somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খ্যাতির লাগিয়া :: পর্ব-৩

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ দুপুর ১:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একজন নবীন লেখকের প্রথম বই ছাপা হবার 'সকরুণ' ইতিহাস


ছেলেটি কাচুমাচু করে বলে, আপনাদের মতো আমিও একজন তরুণ কবি। এ পর্যন্ত প্রায় চারশোর মতো কবিতা লিখেছি, উপন্যাসও লিখেছি আট-দশটার মতো। কিন্তু ছাপতে পারছি না। যাঁর কাছেই যাই তিনিই বিশ-পঁচিশ হাজার করে টাকা চান। বই হলো আমার, অথচ আমাকেই নাকি উল্টো টাকা দিতে হবে। আসলে কোন প্রকাশকের সাথে পরিচয় নেই তো, তাই এতো সমস্যা হচ্ছে। আপনারা কি আমাকে একজন প্রকাশকের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবেন?
আমি আশ্চর্য হয়ে বলি, আপনি এতো কবিতা লিখেছেন, আপনার বয়স কত?
সামনে নভেম্বরে আঠার বছর হবে।
এই বয়সেই চারশো কবিতা লিখে ফেলেছেন? মার্ভেলাস!
আরো বেশি হতো। যেগুলো মনের মতো হয়নি সেগুলোকে গোণায় ধরিনি।
আপনি লিখেন কবে থেকে?
অনেক ছোটবেলা থেকে। আমার প্রথম কবিতাটি লেখা হয় যখন আমি চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ি। ওটা একটা ভয়াবহ কবিতা।
সুহৃদের দিকে তাকাই। ও সরল শিশুর মতো বিস্মিত হচ্ছে। ওর এই বিস্ময়ভাব আমাকে মুগ্ধ করে এবং ওর প্রতি আমার এক ধরণের মোহ ও মমতার উদ্রেক করে। আমি ছেলেটির মুখের দিকে তাকাই। ছেলেটি বলে, আমি দৈনিক কমপক্ষে পাঁচটি করে কবিতা লিখি। রবীন্দ্রনাথও গড়ে দৈনিক পাঁচটি করে লিখতেন। সময় পাই না বলে পাঁচটার বেশি লিখতে পারি না। রবীন্দ্রনাথ তো আমার মতো হোটেলে কাজ করতেন না, হোটেলে কাজ করতেন নজরুল।
রবীন্দ্রনাথ কিংবা নজরুল বা অন্য কারোর দৈনিক কবিতা লেখার হার আমার জানা নেই। এ জানলো কোথা থেকে?
সুহৃদ জিজ্ঞাসা করলো, আপনি কি হোটেলে কাজ করেন?
জ্বি, ময়মনসিংহে একটা হোটেলে কাজ করি। বইমেলা উপলক্ষে মালিক আমাকে দুই দিনের ছুটি দিয়েছেন। উনি আমার কবিতার খুব ভক্ত। আমার কবিতা শোনার জন্য অনেক রাত পর্যন্ত উনি আমার সাথে হোটেলে থাকেন। উনার বিবিও আমার কবিতার দারুণ ভক্ত। প্রতিমাসের শেষ শুক্রবার তাঁদের বাসায় কবিতার অনুষ্ঠান হয়। সেখানে আমিই প্রধান ব্যক্তি। মালিক আর তাঁর বিবি স্বরচিত কবিতা পড়ে শোনান, আমি তাঁদের ভুলত্রুটি শুধরে দিই।
আপনি লেখাপড়া করেছেন কদ্দুর?
অষ্টম শ্রেণী। নজরুল পড়েছিলেন দশম শ্রেণী পর্যন্ত। তারপর মহাযুদ্ধ শুরু হয়। অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময় আমার বাবা মারা যান। জমিজমা নেই, কী করবো? মা পরের বাড়িতে কাজ নিলেন, আমি কাজ নিলাম হোটেলে।
আপনার দু-একটা কবিতা এখানে আছে?
স্যার, আমি আমার দুশো কবিতা সব সময় ব্যাগে নিয়ে ঘুরি। এগুলোই আমার সবচাইতে ভালো কবিতা। একটু দাঁড়ান, আপনাদেরকে কয়েকটা পড়ে শোনাচ্ছি।
ব্যাগে হাত ঢুকিয়ে এক বান্ডিল কাগজে মোড়ানো কবিতা বের করে আনলো ছেলেটি। টুকরো টুকরো কাগজে কবিতা লিখে কাগজগুলোর কোনা একত্র করে সুতো দিয়ে সেলাই করা হয়েছে। ছেলেটি পড়লোঃ

বহুদিন পর কোনদিন যদি মোর কথা পড়ে মনে,
আমাকে বন্ধু খুঁজিও তোমার কবিতার ফুলবনে।

সুহৃদ বলে ওঠে, চমৎকার!
আমিও ছেলেটির কবিতায় মুগ্ধ হই। মাত্র দু-ছত্রের একটি কবিতা। অথচ কী এক আর্তি!
ছেলেটি প্রায় আট-দশটি কবিতা পড়ে শোনালো। কবিতা বোঝার, বা সমালোচনা করার, বা মূল্যায়ন করার মতো প্রখর জ্ঞান আমার নেই। আমার স্বল্প কবিতা-বুদ্ধিতে যা বুঝি তা হলো এই ছেলেটিও একটি সুপ্ত সুকান্ত-প্রতিভা হতে পারে। চারশো কবিতা লেখা নিশ্চয়ই বাড়াবাড়ি মনে হবে, তার বয়সও অতি তরুণ হতে পারে, কিন্তু সুকান্ত তো এরূপ বয়সেই তাঁর প্রতিভার পূর্বাভাস দিয়েছিলেন।
খুব আকুতিপূর্ণ চোখে ছেলেটি আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর দৃষ্টিতে যে জিজ্ঞাসা ফুটে উঠেছে তা হলো- স্যার, আমার কবিতাগুলোকে কি কবিতা বলে মনে হয়? এগুলোকে কি বই আকারে বের করা যায় না? অত্যন্ত অনুগ্রহ করে কি আপনারা আমাকে একজন প্রকাশক খুঁজে বের করে দিবেন, যিনি আমার কাছ থেকে একটি টাকাও খরচ বাবদ দাবি করবেন না?
সুহৃদ ছেলেটির উদ্দেশ্যে বলে, আপনি কি বই-টই পড়েন?
খুব কম, বই কেনার মতো আমার সামর্থ্য নেই।
আশেপাশে কোন লাইব্রেরি নেই?
লাইব্রেরি আছে, কিন্তু লাইব্রেরিতে গিয়ে বই পড়ার মতো অতো সময় নেই। লাইব্রেরি থেকে মাঝে-মধ্যে দু-একটা বই আনি, যতোটুকু সময় পাই পড়ি।
দৈনিক পত্রিকা পড়ার সুযোগ আছে?
এটা পড়ারও খুব একটা সুযোগ হয় না। মালিক যেদিন পেপার রাখেন শুধু সেদিনই এক-আধটু পড়তে পারি।
আমি মনে মনে বলি, সাহিত্যচর্চা খুব কঠিন কাজ বটে। চলমান সাহিত্য না পড়ে কেউ প্রকৃত সাহিত্যিক হতে পারেন না। এ-তো দেখি পড়ারই সুযোগ পায় না, লিখবে কী?
আমি আলোচনার ইতি টেনে বলি, আপনি এক কাজ করুন, চারশো কবিতা তো আর ছাপা সম্ভব না। আপনার লেখা শ্রেষ্ঠ ৪০টি কবিতা বাছাই করে আমাদের ঠিকানায় পাঠিয়ে দিবেন। আমি ঠিকানা দিয়ে দিচ্ছি।
ছেলেটি উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।
আমার কবিতা ছাপবেন তো, স্যার? আবেগাপ্লুত স্বরে সে জিজ্ঞাসা করে।
না, ছাপার নিশ্চয়তা দিচ্ছি না। আমি এ কথা বলতেই ওর মুখ ম্লান হয়ে যায়।
তবে, চেষ্টা করবো, বলতেই ও পুনরায় আশান্বিত হয়ে ওঠে। তারপর অতি বিনয়ের সাথে বলে, স্যার, আমার নিজের কবিতা তো, তাই এতোগুলো কবিতার মধ্য থেকে বেছে ৪০টি কবিতা বের করা আমার দ্বারা খুব কঠিন কাজ হবে। যদি আপনাদেরকে পুরো কবিতাগুলো দিয়ে দিই?
সুহৃদ আর আমি মুখ চাওয়া-চাওয়ি করি। এর অর্থ- খামোখা জঞ্জাল ঘাড়ে টেনে নিচ্ছি। তাছাড়া, আমাদের কাছে কবিতা জমা দিয়ে বই ছাপা হবে মনে করে ছেলেটি আশায় থাকবে, কিন্তু আমরা বই ছাপতে পারবো না। এটা খুব অন্যায় এবং অনৈতিক।
সুহৃদ বলে, আপনি একটা কাজ করুন, আপনার মালিক যেহেতু আপনার কবিতার খুব ভক্ত, তাঁকে দিয়েই কবিতা বাছাইয়ের কাজটি করে নিন। তারপর কুরিয়ার সার্ভিসে এগুলো আমাদের ঠিকানায় পাঠিয়ে দিন।
ছেলেটার চোখে মুখে আনন্দের ঝিলিক জেগে ওঠে। সে জিজ্ঞাসা করে, আপনাদের প্রকাশনার নামটা যেন কী?
আমাদের কোন প্রকাশনা নেই।
এগুলো তাহলে কোত্থেকে ছাপবেন?
আমরা কিন্তু আবারও পরিস্কার করে বলে দিচ্ছি, আমরা ছাপার কোন নিশ্চয়তাই দিচ্ছি না। তবে কয়েকজন প্রকাশকের সাথে আপনার এগুলো নিয়ে কথা বলবো, কেউ রাজি হলেই ছাপবো, কেমন?
ছেলেটি আমার হাত ধরে ফেললো। বললো, স্যার, আপনাদের অনেক দয়া। আসলে, কিভাবে যে বই ছাপতে হয় এ ব্যাপারে আমি কারো কাছ থেকে কোন পথের সন্ধান পাইনি। আপনারা আমার জন্য সেই কাজটি করে দিচ্ছেন। আমি আপনাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ।
ছেলেটির কথা শুনে মনে মনে হাসি- এক স্খলন ছাপতে গিয়ে আমাদের যে ঝাল বেরুচ্ছে, তা তো তোমাকে বললামই না- বললে বুঝতে।
বিদায় নেয়ার সময় ছেলেটি বলে গেল, দশ দিনের মধ্যেই সে শ্রেষ্ঠ ৪০টি কবিতা পাঠিয়ে দিবে। আমার একবার ইচ্ছে হয়েছিল ওকে বই ছাপবার খরচের ব্যাপারে একটা আনুমানিক ধারণা দিই- পরে মনে হলো ছেলেটি তাতে নিরুৎসাহিত হয়ে সাহিত্যচর্চাই ছেড়ে দিতে পারে।


সৈয়দ মুসতবা আলীর বই কেনা পড়ে আমার মনে হয়েছিল বই-প্রকাশনা একটা ব্যবসা, আর্থিক লাভ-লোকসানের ব্যাপারটা এখানে জড়িত বিধায় প্রকাশকগণ কম-দামে বই বিক্রি করতে পারেন না, বা বেশি লাভের ধান্ধা মাথায় থাকার ফলে বইয়ের দাম নির্ধারিত ও ন্যায্য মূল্যের চেয়ে বেশি ধার্য্য করে থাকেন। বিষয়টা সবার কাছেই সর্বাংশে সত্য মনে হতে পারে, তবে এ ব্যাপারে আমার ইদানিং একটা ভিন্ন দর্শন সৃষ্টি হয়েছে এবং সুহৃদ রহমানের স্খলন ছাপতে গিয়েই সে অভিজ্ঞতার সঞ্চয় হয়েছে। বই প্রকাশনা বা বই বিক্রি আদতে কোন ব্যবসা হতে পারে না, এটা একটা শিল্প, বলুন, বই প্রকাশনা শিল্প। মাছ-মাংস, চাল-ডাল-আটার মতো, পোশাক-আশাক, ঔষধ-পত্রের মতো নিত্য প্রয়োজনীয়, নিত্য ব্যবহার্য, জীবন ধারণের জন্য কোন অপরিহার্য সামগ্রী বই নয়। এক ঝাঁকা মাছ দিন শেষে বিক্রি হবে, তেমনি বস্তায় বস্তায় চাল-আটা, ডালায় ডালায় শাক-শব্জি, মাছ মাংস বিক্রি হবে। বুকস্টলের শেলফে থরে থরে যেসব বই সাজানো থাকে তা দিন শেষে বিক্রি হয়ে যাবে এমনটি কোন বই-বিক্রেতা আশা করেন না। বুকস্টলে লাগাতার বহুদিন অব্দি বই বিক্রি হয়নি- এমন নজিরের অভাব নেই। মাছ-মাংস, পোশাক-আশাক বিক্রির বেলায় কি এমনটি কেউ কল্পনা করতে পারবেন? বিক্রি হবে এমন নিশ্চয়তা নেই জেনেও বই ছাপা হচ্ছে। আমার মনে হয়, যিনি এই বই ছাপছেন, অর্থোপার্জনের তাগিদের চেয়ে মনের তাগিদেই এ কাজটি তিনি করছেন। বই-প্রকাশনা একটি শিল্প, যিনি বই ছাপছেন এটা তাঁর শিল্পী মনের একটা বহিঃপ্রকাশই বলা উচিৎ। বই প্রকাশনা শিল্প না হলে কেউ কবিতা বা প্রবন্ধের বই ছাপতেন না। কারণ, গল্পোপন্যাস তো তবু বিক্রি হয়, কবিতা কিংবা প্রবন্ধের বই কে কিনে? গল্প উপন্যাস হলো কাহিনী যা একবার পড়ে ফেললে দ্বিতীয়বার পড়বার আগ্রহ খুব একটা থাকে না। কিন্তু কবিতা? কবিতা একবারে পড়ে শেষ করে ফেলার মতো বিষয় নয়। কবিতা হলো গানের মতো। একটা পছন্দের গান যেমন বারবার গাওয়া হয়, গাওয়া যায়, এমনকি অ-যথাসহানেও গুনগুন করে মানুষ গেয়ে থাকেন, তেমনি কবিতাও। তাই বনলতা সেন, বিদ্রোহী, কবর, সোনার তরী, ছাড়পত্র, হুলিয়া, কেউ কথা রাখে না- এগুলো বারবার উৎসব-অনুষ্ঠানে পঠিত হয়ে আসছে। এগুলো আমাদের প্রাণের কবিতা, প্রাণের গানের মতো। আমার জানা মতে এবং দেখা মতে কবিতার বই খুব কম বিক্রি হয়। যাঁরা কবিতা-প্রিয়, বিভিন্ন কবির শ্রেষ্ঠ কবিতার একটা বা দুটো সংকলন ঘরে থাকলে ওটাই ঘুরে ফিরে চর্চা করতে থাকেন, নতুন বই কেনার দরকার কী? ঘরের কবিতা তো আর ফুরিয়ে যায় না। আমি খুব কম শুনেছি যে শামসুর রাহমানের নতুন কবিতার বই বের হলে তা কেনার জন্য তরুণ-তরুণীদের মধ্যে কেনার হিড়িক পড়ে গেছে। কিন্তু পত্রিকায় জ্ঞবই বের হচ্ছেঞ্চ খবর পড়েই তরুণ-তরুণীরা হন্যে হয়ে স্টলে স্টলে খুঁজে বেড়িয়েছে- হুমায়ূন আহমেদ বা ইমদাদুল হক মিলনের জ্ঞঅমুকঞ্চ বই এসেছে কিনা। কবিতার প্রতি মানুষের এরূপ নিস্পৃহতার মধ্যেও কবিতার বই ছাপা হচ্ছে।
বই-প্রকাশনা শিল্প বেঁচে আছে- এটা প্রকাশকদের একটা অতি উদার শিল্পী-মনের পরিচয়, আমি মনে করি। সুহৃদকে নিয়ে বিভিন্ন বই-ঘরে গিয়ে বই জমা দিতে না পেরে খুব মর্মাহত ও নিরুদ্যম হয়েছি এটা ঠিক, তবে খুব নিবিড় মনে এ-ও ভেবে দেখেছি, সারা দেশে সুহৃদের পাঁচ হাজার স্খলন বিভিন্ন বই-ঘরে বিতরণ করা হয়তো সম্ভবই হলো, কিন্তু তারপর? দশদিন, বিশদিন বা ত্রিশদিন পর কি এই খবরটা নিশ্চিত করে নেয়া সম্ভব হবে যে ওর পুরো পাঁচ হাজার বই বিক্রি হয়ে গেছে, আরো পাঁচ হাজার কপির দ্বিতীয় পুনর্মুদ্রণ প্রয়োজন? এক অখ্যাত- কিন্তু উঠতি ও প্রতিশ্রুতিশীল, সম্ভাবনাময় সুহৃদ রহমানের বই পাঠক-ক্রেতা দেধারছে কিনে নেবে এমন সম্ভাবনার কথা ঘুণাক্ষরেও ভাবছি না। এমনও হবে হয়তো, খোঁজ নিলে জানা যাবে, অমুক জেলার অমুক থানার বুকস্টলে একটা স্খলন কোন দরদী পাঠক-ক্রেতা কিনেছেন। সুহৃদের জন্য এবং আমার জন্যও এটা একটা অতি উৎসাহ-ব্যঞ্জক বা আশা-জাগানিয়া খবর হবে; ঐ পাঠকের নাম-ধাম জানতে ইচ্ছে করবে, বইটি কেমন লাগলো তা জানার জন্য পত্র-যোগাযোগ করতে ইচ্ছে হবে। এমনও তো হতে পারে, খোঁজ নিয়ে জানা গেল- কোন সহৃদয় পাঠকই কোন স্খলন একটু নেড়ে-চেড়েও দেখেননি, বুক-শেলফে এই অপ্রয়োজনীয় বইটি খামোখা অনেকখানি জায়গা দখল করে আছে দেখে দোকানী ওগুলো প্যাকেট করে বাক্সে ঢুকিয়ে রেখেছেন, খবর পাঠিয়েছেন, বই পাঁচটি যেন ফেরত নিয়ে আসা হয়। আমি নিশ্চিত, এমন একটি খবর সুহৃদকে খুব কাঁদাবে, কাঁদাবে আমাকেও।
আমার ধারণা, আজকালকার ছাত্র-ছাত্রীরা পাঠ্য বই-ই ঠিক মতো পড়ে না, পড়ে পাঠ-সহায়ক বই। তাতে লাভ হলো, অল্প পড়েই সম্ভাব্য প্রশ্নাবলীর উত্তর মুখস্থ হয়ে গেল, পরীক্ষায় অধিক নম্বর পাওয়াও হলো নিশ্চিত। পুরো পাঠ্য বই পড়ে সময় নষ্ট করার তাহলে আর প্রয়োজনটা কী? এজন্য বইয়ের দোকানের সামনে দাঁড়ালে আপনি যে চিত্রটি দেখতে পাবেন, একজন কবি বা ঔপন্যাসিক হিসাবে তা আপনার জন্য সুখকর না-ও হতে পারে। নোট বই কিনতে এসে নেহায়েত শখের বশে বা ভুল করে কেউ হয়তো দু-একটা গল্প-কবিতা-উপন্যাসের বই নাড়ে-চাড়ে, তবে কেনে কদাচিৎ। বই কেনার একটা মওসুম আছে- একুশে বইমেলা, সেই মেলাতে কিছু বই কেনা হবে, যদিও পড়া হবে কিনা তা ভেবে দেখার দরকার নেই, এই আশায় অ-মওসুমে গল্প-কবিতা-উপন্যাস কেনা সহগিত থাকে।
বই বিক্রির এই যখন হালচাল, এমন দুঃসময়েও যেহেতু কবিতা-গল্প-উপন্যাস ছাপা হচ্ছে সেজন্য প্রকাশকদেরকে কেবল ধন্যবাদ দিলে তাঁদেরকে খাটো করা হয়। প্রকাশনা-শিল্পের জন্যও একটা জাতীয় পুরস্কার প্রদানের রীতি প্রচলন করা যেতে পারে, একুশে বইমেলায় সুদৃশ্য সুসজ্জিত বুকস্টলকে নয়, দেশে প্রকাশনা-শিল্পে অবদান রাখার ভিত্তিতে এই পুরস্কার প্রদান করা যেতে পারে।

মাগরিবের আযানের আগে আগে মঞ্চ-যাত্রা শেষ হলো।
হঠাৎ সুহৃদ আমাকে চমকে দিয়ে বলে, চল, নামাজ পড়তে যাব।
আমি বিসিমত চোখে ওর দিকে তাকাই। ও বলে, এমন ভাব করছিস যেন আমি কখনো নামাজই পড়িনি। তোকে সঙ্গে নিয়ে আমি একবার পুরো একমাস তারাবীহ পড়িনি? ত্রিশটি রোজা রাখিনি? জুম্মাহর নামাজ পড়িনি?
সুহৃদের এই গুণটা আমার খুব পছন্দ। আমি খুব গুনাহ্‌গার যে ইসলাম সম্পর্কে মোটামুটি ভালো জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও আমি নিয়মিত নামাজ পড়ি না। নিয়মিত বলাটা ঠিক হয়নি, কেউ যদি পাঁচ ওয়াক্তের জায়গায় চার ওয়াক্ত, তিন ওয়াক্ত, দুই ওয়াক্ত বা এক ওয়াক্তও পড়ে তবে তাকে বলা যায় অনিয়মিত নামাজী। আমি তো সপ্তাহে, কিংবা মাসেও মাত্র এক বা দুই ওয়াক্ত পড়ি না, আমাকে অনিয়মিত বলাটা কি ঠিক হলো? বরং বেনামাজী বলাই শ্রেয়।
সুহৃদ অনিয়মিত নামাজী । তবে ও আগে রোজা-নামাজের প্রতি খুব, খু-উ-ব-ই উদাসীন ছিল। ওর ভিতরে খবির কিছুটা আলোর পরশ ঢুকিয়ে দিয়েছে। স্কুল জীবনের যতোগুলো বন্ধু-বান্ধবী আমাদের আছে, তাদের মধ্যে, আমার মতে, কেবল খবির উদ্দিনই সঠিক পথটাতে আছে। ওর কাছ থেকে সুহৃদ যদি সঠিক দীক্ষাটা নিতে পারতো তাহলে বুঝতো যে খ্যাতির জন্য, কেবল পার্থিব খ্যাতির জন্য গাঁটের অর্থ খরচ করে স্খলন নামক একটা উপন্যাস ছাপার কোন মানে নেই। 'সুখের লাগিয়া' ঘর বাঁধলে যদি তা অনলে পুড়িয়া যায়, খ্যাতির লাগিয়া বই ছাপলে সবই যে বিফলে যাবে না তার কি কোন নিশ্চয়তা আছে? স্খলন-এর বর্তমান হাল-হকিকত দেখে আমার অন্তত তাই মনে হচ্ছে। স্খলন কোন যুগের সাক্ষী নয়, প্রকৃত সমাজ-চিত্র নয়, এতে কোন সাহিত্যগুণ আছে কিনা তা-ও আমি জোর দিয়ে বলি না, এ বই সুহৃদকে খ্যাতি এনে দিবে কিনা, আমি তা-ও জানি না। আমার বিশ্বাস, এ বইয়ের মাধ্যমে সুহৃদ বহুদিন অব্দি পাঠক-হৃদয়ে বেঁচে থাকতে পারবে না, ওর নাম কে মনে রাখবে? ওর মৃত্যুর পর আমরা কতিপয় বন্ধু-বান্ধবী মিলে ওর মৃত্যু-বার্ষিকীতে ওকে সমরণ করবো, সেই সমরণ সভায় অন্তত আমি এ কথাটি উচ্চারণ করবো না যে, আমাদের প্রাণপ্রিয় ঔপন্যাসিক বন্ধু---। ওকে কেবল সুহৃদ বলেই জানবো, জানবো যে ও আমাদের একটা প্রাণপ্রিয় বন্ধু মাত্র ছিল।
তারপরও সুহৃদ কেন বই ছাপলো?
খ্যাতির মোহ কার না আছে? আমারও আছে, আপনাদেরও আছে। আমি যেমন চাই, আপনারা যেমন চান, সুহৃদও তেমনি চেয়েছিল ওর একটি বই ছাপা হবে, মানুষ হুমায়ূন আহমেদের সাথে ওর নামটাও উচ্চারণ করবে।
কিন্তু তা হলো না। একটা বই ছেপে তার প্রচার ও প্রসার এবং বিক্রয়ের জন্য যে হালচাল হলো, হচ্ছে, দ্বিতীয় বই ছাপার উদ্যম কি আর অবশিষ্ট আছে? ও যদি ছাপেই তো ছাপুক। আমি ওর সঙ্গে নেই।
খ্যাতির কি কোন বিড়ম্বনা আছে? আমার মনে হয়, নেই। লোকে যেটাকে খ্যাতির বিড়ম্বনা বলে আসলে ওটাই সুখ। বিশ্ব-বিখ্যাত তারকারা যখন সর্বসাধারণের মাঝে বের হোন, এক নজর দেখার জন্য ভক্তরা তাঁদেরকে জেঁকে ধরেন। এই জেঁকে ধরাটা অনেক সময় অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে। পত্র পত্রিকায় সেটা খবর হয়ে বেরোয়। তারকাদের খ্যাতি আরো জোরশে বাড়তে থাকে। এমন এক তারকা দৈবাৎ একদিন রাস্তায় বের হয়ে যদি দেখেন তাঁর দিকে কেউ ফিরেও তাকাচ্ছে না, তাহলে সেটাই তাঁর জন্য মৃত্যুর সমতুল্য হবে। এমন মৃত্যু কোন তারকাই চাইবেন না; চাইবেন ভক্তদের বিড়ম্বনা, তাতেই পরম সুখ। ভক্তদের মাঝে যুগ যুগ বেঁচে থাকতে চাইবেন। যেমন রবীন্দ্রনাথও চেয়েছিলেন। বাংলা তেরশো সালেই তিনি ভেবেছিলেন যে চৌদ্দশো সাল অব্দি তিনি হয়তো বাঁচবেন না, কিন্তু মনে প্রাণে তিনি চেয়েছিলেন চৌদ্দ সালেও যেন তাঁর ভক্তরা তাঁকে মনে রাখেন। কিন্তু খ্যাতির স্থায়িত্ব সম্পর্কে তিনি অত্যন্ত সচেতন ছিলেন, এ ব্যাপারে তিনি দারুণ বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি জানতেন যে, একশত বৎসরের বেশি তাঁর ভক্তগণ হয়তো তাঁকে মনে রাখবেন না, তাই তিনি তার চেয়ে বেশি আশাও করেননি। যদি করতেন তাহলে তেরশো সালে বসে ১৪০০ সাল-এর পরিবর্তে তিনি ২৩০০ সাল লিখতেন- আজি হতে সহস্র বর্ষ পরে......।

বাংলা একাডেমির মসজিদে নামাজ পড়ে আসার সময় সুহৃদকে বেশ সজীব ও প্রাণবন্ত মনে হলো।
নিয়মিত নামাজ পড়া উচিৎ। না পারলেও একেবারে নামাজ ছাড়বি না। মাঝে মাঝে নামাজ পড়লে তোর মনে হবে যে তুই নামাজের মধ্যে আছিস। মনের মধ্যে এরকম একটা অনুভূতি থাকা খুবই প্রশান্তিকর। সুহৃদ আমার উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলে আর হাঁটতে থাকে।
আমি জিজ্ঞাসা করি, তুই-ও তো আজ অনেক দিন পর নামাজ পড়লি। তা-ও ঘটা করে। কারণটা কী রে?
কারণ তো অবশ্য একটা আছেই।
সেটা কী?
আজ আল্লাহ্‌র কাছে একটা জিনিস প্রার্থনা করেছি।
আমি জানি। বলতে হবে না।
তাহলে জিজ্ঞাসা করছিস কেন?
মসজিদে মোনাজাত করতে হয় আখিরাতের পানা চেয়ে। পার্থিব সুখ-সমৃদ্ধির জন্য আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করা ঠিক না।
সুহৃদ বলে, এ বিষয়ে আমি যেমন বেশি জ্ঞান রাখি না, তেমনি তুই-ও। তবে, আমার মনে হয় যে কোন কিছু প্রার্থনা করার মূলেই কিন্তু পরোক্ষভাবে পৃথিবীতে সুখে-শান্তিতে থাকার কামনাকেই বোঝায়। কেউ দু-হাত তুলে নিশ্চয়ই এ কথা বলবে না, হে আল্লাহ্‌, এখনই আমার মৃত্যু দাও, যাতে অতি শ্রীঘ্র বেহেস্তে গিয়ে আমি তোমার দর্শন লাভ করতে পারি। কেউ এ-ও বলবে না, আল্লাহ্‌, আমাকে আরো গরীব করে দাও, আমার ধন-সম্পদ সব ভষমীভূত করে দাও। আমাকে নিঃস্ব ভিখিরী করে দাও। বলবে?
তা হয়তো বলবে না, তবে, আল্লাহ্‌, আমাকে আরো ধন-সম্পদ দাও, 'স্খলন' বইটির বিক্রি বাড়িয়ে দাও, দেশ জুড়ে আমার খ্যাতি ছড়িয়ে দাও- এটাও বলবে না। বলে আমি ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি।
সুহৃদও হেসে বলে, তাহলে কি আমার এটা বলা উচিৎ ছিল যে, আল্লাহ্‌, আমার বইটি যেন উঁইপোকা আর ছারপোকায় কাটে তুমি তার সুব্যবস্থা করে দাও, বইয়ের স্তূপে আগুন জ্বেলে দাও?
আমি সামান্য গাম্ভীর্য্য এনে বলি, তোর বলা উচিৎ ছিল, আল্লাহ্‌, পৃথিবীতে যতো বালা-মুসিবত আছে তুমি সব দূর করে দাও, তোমার নৈকট্য লাভ করতে পারে, মানুষকে এমন মোমিন করে দাও।
তার অর্থ কী? সুহৃদ সামান্য ক্ষেপে জিজ্ঞাসা করে, তার অর্থ কী এই নয় যে, পৃথিবীতে যেন মানুষের বসবাসটা অতি নির্ঝর্ঞ্ঝাট হয়? পরোক্ষভাবে কি এটা পার্থিব সুখ-সমৃদ্ধি কামনাই করা হলো না?
শোন্‌, আমিও একটু উত্তেজিত স্বরে বলি, তুই আর আমি এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ নই, তা তুই নিজেই বলেছিস। তবে, আমি যা বলেছি তা জ্ঞানী মানুষের কাছ থেকে শোনা কথা। তাঁদের কথা বিশ্বাস করা তোর উচিৎ। অবশ্য এটা তোর নিজের ব্যাপার।
সুহৃদ হেসে আমার গলা ধরে। বলে, এতো রেগে যাচ্ছিস কেন লক্ষ্মীটি? এটা কোন রাগের কথা হলো?
হঠাৎ সুহৃদ গম্ভীর হয়ে যায়। আমি জিজ্ঞাসা করি, মুখ কালো যে?
সুহৃদ আমাকে সামনে রাস্তার দিকে আঙ্গুল নির্দেশ করে বলে, ওগুলো দেখতে পাচ্ছিস?
আমার মন খারাপ হয় না, কারণ আমি খুব বাস্তববাদী। আমি জানতাম এরকম হবেই। বাসে চলতে চলতে, রাস্তায় চলতে চলতে, এমনকি এই বইমেলায় এসেও আমরা প্রচুর লিফলেট পেয়েছি। আমরা কি ওগুলো আমাদের পকেটে সযত্নে পুরে রেখেছি? এমনকি সবগুলো লিফলেট হাতে তুলেও নিইনি। কোন কোনটার দিকে এক নজর চোখ বুলিয়ে ফেলে দিয়েছি। সুহৃদ নিশ্চয়ই ভেবেছিল, আমাদের বিলি করা লিফলেটগুলো যাদের হাতে যাবে তারা ওগুলো অতি মনোযোগ দিয়ে পড়বে, সাগর রহমান আর তার বইটির নাম বারবার আওড়ে মুখস্ত করবে, হন্যে হয়ে বুকস্টল খুঁজে বের করে স্খলন কিনবে, তারপর বাড়ি ফেরে তারা বই আর লিফলেটগুলো সবাইকে দেখাবে, পরিচিত বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে এ ব্যাপারে আলোচনা করবে। শেষমেষ আঠা দিয়ে দরজায় লিফলেট লাগিয়ে রাখবে, যাতে পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া অপরাপর মানুষেরাও তা দেখতে পায়।
কোন কিছুতেই অতিরিক্ত আশাবাদী হতে নেই। সুহৃদকে দেখে যদিও আমি এই মহৎ দর্শন উপলব্ধি করছি, নিজের বেলায় সেটা ভুলে যাব। আসলে, আমার মনে হয়, অতিরিক্ত আশাবাদী হওয়াটাই মানুষের প্রকৃত স্বভাব। যাঁরা এর ব্যতিক্রম তাঁরা অত্যন্ত সরল বলেই ব্যতিক্রম, এবং তাঁরাই হলেন প্রকৃত মানুষ।
আমি প্রকৃত মানুষ নই, কারণ সুহৃদের খ্যাতি ও প্রচারণার জন্য আমিও অনেক বেশি বাড়াবাড়ি করেছি ও করছি।
সুহৃদের দিকে তাকিয়ে একটু সরল হাসি। বলি, মন খারাপ করছিস কেন? সব মানুষই তো আর লিফলেট ফেলে দেয়নি। অর্ধেক মানুষও যদি তোর লিফলেট পড়ে থাকে তাহলে আজ কম করে হলেও দুই হাজার লোক তোর আর তোর বইয়ের নাম জানতে পেরেছে, যাদের কাছে তার আগ পর্যন্ত তুই ছিলি একটা অজ্ঞাত নাম। এটা কি কম?
সুহৃদের মন খারাপ ভাব যায় না। ওর বাহুতে ধাক্কা মেরে বলি, তুই আসলে একটা স্বভাব-গম্ভীর মানুষ। গম্ভীর থাকতে তুই এতো ভালোবাসিস কেন?
সুহৃদ আমার দিকে করুণ চোখে তাকায়? আমি জিজ্ঞাসা করি, গাম্ভীর্য্য অর্থ কী যেন রে?
সুহৃদ হেসে দেয়।



দুই


জাতীয় যাদুঘরের মিলনায়তনে কবিতা-সন্ধ্যা ছিল। ঋতুর এক বান্ধবীর তাতে একটা আবৃত্তি ছিল। বান্ধবীর কারণে ঋতুর সেখানে যাওয়া এবং ঋতুর যাওয়ার খবর পেয়ে আমিও গিয়েছিলাম, তবে কবিতা আবৃত্তি শুনতে নয়, ঋতুর সাথে একটু দেখা হয় এই আশায়। যথারীতি সঙ্গে সুহৃদ।
প্রথম সারিতে আমন্ত্রিত বিখ্যাত ব্যক্তিরা ছিলেন, পরের সারিতে ঋতু এবং ওর বান্ধবীরা। আমার অনেক ইচ্ছে হয়েছিল আমি ঠিক ওর পাশটাতে বসি, অথবা পেছনের যেই সারিটাতে আমি আর সুহৃদ বসেছি, ঋতু এসে একান্তে আমার নির্জন পাশে গা ঘেঁষে বসে আমার হাতে হাত রাখুক- ইচ্ছে হয়েছিল। আমি সারাক্ষণ ওর দিকে তাকিয়েছিলাম, ঋতু বার কয়েক পেছন ফিরে আমাদেরকে দেখেছে, হেসেছে, আমি ইশারায় আসতে বলেছি, ঋতু মুখ ফুটে কিছু বলেনি, তবে আমি বুঝেছি বান্ধবীদেরকে ছেড়ে সে আসতে পারে না।
অনুষ্ঠান শেষ হলে আমরা গেইটের বাইরে গিয়ে ফুসকা খেতে বসি। আমি, সুহৃদ এবং ঋতু। ঋতু ওর বান্ধবীর সাথে চলে যেতে চেয়েছিল, পরে চুক্তি হয় একেবারে নিরুপদ্রবে তাকে বাসায় পৌঁছে দিতে হবে। এক টেবিলে আমরা তিনজন ফুসকা খেতে থাকি।
ঋতুর সাথে সেটা সুহৃদের দ্বিতীয় সাক্ষাৎ ছিল। ও এমনিতেই বড় মুখচোরা, ঋতুর মতো অপরিচিতা ও রূপবতী মেয়ের সামনে ওর জড়তা কিছুতেই কাটছিল না। অথচ, আমি বুঝতে পারছিলাম, ঋতু চাইছিল সুহৃদ যেন অনর্গল প্রাণোচ্ছ্বলভাবে ওর সাথে কথা বলে, যদিও আমি তা চাইছিলাম না, কারণ, সুহৃদ আমার প্রতিদ্বন্দ্বী। ওর কথায় ঋতু আকৃষ্ট হোক তা আমি ভাবতে পারি না।
সুহৃদকে উদ্দেশ্য করে ঋতু ছোট খাটো রসিকতার কথা বলছিল।
আপনার বন্ধুটা কি বোবা? ঋতু আমাকে জিজ্ঞাসা করে।
বোবা হবে কেন? ও একটা বিখ্যাত বুদ্ধিজীবী, পণ্ডিত ব্যক্তি। পণ্ডিত ব্যক্তিরা সবার সাথে কথা বলে না। আমি বলি।
ঋতু ফিক করে হেসে দেয়। ফুসকা মুখে দিতে দিতে সুহৃদও হাসতে থাকে।
আমি ঋতুকে বলি, তুই জানিস ওর ভিতরে কী জিনিস আছে?
কী জিনিস আছে?
আমার বোধোদয় হয়, আমি এ কী করছি? আমার প্রতিদ্বন্দ্বীকে আমার ঈপ্সিতার কাছে এতো বড় করছি কেন? আমি চুপ মেরে যাই। প্রসঙ্গ পাল্টাবার জন্য অন্য কথা ধরি।
ফুসকাটা দারুণ, তাই না? ঋতুকে লক্ষ্য করে আমি বলি।
কিন্তু সুহৃদকে লক্ষ্য করে ঋতু বলে, বলুন তো আপনার মধ্যে কী জিনিস আছে?
সুহৃদ হেসে বলে, জানি না তো। যে বলেছে তাকেই জিজ্ঞাসা করুন।
আমি হাসতে হাসতে বলি, ওর মধ্যে একটা দারুণ জিনিস আছে, যা আমার মধ্যে নেই......ওর গাম্ভীর্য্য আছে।
মুচকি একটু হাসি ছড়িয়ে দেয় ঋতু। তারপর সে ফস করে বলে বসে, আচ্ছা ভাইয়া, আমি ভুলে গেছি, গাম্ভীর্য্য অর্থটা যেন কী?
গামলা ভর্তি......
সঙ্গে সঙ্গে...ঠাস...।
আমার শেষ শব্দটার উচ্চারণ শেষ হতে না হতেই ঋতুর হাতের কঠিন একটা চড় এসে আমার গালে লাগে। তারপর উঠে হন হন করে সে-সহান ছেড়ে একাই ঋতু বাসায় চলে গিয়েছিল।
ওর নরম হাতের চড়টা ছিল প্রচণ্ড শক্ত ও চর্মভেদী। গালে যতোটুকু চোট লেগেছিল, আমার অন্তরে লেগেছিল তার চেয়ে অনেক বেশি, ঋতুর চড় খাওয়ার জন্য নয়, সাধ না মিটিতেই সে চলে গিয়েছিল বলে।
আমি ভেবেছিলাম ঋতু জীবনে আমার সাথে আর কথা বলবে না। সেই ভয়েই ওদের বাড়িতে যাওয়া বন্ধ থাকে প্রায় তিন মাসের মতো। বাসায় যাওয়ার জন্য খালা খবর পাঠান, আমি যাই না। একবার- দু বার- বহুবার। আমার ভয়, ও-বাড়িতে গেলেই ঋতু আমার ওপর চড়াও হয়ে বলবে, তুমি এতোখানি অশ্লীল হতে পারলে কী করে? একটা প্রায় অপরিচিত মানুষের সামনে আমাকে এমন লজ্জা দেয়ার স্পর্ধা তোমার কোত্থেকে হলো?
আমি এখনো বুঝি না ঋতু আমাকে ভালোবাসে কিনা। আমার প্রতি ওর কোনরূপ রোমান্টিক আবেগ লক্ষ্য করিনি কোনদিন। মাথায় উকুন আছে কিনা বা খুশকি লেগেছে কিনা, এই অজুহাতে ওর চুল ছুঁতে গেলেই ও এক লাফে দূরে সরে গেছে। ও যখন পড়তে বসতো, একেবারে খাঁটি মন নিয়ে ওর পড়ার খোঁজ নেয়ার জন্য ওর পড়ার ঘরে ঢুকতাম। ঘরে যদি ও একা থাকতো, একেবারে অহেতুক অছিলায় সে আমার সামনে থেকে দ্রুত বের হয়ে যেত। একবার ওর দাঁতে ব্যথা, এমন সময় আমি গিয়ে হাজির, খালা বললেন, করিম, তাড়াতাড়ি ওকে নিয়ে দাঁতের ডাক্তারের কাছে যা। ঋতুর সাথে এক রিক্সায় পাশাপাশি বসে যাব, এই আশায় আমার সুখ আর ধরে না। কিন্তু ঋতু বললো, ব্যথা সেরে গেছে। এর ঘন্টা দুয়েক পর ওর প্রাইভেট টিউটর বাসায় এলো, ঋতু তাকে সঙ্গে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেল। আমি তো কোনদিন ঋতুর জন্য কোন ভয়ের কারণ হইনি- ওর বুকে হাত দিতে উদ্যত হইনি, তবু ওর এতো ভয় কেন ছিল? ও আমার খালাত বোন, ছোটবেলায় আমাদের বাড়িতে বেড়াতে গেলে ও সারাক্ষণ আমার পিছে পিছে ঘুরতো। গাছ থেকে বড়ই পেড়ে দেয়া, পেয়ারা পেড়ে দেয়া, দোলনা বানিয়ে দেয়া সবই আমি করে দিতাম, আমাকে দিয়েই সে এসব করাতো। শীতের রাতে আমার গলা ধরে সে ঘুমাতো, ঘুমের মধ্যে কাঁথা সরে গিয়ে শীতল হয়ে পড়লে ঘুমের ঘোরেই সে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বুকের মাঝখান থেকে সবটুকু ওম সে কেড়ে নিত। আস্তে আস্তে বড় হতে থাকি, আমাদের মধ্যে ভাবও তত গাঢ়তর হয়, মা-খালারা বলাবলি করেন, করিম আর ঋতুর বিয়েটা দারুণ হয়- নানীজান বলেছিলেন, তাই হবে। আমি বড় হই, বড় হয় ঋতু। ঋতুর জন্য আমার মনে কতো ভাবনা জাগে। ঋতুর জাগে কিনা কিছুই বুঝি না। একবার ওর জন্য কিছু অন্তর্বাস কিনে এনে গোপনে ওর বালিশের নিচে রেখে দিয়েছিলাম। ও সুন্দর করে কাগজে মুড়িয়ে ওগুলো আমাকে ফেরত দিয়ে বলেছিল, আমার জন্য আর কক্ষণো এগুলো আনবেন না।
ঋতু আমাকে খুব উপেক্ষা করতো। প্রথম দিকে আমি ভাবতাম, সতী-সাধ্বী বালিকা, বিয়ের আগে হবু স্বামী দ্বারা দংশিত হবার আশংকায়ই হয়তো আমার সংস্পর্শ সে সাবধানে এড়িয়ে চলে।
ঋতু আমাকে যেদিন বললো, বিয়ের পর বউকে কি খাওয়াবে, সেদিন বুঝতে পেরেছিলাম ঋতু আমাকেই মনে প্রাণে স্বামী হিসাবে চায়, আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু আমার ভবিষ্যত অনিশ্চিত হওয়ায় আমার স্বামীত্ব গ্রহণে সে বিষম দ্বিধাগ্রস্ত। আমি আমার অবসহা উপলব্ধি করি; আমি এক লাফাঙ্গা, ভবঘুরে, অপরিণামদর্শী, জোর করে বা পারিবারিক সমঝোতায় হয়তো ওর সাথে আমার বিয়েটা হলেও হয়ে যেতে পারে। কিন্তু এ আগুনকে আমি শান্তও রাখতে পারবো না, শান্তিও দিতে পারবো না। আমার মতো অভাগার ঘরে ও সারাজীবন জ্বলে পুড়ে অঙ্গার হোক, আমি যদি ওর প্রকৃত শুভাকাঙ্ক্ষী হয়ে থাকি তবে তা হতে দেয়া যায় না। খিদের কষ্টে ভালোবাসা পালায়- 'পূর্ণিমার চাঁদ' হয় 'ঝলসানো রুটি', আর অভাগা পুরুষের শরীরটাকে মনে হয় বুকের ওপর হাজারমণী পাথর, সেই পাথর শ্বাস-রুদ্ধ করে, গলা চেপে রাখে, দম আটকে হত্যা করে।
ঋতুকে পাবার আশা আমি ছেড়েই দিয়েছিলাম। আমার ভবিষ্যত ভাবনায় কারো দিবানিশি উদ্বিগ্ন থাকার প্রয়োজন নেই- আমি আমার মতোই থাকবো, বাঁচবো আমার মতো করে। ঋতুকে বলেছিলাম, যাবি যদি যা, আমি কাউকে ধরে রাখিনি, পিঞ্জর খুলে দিয়েছি।
ঋতু টিটকিরি করে বলেছিল, আহ্‌হারে...
এরপর বছর দুই চলে যায়, একবারের জন্যও খালার বাসায় যাওয়া হয় না। কেন যাব? ঋতুর জন্য? ঋতুকে আমি বলে দিয়েছি, যা কিছু বলার ছিল বলে দিয়েছি। সে তার ভবিষ্যত স্থির বুঝে নিয়েছে। যদি তা নাইবা হতো, সে কি অন্তত একটি বারের জন্য হলেও আমাদের নোংরা মেসটিতে আসতে পারতো না? কেন সে আসেনি? সে কি সত্যি আমাকে ভুলে গেছে?
হঠাৎ একদিন ঋতু আমাকে খবর পাঠিয়েছিল, আমি যেন গিয়ে দেখা করে আসি। ঋতুর খবরটি আমাকে ওর কাছে চুম্বকের মতো টেনে নিয়ে যায়। আমার ভিতরের সকল মান-অভিমান কোথায় মিলিয়ে গিয়েছিল, সব ভুলে আমি ঋতুর জন্য ছুটে ছিয়েছিলাম, যেতে যেতে ঠিক হাঁপিয়ে উঠেছিলাম।
আমাকে ওর ঘরে ডেকে নিয়ে খুব আদর করে বসায়। আমি নতুন করে আমার জীবনকে উপলব্ধি করি, নতুন করে জীবন সাজানোর প্রতিজ্ঞা করি। আমি সিহর করি, ঋতুকে আজ বলবো, আমি আজ আমার কথা ফিরিয়ে নিচ্ছি। তোকে আমি মন থেকে মুক্তি দেইনি। ওটি আমার ভান ছিল। তোকে ছাড়া আমি আর কিছুই ভাবতে পারি না। আমি তোকে বিয়ে করবো, আগামী এক বছরের মধ্যেই।
আমি বলি, ঋতু একটা কথা আছে। বলতে বলতে ওর দিকে এগিয়ে যাই। ও পিছু হটতে থাকে। একদম ওর শরীর ঘেঁষে দাঁড়াই। আমার শ্বাস ঘন হয়ে আসে।
কী করছো? ছিঃ, আমি চিৎকার দিব কিন্তু। ভয়ার্ত স্বরে ঋতু বলতে থাকে।
আমি দু-হাতে ওর দু-বাহু শক্ত করে ধরি, মুখের কাছে মুখ এগিয়ে নেই। ও বুকের ওপর দু-হাত বেঁধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলে, আমি আরো গাঢ় করে ওকে জড়িয়ে ধরতেই চাপা স্বরে চিৎকার দিয়ে ওঠে, আমাকে তুমি নষ্ট করবে? ছিঃ...ছাড়ো আমাকে...মা...মা...

ঋতুর কণ্ঠস্বরে আমার স্বপ্ন-ভঙ্গ হয়েছিল। ওর কথা শুনিনি, কথার শব্দ শুনেই সামনের দিকে তাকিয়ে দেখি চেয়ারের হাতলে বসে আমার দিকে তাকিয়ে সে মিটিমিটি হাসছে।
এমন বিড়বিড় করছিলে কেন? ঋতু জিজ্ঞাসা করে।
ঘুম পেয়েছিল। খুব টায়ার্ড লাগছে রে। বলেই আমি আড়মোড়া দিই।
আমার উচ্ছ্বসিত আশায় ভাটা পড়ে যায়। আমি ভেবেছিলাম, কত দীর্ঘদিন সে আমাকে দেখেনি, আমার জন্য সে কত প্রতীক্ষায় ছিল, কেঁদে কেঁদে কতো নিশি সে বিনিদ্র কাটিয়েছে, বিরহ-বেদনায় দুঃখী-ম্লান তার চেহারা, আমাকে দেখে সে পাগলের মতো ছুটে এসে বুকে ঝাঁপিয়ে পড়বে- বলবে, আমাকে না দেখে তুমি কিভাবে এতোদিন দূরে থাকতে পারলে? তোমার কি পাষাণ মন? আমাকে দেখতে তোমার এতোটুকু সাধ হয়নি?
ঋতুর সুখী সুখী চেহারা, সে মিটিমিটি হাসছে। আমার অন্তরে কষ্ট তোলপাড় করে।
গোলাপী রঙের একটা শাড়ি পরেছে ঋতু। শাড়ি তাকে খুব একটা পরতে দেখিনি, পরেছে আজ, দারুণ মানিয়েছে। একটি পা মাটিতে ভর করে আরেক পা সে দোলাচ্ছে। এর আগে আমার এতো কাছে কখনো সে আসেনি; আমি ওর শোবার খাটে, হাত বাড়ালেই ওর হাঁটুতে অনধিকার হাতটি রাখতে পারি।
আমি বুঝতে পারি না, আবার বুঝিও কিছুটা কেন সে আমাকে ডেকেছে। একি তার আত্মসমর্পনের পূর্বাভাস!


খ্যাতির লাগিয়া, উপন্যাস, প্রকাশিত একুশে বইমেলা ২০০৪

খ্যাতির লাগিয়া পর্ব-১
খ্যাতির লাগিয়া পর্ব-২
খ্যাতির লাগিয়া পর্ব-৪
খ্যাতির লাগিয়া পর্ব-৫
খ্যাতির লাগিয়া পর্ব-৬
খ্যাতির লাগিয়া পর্ব-৭
খ্যাতির লাগিয়া পর্ব-৮ (শেষ পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৫:৩১
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×