somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাস্তিকতা বনাম ঈশ্বরবিশ্বাস ।পর্ব ৩।

০৭ ই অক্টোবর, ২০১৯ দুপুর ১২:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পর্ব: তিন

আগের দু'টো পর্বে আমরা দেখেছি আগুনকে নিয়ত্রণ করতে শেখা আদিম মানুষের অন্যতম সেরা আবিষ্কার হলেও তা বাঘ-সিংহকে সরিয়ে খাদ্য শৃঙ্খলের একেবারে শীর্ষে আসার জন্যে যথেষ্ট ছিলনা। আগুন মানুষকে বাস্তুতন্ত্রে খানিকটা ওপরে তুললেও বৃহৎ মস্তিষ্ককে কাজে লাগিয়ে একনায়কতন্ত্র কায়েম করা তখনো বহুদূর। তাছাড়া প্রতিটি মানব প্রজাতিই এই আগুনের সুবিধাটি ভোগ করে গেছে সার্থক ভাবে। একদম হোমো ডেনিসোভা, হোমো রূডলফেনিস, হোমো এরগাস্টার, হোমো ফ্লোরেসিয়েনসিস্ থেকে শুরু করে ইরেকটাস, নিয়ানডার্থাল এবং স্যাপিয়েন্স- সব্বাই। এখানে আরেকটি তথ্য দেওয়ার দরকার আছে যে অনেকেই এরকম ধারণা পোষণ করেন মানুষের একগাদা প্রজাতি নাকি একসাথে পৃথিবীতে ছিলনা। এই ধারণা সর্বৈব ভ্রান্ত। ওপরে যে প্রজাতি গুলি উল্লেখ করা হলো তারা একই সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছিল। স্যাপিয়েন্সরা যে সময় আফ্রিকায় রয়েছে, সেইসময় নিয়ানডার্থাল দাপিয়েছে ইউরোপ আবার ফ্লোরেস দ্বীপে বামনাকৃতি ফ্লোরেসিয়েনসিস্ রা। কিন্তু কথা হল এই সমস্ত মানব প্রজাতিই আগুনের ব্যবহার জানতো, তারা সবাই ছোটখাটো অস্ত্র তৈরি করতে পারতো, হাতকে তারা নিয়ন্ত্রণ করেছে আগেই, খাঁড়া হয়ে দাঁড়াতে শিখেছে। কিন্তু এই সব মানুষদের ও অন্যান্য ভয়ঙ্কর,হিংস্র, বিশালাকার প্রজাতিগুলোকে পরাজিত করে হোমোস্যাপিয়েন্সরা কিকরে হয়ে উঠলো পৃথিবীর অধীশ্বর?

যে কাজটা আগুন করতে পারেনি সেটাই করে দিল "উন্নত ভাষা"। প্রকৃতপক্ষে নিজস্ব ভাষাও সব প্রজাতিদেরই আছে। এমনকি কীট-পতঙ্গেরও নিজস্ব ভাষা আছে। তারা এই ভাষায় সাহায্যে অন্যকে দিতে পারে খাবারের খোঁজ, শত্রুর অবস্থান। সেরকম ভাষা ছিল নিয়ানডার্থালদেরও। কিন্তু সত্তর হাজার বছরেরও অনেক আগে হোমোস্যাপিয়্যান্সের মস্তিষ্কে ঘটে যায় এক অত্যাশ্চর্য মিউটেশন। মস্তিষ্ক সুবিশাল হবার জন্যই তারা এই সুবিধাটি লাভ করে হঠাৎ। তারা তৈরি করে এক "উন্নত ভাষা"। যে ভাষায় সীমিত সংখ্যক শব্দ আর সংকেতকে ব্যবহার করে গঠন করা যায় অসীম সংখ্যক বাক্য। অর্থাৎ ভাব প্রকাশ ও জনসংযোগের মাত্রা যায় বেড়ে। এক অনন্ত সম্ভাবনার দরজা উন্মুক্ত হয়ে পড়ে হোমোস্যাপিয়্যান্সের সম্মুখে। অবশ্য বিজ্ঞানীরা এই মত প্রকাশ করেছেন নিয়ানডার্থালদেরও এই মিউটেশন ঘটতেই পারতো। ঘটেনি এটা একটা ঘটনা। স্যাপিয়েন্সদের ঘটেছে এটা আরেকটা ঘটেনা। নিয়ানডার্থালদের ব্রেনের এই অভিব্যক্তি সংঘঠিত হলে তারা অবশ্যই হয়ে উঠতে পারতো পৃথিবীর সর্বময় কর্তা। কিন্তু বাঘ বা সিংহের ক্ষেত্রে এটা সম্ভব ছিলনা, আজও নেই। তাদের মস্তিষ্কের অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র আয়তনই এই মিউটেশনের অন্তরায়। আমাদের পূর্বপুরুষেরা সেই কুড়ি থেকে পঁচিশ লক্ষ বছর আগে দেহকে বঞ্চিত করে মস্তিষ্ককে পুষ্ট করার যে ঝুঁকিটা নিয়েছিল সেটা তাদের সেইসময় কিছুটা বিপাকে ফেলেছিল ঠিকই কিন্তু তার সুফল আজ আমরা ভোগ করছি দুর্দান্তভাবে।

এবার আমরা দেখবো "ভাষা" আর "উন্নত ভাষা" র মধ্যে পার্থক্য ঠিক কিরকম ? একটি রিসার্চের উদাহরণ দিলে সহজেই বোঝা যাবে এই দুইয়ের পার্থক্য। বিজ্ঞানীরা সোনালী পশম ওয়ালা গ্রীন মাঙ্কিদের ওপর গবেষণা করে তাদের ব্যবহৃত ভাষার খোঁজ পেয়েছেন। তাদের ব্যবহৃত এরকম দু'টি বাক্য হলো- "সাবধান, সিংহ আসছে" এবং "সাবধান, ঈগল আসছে"। বিজ্ঞানীরা এই ভাষা রেকর্ড করে একটা গ্রীন মাঙ্কিদের দলকে শোনালে তারা যেই শোনে "সাবধান, সিংহ আসছে" সাততাড়াতাড়ি গাছের মগ ডালে উঠে বসে। আবার যেই শোনে "সাবধান, ঈগল আসছে" সাথে সাথে তারা আকাশের দিকে এদিক ওদিক তাকায়। এই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা মিথ্যেবাদী বাঁদরেরও খোঁজ পেয়েছেন। সে গাছের একটা পাকা কলা দেখে এগিয়ে যাওয়া সঙ্গীর উদ্দেশ্যে অপেক্ষাকৃত দূর থেকে মিথ্যেই বলে ওঠে, "সাবধান, সিংহ আসছে"। সঙ্গী বাঁদরটা ভয় পেয়ে কলা ছেড়ে পড়িমরি করে একটা উঁচু গাছের ডালে উঠে গেলে সে সহজেই পাকা কলাটা হাতিয়ে নেয়। এখন কথা হলো গ্রীন মাঙ্কিদের মতোই সমস্ত প্রাণীদের দৌড় ঐ "সাবধান, সিংহ আসছে" পর্যন্তই। কিন্তু উন্নত ভাষার বলে বলীয়ান হোমোস্যাপিয়্যান্সেরা তার সঙ্গীদের উদ্দেশ্যে বলে দিতে পারতো- "ঐ দ্যাখ পূব দিকের আতা গাছটা নড়ছে। মনে হয় ওখানে একটা বাঘ আছে" কিম্বা "নদীর ধারে আজ সকালে একটা সিংহ ছিল। এখন কি ওদিকটায় বাইসন শিকারে যাওয়া উচিৎ হবে?"। অর্থাৎ অনেক নিখুঁত ভাবে ভাষার মাধ্যমে মতপ্রকাশ করা স্যাপিয়েন্সদের করায়ত্ত হয়। সকল জীবজন্তুদের মধ্যে ব্যবহৃত ভাষার সাহায্যে মত বিনিযময়ের সর্বোচ্চ সীমা যেখানে "সাবধান, সিংহ আসছে"; কোন দিক থেকে আসছে, কটা আসছে - এসব কিচ্ছু না স্রেফ "সাবধান, সিংহ আসছে" সেখানে হোমোস্যাপিয়্যান্সের এই সীমা "নদীর ধারে একটা সিংহ ছিল"র থেকেও বহুগুণ বিবর্ধিত। "নদীর ধারে একটা সিংহ ছিল" তত্ত্বের পাশাপাশি আরেকটি স্বীকৃত তত্ত্ব হলো "গসিপ থিয়োরি" পরের পর্বে এখান থেকে শুরু করছি।
.
(কৃতজ্ঞতা....জয়ন্ত সিনহা ।)
১ম পর্বের লিঙ্ক :
২য় পর্বের লিঙ্ক :
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৯ দুপুর ১২:৪০
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×