somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অদ্ভুত প্রেমের গল্প- (পর্ব ৪২)

৩০ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১১:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পরিপক্ব আর অপরিপক্ব মানুষের মধ্যে ঠিক পার্থক্য কোথায়!!! সিদ্ধান্ত গ্রহণে। পরিপক্ব মানুষ বুঝতে পারে সিদ্ধান্ত গ্রহণে আবেগের ভূমিকা ঠিক কতটুকু থাকবে। অন্যদিকে, অপরিপক্ব মানুষের এই বিচার বুদ্ধি থাকে না। তাঁরা জীবনের সব সিদ্ধান্ত আবেগ দিয়েই নিতে চায়। মাসুদ পারভেজ সেরকম নন। তিনি পরিপক্ব মানুষের দলে।

রীতার প্রতি তাঁর ভালোলাগা-কে সে কোন আবেগের সাথে চিন্তা করল না। জীবন তাঁর কাছে সহজ সমীকরণ। সহজ পথে চললে সবই সহজ হবে। জটিল পথে চললে জটিল। তিনি প্রয়োজনীয় সময় নিলেন। রীতার সাথে বিভিন্ন সময়ের কথা-বার্তায় তিনি তাঁর দিকটা বোঝার চেষ্টা করলেন। রীতার পরিবারের সবার কথাই তিনি জানলেন। খুব অনুসন্ধিৎসু ভাবে না। যেন একদমই কুশল বিনিমিয়ের জন্য জানছেন সেরকমভাবে। তিনি ‘ভালোবাসা’ নামক শব্দের যে গভীরতা বিশ্বব্যাপী প্রচলিত তাতে বিশ্বাসী নন। তিনি ‘ভালোলাগা’য় বিশ্বাসী। ‘ভালোলাগা’র উপর ভিত্তি করে বিবাহপ্রথায়ও বিশ্বাসী। কিন্তু এর মাঝের ‘প্রেম-ভালোবাসা’ সংক্রান্ত সময়টাকে তিনি একেবারেই অপচয় মনে করেন। এই অপচয় সময়ের, অর্থের, মানসিক বিকাশের এবং আরো অনেক কিছুর। তাই তিনি কখনো এ ধরনের কিছুতে জড়াননি।

এতদিন পর্যন্ত কাউকে তাঁর তত ভালো লাগেনি। আসলে কর্মজীবনের ব্যস্ততাই তাঁকে এসব চিন্তা করতে দেয়নি। রীতার সাথে পরিচিত হওয়ার পর তাঁর মনে হচ্ছে এরকম কাউকে বিয়ে করলেও করা যায়। একটা জায়গাতেই আটকে যাচ্ছেন তিনি। তিনি জানেন না রীতার কোন পছন্দ আছে কি না!! তিনি সরাসরি রীতাকে এ ব্যাপারে প্রশ্নও করতে চাচ্ছেন না। যদি সব ঠিক থাকে, তবে তিনি সরাসরি রীতার বাবা-মায়ের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাঠাবেন। এই তাঁর পরিকল্পনা।

মাসুদ পারভেজের কোম্পানীর সাথে রীতার কোম্পানীর কাজ শেষ। রীতাদের কাজে মাসুদ পারভেজের বসেরা যারপরনাই খুশি। কোম্পানীর সুনাম রক্ষার জন্য রীতা এবং রাইয়ানকে অফিস থেকে ট্রিট দেয়া হয়েছে। সেখানে মাসুদ পারভেজকেও ইনভাইট করা হয়েছে।

পুরোপুরি কর্পোরেট একটা গ্যাদারিং। বেশ কিছু মানুষজন। সবারই অতিরিক্ত হাসিমুখ। কারো নিয়মরক্ষার হাসি। কারো তেলতেলে হাসি। কারো গায়ে পড়া আদিক্ষেতা। এসবই পরিচিত মাসুদ পারভেজের। কম দিন তো হল না তাঁর অভিজ্ঞতার। তবে তাঁর চোখ খুঁজছে রীতাকে। রীতা ছাড়াও আরো বেশ কয়েকটা মুখ তাঁর পরিচিত। তাঁদের সাথে চোখা চোখি হচ্ছে। কেউ কেউ কথা বলে যাচ্ছে। কেউ কেউ দূর থেকে কর্পোরেট হাসি ছুঁড়ে দিচ্ছে।

অনেক চেষ্টার পরেও রীতাকে দেখতে না পেয়ে মাসুদ পারভেজ রাইয়ান-কে জিজ্ঞেস করল রীতার করল। পাশের আরেক ছোকড়া শয়তানি করে বলল- ‘কর্নারে ফিয়ান্সের সাথে ফোনালাপ করে মনে হয়!!’ রাইয়ান বলল-‘ ধুর!! রীতার ওসব নেই। থাকলে ওঁকে নিয়ে আমি কাজটা শেষ করতে পারতাম না। আমি লিড দিলেও রীতা অনেক হেল্প করেছে।‘ কাজ শেষ। আর কাজের প্রশংসা পাওয়ার পর রাইয়ান বেশ দিল দরাজ আজকে। নিজের জুনিয়রের প্রশংসা করল। মনে মনে হাসল মাসুদ পারভেজ। এই কর্পোরেট কালচারের পলিটিক্স সে ভালো মতই জানে। যাক!!! কিছু তথ্য পাওয়া গেল। এমন সময় রীতাকে দেখতে পেলেন তিনি।
এগিয়ে গেলেন তাঁর দিকে।

- আপনাকেই খুঁজছি। আপনার কলিগরা বলল আপনি ফিয়ান্সের সাথে কথায় ব্যস্ত।
একটু বাজিয়ে দেখতে চাইল মাসুদ পারভেজ। কপট বিস্ময় হাসি হেসে গড়িয়ে পড়ল।
- কে বলেছে এই কথা!!
এরকম আরো নানা কথায় অনুষ্ঠান পাড় হল।

অনুষ্ঠানের এক সপ্তাহের মাথায় মাসুদ পারভেজ রীতার বাসায় আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাঠাল। কে বলেছে Arrange Marriage তাড়াতাড়ি হয় না!! প্রস্তাব পাঠানোর দুই দিনের মধ্যে মাসুদ পারভেজের সাথে রীতার বিয়ে হয়ে গেল।

বাসর ঘর। রীতা বধূবেশে বসে আছে। ঠিক কিভাবে কি হয়ে গেল সে এখনো বুঝতে পারছে না। মাসুদ পারভেজদের বাসা থেকে প্রস্তাব পাওয়ার সাথে সাথে রীতার মা নাজমা হক যেন হাতে চাঁদ পেলেন। তিনি স্বামীকে রাজি করালেন। এরপর মেয়েকে রাজি করানো খুব একটা কঠিন ছিল না। মেয়ে বরাবরই তাঁর বাধ্য। তিনি মেয়ের ভালো করছেন। সেটা আজ না হলেও একদিন না একদিন মেয়ে বুঝবেই। সেদিন হয়তো তিনি থাকবেন না।

রীতার মনের অবস্থা কি ছিল!!! ‘পুলক’ নামের এক অসমাপ্ত অধ্যায় তাঁর সারা জীবনের কাব্য হয়ে গেল। যে কাব্য পাঠ করা যায়, অনুধাবন করা যায় কিন্তু জীবনে প্রতিষ্ঠিত করা যায় না। এ কাব্য গোপন দুঃখের বিলাসী কাব্য। গদ্যের মত মাসুদ পারভেজ এবং পদ্যের মত পুলক আহমেদ-কে সারা জীবনের জন্য নিয়ে বাসর ঘরের দরজার দিকে তাকিয়ে রইল রীতা। হঠাৎ কি মনে করে মোবাইল টা হাতে নিয়ে একটা মেসেজ টাইপ করল।
- তোমার জায়গা কখনো কেউ নিতে পারবে না।
মেসেজ সেন্ট হল পুলক আহমেদের ফোনে। বিধাতাও বোধহয় হাসছিলেন সেদিন।

পর্ব-১ Click This Link পর্ব-২ Click This Link পর্ব-৩ Click This Link পর্ব-৪ Click This Link পর্ব-৫ Click This Link পর্ব-৬ Click This Link পর্ব-৭ Click This Link পর্ব-৮ Click This Link পর্ব-৯ Click This Link পর্ব-১০ Click This Link পর্ব-১১ Click This Link পর্ব-১২ Click This Link পর্ব-১৩ Click This Link পর্ব-১৪ Click This Link পর্ব-১৫ Click This Link পর্ব-১৬ Click This Link পর্ব-১৭ Click This Link পর্ব-১৮ Click This Link পর্ব-১৯ Click This Link পর্ব-২০ Click This Link পর্ব-২১ Click This Link পর্ব-২২ Click This Link পর্ব-২৩ Click This Link পর্ব-২৪ Click This Link পর্ব-২৫ Click This Link পর্ব-২৬ Click This Link পর্ব-২৭ Click This Link পর্ব-২৮ Click This Link পর্ব-২৯ Click This Link পর্ব-৩০ Click This Link পর্ব-৩১ Click This Link পর্ব-৩২ Click This Link পর্ব-৩৩ Click This Link পর্ব-৩৪ Click This Link পর্ব-৩৫ Click This Link পর্ব-৩৬ Click This Link পর্ব-৩৭ Click This Link পর্ব-৩৮ Click This Link পর্ব-৩৯ Click This Link পর্ব-৪০ Click This Link পর্ব-৪১ Click This Link



সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১১:৩৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×