somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দিল্লী-হিল্লি (নিজে নিজে ঘুরে আসুন অল্প খরচে সমগ্র দিল্লী) (কম খরচে ভারত ভ্রমণ - পর্ব ০১)

০৮ ই আগস্ট, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আগ্রা-জয়পুর, সিমলা-মানালি, জম্মু-কাশ্মীর সহ অনেক রুটের পর্যটকদেরই কিন্তু দিল্লী হয়ে যেতে হয়। ফলে এক-দুই দিন যাত্রা বিরতি থাকে দিল্লী’তে। সেই দিনগুলো কাজে লাগিয়ে পুরো দিল্লী চষে বেড়াতে পারেন খুব সহজেই। আর যদি দিল্লী দর্শনের জন্যই যাওয়া হয় তাহলে তো কোন কথা নেই। কাশ্মীর-দিল্লী-সিমলা-মানালি-রোহটাং পাস ভ্রমণে কাহিনী নিয়ে লেখা পোস্টগুলোতে অনেকেই ভ্রমণ সংক্রান্ত তথ্যাবলী জানতে চেয়েছেন। কিন্তু আমার সেইসব ভ্রমণ প্যাচালিতে বিস্তারিত ভ্রমণ সহায়ক তথ্য'র ঘাটতি ছিল। কারন, আমার পরিকল্পনা ছিল এ বিষয়ে পৃথক পোস্ট দেয়ার। কাশ্মীর নিয়ে একটা পোস্ট ছিল এই শিরোনামেঃ কাশ্মীর ভ্রমণ পরিকল্পনা এবং বাজেট (একটি অপূর্ণাঙ্গ পোস্ট ) , এরপর দিল্লী-সিমলা-মানালি'র জন্য কোন পোস্ট দেয়া হয় নাই। আর সেই ভাবনা থেকেই আজকে দেয়া হল দিল্লী ভ্রমণের একটি পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা নিয়ে পোস্ট; সামনে থাকছে সিমলা, মানালি, লাদাখ এবং গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গাল নিয়ে পোস্ট। আশা করি আজকের এই পোস্ট হাতে থাকলে আপনি নিজে নিজে অল্প খরচে চষে বেড়াতে পারেন দিল্লী, এক্কেবারে করে ফেলুন "দিল্লী-হিল্লি" :P

তো আর কি? আসুন শুরু করা যাক।


ঢাকা টু কলকাতাঃ
বাংলাদেশ থেকে অতি অল্প খরচে দিল্লী যাওয়ার রুট হলঃ ঢাকা থেকে যশোহর হয়ে বেনাপল; ভাড়া ছয়শত টাকা’র মধ্যে হয়ে যাবে। এরপর ইমিগ্রেশন শেষে বর্ডার পার হয়ে পেট্রাপল হতে বনগাঁ হয়ে হাওড়া। খরচ একশত টাকার মত, আর বাসে করে কলকাতা গেলে খরচ ২০০-৩০০ টাকা। তো সবমিলিয়ে সাতশত থেকে হাজার টাকায় কলকাতা। যাওয়া আসা দুই হাজার। এছাড়া ঢাকা থেকে সরাসরি কলকাতার বাস আছে ১৫০০-২০০০ টাকার মধ্যে।


কলকাতা টু দিল্লীঃ
এবার হাওড়া থেকে যাব দিল্লী। স্লিপার ক্লাসে বেশ কয়েকটা ট্রেন হাওড়া থেকে দিল্লীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়ঃ
(১) প্রভা এক্সপ্রেস (ট্রেন নাম্বার-১২৩০৩) সকাল ০৮:০৫ এ ছেড়ে গিয়ে পরদিন সকাল ০৭:৩৫ এ পৌঁছবে; চলে শুক্র, শনি, সোম এবং মঙ্গল বার। ভাড়া সাকুল্যে ৭০০ রুপী’র মত।
(২) ইউ আবহা তুফান এক্সপ্রেস (ট্রেন নাম্বার-১৩০০৭) সকাল ০৯:৩৫ এ ছেড়ে গিয়ে পরদিন সন্ধ্যা ০৭:৪০ এ পৌঁছবে; চলে সপ্তাহের প্রতিদিন। ভাড়া সাকুল্যে ৬৫০ রুপী’র মত।
(৩) হাওড়া দিল্লী কলকা মেইল (ট্রেন নাম্বার-১২৩১১) সন্ধ্যা ০৭:৪০ এ ছেড়ে গিয়ে পরদিন রাত ০৯:৪০ এ পৌঁছবে; চলে সপ্তাহের প্রতিদিন। ভাড়া সাকুল্যে ৬৫০ রুপী’র মত।
(৪) এনডিএলএস দুরন্ত (ট্রেন নাম্বার-১২২৭৩) দুপুর ১২:৪৫ এ ছেড়ে গিয়ে পরদিন সকাল ০৬:২০ এ পৌঁছবে; চলে সপ্তাহের দুইদিন মাত্র, শুক্রবার এবং সোমবার। ভাড়া সাকুল্যে ৯৫০ রুপী’র মত।
(৫) হাওড়া আনভাতি এক্সপ্রেস (ট্রেন নাম্বার-১২৩২৩) সন্ধ্যা ০৬:৩০ এ ছেড়ে গিয়ে পরদিন বিকেল ০৫:০০ এ পৌঁছবে; চলে সপ্তাহের দুইদিন মাত্র, মঙ্গল এবং শুক্রবার। ভাড়া সাকুল্যে ৬৫০ রুপী’র মত।

এছাড়া ২১০০ রুপী ভাড়া দিয়ে আপনি চাইলে থ্রি টায়ার এসি’র রাজধানী এক্সপ্রেসে করে বিকেল ০৪:৫০ এর ট্রেনে চড়ে পরদিন সকাল ১০:৩০ নাগাদ দিল্লী পৌঁছে যেতে পারেন।


এবার করি দিল্লী হিল্লিঃ
রেলষ্টেশন থেকে বের হয়ে হাতের বাম দিকে মিনিট খানেক এগিয়ে গেলেই পেয়ে যাবেন মেট্রো ষ্টেশন। এখান হতে টিকেট কাটুন রাজীব চওক এর জন্য, বেশী দূর নয়, পার্শ্ববর্তী ষ্টেশন। এবার দিল্লী এসে কমখরচে থাকার জায়গার খোঁজ। আমাদের সুবিধার জন্য আমরা থাকব দিল্লীর রাজীব চওক এলাকায়। কারণ রাজীব চওক হল আমাদের কাঙ্ক্ষিত তিনটি মেট্রো লাইনঃ ইয়েলো, ব্লু এবং পারপেল এর ক্রস ষ্টেশন। শতাধিক হোটেল রয়েছে এখানে, আপনার বাজেটের মধ্যে যা সবচেয়ে ভাল হয় উঠে পড়ুন। এখানে ৫০০-৫০০০ রুপীর মধ্যে হোটেল পাবেন। booking.com, agoda, makemytrip goibibo সহ আরও অনেক সাইটে খুঁজে পাবেন সহজেই অল্প খরচের হোটেলের ইতিবৃত্ত এবং তাদের অফার। এবার দেখি কি কি দেখার পালা, তার একটা তালিকা করা যাকঃ


কি কি দেখব?

(01) কুতুব মিনার
(02) লালকেল্লা
(03) নিজামুদ্দিন আউলিয়ার দরগাহ
(04) হুমায়ূনের টম্ব
(05) জামে মসজিদ
(06) চাঁদনীচক
(07) ইন্ডিয়া গেট
(08) লোটাস টেম্পল
(09) জন্তর-মন্তর
(10) স্বামী নারায়ন আকসার ধাম
(11) গান্ধী স্মৃতি
(12) লদী গার্ডেন
(13) লক্ষ্মী নারায়ণ (বিড়লা) মন্দির
(14) পুরানা কিল্লা
(15) সফদারগঞ্জ টম্ব।



কিভাবে দেখব?

দিল্লী দর্শনের জন্য দিল্লীতে সরকারী বেসরকারী নানান দিল্লী সিটি ট্যুর প্যাকেজ আছে, যা অর্ধবেলা এবং পূর্ণবেলা দুইভাবেই আছে। খরচ ২৫০ রুপী থেকে ২০০০ রুপী পর্যন্ত। তো আমরা ঘুরব নিজে নিজে, কারণ আমরা গরীব মানুষ, আর তার সাথে দিল্লীর ট্রাফিক জ্যাম এড়াতে আমরা ব্যবহার করব দিল্লীর বিখ্যাত মেট্রোরেল। আসুন শুরু করা যাক। আমাদের লিস্টের পর্যটন কেন্দ্রগুলো মূলত দিল্লীর ছয়টি মেট্রো রুটের তিনটির মধ্যে আছেঃ ইয়েলো লাইন, ব্লু লাইন এন্ড পারপেল লাইন।

প্রথম দিনঃ
আমরা প্রথম দিন শুরু করব ব্লু লাইন ধরে। প্রথমেই আমরা রাজীব চওক হতে টিকেট কাটব আকসার ধাম ষ্টেশন এর। এখানে দেখব স্বামী নারায়ন আকসার ধাম; এটা দেখা শেষে আমরা মেট্রো করে চলে আসব ইন্দ্রপ্রস্থ ষ্টেশন। এখানে আছে গান্ধী স্মৃতি কেন্দ্র, পাশেই বিখ্যাত ফিরোজ শাহ কোটলা ক্রিকেট স্টেডিয়াম। এগুলো দেখা শেষে আমরা চলে যাব পরবর্তী ষ্টেশন প্রগতি ময়দান, চাইলে পায়ে হেঁটেও যেতে পারেন, ঠিক পরের স্টপেজ। এখানে আছে বিখ্যাত ইন্ডিয়া গেট। তাই পায়ে হেঁটে আসটাই ভাল, রাস্তা দিয়ে দেখতে দেখতে যাবেন সেখানে। এরপর মেট্রো করে চলে যান রামকৃষ্ণ মার্গ আশ্রম ষ্টেশন, সেখানে আছে বিখ্যাত বিড়লা টেম্পল। চাইলে সকালবেলা এটা দিয়ে শুরু করে তারপর আকসার ধাম চলে যেতে পারেন। এতে করে সন্ধ্যেটা বিখ্যাত ইন্ডিয়া গেটে কাটাতে পারবেন। এরপর আর কি আবার রাজীব চওক, এবং হোটেলে প্রস্থান। এইদিনের স্পটগুলো তথ্যাবলীঃ

(০১) স্বামী নারায়ন আকসার ধাম


অবস্থানঃ 5 Tees January Marg, Central New Delhi।
নিকটবর্তী মেট্রো ষ্টেশনঃ আকসার ধাম (Akshardham)
ভাড়াঃ রাজীব চওক থেকে আকসার ধাম - ১৫ রুপী
এন্ট্রি টিকেটঃ পূর্ণ বয়স্ক ১৭০ রুপী, সিনিয়র সিটিজেন ১২৫ রুপী, ৪-১১ বছরের শিশু ১০০ রুপী।
সময়সূচীঃ সকাল সাড়ে নয়টা থেকে সন্ধ্যে সাড়ে ছয়টা প্রতিদিন, সাপ্তাহিক বন্ধ সোমবার।

(০২) গান্ধী স্মৃতি


অবস্থানঃ রাজঘাট, নতুন দিল্লী।
নিকটবর্তী মেট্রো ষ্টেশনঃ ইন্দ্রপ্রস্থা (Indraprastha)
ভাড়াঃ আকসার ধাম থেকে ইন্দ্রপ্রস্থা – ১০ রুপী।
এন্ট্রি টিকেটঃ ফ্রি।
সময়সূচীঃ সকাল দশটা থেকে বিকেল পাঁচটা প্রতিদিন, সাপ্তাহিক বন্ধ সোমবার। এই পথে বোনাস হিসেবে পাশেই আছে ফিরোজ শাহ কোটলা স্টেডিয়াম, এক নজর দেখে নিতে পারেন।

(০৩) ইন্ডিয়া গেট


অবস্থানঃ কনট প্লেস এর নিকটে, নতুন দিল্লী।
নিকটবর্তী মেট্রো ষ্টেশনঃ প্রগতি ময়দান (Pragati Maidan)
ভাড়াঃ ইন্দ্রপ্রস্থা থেকে প্রগতী ময়দান - ০৮ রুপী।
এন্ট্রি টিকেটঃ ফ্রি।
সময়সূচীঃ ২৪ ঘণ্টা।

(০৪) পুরানা কিল্লা


অবস্থানঃ দিল্লী চিড়িয়াখানা রোড, মাথুরা, নতুন দিল্লী।
নিকটবর্তী মেট্রো ষ্টেশনঃ প্রগতি ময়দান (Pragati Maidan.)
ভাড়াঃ জোরবাগ থেকে – ১৮ রুপী।
এন্ট্রি টিকেটঃ বিদেশী পর্যটক ২০০ রুপী, ভারতীয় নাগরিক ২০ রুপী। ছবি তোলার ক্যামেরার জন্য কোন ফি নেই, ভিডিও’র জন্য ২৫ রুপী।
সময়সূচীঃ সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত।

(০৫) লক্ষ্মী নারায়ণ (বিড়লা) মন্দির


অবস্থানঃ গোল মার্কেট, মান্দির মার্গ, কনট প্লেস, নতুন দিল্লী।
নিকটবর্তী মেট্রো ষ্টেশনঃ আর কে আশ্রাম মার্গ (R. K. Ashram Marg)
ভাড়াঃ প্রগতি থেকে আর কে আশ্রাম মার্গ – ১০ রুপী।
এন্ট্রি টিকেটঃ সবার জন্য উন্মুক্ত। মোবাইল, ফটো বা ভিডিও এর অনুমোদন নেই।
সময়সূচীঃ সকাল সাড়ে চারটা থেকে দুপুর দেড়টা; দুপুর আড়াইটা থেকে রাত নয়টা।
* আর কে আশ্রাম মার্গ থেকে রাজীব চওক মেট্রো ভাড়া ০৮ রুপী।


দ্বিতীয় দিন
দ্বিতীয় দিন সকালে আমরা শুরু করব ইয়েলো লাইন ধরে। আমরা প্রথমেই রাজীব চওক হতে ইয়েলো লাইনের টিকেট করে চলে যাব কুতুব মিনার ষ্টেশন। সেখান থেকে অটো রিকশা করে কুতুব মিনার দর্শন। এরপর সেখান থেকে আবার মেট্রো ষ্টেশন এসে টিকেট করব জোরবাগ পর্যন্ত। এখানে আমরা দেখব সফদারগঞ্জ টম্ব এবং সেখানে থেকে যাব প্যাটেল চওক সেখানে আছে বিখ্যাত জন্তর-মন্তর। জন্তর মন্তর ফুঁ ;) শেষে আমরা যাব চওরি বাজার ষ্টেশন। এখানে নেমে দিল্লী জামে মসজিদ দেখে পায়ে হেঁটে হেঁটে চলে আসব চাঁদনী চওক এলাকায়। এখানে ঘুরাঘুরি করে চলে যাব লালকেল্লা। সন্ধ্যের আগে আগে বের হয়ে এসে কিছু চা-নাস্তা করে আবার লালকেল্লা, রাতের লাইট এন্ড সাউন্ড শো দেখতে। এরপর পুরাতন দিল্লীর কাবাব আর বিরিয়ানি দিয়ে ডিনার করে চাঁদনী চওক মেট্রো ষ্টেশন হতে টিকেট করে সোজা রাজীব চওক। হোটেলে গিয়ে বিশ্রাম নিন। এইদিনের স্পটগুলো তথ্যাবলীঃ

(০৬) কুতুব মিনার


অবস্থানঃ মেহেরাউলি, দক্ষিণ নতুন দিল্লী।
নিকটবর্তী মেট্রো ষ্টেশনঃ কুতুব মিনার (Qutub Minar)
ভাড়াঃ রাজীব চওক থেকে কুতুব মিনার – ১৮ রুপী।
এন্ট্রি টিকেটঃ বিদেশী পর্যটক ৫০০ রুপী, ভারতীয় ৩০ রুপী। ১৫ বছরের নীচে ফ্রি।
সময়সূচীঃ সূর্যোদয়ের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত প্রতিদিন।

(০৭) সফদারগঞ্জ টম্ব


অবস্থানঃ সফদারগঞ্জ রোড এবং অরবিন্দ মার্গ এর রাস্তার মাঝে, নতুন দিল্লী।
নিকটবর্তী মেট্রো ষ্টেশনঃ জোরবাগ (Jorbagh)
ভাড়াঃ কুতুব মিনার থেকে জোরবাগ – ১৬ রুপী। এ
এন্ট্রি টিকেটঃ বিদেশী পর্যটক ২০০ রুপী, ভারতীয় নাগরিক ১৫ রুপী। ছবি তোলার ক্যামেরার জন্য কোন ফি নেই, ভিডিও’র জন্য ২৫ রুপী।
সময়সূচীঃ সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত।

(০৮) জন্তর-মন্তর


অবস্থানঃ পার্লামেন্ট স্ট্রীট, কনট প্লেস, দিল্লী।
নিকটবর্তী মেট্রো ষ্টেশনঃ প্যাটেল চওক (Patel Chowk)
ভাড়াঃ জোরবাগ থেকে প্যাটেল চওক – ১২ রুপী।
এন্ট্রি টিকেটঃ বিদেশী পর্যটক ১০০ রুপী, ভারতীয় নাগরিক ০৫ রুপী।

(০৯) জামে মসজিদ


অবস্থানঃ পুরাতন দিল্লীর চাঁদনী চক এর বিপরীতে, লালকেল্লার সন্নিকটে।
নিকটবর্তী মেট্রো ষ্টেশনঃ চওরী বাজার (Chawri Bazaar)।
ভাড়াঃ প্যাটেল চওক থেকে চওরী বাজার – ১০ রুপী।
এন্ট্রি টিকেটঃ জামে মসজিদে প্রবেশে কোন এন্ট্রি ফি নেই। তবে ক্যামেরার জন্য ২০০ রুপী প্রদান করতে হয়।
সময়সূচীঃ সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত নামাজের সময় ব্যতীত পুরো সময় পর্যটকদের জন্য খোলা থাকে।

(১০) চাঁদনীচক


অবস্থানঃ পুরাতন দিল্লীর জামে মসজিদ এর এলাকা এটি।
নিকটবর্তী মেট্রো ষ্টেশনঃ চাঁদনী চক (Chandni Chowk)।
ভাড়াঃ চওরি বাজার থেকে চাঁদনী চক - ০৮ রুপী। চাইলে হেঁটে হেঁটে পুরাতন দিল্লীর রূপ দেখে দেখে ঘুরে বেড়াতে পারেন জামে মসজিদ থেকে চাঁদনী চক হয়ে লালকেল্লা পর্যন্ত।
এন্ট্রি টিকেটঃ চাঁদনী চক হল পুরাতন দিল্লীর একটি বিখ্যাত এলাকা। এখানে পায়ে হেঁটে ঘুরে বেড়ান, কেনাকাটা করুন, বিখ্যাত কাবাব আর বিরিয়ানি চেখে দেখুন।
সময়সূচীঃ কাকডাকা ভোর হতে মধ্য রাত অবধি।

(১১) লালকেল্লা


অবস্থানঃ নেতাজী সুভাষ মার্গ, চাঁদনী চক, পুরাতন দিল্লী।
নিকটবর্তী মেট্রো ষ্টেশনঃ চাঁদনী চক (Chandni Chowk)।
ভাড়াঃ প্রযোজ্য নয়।
এন্ট্রি টিকেটঃ বিদেশীদের জন্য ৫০০ রুপী, ভারতীয়দের জন্য ৩৫ রুপী। ছবি তোলার জন্য কোন ক্যামেরা ফি নেই; তবে ভিডিও এর জন্য ২৫ রুপী।
সময়সূচীঃ সকাল ৯:০০টা থেকে বিকেল ০৬:০০টা। সোমবার সাপ্তাহিক বন্ধ।
বিশেষঃ সন্ধ্যে ছয়টার পর লাইট এন্ড সাউন্ড শো, প্রাপ্ত বয়স্ক ৮০ রুপী, শিশুদের জন্য ৩০ রুপী। চাঁদনী চক থেকে রাজীব চওক মেট্রো ভাড়া ১০ রুপী।


তৃতীয় দিন
তৃতীয় দিন আমাদের রুট হল পারপেল লাইন। এদিন আমরা দিল্লী হতে ব্যাক করব, তাই এদিনের লিস্ট ছোট। প্রথমেই সকাল বেলা রাজীব চওক হতে জওহরলাল নেহেরু স্টেডিয়াম স্টেশনে চলে আসুন। এখানে একে একে দেখুন হুমায়ুন টম্ব, নিজামুদ্দিন আউলিয়ার দরগাহ, লদী গার্ডেন। আর স্টেডিয়ামে তো চোখ যাবেই। এখান থেকে এবার টিকেট কাটুন কালকা মন্দির এর, সেখানে আছে বিখ্যাত লোটাস টেম্পল। মন ভরে দেখে নিয়ে ব্যাক করুন রাজীব চওক। আর যদি সকাল বেলা ব্যাগ নিয়েই বের হন, তাহলে সুবিধামত সময়ে চলে আসুন রেল ষ্টেশন ফিরতি ট্রেন ধরার জন্য।

(১২) হুমায়ূনের টম্ব


অবস্থানঃ নিজামুদ্দিন ইষ্ট, মথুরা রোড, নতুন দিল্লী।
নিকটবর্তী মেট্রো ষ্টেশনঃ জওহরলাল নেহেরু স্টেডিয়াম (Jawaharlala Nehru Stadium)
ভাড়াঃ সেন্ট্রাল সেক্রেটারিয়েট থেকে – ১২ রুপী।
এন্ট্রি টিকেটঃ বিদেশী পর্যটক ৫০০ রুপী, ভারতীয় ৩০ রুপী। ১৫ বছরের নীচে ফ্রি। ছবির জন্য কোন ক্যামেরা চার্জ নেই, ভিডিও চার্জ ২৫ রুপী।
সময়সূচীঃ সূর্যোদয়ের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত, বেটার ভিউ পাওয়া যায় শেষ বিকেলের দিকে।

(১৩) নিজামুদ্দিন আউলিয়ার দরগাহ


অবস্থানঃ নিজামুদ্দিন ইষ্ট, মথুরা রোড, নতুন দিল্লী।
নিকটবর্তী মেট্রো ষ্টেশনঃ জওহরলাল নেহেরু স্টেডিয়াম (Jawaharlala Nehru Stadium)
ভাড়াঃ সেন্ট্রাল সেক্রেটারিয়েট থেকে – ১২ রুপী।
এন্ট্রি টিকেটঃ সবার জন্য উন্মুক্ত।
সময়সূচীঃ সকাল থেকে রাত অবধি।

(১৪) লদী গার্ডেন


অবস্থানঃ লদী রোড, হুমায়ুন এর মাজার এর কাছে, নতুন দিল্লী।
নিকটবর্তী মেট্রো ষ্টেশনঃ জওহরলাল নেহেরু স্টেডিয়াম (Jawaharlala Nehru Stadium)
ভাড়াঃ জওহরলাল নেহেরু স্টেডিয়াম থেকে – ১৫ রুপী। এ
এন্ট্রি টিকেটঃ সবার জন্য উন্মুক্ত।
সময়সূচীঃ সকাল থেকে রাত আটটা অবধি।

(১৫) লোটাস টেম্পল


অবস্থানঃ নেহেরু প্লেস এর নিকটে, দক্ষিণ নতুন দিল্লী।
নিকটবর্তী মেট্রো ষ্টেশনঃ কালকাজি মান্দির (Klkaji Mandir)
ভাড়াঃ জোরবাগ থেকে – ১৮ রুপী।
এন্ট্রি টিকেটঃ সবার জন্য উন্মুক্ত।
সময়সূচীঃ সকাল নয়টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত।


দিল্লী দর্শনের মেট্রো রুট ম্যাপঃ



মাঝখানের লাল বৃত্ত হল দিল্লী ষ্টেশন এবং রাজিব চওক এলাকা। এরপর খেয়াল করুন ইয়েলো লাইনে আপনার স্টপেজগুলো সবুজ বৃত্ত দিয়ে; ব্লু লাইনে লাল বৃত্ত দিয়ে এবং পারপেল লাইনে হলুদ বৃত্ত দিয়ে চিহ্নিত করা আছে। জাস্ট ফলো ইট।

একটি খসড়া প্ল্যানিং
দিন০০: রাতের বাস বা ট্রেনে বেনাপলের উদ্দেশ্যে যাত্রা।
দিন০১: দুপুর বা বিকেল নাগাদ কলকাতা পৌঁছানো। রাতে কলকাতা থাকা।
দিন০২: দিল্লী'র উদ্দেশ্যে যাত্রা।
দিন ০৩: রাতের মধ্যে দিল্লী পৌঁছানো। রাতে দিল্লী থাকা।
দিন০৪: দিল্লী দর্শন - দিন ০১। রাতে দিল্লী থাকা।
দিন০৫: দিল্লী দর্শন - দিন ০২। রাতে দিল্লী থাকা।
দিন০৬: দিল্লী দর্শন - দিন ০৩। রাতে দিল্লী থাকা।
দিন০৭: দিল্লী থেকে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা
দিন০৮: কলকাতা পৌঁছানো। রাতে কলকাতা থাকা।
দিন০৯: কলকাতা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা, রাতের মধ্যে ঢাকা পৌঁছানো।

একটি খসড়া বাজেট হিসেবঃ
ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা ২,০০০ টাকা
কলকাতা-দিল্লী-কলকাতা ২,০০০ টাকা (রুপীতে ১,৫০০-১,৮০০ রুপী)
কলকাতা দুই রাত থাকা ২,০০০ টাকা (রুপীতে ১,৫০০-১,৮০০ রুপি)
দিল্লীতে চার রাত থাকা ৪,০০০ টাকা (রুপীতে ৩,০০০-৩,৫০০ রুপি)
মেট্রো ভাড়া এবং এন্ট্রি ফি (বিদেশী হিসেবে) ৫,০০০ টাকা (৪,০০০-৪,২০০ রুপী)
কলকাতায় আভ্যন্তরীণ ভাড়া এবং অন্যান্য ১,৫০০ টাকা
০৯ দিনে খাওয়া বাবদ ৩,৫০০ টাকা (প্রতিদিন তিনবেলা'র জন্য ৩০০-৩৫০ রুপী হিসেবে)
সর্বমোটঃ জনপ্রতি ২০,০০০ টাকা।

আনন্দদায়ক হোক ঘোরাঘুরি।

কম খরচে ভারত ভ্রমণ এর পোস্টসকলঃ
(১) দিল্লী-হিল্লি (নিজে নিজে ঘুরে আসুন অল্প খরচে সমগ্র দিল্লী) (কম খরচে ভারত ভ্রমণ - পর্ব ০১)
(২) কাশ্মীর ভ্রমণ পরিকল্পনা এবং বাজেট (একটি অপূর্ণাঙ্গ পোস্ট ;) (কম খরচে ভারত ভ্রমণ - পর্ব ০২)
(৩) এবার চলুন সিমলা ঘুরে আসি কম খরচে (কম খরচে ভারত ভ্রমণ - পর্ব ০৩)
(৪) চল যাই মানালি... কম খরচে জটিল ট্যুর (কম খরচে ভারত ভ্রমণ - পর্ব ০৪)
(৫) এবার ঘুরে আসা যাক গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল (দিল্লী-আজমীর-জয়পুর-আগ্রা) (কম খরচে ভারত ভ্রমণ - পর্ব ০৫)
(৬) পনেরো হাজার টাকায় গোয়া ভ্রমণ!!! স্বপ্ন নয়, বাস্তব... (কম খরচে ভারত ভ্রমণ - পর্ব ০৬)
(৭) ৩২,০০০ টাকায় দিল্লী-সিমলা-মানালি-লেহ-শ্রীনগর-পাহেলগাও-গুলমার্গ-সোনমার্গ ভ্রমণ এর বাজেট-প্ল্যান (কম খরচে ভারত ভ্রমণ - পর্ব ০৭)
(৮) মাত্র দুই দিন আর ৩,৫৫০ টাকায় ঘুরে আসুন হালের ক্রেজ মেঘালয়ের “সোনাংপেডেং” এবং “ক্রাংসুরি ফলস” - (কম খরচে ভারত ভ্রমণ - পর্ব ০৮)
(৯) পনেরো হাজার টাকায় বাই রোডে কাশ্মীর - (কম খরচে ভারত ভ্রমণ - পর্ব ০৯)
(১০) কলকাতা-বেঙ্গালুর-মাইসুর মাত্র ১৫,০০০ টাকায়!!! (কম খরচে ভারত ভ্রমণ - পর্ব ১০)
(১১) ১০,০০০ টাকায় ঘুরে আসুন আজমীর শরীফ!!! ২০২২ এর এই উচ্চমূল্যের বাজারে!!!!!! (কম খরচে ভারত ভ্রমণ - পর্ব ১১)

এক পোস্টে ভারত ভ্রমণের সকল পোস্টঃ বোকা মানুষের ভারত ভ্রমণ এর গল্পকথা
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:১২
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিশাল বড় সৃষ্টি তোমার

লিখেছেন প্রামানিক, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১:৩৪


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

বিশাল বড় সৃস্টি তোমার
মানুষ ক্ষুদ্রতম
চন্দ্র সূর্য দেখার পরে
করছে নমঃ নমঃ।

নানা রকম সৃস্টি দেখে
হচ্ছে চমৎকার
দুইটা চক্ষু উর্দ্ধে তুললে
দৃস্টি যায়না আর।

কোথায় সৃস্টির শেষ সীমানা
কোথায় বা তার শুরু
দূর সীমানায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিছু কিছু মানুষ বলার শুরু করেছে, "আমরা আগেই ভালো ছিলাম"।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ২:০২



একাধিক কারণে মানুষ ইহা বলার শুরু করেছেন: (১) সাধারণ মানুষ কোমলমতিদের ক্রমেই চিনতে পারছেন, ইহা ভীতি ও অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করছে; কোমলমতিরা সরকারের গুরুত্বপুর্ণ অনেক পদে আছে ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি - একাল সেকাল

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮



টানা বৃষ্টির মধ্যে মরিচের দাম বেড়ে হয়েছে ৪০০ টাকা কেজি । অন্যদিকে ফার্মের মুরগির এক পিছ ডিমের দাম বেড়ে হয়েছে ১৫ টাকা।শুধু মরিচ নয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কমলা যদি পরাজিত হয়, "দ্রব্যমুল্য"ই হবে ১ নম্বর কারণ

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৭



দ্রব্যমুল্য হচ্ছে অর্থনৈতিক সুচকগুলোর ১ টি বড় প্যারামিটার; ইহা দেশের অর্থনীতি ও চলমান ফাইন্যান্সের সাথে সামন্জস্য রেখে চলে; টাস্কফোর্স, মাস্কফোর্স ইহার মুল সমাধান নয়; ইহার মুল সমাধন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকস্বাধীনতা মানেই- যা খুশী তাই লেখা বলা নয়....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৩ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৯:৩১



বকস্বাধীনতা মানেই- যা খুশী তাই বলা/ লেখা নয়। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব এবং জনসংহতি নষ্ট করা রাষ্ট্র দ্রোহিতার শামিল। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের দোসর সোশ্যাল মিডিয়ায় এবং ভারতীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশের গণবিপ্লব পরবর্তী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×