে ভাগ বসুক ক্ষতি নেই, কিন্তু এর প্রস্তাবক হিসাবে নিশ্চয়ই আমার সাথে অন্য কারো নাম উচ্চারিত হবে না কখনো।
সুহৃদ বললো, কৌশিক মহম্মদ- সম্পাদক হিসাবে একটা জুতসই নাম বটে। তার সাথে তোরা সবাই থাকবি সহ-সম্পাদক- নায়লা বানু, জাহিদুল ইসলাম, সজল হাসান- সবাই।

মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, জুতার তলা খসিয়ে ফেলে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি প্রায় একটি মাস- কারো কাছ থেকে বিজ্ঞাপন বাবদ কোন অর্থ যোগাড় করতে পারিনি। কারো কাছে হাত পাততে যাওয়াটা চরম লজ্জার কাজ, মাথা হেঁট হয়ে আসে, প্রত্যাখ্যাত হলে মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করে। সবার ওপর আমার 'উঁচুগলা ভাব' বজায় রাখার জন্য আমি সব সহ্য করেছি, কিন্তু অন্যরা কিছুই করেনি।
ওদিকে, কৌশিকের ছাত্র-ছাত্রীরা ঢাকা শহরের আনাচে কানাচে লিফলেট আর পোস্টারে ছেয়ে ফেলতে শুরু করেছে, লেখাও প্রতিদিন জমা হচ্ছে প্রচুর। সেগুলো বাছাই, পরীক্ষা নিরীক্ষা চলে, কিন্তু আমার মাথায় একটা চিন্তাই সারাক্ষণ ভনভন করে- টাকা- টাকা আসবে কোথা থেকে?
আবার গোলটেবিল বৈঠক বসে। নায়লার ঔদার্যে আমি বিসিমত হয়ে যাই- এই কি সেই কৃপণের কৃপণ নায়লা? সে বললো, তোরা এতো ভয় পেয়েছিস কেন? একটা পত্রিকা বের করতে কয় লাখ টাকা লাগবে রে?
জাহিদ লাফিয়ে উঠে ওর হাত চেপে ধরে বলে, লাখ না রে বুবুজান, তুই আমাদেরকে মাত্র বিশ হাজার টাকা দে।
তোদের জন্য বিশ হাজার টাকা মঞ্জুর- যাহ্‌, দিয়ে দিলাম।
জাহিদ ভক্তিতে নায়লার পা ছুঁয়ে কদমবুছি করে।

পত্রিকা বিষয়ক আলোচনা ও কাজ-কর্মের জন্য এরপর প্রায় নিয়মিত কৌশিকের কোচিং সেন্টারে আমাদের আড্ডা বসতে শুরু করে। সজল একজন শিক্ষক হিসাবে যতোখানি নাম কুড়িয়েছে, কৌশিক কোচিং সেন্টার খুলে তার চেয়ে ঢের বেশি কুড়িয়েছে। সজল মেধাবী ছাত্র, গাঁয়ের স্কুল-কলেজ শেষ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংলিশে মাস্টার্স করেছিল। সজল জীবনে সংগ্রাম করেছে প্রচুর। কৌশিকও সংগ্রাম করেছে, সে ছাত্র-অবস্থায়ই টিউশনি করেছে, কষ্টে-সৃষ্টে ঢাকা ভার্সিটিতে ইংলিশে অনার্স সহ মাষ্টার্স করেছে, তার রেজাল্টটাও ছিল অসাধারণ।
কৌশিক আর সজল দুজনেই খুব ভালো টিউটর। ওরা খুব শুদ্ধ ও ভালো ইংরেজি পড়ায়, ইংলিশে মাস্টার্স করেছে বলেই যে হাব-ভাব, চাল-চলন ও কথাবার্তায় তা ফুটাতে হবে, এ জিনিসটা ওদের মধ্যে নেই। আমাদের মধ্যে ইংরেজি ডিগ্রীধারী অনেকেই আছেন যাঁরা সব সময় একটা ইনফিরিয়রিটি কমপ্লেক্সে ভোগেন- ইংরেজিতে ডিগ্রী আছে অথচ ইংরেজিতে দুর্বল এ জিনিসটা জানাজানি হয়ে গেলে মানুষ না জানি কি ভাববে। জীবনে কোন অপ্রাতিষ্ঠানিক বাংলা বইও হয়তো পড়েননি, জ্ঞানের ভাণ্ডার ঠনঠন, অথচ বইয়ের দোকানে গিয়ে তাঁরা মানুষকে দেখানোর জন্য অযথা বড় বড় ইংরেজি পুস্তক নাড়েন, যা দেখে অনুমান হয় তিনি একজন অরিজিন্যাল ইংলিশম্যান বা ইংরেজি জানা পণ্ডিত। ইংরেজি তো পরের কথা, এমনকি বাংলায়ও একটা শুদ্ধ বাক্য বলতে পারেন না, কিন্তু যারা ইংরেজি জানে না বা বোঝে না তাদের সামনে হঠাৎ দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে ভুল উচ্চারণ আর ভুল বাক্যগঠনে পরিপূর্ণ ইংলিশ এ্যাড্রেস দেয়া শুরু করেন। কিংবা আমার মতো কম ইংরেজি-বোঝা লোকেদের সাথে, এমনকি রিক্সাওয়ালাদের সাথেও চিবিয়ে চিবিয়ে ইংরেজিত্ব জাহির করেন। সবাই অবাক হয়ে যায়- লোকটা কি সাংঘাতিক ইংলিশ বলে! কৌশিক আর সজলের মধ্যে এরূপ স্টান্টবাজি নেই। ওদের ইংলিশ কনভার্সেশন খুব ন্যাচারাল; অনেক অপরিচিত লোকের সাথে ওদের প্রথম সাক্ষাত আমি উপভোগ করেছি বহুবার- ঠাশ ঠুশ করে আপাত ভেরি হাই সাউন্ডিং, সফিস্টিকেটেড এন্ড মোস্ট মডার্ন ইন্ট্রুডিউসিং ইংলিশ ফ্রেজেস ব্যবহার করেছেন তাঁরা। কথা প্রসঙ্গে কোন এক সময়ে তাঁরা হয়তো জানতে পেরেছেন যে কৌশিক ঢাকা ভার্সিটির একজন ইংলিশে মাস্টার্স, আর সজল এক বিখ্যাত সরকারী স্কুলের স্বনামধন্য ইংলিশ টিচার, তখন তাঁরা অবশ্য ফু-উ-স করে নিভে গেছেন। সজল প্রায়ই একটা কথা বলে থাকে, কারো দু-একটা কথা শুনেই বোঝা যায় সে ইংরেজিতে কতোখানি দক্ষ, অনবরত 'ইংলিশ মারার' দরকার নেই। এর দ্বারা যে সত্যিকারের দুর্বলতাটুকু প্রকাশ পেয়ে যায় তা কিন্তু অনেকেই টের পায় না। বলতে না পারলেও যে 'মারতে' হবে এমন কোন কথা আছে? কথায় কথায় ইংরেজি বললেই তাকে ইংরেজি-জানা পণ্ডিত বলা যায় না। যা সবচাইতে বেশি দরকার তা হলো জ্ঞান; আমার জ্ঞান থাকলে একদিন লোকে আমাকে এমনিতেই পণ্ডিত বলবে, এরচে বেশি আর কী চাই?

ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে কৌশিকের লেখক-পরিচিতিটা খুব ছড়িয়েছে। ওর বই বের হলে দুই-তিনশো বই ওর ছাত্র-ছাত্রীরাই কিনে নেয়। ঢাকা শহর ভরে ওর ছাত্র-ছাত্রীরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

আমি, সজল, জাহিদ, সুহৃদ আর পিয়াল একদিন দুপুরে কৌশিকের কোচিং সেন্টারে গিয়ে হাজির হলাম। উদ্দেশ্য, ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে আরো অনেকগুলো পোস্টার ও লিফলেট ধরিয়ে দেয়া, তারা পোস্টারগুলো বিভিন্ন হলে লাগিয়ে দিবে, লিফলেটগুলো কলেজের গেইটে দাঁড়িয়ে, ভার্সিটি ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়ে বিতরণ করবে।
বারো-চৌদ্দ জনের একটি ব্যাচকে কৌশিক পড়াচ্ছিল। আমরা গিয়ে বারান্দায় দাঁড়াতেই ভিতর থেকে সে বেরিয়ে এলো। বারান্দার চেয়ারগুলোতে বসে পড়ে ওর সাথে পত্রিকা বিষয়ক আলোচনা শুরু করে দিলাম। কিন্তু পিয়াল পাগল হয়ে গেল। জানালার ফাঁক দিয়ে ভিতরে এতোগুলো তরুণীকে দেখতে পেয়ে ও ঠিক থাকতে পারছিল না। আমরা কৌশিকের সাথে আলোচনায় মেতে উঠলাম, ঠিক ঐ ফাঁকে পিয়াল কলকল শব্দে ঘরের ভিতরে ঢুকলো।
Hello students, how are you?
কয়েকটা ছেলে জ্বি ভালো বললেও মেয়েগুলো মুখে উড়না চেপে ফুঁসফাঁস করে হেসে উঠলো।
পড়াশোনা কেমন চলছে? পিয়াল জিজ্ঞাসা করে।
ভালো।
Boys and girls, তোমাদেরকে আমার পরিচয়টা দিয়ে নিই, I am ‘a’ English Professor of Dhaka Varsity. May I know your identity please?
বারান্দায় হঠাৎ আমাদের কথা থেমে যায়। কৌশিক আর সজল ঘাড় ফিরিয়ে পেছনে তাকায়। আমরা পিয়ালের প্রফেসর হওয়ার কাহিনী শুনতে থাকি।
একটা মেয়ে জিজ্ঞাসা করে, স্যার, কৌশিক স্যার কি আপনার স্টুডেন্ট ছিলেন?
No no girls, he is my classmate. We studied in the same school and college.
আপনি কদ্দিন হলো ভার্সিটিতে আছেন, স্যার?
তা-ও ধরো চার-পাঁচ বছর তো হলোই।
ও-- তাহলে আপনি আর কৌশিক স্যার বুঝি এক সাথে ভার্সিটিতে পড়েছেন?
কেন, কৌশিক কখনো বলেনি? আশ্চর্য! যাকগে, আমি অবশ্য রেজাল্টের পর পরই ভার্সিটিতে চাকরি পেয়ে যাই। আমার রেজাল্টটা খুব ভালো ছিল তো!
ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট নিশ্চয়ই!
O no- পিয়াল বলে, You can’t expect a First Class in English Literature. I got a Second Class Fifth out of seventy.
হঠাৎ একটা মেয়ে জিজ্ঞাসা করে, স্যার, আপনি বিয়ে করেছেন? লক্ষ্য করে দেখি মেয়েটি এ কথা বলেই মুচকি হাসছে।
পিয়াল চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে বলে, Where is my time? I couldn’t manage time to get married to a beautiful girl. Oh- my dream girl- my sweet lady doesn’t appear. So sad- so sad!
কৌশিক উঠে ভিতরে গেল। ওকে দেখেই পিয়াল চঞ্চল হয়ে বলে উঠলো, Kowshik, you better be on rest. Let me see how much you could teach your babies.
কৌশিক একটু বিব্রত হয়। কারণ, এই ব্যাচটাকে পড়ানোর সময় শেষ, পরবর্তী ব্যাচের ছাত্র-ছাত্রীরা এখনই আসতে শুরু করবে। পিয়াল যদি এখন এই মেয়েগুলোকে আকৃষ্ট করার খেলায় মজে যায়, তাহলে পরের ব্যাচটার জন্য সময় দেয়া যাবে না।
কৌশিক পিয়ালের কানে কানে কী যেন ফিসফিস করে বলে; পিয়াল চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলতে থাকে, I think I can meet you again. Hope to see you next time, till then good bye. ঘুরে বেরুতে উদ্যত হয়েই সে আবার সামনে ফিরে। বলে, O yes, I forgot to tell you a secret of mine- please make a habit of speaking English. You can’t be a fluent speaker unless you speak much. Take ‘a’ example from me, I speak so much in English that now I have forgotten speaking Bangla.
কয়েকটা ছেলে আর মেয়ে খুকখুক করে কেশে ওঠে এবং একটি মেয়ে জোরে হেসে উঠে পরক্ষণেই মুখে হাত চেপে হাসি বন্ধ করার চেষ্টা করে।
অকস্মাৎ একটা ছেলে খুব হৃদয় হন্তারক প্রশ্ন করে বসে, স্যার, আপনার জিহ্বায় কি কোন সার্জারি করা হয়েছে?
কেন কেন? পিয়াল জিজ্ঞাসা করে।
আপনি খুব চিবিয়ে চিবিয়ে বলেন তো-
পিয়ালের মুখ কালো হাঁড়ির মতো হয়ে যায়। আমরা ওর পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে ওর প্রতি সমবেদনা জানাই।

নায়লার ইচ্ছেমতো দশ-বারো দিনের মধ্যেই তরুণ কণ্ঠ বের করা গেল না। আমাদের প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিল মাস দুয়েকের মধ্যে প্রথম সংখ্যাটা বের করা। পরে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়- একটা উৎসবকে উপলক্ষ করে প্রথম সংখ্যাটা বের করা উচিৎ। আমাদের কাছে মনে হলো নতুন বইয়ের মতো একটা নতুন সাহিত্য পত্রিকার জন্যও বইমেলা উৎকৃষ্ট উৎসব হতে পারে।
একুশে বইমেলার আগে ঢাকা বইমেলা শুরু হলো। পুরোদমে প্রাপ্ত লেখার কম্পিউটার কম্পোজ চলছে। ঢাকা বইমেলায় ঘুরে ঘুরে মহাধুমধামে লিফলেট বিতরণ ও প্রচারণার কাজ শুরু করলাম। মোড়ক উন্মোচনের জন্য একুশে বইমেলাই হলো টার্গেট।
ঢাকা বইমেলাতে প্রতিদিন আমরা তিন-চারজন করে মিলিত হই- উদ্দেশ্য পত্রিকার জন্য লেখা চাই লিফলেট বিতরণ করা।
কখনো টোকাইয়ের হাতে দিয়ে দিই, কখনো আমরা নিজেরাই এগুলো বিলি করি। মেয়েরা সঙ্গে থাকলে জমে ভালো। নরের হলো কর্ম-কৌশল, নারীর হলো রূপ। এভাবে অদম্য উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে আমরা লিফলেট ছড়ানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম।
জাহিদ আর পিংকি প্রায়ই আলাদা জুটি বেঁধে হাওয়া হয়ে যায়। কী যে ওরা করে, চুটিয়ে প্রেম শুরু করে দিয়েছে কিনা জানি না; কখনো দেখি নিজের অজান্তেই আমি ওদের সাথে মিশে গেছি। ওরা দুজন ঝানু ক্যানভাসারের মতো পত্রিকার লেখা চাই বিজ্ঞাপন আওড়ায়, ওদের পেছনে লিফলেট হাতে আমি ঘুরে বেড়াই। মেলা শুরু হওয়া থেকে শেষ অব্দি সারা মেলা জুড়ে হাঁটতে হাঁটতে জুতার তলা ছুটে যায়, পায়ের পাতায় ফুসকা পড়ে যায়।

লেখা সংগ্রহ করতে গিয়ে আমাদের বেশ কিছু মজার অভিজ্ঞতা হয়েছিল। একটা বহুল প্রচলিত এবং অত্যন্ত জনপ্রিয় দৈনিক পত্রিকায় প্রথম বারের মতো লেখা আহ্‌বান বিজ্ঞপ্তিটি ছাপা হয়েছিল এর ভিতরের পাতায়। মজার ব্যাপার হলো, বিজ্ঞাপনটা পত্রিকার কোন্‌ স্থানে যে লুকানো ছিল তা খুঁজে বের করতে আমাদের সবাইকে পুরো দুদিন পর্যন্ত কষ্ট করতে হয়েছিল। পরে এদেশের সবচাইতে জনপ্রিয় একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার পরপর দু-সংখ্যায় বিজ্ঞাপনটা প্রকাশ করা হয়েছিল। কিন্তু এরূপ প্রচার আমাদের কাছে খুবই অপ্রতুল মনে হয়েছিল। তাই কৌশিকের ছাত্র-ছাত্রীদেরকে দিয়ে ঢাকা শহরের প্রায় প্রতিটি স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ও হোস্টেল সমূহে দ্বিতীয়, এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে তৃতীয় বারের মতো পোস্টারিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। শহরের বাইরে পরিচিত স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতেও অনুরূপ পোস্টার পাঠানো হয়েছিল। বিভিন্ন দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকা, এমনকি পত্রমিতালি গাইডও ঘাঁটাঘাঁটি করে অনেক পত্র-লেখক, গল্পলেখক, কবি এবং পত্র-বন্ধুর নাম সংগ্রহ করা হয়েছিল। এবং তাঁদের প্রত্যেকের কাছেই লেখা আহ্‌বান করে চিঠি লেখা হয়েছিল। এমনকি ইন্টারনেট ব্রাউজিং করেও বেশ কিছু সৌখিন ও আগ্রহী লেখকের ঠিকানা পাওয়া গেল এবং তাঁদের কাছেও যথারীতি লেখা পাঠানোর চিঠি লেখা হয়েছিল। এমন চিঠির সংখ্যা কম করে হলেও পনর শো হবে।
ঠিকানা যোগাড়ের কাজটি ছিল আমার আর সুহৃদের ওপর; চিঠি লিখেছে জাহিদ ও সজল। ওদের হাতের লেখা যেমন সুন্দর, লিখেও খুব দ্রুত। কিছু কিছু ঠিকানা, বিশেষ করে মেয়েদের, ভূয়া ছিল। প্রাপক না পেয়ে অল্প দিনেই অনেক চিঠি সম্পাদকের ঠিকানায় ফেরত আসতে শুরু করে। লেখা পাঠিয়ে অনেকে আবার জানতে চেয়েছেন, তাঁদের ঠিকানা আমরা কোথায় পেলাম।
বইমেলায় আমাদের লিফলেট বিতরণটা ছিল আরো বেশি মজার। প্রথম প্রথম যখন লিফলেট বাড়িয়ে দিতে যাই কিছু কিছু লোক এগুলোকে বিশেষ কিছু ঔষধের লিফলেট মনে করে হাত দিয়ে সরিয়ে দিয়েছেন, বা হাত টেনে নিয়েছেন। কিন্তু বিজ্ঞপ্তির বিষয়বস্তুতে নজর পড়তেই উৎসাহিত হয়ে ফিরে এসে জানতে চেয়েছেন, লেখা পাঠালে ছাপা হবে কিনা। কোন এক স্টলের এক নিরলস কবি বললেন, তিনি সব সময়ই পকেটে নিজের কবিতা নিয়ে ঘোরেন। কয়েক চরণ আবৃত্তি করে শোনাবার জন্য তিনি খুব ব্যগ্র হয়ে উঠলেন। অবশেষে খুব বিনয় সহকারে বললেন, আমি অবশ্যই লেখা পাঠাবো। ছাপবেন কিন্তু। কৌশিক ভাই- (বিজ্ঞাপনে সম্পাদকের নাম ছিল, সবাই মনে করেছেন আমার নাম কৌশিক মহম্মদ), আমার নামটা প্লিজ মনে রাখবেন- ছাত্তার। এতো লেখা পেয়েছিলাম, কিন্তু এ নামের কোন কবিকেই খুঁজে বের করা যায়নি।

দুই তরুণ আর দুই তরুণী এগিয়ে আসছিল। আমাদের দেয়া লিফলেট হাতে পেয়েই তারা রোমাঞ্চিত হয়ে উঠলো। একটি ছেলে জিজ্ঞাসা করলো, ভাইয়া, আমাদের লেখা ছাপবেন তো? একটি মেয়ে অত্যুৎসাহী হয়ে উঠলো, বললো, আমার না অনেকগুলো কবিতা আছে; তার মধ্যে মা কবিতাটা হলো সবচাইতে বিখ্যাত। আমি মা কবিতাটাই পাঠাবো, ছাপবেন ভাইয়া? বললাম, ছাপার যোগ্য হলে তা অবশ্যই ছাপবো।
অবশ্যই ছাপার যোগ্য হবে। তারপরও মনে হচ্ছে ছাপবেন না। মেয়েটি বলে।
আমরা হেসে বলি, ছাপবো না কেন, অবশ্যই ছাপবো।
কেউ এ পর্যন্ত ছাপেনি তো, তাই মনে হচ্ছে আপনারাও ছাপবেন না।
আপনি দেখবেন, আপনার লেখা ঠিক ঠিক ছাপা হয়ে গেছে।
মেয়েটি খুব আহ্লাদিত ও করুণ স্বরে বলে, প্লিজ ভাইয়া, আমার নামটা কি একটু মনে রাখবেন? আমার নাম সালেহা- নামটা মনে থাকবে তো, ভাইয়া?
অবশ্যই আপনার নামটা মনে থাকবে, আমি বলি, কারণ আমার ছোট বোনের নামটাও সালেহা।
আমার ছোট বোন সালেহার একটা মা শীর্ষক কবিতা আমাদের হাতে আসবে মনে করে অনেক প্রতীক্ষায় থেকেছিলাম, সেই কবিতাও শেষ পর্যন্ত আর আসেনি।

একদিন দুপুরে আমি গিয়েছিলাম কৌশিকের কোচিং সেন্টারে। প্রাপ্ত লেখাগুলো বাছাই করতে আমরা প্রচুর ব্যস্ত ছিলাম। এমন সময় এক এলোচুল, উসখুসে চেহারার যুবক এসে উপস্থিত।
কৌশিক মহম্মদ কি আছেন?
কেন ভাইয়া?
আমি তাঁর সাথে দেখা করতে চাই।
আপনি কে?
আমি একজন কবি।
ও বুঝেছি, পত্রিকায় কবিতা দিবেন তো?
জ্বি।
আমাদের কাছেই দিয়ে যান। আমরা সম্পাদকের লোক।
কবিতা আনিনি। আমাকে কাগজ কলম দিন।
কাগজ কলম দিয়ে কী করবেন?
কবিতা লিখবো।
আমরা একদিকে অত্যধিক ব্যস্ত, তার ওপরে হাতের কাছে কোন অব্যবহৃত কলম নেই, সাদা কাগজও নেই। আকুতি-মিনতির ভঙ্গিতে বলি, এখানে তো ভাই এখন কাগজ কলম পাওয়াটা মুশকিল, একটু কষ্ট করে কি অন্য কোথাও থেকে লিখে এনে দিবেন?
চেহারায় অতিশয় বিরক্তির ভাব ফুটিয়ে কবি চলে গেলেন এবং কিছুক্ষণ পর এসে কবিতা জমা দিয়ে গেলেন। যাবার বেলায় কবি বলে গেলেন, আমি এ যাবত প্রায় একশোটির মতো কবিতা লিখেছি। আমার কবিতা ছাপবেন কিন্তু।
বইমেলার প্রত্যেকটা স্টলে ঘুরে ঘুরে লিফলেট বিতরণ করেছি। প্রত্যেক স্টলে আমরা বিশ-পঁচিশটি করে লিফলেট জমা রেখেছি, যাতে তারা সেগুলো আগ্রহী বই-ক্রেতা কিংবা পরিচিত লেখকগণের মধ্যে বিতরণ করেন। প্রত্যেকটা স্টল আমাদের এরূপ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে এবং উৎসাহ দিয়েছে। এরূপ কোন এক স্টলে উপস্থিত বই-ক্রেতাগণের কাছে লেখা চাইতেই জনৈক তরুণ (ভদ্রলোক) সগর্বে বলে উঠলেন, আপনারা ইংলিশ লেখা ছাপবেন?
আমরা সবিনয়ে জানালাম, ভাই, এটা আমাদের বাংলা সাহিত্য-পত্রিকা, দয়া করে বাংলা লেখা পাঠাবেন। আপনি বাংলায় লিখেন না?
আমি অবশ্য ইংল্যান্ডে থাকি। এজন্য বাংলায় লিখতে পারি না। এদেশের একটা বড় ইংলিশ ম্যাগাজিনে আমার লেখা ছাপা হয়।
এই তরুণের কৃতিত্বে আমরা মুগ্ধ হই। যাবার সময় জিজ্ঞাসা করি, আপনার সর্বশেষ লেখাটা কবে ছাপা হয়েছে?
তিনি কেন যেন হঠাৎ মিইয়ে গেলেন। বললেন, আমার লেখাটা অবশ্য অনেক আগে ছাপা হয়েছিল। দিন তারিখ মনে নেই।
আমরা তাঁকে উৎসাহিত করে বলি, নো প্রোবলেম। আপনি ইংরেজিতে লিখেই পাঠাবেন। আমরা বঙ্গানুবাদ করে নিব।
জাহিদ সেই মুহূর্তে জিজ্ঞাসা করে বসলো, ভাই, আপনি ইংল্যান্ডের কোন্‌ জায়গায় থাকেন?
আমি তো ভাই বেড়াতে গিয়েছিলাম, তবে জায়গাটার নাম আমার মনে নেই। অনেক আগে গিয়েছিলাম তো!
ও আচ্ছা, আচ্ছা। তো আবার যখন ইংল্যান্ডে বেড়াতে যাবেন একবার দয়া করে সাউথ লন্ডন ঘুরে আসবেন। খুব ভালো জায়গা। আমি গত সাড়ে চার বছর সাউথ লন্ডনে ছিলাম। আচ্ছা আসি, কেমন? বাই বাই।

অনেক লেখা জমা পড়তে শুরু করলো। লেখার পাহাড় দেখে আমি খুব অভিভূত হয়ে যাই। সুহৃদ আর কৌশিক এগুলো বাছাই করতে থাকে। বাছাই করতে করতে কখনো ওরা বিরক্ত হয়ে যায়। আবার মাঝে মাঝে দেখি কোন কোন কবিতা নিয়ে ওরা গভীর তত্ত্বীয় আলোচনায় মজে যায়, যা আমার মাথায় খুব একটা ঢোকে না।
প্রাপ্ত লেখাগুলোর শতকরা নব্বই ভাগই হলো কবিতা। যাঁরা কবিতা লিখেছেন তাঁদের অনেকেই একেবারে ব্যক্তিগত ঘটনা, জীবন-কাহিনী, সাংসারিক বা পারিবারিক ঘটনা হুবহু কবিতায় বর্ণনা করেছেন। ফলে আমার মতে সেগুলো খাঁটি কবিতা হয়ে ওঠেনি। আমি জানি, কবিতার কথা কবির মনের গোপন কথা যা নিরেট সত্য কথা। কিন্তু এই সত্য কথাগুলো বা কাহিনীগুলো কিভাবে শিল্পায়িত করতে হয় তা আমাদের এই তরুণ লিখিয়েদের বোধ হয় এখনো শেখার বাকি। এবং তা শিখতে হলে পড়াশোনা ছাড়া কোন বিকল্প নেই। প্রচুর আধুনিক কবিতা পাঠ করা উচিত। বিভিন্ন সাহিত্য সাময়িকীতে প্রকাশিত প্রতিষ্ঠিত কবিদের কবিতা পড়তে হবে অতি মনোযোগের সহিত। ভাষার ব্যবহার, শব্দ চয়ন, বাক্যগঠন, চলিত রীতির ব্যবহার ও সাধু রীতির পরিহার সম্পর্কে সর্বদা সচেতন থাকা অপরিহার্য। মোর (আমার), আসিছে (আসছে), চাহি' (চেয়ে), হইতে (হতে) ইত্যাদি শব্দগুলো এখন আর কবিতায় ব্যবহার করা চলে না। অর্থ্যাৎ কবিতার নির্মাণ খাঁটি চলিত রীতিতেই হওয়া চাই। এ জিনিসটা মনে রাখতে পারলেই কবিতার সবচাইতে দুর্বল দিকটা থেকে নিজর উত্তরণ ঘটানো সম্ভব।
প্রাপ্ত লেখাগুলোতে যেটি সবচাইতে বেশি বিরক্তিকর ব্যাপার লক্ষ্য করলাম তা হলো লেখকগণের হাতের লেখা। অনেক লেখকের নিজের নামটি পর্যন্ত স্পষ্টাক্ষরে লেখা নেই। কারো নাম কবিতার পাতায় এক রকম, আবার খামের ওপর অন্য রকম, দেখা যায় অপর পৃষ্ঠায় হয় ভিন্ন আরেক বানান অথবা সম্পূর্ণ নতুন আরেক নাম- এতোগুলো নামের মধ্যে কোন্‌ নামে তাঁরা উঠতে চান ও খ্যাতি পেতে চান তা উদ্ধার করা দুরূহ হয়ে উঠলো। চাওয়া হয়েছিল মাত্র একটি করে লেখা, লেখকের লেখা শ্রেষ্ঠ রচনাটি। স্বনির্বাচিত শ্রেষ্ঠ রচনার শ্রেষ্ঠত্বের ব্যাপারে অধিকাংশেরই কোন আস্থা নেই; তাঁরা এক সঙ্গে তিন চারটি করে কবিতা, কৌতুক, গল্প পাঠিয়েছেন। অনেকে হাতে হাতেও লেখা জমা দিয়েছেন। কবিতার পৃষ্ঠায় অনেকে নাম লিখেননি, কিংবা প্রতি কবিতায় না লিখে মাত্র একটিতে লিখেছেন। ফলে যে লেখাটি নির্বাচিত হলো দেখা গেল তাতে লেখকের নাম নেই। হাতের লেখা মিলিয়ে নাম খোঁজার চেষ্টা চলে, কোনোটার হদিস মেলে, কোনটা বেনামী লেখা হিসাবেই ছাপার জন্য নির্বাচিত হয়ে যায়।

সুহৃদের সম্পূর্ণ একক সম্পাদনা ও দিবারাত্র অক্লান্ত পরিশ্রমের পর একুশে বইমেলার শেষের দিকে একদিন উজ্জ্বল তরুণ কণ্ঠ আলোর মুখ দেখে। আমাদের সবার লেখা ছাপা হয়েছে। আমরা এটি হাতে নিয়ে তড়িঘড়ি পাতা উল্টাতে থাকি, কোথায় কার লেখাটি আছে, কোথাও কোন ভুল আছে কিনা, শব্দের কিংবা বাক্যগঠনের। ঢাকার এবং আশেপাশের অনেক তরুণ কবি-লেখক আস্তে আস্তে জড়ো হতে শুরু করলেন, তাঁদের কারো লেখা ছাপা হয়েছে, কেউ এর বিজ্ঞাপন পাননি বলে লেখাই জমা দিতে পারেননি, এখন আফসোসে ফেটে পড়ছেন। একটি আশ্চর্য গোপন কথা বলি, এ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক আমি, ছায়ারূপী সম্পাদক কৌশিক, সুহৃদের স্খলন ছাপবার সময় আমি আগাগোড়া ওর সঙ্গে থেকেছি, পাণ্ডুলিপি পড়েছি, প্রূফ দেখে দিয়েছি, কিন্তু আমার তরুণ কণ্ঠের জন্য লেখা আহ্‌বান ও বাছাইয়ের কাজ ছাড়া আর কিছুই কৌশিক বা আমি করিনি- পাণ্ডুলিপি কম্পোজ থেকে শুরু করে ট্রেসিং বের করা, প্রচ্ছদ প্রস্তুত করা, অঙ্গসজ্জা, মেকিং, প্লেট, পজেটিভ ইত্যাদি সমুদয় কাজের জন্য একমাত্র সুহৃদ উদয়াস্ত লেগে ছিল। আমাদের কিছুই দেখায় না বলে আমি আর কৌশিক একবার মনে মনে রাগ করেছিলাম- এটা কি ওর বাপের পত্রিকা, নাকি আমার পত্রিকা? যাহোক, এক মাঘে শীত যায় না এবং সম্পর্কচ্ছেদ না হয় এই ভেবে সেই রাগ আমরা মনে মনে ধরে রেখেছিলাম, প্রকাশ করিনি।
উপস্থিত সবাই এর ভূয়সী প্রসংসা করতে থাকলো। সম্পাদনা পরিষদে নাম দেখে কেউ কেউ সামনে এগিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করেন, ভাইয়া, আব্দুল করিম সাহেব কোন্‌ ব্যক্তি?
আমি স্মিত হেসে সংযত গর্বে নিজের পরিচয় দেই। তাঁরা আমার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে ওঠেন।
আমাদের এলাকার প্রয়াত তরুণ কবি- মিজানুর রহমান শমশেরী, কবি মালেক ভাই নামে সবাই যাঁকে একনামে চিনতো, আজও চিনে- সেই কবির এক বিশাল কাব্যভাণ্ডার রয়েছে, যার সুবৃহৎ পাণ্ডুলিপিটিতে ময়লা জমে জমে ক্রমশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, পোকায় পাতা কেটে বিনাশ করছে। সুহৃদ বহুবার অনেককে বলেছে যৌথভাবে ঐ কবির কবিতাগুলো বই আকারে বের করার জন্য। ওর কথায় কেউ আমল দেয়নি। জাহিদের বাল্য ও কৈশোরের পুরোটাই কেটেছে সেই কবির গভীর সান্নিধ্যে- কবির ঘরের পাশেই ছিল জাহিদের ঘর। জাহিদ বলেছে, মালেক ভাই বলেছিলেন তাঁর মৃত্যুর পর আমরা যেন তাঁকে স্মরণ করি- অথচ কি নিষ্ঠুর বাস্তবতা, সেই জাহিদও সুহৃদের এই উদ্যোগকে তেমন গুরুত্ব দিল না। আমি জানি, মালেক ভাইয়ের সাথে সুহৃদের কোন ঘনিষ্ঠতা ছিল না, কবির জীবদ্দশায় আমারও তাঁর কোন কবিতা পড়ার সৌভাগ্য হয়নি- কিন্তু যখনই সুহদ কিংবা জাহিদের মুখে তাঁর কবিতার দু-চার ছত্র শুনি, আমি মুগ্ধ-অভিভূত হয়ে যাই।

আমি সুহৃদের ওপর কতো বড় একটা ভুল ধারণা পোষণ করেছিলাম- আকাশচুম্বী খ্যাতির লোভে সে বই বের করে থাকে। আসলে তা নয়। নিজের টাকায় চার-পাঁচটি বই বের করা ওর জন্য খুব একটা সমস্যা হবার নয়, কিন্তু তা সে করলো না, যা করেছে তা অতি মহৎ, যার তুলনা আমার জানা নেই। মিজানুর রহমান শমশেরীর বিশাল পাণ্ডুলিপিটা 'মিজানুর রহমান কবিতা-সমগ্র' শিরোনামে ওর একক প্রচেষ্টা ও অর্থে বের করে দিয়েছে। ওর বিশ্বাস- এবং আমিও ওর সাথে আজ প্রকাশ্যে একমত- এই কবিতা-সমগ্র দ্বারা একদিন 'অজ্ঞাত' ও 'অখ্যাত' শমশেরী জেগে উঠবেন, তাঁর খ্যাতি শুধু তাঁর মুষ্টিমেয় বন্ধুমহলেই নয়, সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে- মানুষ তাঁর কবিতা পড়বে আর এই অকাল-প্রয়াত প্রতিভার বিশালত্ব ও অসাধারণত্ব দেখে মুগ্ধ-বিস্মিত হবে।

'সস্তা জনপ্রিয়তা' কিংবা খ্যাতির মোহ সুহৃদের আর নেই। জাহানারা ম্যাডামের কাছে সে পাঁচটি পাণ্ডুলিপি জমা রেখেছে। ম্যাডাম এতোগুলো লেখা পড়বার সময় পাননি, তবে মাঝে মধ্যে চোখ বুলিয়ে গেছেন। তিনি সুহৃদকে বলেছেন, লিখতে থাকুন। আজই এগুলো ছাপতে হবে তার কোন বাধ্যবাধকতা নেই। আজ যেটা লিখবেন সেটা দু-বছর পর নিজে পড়েই বুঝতে পারবেন লেখার মান কতোখানি গুণসম্মত। তখন যদি নিজের কাছে ভালো মনে হয়, ছাপবেন; অন্যথায় ওটি বাদ দিন, নতুন করে লিখতে থাকুন। ভালো উপন্যাস সারা জীবনে একটি-দুটি লিখেও সমরণীয় বরণীয় লেখক হওয়া যায়। ম্যাডামের কথাগুলো সুহৃদ 'গিলেছে'। ও আজকাল বলে কী, ধূর, 'স্খলন' একটা একদম বাজে উপন্যাস হয়েছে, গোঁজামিলে ভরপুর। ও স্বীকার করেছে, গল্পে অবশ্যই কিছুটা গোঁজামিল আছে এবং সেগুলো সে ছাড়া অন্য কারোর ধরার খুব একটা সাধ্য নেই। তা ধরতে হলে 'বুদ্ধিমান' পাঠককে বেশ কয়েকবার বইটি পড়তে হবে। কিন্তু ওর বই একাধিকবার পড়ার মতো 'বে-আক্কেল' খুব কমই আছে। অবশ্য সজলের কথা আলাদা, সে মাত্র একবার পড়েই একটা সাংঘাতিক গোঁজামিল ধরে ফেলেছিল, এবং সেটা সত্যিকারেই গোঁজামিল ছিল, নাকি ওর বুঝবার ভুল ছিল তা যাচাই করার জন্য সে পরপর একরাত একদিনে ওটি দু-বার পড়েছিল।

সুহৃদের মহানুভবতায় আমি মুগ্ধ হয়ে যাই। সারা বইমেলাতে, কিংবা অন্য কোথাও কারো সাথে পরিচয় হলেই ও আমাকে পরিচয় করিয়ে দেয়, হি ইজ মিস্টার করিম, আ গ্রেট এডিটর অফ দ্য লিটল ম্যাগাজিন 'তরুণ কণ্ঠ'। প্রশংসায় ও আমাকে এতোই ওপরে তুলতে লাগলো যে আমি মানুষের কাছে বলতে ভুলে গেলাম- এই হলেন সাগর রহমান, যার প্রকৃত নাম সুহৃদ রহমান, স্খলন নামক একটা অতি উচ্চমার্গের উপন্যাস লিখেছেন তিনি, যা পড়ে মনে হবে ইনিই হলেন আমাদের আলাউদ্দিন আল-আজাদ কিংবা সৈয়দ ওয়ালী উল্লাহ্‌দের উত্তরসূরী। আমি বলতে গিয়েও বলি না, ভাইয়েরা দেখুন, এই সুহৃদ রহমান আরো পাঁচটা বই লিখেছেন, এ বইমেলাতে সেগুলো বের হবার কথা ছিল, কিন্তু তা তিনি করেননি। তার বদলে তিনি তাঁর নিজের অর্থ খরচ করে এক অকাল প্রয়াত কবির কবিতা-সমগ্র বের করেছেন। ও হ্যাঁ, তিনি আরো একটা মহৎ কাজ করেছেন- ময়মনসিংহের এক হোটেলবয়, সে-ও হতে পারে এদেশের আরেক নজরুল কিংবা সুকান্ত- সুহৃদ রহমান সেই সুপ্ত প্রতিভারও একটা বই বের করেছেন- যার চকচকে মলাটের ভিতরে ঝকঝকে কাগজে চল্লিশটা কবিতা ঝলমল করছে এবং তার চেয়েও বেশি ঝলমল করছে সেই কবির অন্তরখানি।
আমি চোখের সামনে দেখলাম মানুষের কাছে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেবার পর সবাই আমার দিকে ঝুঁকে পড়ে, কেউ সুহৃদ রহমানকে জিজ্ঞাসাও করে না, ভাই, আপনার পেশাটা কী? আপনি আব্দুল করিম সাহেবের পিছে পিছে ঘোরেন কেন?
আমি সুহৃদের আসল পরিচয় ও তরুণ কণ্ঠের প্রকৃত 'কারিগর' হওয়ার কথা কাউকে বলি না, কারণ, তাতে আমার খ্যাতি ভূ-লুণ্ঠিত হয়ে পড়বে, আমি যেই তিমিরে আছি সেই তিমিরেই রয়ে যাবো, সুহৃদ তরতর করে ওপরে উঠে যাবে। আমি তা চাই না, চাই না। নায়লা নাম্নী এক উদারমনা তরুণীর অর্থে তরুণ কণ্ঠ বের হয়েছে এটাও কাউকে বলি না, কারণ পত্রিকা বের করার পেছনে আমার অবদান যে অতি নগণ্য তা প্রকাশ হয়ে পড়ে; আমি তা চাই না। আমি আমার নিজের খ্যাতি চাই কৌশিকের মতো, আমার অতি ঘনিষ্ঠজন হওয়া সত্ত্বেও যার ওপরে আমি প্রচণ্ড ক্ষেপে গিয়েছিলাম স্খলনের তিনটি কভার পৃষ্ঠা ওর কোচিং সেন্টারের দেয়ালে লাগায়নি বলে, ওর ছাত্র-ছাত্রীদেরকে স্খলন বের হবার খবরটি বলেনি বলে, পাছে সুহৃদের জনপ্রিয়তার কাছে ওর জনপ্রিয়তা হ্রাস পেতে থাকে- আমি আমার নিজের খ্যাতি চাই সকল ঈর্ষাকাতর শিল্পীর মতো, যাঁরা সহশিল্পীর নিপুণ ও নিখুঁত শিল্পকর্ম দেখে মুখে মুখে প্রশংসা করে অথচ অন্তরে জ্বলে যেতে থাকে- আমি আমার নিজের খ্যাতি চাই, সেই খ্যাতি নিয়ে যুগ যুগ ধরে মানুষের মাঝে বেঁচে থাকতে চাই।

মানুষ খ্যাতি চায়, কারণ মানুষ বাঁচতে চায়; যে মানুষ খ্যাতি চায় না সে মানুষ বাঁচতে পারে না।
এই খ্যাতির জন্যই জাহিদ ওর ভুল বুঝতে পারে। শমশেরীর কবিতা-সমগ্র প্রকাশ করার পেছনে ওর কোন অবদান বা ভূমিকা ছিল না বলে সে খুব লজ্জিত ছিল, তা কাটিয়ে ওঠার জন্যই সে বৃহত্তর এক প্রকল্প হাতে নিয়েছে- স্খলন যেভাবে সে সারাদেশে বিতরণ করার পরিকল্পনা করেছিল, শমশেরীর কবিতা-গ্রন্থও সে সেভাবে দেশের আনাচে কানাচে পৌঁছে দিবে। শুধু তাই নয়- সে তরুণ কণ্ঠর জন্যও একই কাজ করবে। আরেকটি কথা বলতে হয়- আমার যে ডায়েরিখানা বহুদিন পর্যন্ত সুহৃদের কাছে পড়ে ছিল, ওটা এখন জাহিদের কাছে। ওর কাছে আমার কবিতাগুলো খুব ভালো লেগেছে। জাহিদ বলে, তোর চেয়ে কতো অখাদ্য কবিতা বাজারে আছে, আর তুই এগুলো নিয়ে লজ্জা পাচ্ছিস কেন? আমার নিষেধ সত্ত্বেও সে ওগুলো কম্পোজ করতে দিয়েছে। সামনের বইমেলার আগেই নাকি সে এটা বের করে ফেলবে।


খ্যাতির লাগিয়া, উপন্যাস, প্রকাশিত একুশে বইমেলা ২০০৪

খ্যাতির লাগিয়া পর্ব-১
খ্যাতির লাগিয়া পর্ব-২
খ্যাতির লাগিয়া পর্ব-৩
খ্যাতির লাগিয়া পর্ব-৪
খ্যাতির লাগিয়া পর্ব-৫
খ্যাতির লাগিয়া পর্ব-৬
খ্যাতির লাগিয়া পর্ব-৭
খ্যাতির লাগিয়া পর্ব-৮ (শেষ পর্ব)


সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৫:৩২
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০, কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×